somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ভোগান্তি

২৩ শে নভেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ প্রথম আলোতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় ছাত্র – ছাত্রীদের ভোগান্তি নিয়ে কলাম ছেপেছে। লেখাটি এখানে দিয়ে দিলাম---



পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি
শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা কে ভাবে
মুনির হাসান



বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সে সঙ্গে শুরু হয়েছে ভর্তি হতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি। কয়েক বছর ধরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম সহজ করার জন্য অনেকেই বলে আসছে; কিন্তু এর কোনোটিই কর্তৃপক্ষের কানে প্রবেশ করেনি।
গণিত অলিম্পিয়াডের কারণে আমাকে সারা দেশ ঘুরে বেড়াতে হয়, দেখা হয় অনেক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকের সঙ্গে। এমনই একজন সাতক্ষীরার মেয়ে সায়রা। সায়রা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ঢাকায় এসেছে মামা ও মামির সঙ্গে। সায়রার মামা দুঃখ করে বললেন ভাগিনীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ইচ্ছা পূরণ করার জন্য এই নিয়ে তাঁকে দুইবার ঢাকায় আসতে হয়েছে। ১২ তারিখ তাঁরা ঢাকায় এসে ফকিরাপুলের একটি হোটেলে উঠেছেন। তিনি দুইদিন ছুটি নিয়েছেন অফিস থেকে! দুঃখ করে বললেন, "আমি আর আমার স্ত্রী এবার ডিভি লটারির ফরম পূরণ করেছি। সেখানে অনেক তথ্য দিতে হয়েছে, ছবিও দিতে হয়েছে। কিন্তু তা সাতক্ষীরা থেকেই করতে পেরেছি। কিন্তু সায়রার ফরম তোলার আর জমা দিতে ঢাকায় আসতে হলো।"
মামার সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে সায়রা বলল, "আমি ভেবেছিলাম এ বছর থেকে অন্তত ফরম নেওয়ার জন্য আর ঢাকায় আসতে হবে না। এসএসসি আর এইচএসসি পরীক্ষার বিভিন্ন কাগজ ফটোকপি করার জন্য অহেতুক টাকা খরচ হবে না। তা আর হলো কই।" তবে এ পর্যন্ত যে কয়টা ফরম ও পূরণ করেছে, তাতে এমন কোনো তথ্য নেই যা শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটারে নেই! ভর্তি পরীক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে ফরম পূরণ করায়, তার সব তথ্যই বোর্ডের কম্পিউটারে থাকে। কেবল থাকে না তার বিষয় নির্বাচনের তথ্য।
শিক্ষার্থীর জন্য ভর্তি পরীক্ষার প্রথম বড় হয়রানি হলো, এই ফরম জোগাড় করা। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি নগদ টাকা দিয়ে সংগ্রহ (যেমন, বুয়েট) করতে হয়। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্ধারিত ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে (যেমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) কেবল ফরম সংগ্রহ করা যায়। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেবল তাদের ক্যাম্পাসের একটি ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে। তথ্যপ্রযুক্তির এই অগ্রসরতার যুগে শিক্ষার্থীদের এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়া আসলে খুবই সহজ। প্রথমত, কাগজের ফরম তুলে দিয়ে ইন্টারনেটে ওয়েবসাইটভিত্তিক ফরম চালু করা। ওই ফরমে শিক্ষার্থীদের সব তথ্য এন্ট্রি করার দরকার হবে না। কারণ, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেসব তথ্য এই ওএমআর এবং নানা রকম ফরম দিয়ে সংগ্রহ করে, এর সবই শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটারে রয়েছে। শিক্ষা বোর্ডের ডেটাবেইস ব্যবহার করে সেখান থেকে যাচাইকৃত তথ্যই একেবারে নিয়ে আসা যাবে। এতে ফরম ছাপা, ডেটা এন্ট্রি ও যাচাইয়ের কাজ কমে যাবে।
ভর্তি পরীক্ষার ফি জমা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সারা দেশে বা জেলা শহরগুলোতে অনলাইন ব্যাংকিং সুুবিধা আছে এমন যেকোনো একটি বা একাধিক ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। শিক্ষার্থীরা তাদের ভর্তি পরীক্ষার ফি এই ব্যাংকের যেকোনো শাখায় জমা দেবে। ব্যাংক থেকে সে তথ্য পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্ভার তা যাচাই করে নিতে পারবে। এমনকি ইচ্ছা করলে মোবাইল ফোনেও এই ফি নেওয়া যেতে পারে, যেমনটি চট্টগ্রামের বিদ্যুৎগ্রাহক বা ঢাকার তিতাস গ্যাসের গ্রাহকেরা পারেন।
এ পদ্ধতির ব্যবহারে শিক্ষার্থীর এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উভয়ের অনেক উপকার হবে। কয়েক লাখ শ্রমঘণ্টা, অহেতুক কিছু কাগজ ফটোকপি করা, ফরম জোগাড়ের জন্য মামাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শহরে পাঠানো ইত্যাদি, আর ভর্তি হতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফরমের দাম অন্তত পক্ষে ৩০ শতাংশ কমবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির দ্বিতীয় বিড়ম্বনা হলো, আলাদাভাবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়া। অথচ সারা দেশের মেডিকেল কলেজগুলোর ভর্তি পরীক্ষা কিন্তু একসঙ্গে হয়। ফলে সায়রার মতো মেয়েরা খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়তে পারে। একসময় দেশের চারটি বিআইটিতেও একই ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু যেই ওরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়েছে, তখনই ওদের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করতে হয়েছে! মেডিকেলের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু করা কি অসম্ভব?
এ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। তবে মেডিকেল কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি প্রক্রিয়ার বড় পার্থক্য হলো, মেডিকেলের ভর্তি কর্মকান্ড পরিচালনা করে সরকারি প্রতিষ্ঠান। ফলে অনেকে এ বিষয়ে নানা উপদেশ দিতে পারেন এবং আশির দশকের একেবারে শুরুতে (নাকি তারও আগে!) ওই উপদেশ ও পরামর্শগুলো শুনে সরকার সরকারি মেডিকেল কলেজে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু করতে পেরেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন পারবে না?

# মুনির হাসান: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।





প্রতি বছরই দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ঘটনা ঘটছে। একজন মধ্যবিত্ত ছাত্রকে এ সময় কম পক্ষে ৩-৪ হাজার টাকা খরচ করতে হয় ভর্তি ফরম সংগ্রহ করতে। এছাড়া টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত সারাদেশ সফর করে পরীক্ষা দেয়ার খরচ তো আরও বেশি। এরই মধ্যে ব্যবসা খুলে বসে কিছু প্রতিষ্ঠান, যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম কিনে দেবার বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা নেয়। আর তাতেই শেষ না, অনেকাংশেই তারা ছাত্র – ছাত্রীদের সাথে প্রতারণা করে। দেশের তাবৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য অবস্থা সম্ভবত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে । এখানে প্রতিটি বিষয়ের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ফরম তুলে পরীক্ষা দিতে হয়। এবারে সেখানে প্রতিটি ফরমের দাম ছিল ১০০ টাকা। যা তুলনা মূলক ভাবে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে অনেক বেশি। জাহঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ও একই অবস্থা।


আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন বিষয়ে কেমন(মানে MCQ, নাকি বর্ণনা মূলক, নাকি এক লাইনে উত্তর,নাকি …………………..) করে পরীক্ষা নেবে তার লিষ্ট করতে গেলে সেটা ৩২ খন্ডের এনসাইক্লোপিডিয়ার আকার নেবে।

আরও আছে, কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র – ছাত্রীদের কাছে উচ্চ মূল্যে ফরম কিনিয়ে নিয়ে শেষে পরীক্ষা দিতে দেয়না HSC GPA -র ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক ছাত্র – ছাত্রীকে পরীক্ষায় বসানোর অজুহাতে(যেমন বলা হয় HSC GPA-র ভিত্তিতে প্রথম ৫০০০ জনকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে)। উল্লেখ্য এসব বিশ্ববিদ্যালয় ফরম তোলার জন্য অনেক কম HSC GPA নির্ধারন করে দেয়। এটা টাকা কামানোর নতুন পদ্ধতি।

এছাড়া ও রয়েছে একই দিনে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা। যখন পরীক্ষারথী কে বেছে নিতে হয় যেকোন এক বিশ্ববিদ্যালয়কে।

এসব বিষয় থেকে উত্তরন অতি প্রয়োজন। আর সেজন্য প্রয়োজন মুক্ত আলোচনার। আশা করি ব্লগাররা বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্ডারগ্রাজুয়েট লেভেলে ভর্তি প্রক্রিয়া আলোচনা করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০০৮ ভোর ৪:১৬
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×