somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিল্লীর কুতুব মিনার - ছবি ব্লগ

০৩ রা জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কলকাতার হাওড়া স্টেশন থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসে নয়া দিল্লী পৌছলাম, চার ঘন্টা পর পুরাতন দিল্লী থেকে জম্মুর ট্রেন শালিমার এক্সপ্রেসে চড়তে হবে। সুতরাং চার ঘন্টা সময় হাতে পেলাম দিল্লী দেখার জন্য। হাসান ভাইয়ের পরামর্শে মুক্তার ভাইয়ের চেনা পথে আমরা ছুটে চললাম মেট্রোতে। শুক্রবার থাকায় ভাবছিলাম দিল্লী জামে সমজিদে জুমার নামাজটা আদায় করবো, দিল্লী শহর থেকে ১৪ কিলো মিটার দক্ষিণের কুতুব মিনার দেখার পর দিল্লী জামে মসজিদে যাওয়ার আর সময় হয়ে উঠেনি, সোজা শালিমার এক্সপ্রেস। তো স্বল্প সময়ে কুতুব মিনারকে যেটুকু দেখতে পেরেছিলাম তা নিয়েই আজকের ছবি ব্লগ।

কুতুব মিনার দিল্লী শহর থেকে ১৪ কিলো মিটার দক্ষিণে অবস্থিত একটি বিজয়স্তম্ভ। এটি মুসলমানদের ভারত বিজয়ের স্মারক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাত শ বছর ধরে। সুলতান মুহাম্মদ ঘুরির সেনাপতি ও প্রতিনিধি কুতুব-উদ-দিন আইবেক ১১৯২ খ্রিষ্টাব্দে চৌহান রাজা পৃথ্বিরাজকে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে পরাজিত করেন। এ বিজয়ের অব্যাবহিত পরে তিনি দিল্লী অধিকার করে কুওয়াতুল ইসলাম নামে একটি মসজিদ এবং এর সংলগ্ন একটি মিনার নির্মাণ করেন। এ মিনারটি ভারতবর্ষের মুসলিম ঐতিহ্যের এক ঐতিহাসিক নিদর্শন। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে নির্মিত কুতুব মিনার ভারত বর্ষের সর্বোচ্চ টাওয়ার। এর উচ্চতা ৭২.৫ মিটার। মিনারের অভ্যন্তরে উপরে উঠার সিঁড়ি রয়েছে ৩৭৯ টি। নিচের দিকে মিনারের আয়তন ১৪.৩ মিটার এবং উপর দিকে ব্যাস ২.৭৫ মিটার।



(২) টিকেট কেটে প্রধান গেইট দিয়ে ঢুকে পড়লাম আমরা সবাই।


(৩) প্রধান গেইট দিয়ে ঢুকেই হাতের বামে এমন সুন্দর সমতল মাঠ, তারপরেই রয়েছে ঐতিহাসিক কুতুব মিনার।


(৪) নিম পাতার ফোকর দিয়ে দেখা যাচ্ছে আমাদের কাঙ্খিত সেই কুতুব মিনার।


(৫) এর আশে পাশে আরও বেশ কিছু প্রচীন এবং মধ্যযুগীয় স্থাপনা এবং ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, যারা একত্রে কুতুব কমপ্লেক্স হিসেবে পরিচিত। এই কমপ্লেক্সটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাবদ্ধ হয়েছে এবং দিল্লীর অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এটি।


(৬/৭) ঢোকার মুখেই আমাদেরকে স্বাগত জানালো কিছু কাঠ গোলাপ ও অন্য নাম না জানা ফুলেরা।




(৮) গাছের পাতার ফাঁকে বসে থেকে থেকে ডেকে উঠছিলো কয়েকটি টিয়া পাখি।


(৯) কুতুব মিনারের পাশেই আরো একটি অসমাপ্ত মিনার।


(১০/১১) ইলতুৎমিস এর সমাধি।




(১২/১৩) মধ্যযুগীয় স্থাপনা এবং ধ্বংসাবশেষগুলোর কিছু ছবি।




(১৪) কুতুব মিনারকে ঘিরে গড়ে উঠেছে মনোরম একটি কমপ্লেক্স। ১০০ একর জমির উপর স্থাপিত এ কমপ্লেক্সে রয়েছে কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদ, আলাই মিনার, আলাই গেট, সুলতান ইলতুৎমিশ, সুলতান গিয়াস উদ্দীন বলবন, সুলতান আলাউদ্দিন খলজী ও ইমাম জামিনের সমাধি ও লৌহ পিলার। কিন্তু এগুলোর মধ্যে কোনটা যে কি তা জানার মতো সময় হয়ে উঠেনি।


(১৫/১৬) প্রাচীন ভারতীয় লৌহকারদের দক্ষতার এক অসাধারণ নিদর্শন দিল্লির কুতব কমপ্লেক্সে অবস্থিত এই লৌহ পিলার। মনে করা হয়, ১৬০০ বছর আগে তৈরি করা হয় এই লৌহ স্তম্ভটি। স্তম্ভটির উচ্চতা মোট ২৩ ফুট, আট ইঞ্চি, যার মধ্যে তিন ফুট আট ইঞ্চি রয়েছে মাটির নীচে। তবে আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এত বছর পরেও একটুও জং ধরেনি এই স্তম্ভে। বিশেষজ্ঞরা অনেকেই এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এখানে ব্যবহৃত উন্নতমানের লোহা এবং তার বিজ্ঞানসম্মত নির্মাণ কৌশলের কথা। পাশাপাশি আরও অনেক তথ্যও তুলে ধরেছেন তাঁরা। এই স্তম্ভের প্রাচীনতম লিপিটি সংস্কৃত ভাষায়, ব্রাহ্মীলিপিতে খোদিত রয়েছে স্তম্ভের গায়ে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, এর মধ্যে প্রাচীনতম লেখাটি গুপ্ত রাজাদের রাজত্বকালে। এই লিপিটির তথ্য অনুসারে স্তম্ভটি উত্‌সর্গ করা হয়েছে ভগবান বিষ্ণুকে।




(১৭/১৮) লোহিত বেলে পাথর দিয়ে তৈরি কুতুব মিনারের গাত্রে আকর্ষণীয় ক্যালিওগ্রাফীতে উৎকীর্ণ রয়েছে পবিত্র কুরআনের আয়াত। এছাড়া মিনারের প্রাচীর গাত্র নানা প্রকারের অলঙ্করণ দ্বারা শোভিত। ভারত বর্ষের প্রথম মুসলিম শাসক ১১৯৩ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান কুতুব উদ্দিন আইবেক কুতুব মিনারের গোড়া পত্তন করেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে ১ম ও ২য় তলা নির্মিত হয়। পরবর্তী সময়ে (১২১১-৩৬) সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মিনারের ৩য় ও ৪র্থ তলা এবং শেষে সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের হাতে ৫ম তলা নির্মাণ সমাপ্ত হয়। ঐতিহাসিকদের অভিমত হচ্ছে কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদ-এর মুসল্লিদের সুবিধার্থে আযান দেওয়ার জন্য কুতুব মিনার ব্যবহৃত হতো। ১ম তলা হতে আযান দেয়া হতো নিয়মিত। সর্বাধিক উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে এটাকে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার হিসেবে ব্যবহারের উপযোগিতা লক্ষণীয়।
ভূ কম্পনের কারণে কুতুব মিনার বেশ কবার বিধ্বস্ত হলেও মুসলিম শাসকবর্গ পুন নির্মাণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নিতে বিলম্ব করেননি। ১৫০৫ সালে উপরের ২টি তলা ভূ কম্পণের কারণে বিধ্বস্ত হলে সুলতান ইলতুৎমিশ পুননির্মাণের উদ্যোগ নেন। ১৭৯৪ সালে ভূমিকম্পের ফলে এর কিয়দাংশ ক্ষতিগ্রস্থ হলে সুলতান সিকান্দর লোদী এর সংস্কারের ব্যবস্থা করেন।




(১৯) কুতুব কমপ্লেক্সের ভেতর দেখা পেয়েছিলাম একজন বোকা মানুষের, তিনি সব সময়ই কিছু বলতে চায় ;)


(২০) ফিরে আসার সময় কুতুব মিনার এভাবেই আমার ক্যামেরায় বন্দি হয়েছিল।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:৩১
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×