somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একাত্তরের গণহত্যা : যমুনার পূর্ব-পশ্চিম

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৮:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাত থেকে শুরু করে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পনের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের সব জায়গায় মানবেতিহাসের এক জঘন্যতম হত্যাকান্ড চালায়। নিরাপরাধ নিরস্ত্র জনসাধারণের উপর ঝাপিয়ে পরে তারা আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে, আর এদের সাথে যোগ দেয় এদেশের কিছু দালাল, রাজাকার, আলবদর আর আলশামসরা।
আমাদের নতুন প্রজন্মের অনেকেই জানেন না ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীতাকারী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী, রাজাকার ও আলবদরদের পরিচয় কিংবা তাদের কার্যকলাপ।
১৯৭১ সালে খুলনায় সর্বপ্রথম রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়েছিল। জামায়েত ইসলামীর তৎকালীন শুরা সদস্য একেএম ইউসুফের নেতৃত্বে ৯৬ জন জামায়ত কর্মী নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠনের পরপরই দেশের সর্বত্র এই বাহিনী তৈরি হতে থাকে। জুন মাসে টিক্কা খান "পূর্ব পাকিস্তান রাজাকার অর্ডিন্যান্স ১৯৭১' জারি করেন'। রাজাকারদের ছোট ছোট ব্যাচে অল্পদিনের অস্ত্র ট্রেনিংও দেয়া হয়েছিল।
আলবদর বাহিনী' তৈরি হয় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে ১৯৭১ এর ২২ এপ্রিল জামালপুরে। ময়মনসিংহ জেলা ইসলামী ছা্ত্র সংঘের তৎকালিন সভাপতি মুহাম্মদ আশরাফ হোসাইনের নেতৃত্বে। পরিক্ষামূলক ভাবে সারা ময়মনসিংহ জেলায় ইসলামী ছা্ত্র সংঘের কর্মীদের আলবদর বাহিনী হিসাবে সংঘঠিত করে সশস্ত্র ট্রেনিং দেয় হয়, যার সাংগঠনিক পরিচালক ছিল বর্তমান জামায়েত ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক কামরুজ্জামন!

এই সব কুলাঙ্গারদের সহায়তায় সে সময়ে পাকি হানাদার বাহিনী নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়েছিল শহরে-বন্দরে-গ্রামে, বধ্যভূমিতে পরিনত হয়েছিল বাংলাদেশ। উনিশশ একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কতৃক যমুনা নদীর পূর্ব ও পশ্চিম পারের গনহত্যার কিছু ঘটনা ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরতে চাই........

মধুপুর গণহত্যা

১৯৭১ সালের ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকেই মধুপুরের ছা্ত্র যুবকেরা মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষন নিতে থাকেন। মধুপুরের তৎকালিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মালেক খুব গোপনে এই ট্রেনিং এর জন্য একটা করে রাইফেল দিতেন গভীড় রাতে, আর ভোর রাতে জমা নিতেন। আনসার সদস্য বেলায়েত হোসেন এবং ইপিআর সদস্য এম মনসুর আলীর নেতৃত্বে ট্রেনিং চলতে থাকে।
১৯৭১ সালের ১৩ই এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটা গ্রুপ মধুপুর বাজার এলাকা রেকী করে যায়। হামলা হতে পারে আনুমান করে তখন সদ্য ট্রেনিং প্রাপ্ত মুক্তি বাহিনীরা এদের প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৪ই এপ্রিল হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিকামী এই সাধারণ যোদ্ধাদের ছোটখাট একটা সংঘর্ষ হয়, কিন্তু সংখ্যায় কম থাকার কারণে তাঁরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। ১৯ এপ্রিলের মধ্যে বেশ কয়েক গাড়ি পাকি সৈন্য এসে মধুপুরে অবস্থান নেয়, এই সময়ে মধুপুরে এরা বিমান থেকে গুলিও বর্ষন করে। কয়েকদিনের মধ্যে ময়মনসিংহ, জামালপুর, টাংগাইল অঞ্চল পাকিদের সাবজোনে পরিনত হয়।
পরবর্তী সময় থেকে বিজয়ের আগ পর্যন্ত দেশীয় রাজাকার আর আলবদর বাহিনীর সহায়তায় মধুপুরের অগণিত সাধারণ মানুষ গণহত্যার স্বীকার হয়। এলাকাবাসীর মতে শুধু মাত্র মধুপুর বধ্যভূতিতেই প্রায় ৯৩১ জন নিরাপরাধ মানুষকে অমানুষিক ভাবে হত্যা করে তারা।

মধুপুরের কালমাঝি গ্রামের অনুমানিক ২০ জন সাধারণ মানুষকে একদিনে বেনোয়াট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে পুন্ডুয়া মোড়ের জব্বারের কুপে ফেলে দিয়েছিল রাজাকার সুবেদার মোস্তাক এবং মোয়াজ্জেম মৌলভী।

সেদিন এই বধ্যভুমি থেকে আহত অবস্থায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন মির্জাপুরের সাধন মন্ডল। বংশাই নদীতে ভেসে যাচ্ছিলেন তিনি, সেই অবস্থা থেকে তাকে বাড়িতে নিয়ে এসে চিকিৎসা করার অপরাধে চাপড়ি গ্রামের জনপ্রিয় ডাক্তার সুধাংশু সাহাকে রাজাকার মেছের মাওলানা ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে।


মহেড়া গণহত্যা

মহেড়া জমিদার বাড়ি, যেটা এখন পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, সেই বাড়ি নিশ্চয় অনেকেই দেখেছেন। ১৯৭১ সালের ১৪ই মে এই বাড়িতেই ঘটে যায় এক নিষ্ঠুর হত্যাযড়, লুটতরাজ। পুরো গ্রাম হয়ে যায় বিধ্বস্ত।
সেদিন এই জমিদার বাড়ির চৌধুরি লজের সামনে লনে দাড় করিয়ে হত্যা করা হয়েছিল জমিদার বাড়ীর গৃহবধু যোগমায়া চৌধুরানী সহ আর ৭ জনকে।

মুক্তাগাছা গণহত্যা

১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল মুক্তাগাছা প্রবেশ করে পাকি বাহিনী। সেদিনই তারা মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি সহ আশেপাশের বাড়ি গুলোতে লুটপাট চালায়, আগুন ধরিয়ে দেয়। হত্যা করে জমিদার বকুল কিশোর অচার্য্য চৌধুরী কে। এরপর ১০ই ডিসেম্বর পর্যন্ত এরা মুক্তাগাছার বিভিন্ন এলাকায় রাজাকার কমান্ডার দুই ভাল চান এবং সুরুজের প্রতক্ষ সহযোগীতায় গণহত্যা চালিয়ে প্রায় ২০০ লোককে হত্যা করে!
মুক্তাগাছার বনবাংলা গ্রামের অসম্প্রদায়িক চেতনার এক মানুষ ছিলেন শহীদ সন্তোষ ধর। ১৯৭১ সালের ১ সেপ্টেম্বরে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে রাজাকার কেরামত আলী তালুকদার কয়েকজন রাজাকারের সহায়তায় সন্তোষ ধরের গরু চুরি করে নিয়ে যায়, এরপর পরিকল্পিত ভাবে সেই গরু ফেরত দেবার কথা বলে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে বিজয়পুর বাজারে। সেখানে প্রকাশ্য দিনের বেলায় সন্তোষ ধর এবং জগদীশ সিং কে মাটিতে ফেলে চেপে ধরে ব্লেড দিয়ে শরীরের চামড়া চিড়ে রক্তাক্ত শরীরে মরিচ আর লবন ছিটিয়ে সেই বর্বর রাজাকারের দল। তাদের আর্ত চিকৎারে কেপে ওঠে পুরো এলাকা, কিন্তু কেউ তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসার সাহস পায়নি।
একপর্যায়ে তারা কোন রকমে উঠে দৌড়াবার চেষ্টা করেল গুলি করে মেরে ফেলা হয় তাদের।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপড়ার চড়িয়া শিকার-পাটধারী গণহত্যা:

১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল, রবিবার, পাকিহানাদার বাহিনী আর তাদের সহযোগী রাজাকারদের এক নৃশংস হত্যাযঙ্গ চলেছিল সেদিন হাটিকুমরুলের আশেপাশের গ্রাম গুলোতে, শহীদ হয়েছিল ২০০ জনেরও বেশি সাধারণ মানুষ।

শেখ মুজিবর রহমানের ৭ই মার্চ ভাষণের পর থেকেই উল্লাপাড়া চড়িয়া শিকার গ্রামের কালু মাস্টার এবং আনসার কমান্ডার শাহাদাত হোসেনের তত্বাবধানে প্রাথমিক স্কুলের মাঠে গ্রামের যুবকদের প্রাথমিক ট্রেনিং চলতে থাকে। গ্রামের ডাক্তার শাহজাহান আলী, ডা: মজিবর রহমান এবং বাহাজ উদ্দীন আকান্দ এই ট্রেনিং এর সব ব্যায় বহন করতেন (এরা তিন জনই ২৫ এপ্রিল গণহত্যায় শহীদ হয়েছিলেন)।
দেশীর রাজাকার আলবদরদের মাধ্যমে এই সংগঠিত হবার কথা খুব তারাতারিই পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কানে পৌছে যায়। এবং এরা ২৫ এপ্রিল সরাসরি এই সব গ্রাম অতর্কিতে আক্রমন করে, চালায় মর্টার শেল আক্রমন। অপ্রস্তুত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ ভেঙে তারা ছোট ছোট দলে সারা গ্রামে মহল্লায় মহল্লায় আক্রমন চালাতে থাকে।
ভীত সন্ত্রস্ত মানুষ আশেপাশের জঙ্গল, কবরস্থানে লুকিয়ে আত্মরক্ষয়ার চেষ্টা চালায়। হানাদারেরা সেখানে তাদের ঘিরে ফেলে, এবং বেড়িয়ে আসলে হত্যা করা হবে না বলে আশ্বাস দেয়। রাজকারদের এই আশ্বাস বানী শুনে আস্তে আস্তে মানুষজন জঙ্গল, কবরস্থান থেকে বের হয়ে আসলে, তাদের মন্ডল বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানে তাদের পানি খেতে দেয় পাকিরা। কিন্তু এদের মনের মধ্যে যে ভয়ংকর সাপটা আছে, তার অস্তিত্ব তখনও টের পায়নি সেই সরল মানুষ গুলো। আস্তে আস্তে আশেপাশের লুকিয়ে থাকা গ্রামবাসীরাও এদের সাথে যোগ দেয়।
'রাস্তায় বড় বড় গাছ কেটে বেরিকেট দেয়া আছ, সেগুলো সরাতে হবে" এই কথা বলে তাদের সবাইকে নিয়ে যায় পাশের সরকার বাড়ীর জঙ্গলের মধ্যে ফাঁকা জায়গায়। এখানে সবাইকে বৃত্তাকারে বসিয়ে কালেমা পড়তে বলে, কালেমা পড়া শেষ না হতেই ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে অনুমানিক ১৩৮ জন কে।

এই শহীদের অধিকাংশকেই কবর দেয়া সম্ভব হয়নি। পরদিন অল্প কিছু লাশ গ্রামের মানুষ মাটি চাপা দিয়েছিল জানাজা ছাড়াই।


টাংগাঈল ভূঞাপুরের ছাব্বিশা গণহত্যা


ভূঞাপুরের সিরাজকান্দিতে ধলেশ্বরী নদীর উৎসমুখে যমুনা নদীতে পাকি হানাদার বাহিনীর অস্ত্র বোঝাই 'এস ইউ ইঞ্জিনিয়ার এল সি-৩' এবং 'এস টি রাজন' নামের দু'টি জাহাজ দখল আর বিপুল পরিমান গোলা-বারুদ দখল আর ধ্বংস করে মুক্তিবাহিনীর বীর যোদ্ধারা ১১ ই আগস্ট। এতে করে এই অঞ্চলটা পাকিস্তানী হাইকমান্ডের টার্গেটে পরিণত হয়।
তবে বারবার মুক্তিযোদ্ধাদের নিচ্ছিদ্র প্রতিরোধের কারণে তারা ভূঞাপুর আক্রমনের সুযোগ পাচ্ছিল না।
এরই সূত্র ধরে ১৭ নভেম্বর পাকি বাহিনী আতর্কিতে আক্রমন করে ভূঞাপুরের ছাব্বিশা গ্রামে, গ্রামটিকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে তারা।
মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সেদিন সাধারণ মানুষও প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিল। তাদেরই একজন বীর শহীদ বিশু মন্ডল।
১৭ ই নভেম্বর, গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে চলেছে পাকিদের তান্ডব, মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে, এর মধ্যে বিশু মন্ডলের বাড়িত দুই পাকি সেনা ঢুকলে, তিনি খালি হাতেই তাদের উপর ঝাপিয়ে পরেন। সুঠামদেহী বিশু মন্ডল দুই হাতে দুই পাকি সৈন্যের গলা চেপে ধরে তার মা শাহাতন বেগম কে ঘর থেকে দা আনতে বলেন।
শাহাতন বেগমের দা আনতে দেরী হওয়ায় বিশু মন্ডল কৌশলে এদের অস্ত্র কেরে নিয়ে বাড়ির সেটা দিয়ে পিটিয়ে বাড়ির পুকুরে নামান, সেখানে এদের চুবিয়ে মারার চেষ্টা করেন।
কিন্তু ইতোমধ্যে পাকি সৈন্যদের ছোট একটি দল সেখান এসে পরে, তারা অকুতভয় এই যোদ্ধাকে প্রথমে বেয়নট দিয়ে খুচিয়ে মেরে, তাঁর গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়।


ছাব্বিশা গণহত্যায় সেদিন শহীদ হয়েছিলেন আনুমানিক ৩২ জন, এরমধ্যে একজন ১৭ দিন বয়সী শিশুও ছিল। এই শিশু কণ্যা আর আর মাকে পাকি পশুরা আগুনের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল।

পাবনার হাদল-কালিকাপুর গণহত্যা


পাবনা জেলার একটা প্রত্যন্ত গ্রাম হাদল-কালিপুর। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আক্রমন থেকে রক্ষা পাবার জন্য পাবনা সদর, উল্লাপাড়া, ঈশ্বরদী প্রভৃতি জায়গা থেকে অনেক লোকজন এই গ্রামকে নিরাপদ মনে করে এখানকার বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এমনকি যাদের কোন আত্মীয় স্বজন নেই এমন অনেক নারী পুরুষ গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির গোয়ল ঘর, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ আশ্রয় নিয়েছিল।
শহর থেকে আশা অনেক লোকজনের কাছেই স্বর্ণালংকরার, টাকা পয়সা ছিল, যেগুলোর হাতানোর লোভে পরে দেশীয় দালালেরা। এরই পরিকল্পানার অংশ হিসাবে এরা গোপনে হাদল-কালিকাপুরে মুক্তিযোদ্ধারা সমবেত হয়েছে বলে খবর দেয় পাবনা বড়াল ব্রিজ হানাদার ক্যাম্পে।

৭ই মে ১৯৭১, ভোর রাতে বড়াল ব্রীজ হানাদার ক্যাম্পের প্রায় ৩০০ পাকি সেনা আর দেশীয় দালালেরা হাদল-কালিকাপুর গ্রাম দুটোকে ঘিরে ফেলে। ঘুমিয়ে থাকা নিরস্ত্র লোকজনের উপর ঝাপিয়ে পরে হায়নার দল, ঘর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়, ধর্ষিত হয় শতাধিক নারী। বেলা এগারোটা পর্যন্ত চলে তাদের এই তান্ডব।
সেদিন দখলদার বাহিনীর এই নির্মমতায় ঠিক কতজন মানুষ শদীদ হয়েছিলেন তার সঠিক হিসাব আজও করা যায় নি, তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য মতে এই সংখ্যা প্রায় নয় শতাধিক।



মধুপুর, মহেড়া, মুক্তাগাছা, ভূঞাপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ গণহত্যায় সহযোগী রাজাকার আলবদরেরা:

১। হাফেজ আবদুল গফুর: মধুপুর ভট্টবাড়ির এই রাজাকার কমান্ডার বর্তমানে মধুপুর উপজেলার একটি মসজিদের ইমাম!

২। মোয়াজ্জেম মৌলভি: রাজাকার, পিতা ছিলিম উদ্দীন, কালমাঝি, মধুপুর।

৩। মেছের মওলানার কোন খবর পাওয়া যায়নি।

৪। আবদুস সামাদ: রাজাকার, পিতা-তোয়াজ উদ্দীন, কালমাঝি, মধুপুর।

৫।শাহজাহান আলি: রাজাকার' পিতা- আফসার উদ্দীন , কালমাঝি, মধুপুর।

৬।মসলিম উদ্দিন: এই রাজাকার মুক্তাগাছার অনেক হিন্দুকে জোর করে মুসলমান বানিয়েছিল।

৭।কুতুব উদ্দীন মওলানা: রাজকার, মুক্তাগাছা সদর। স্বাধীনতার পর পর বিক্ষুব্দ জনতার গণধোলাই তে মারা যায়।

৮। দানেশ আলী: মুক্তাগাছা সদর।

৯। আড্ডু বিহারী: আটানি বাজার, মুক্তাগাছা। এই রাজাকার প্রকাশ্য দিবালোকে তারিটী পূর্বপাড়ার কাজিম উদ্দীন মন্ডলকে মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করার অপরাধে পায়ে দড়ি বেধে বুক ও পিঠের চামড়া তুলে নিয়ে হত্যা করেছিল। স্বাধীনতার পরে জনতার রোষে সে মারা যায়!

১০। কোরবান আলী: আলবদর কমান্ডার। চর কৈজুরি, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ। একাত্তররে কোরবান আলী পূর্ব পাকিস্তান জামায়েত ইসলামীর প্রচার সম্পাদক ও শান্তি কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিল। তার নিজের বাড়িতেই ছিল হানাদার ক্যাম্প।
১৯৭১ এর ঘৃনিত কর্মকান্ডের জন্য বাংলাদেশ সরকার এর নাগরিকত্ব বাতিল করেছিল, ১৯৭০, ১৯৯১, ১৯৯৬ সালে এই রাজাকরা ব্যারিস্টার কোরবান আলি চৌহালি-শাহজাদপুর নির্বাচনী এলাকায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে।

১১। আশরাফ মওলানা: রাজাকার কমান্ডার, নিকরাইল, ভূঞাপুর। ১৯৭০ সালে জামায়েত ইসলামীর মনোনায়নে জাতীয় পরিষদে নির্বাচন করেছিল। ১৯৭১ এর হানাদারদের দোসর হিসাবে হত্যা, ধর্যণ আর লুটপাটের নেতা এই রাজাকারের নাম কাদের সিদ্দীকির স্বাধীনতা-৭১, মুনতাসীর মামুনের 'মুক্তিযুদ্ধ কোষ' এও উল্লেখ আছে। কয়েক বছর আগে ইনি পলশিয়া রানী দিনমনি উচ্চ বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকতার পদ থেকে অবসর নেয়। বর্তমানে স্থানীয় জামায়াতে ইসলামী নেতা।

১২। শাহজাহান চৌধুরী: রাজাকার কমান্ডার, ঘাটাইল, টাংগাইল। বাবা ইদ্রীস চৌধুরী ইউনিয়ন পরিষন চেয়ারম্যান ছিলেন যুদ্ধকালিন সময়ে।
দেশ স্বাধীন হবার পরে অত্যাচারীত জনগন রাজাকার শাহজাহান চৌধুরিকে ধরে গাছের সাথে ঝুলিয়ে পিটিয়ে ছিল! রাজাকারে যোগ দেবার কারণে তার বাবা ইদ্রিস হোসেন চৌধুরি তাকে ত্যাজ্য পুত্র করেছিলেন। বর্তমানে সে এলাকায় ঘটকালি পেশায় জড়িত আছে।

চলবে.........


তথ্য: সকল তথ্য শফি উদ্দীন তালুকদার রচিত "একাত্তরের গণহত্যা: যমুনার পূর্ব পশ্চিম" থেকে নেয়া। বইটি পাওয়া যাবে কথাপ্রকাশে, আজিজ সুপার মার্কেট, ঢাকায়।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:৫০
৮০টি মন্তব্য ৮০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×