somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাচীন বিরুলিয়ার একদিন........

০৭ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিরপুর বেড়িবাঁধ থেকে নৌকায় তুরাগ নদী পার হলেই বিরুলিয়া। বর্ষাকালে গ্রামটিকে মনে হয় দ্বীপ। এখানে আগে উপনিবেশিক যুগের বেশ অনেকগুলো চমৎকার শতবর্ষী ভবন রয়েছে, যেখানে এক সময় বসবাস করতেন তারকচন্দ্র সাহা, গোপিবাবু, নিতাইবাবু, রজনী ঘোষ প্রমুখ ব্যবসায়ীগন এবং এখানেই এক সময় বসতি ছিল আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয়ের কর্ণধারের পিতৃপুরুষদের। এছাড়া বেশ কিছু বহুদিন আগের তৈরি মাটির ঘরও চোখে পড়ে।।
ভাওয়াল রাজার জমিদারির এলাকার একাংশ এই বিরুলিয়া গ্রাম। এখান থেকেই পরিচালিত হতো সাভার, কালিয়াকৈরের একাংশ, শ্রীপুর-বরমীর একাংশ, গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকা এবং এখনকার ঢাকার মিরপুর-গাবতলী। উত্তরা থেকে কহর দরিয়ার প্রবল ঢেউ এসে আছড়ে পড়ত এই বিরুলিয়ার ঘাটে। যেখানে বড় বড় জাহাজ আর বজরা ভিড়ত জমিদারবাবু তারক চন্দ্র সাহা, বাবু কালি কুমার সাহাদের। তারা এখানে বসে নিলাম কিনতেন আর পরিচালনা করতেন জমিদারি, বংশী, ধলেশ্বরী ও তুরাগ নদী পথে তাঁরা ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। সেই প্রাচীনতার গন্ধ মাখা গ্রামে আজ আমি দাড়িয়ে আছি কত শত বছর পরে, ভাবতেই কেমন শিহরণ লাগে!



গ্রামে ঢোকার প্রথমেই চোখে পড়ে এই বাড়িটি।

বাবু রজনী সাহার বাড়ি এটি। প্রায় দু'আড়াইশ' বছরের পুরনো স্মৃতি নিয়ে আজও কালের নীরব সাক্ষী।

এরপরে আছে ৮৫ বছরের পুরনো শ্রীশ্রী বৃন্দাবন চন্দ্র জিউ বিগ্রহ মন্দির। তারপর আরও এগোতেই দেখা পেলাম তাদের যাদের দেখার জন্য এসছি।

সরু রাস্তার দুপাশের সরি সারি বদ্ধ বাড়ি গুলোর বেশিরা ভাগেই বেদখল হয়ে গেছে, মানুষ জন বাস করে।

পরপর বিভিন্ন প্যাটানরাউর বিভিন্ন ডিজাইনের দেড়শ' থেকে দু'শ' বছরের পুরনো বাড়িঘর। ছোট ছোট সিঁড়িঘর, শ্যাওলা ধরা ছাদ, দূর-অতীতের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে।


বালিয়াটি জমিদার বাড়ির প্রধাণ ভবনের সাথে একদম মিলে যায় না এই ইন্দো ইউরোপিয় স্টাইলে বানানো বাড়িটির?

বারান্দায় লম্বা কোরেনথিয়ান পিলার, রেলিং এ লোহার অপূর্ব কারুকাজ আর চমৎকার চুড়োর প্রাসাদটি নিশ্চয়ই তার যৌবনে অনন্য ছিল!

এখন ক্ষয়ে পড়া প্লাস্টার, পাল্লা ছাড়া দরজা গুলো যেনো হাহাকার করছেন এছাড়া আশেপাশে গজিয়ে ওঠা বাড়ি ঘরের জন্য বাড়িটি দেখাই যায় না প্রায়!
এরপাশেই রয়েছে আরেকটি বাড়ি, একদম লাগোয়া।

প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের দারুন কম্বিনেশন। বারান্দার উপরের ছাদটা লক্ষনীয়। এটা একেবারেই পরিত্যাক্ত।
একই রাস্তায় কিছু দূর এগুলোি চোখে পরবে চমৎকার চিনিটিকরী কাজের পিলার ওয়াল এই পালেসটি।

এই বাড়ির প্রতিটা দরজার লিনটেল আর দেয়ালের ফাঁকা জায়গা গুলো হাইলি ফলস পিলার আর ফ্লোরাল ডিজাইনে হাইলি ডেকোরেটেড।

মজার ডিজাইন হলো এটা। ব্রটিশ শাসনের প্রতীক হিসাবেই কি এই ভিক্টোরিয়ার মুকুট আর পতাকা নির্মান করেছিল শিল্পী!


বেশির ভাগ বাড়ির পিলারেই রয়েছে ফ্লোরাল ডিজাইনের এবাকাস (পিলারের উপরের অংশ)।


আলো হাওয়া খেলার জন্য রান্দার উপরে কাঠের খরখরি।


এই প্যালেসের পুরো কার্নিশ আর দরজা জানালার প্যানেকে এখনও চমৎকার স্টাকো ফ্লরাল ডেকোরেশন। একসময়ের মলমলের পর্দা ঝুলানো হতো যে বাতায়নে সেখানে আজ কাঠকুটোর আব্রু!
আরেকটা বিশেয দ্রষ্টব্যের কথা তো বলাই হলো না, সেটা হলো বিরুলিয়ার শতবর্যী এই বট গাছ। কত ইতিহাসের নীরব সাক্ষী।

এখানের এই বটগাছটিরই ছবি বড় করে ঝোলানো আছে কলকাতায় অবস্থিত ইন্ডিয়া তথা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয়ের প্রধান শোরুমে। বটগাছটি গ্রাম থেকে বিচ্ছিম্ন হলেও একেবারে কাছাকাছি।

প্রতি বাংলা বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখে মেলা বসে বটতলায় শান্ত চুপচাপ এ বিরুলিয়া গ্রামে।


কি যাবেন নাকি বেড়াতে?
উত্তরা, আবদুল্লাহপুর থেকে আশুলিয়া বাঁধকে ডানে রেখে ধাউর রোড (মিরপুর বাঁধ রোড) ধরে মিনিট পনেরো যাবার পর বিরুলিয়া ঘাট পরবে, এখানে নামতে হবে। নাস বা ম্যাক্মি যায়। মিরপুর থেকেও যাওয়া যাবে একই রাস্তাতায়, এরপর পশ্চিম দিকে বাঁধ থেকে নেমে একটু হাঁটলেই খেয়ানৌকা। নৌকা পার হলেই পৌছে যাবেন প্রাচীন সেই জনপদে, যেখানে প্রকৃতি এখনও উজার হাতে তার নির্মল সৌন্দর্য্যে সাজিয়ে রেখেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:০৭
১০৩টি মন্তব্য ১০৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×