somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"Акула" / টাইফুন ক্লাস সাবমেরিন - আমেরিকার মুর্তিমান আত্বন্ক

২০ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৫:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সোভিয়েত আমলে আমেরিকা এবং পশ্চিম ব্লক সোভিয়েত ইউনিয়নের যেসব আবিস্কারে নিদারুন চমকে আত্বন্কে পড়েছিলো "Акула"/টাইফুন ক্লাস সাবমেরিন হল তার মধ্যে অন্যতম। এই ক্লাসের সাবমেরিন গুলো হল এ যাবৎ কালে নির্মিত দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সাবমেরিন।


১৯৭০ এর দশকে আমেরিকা একের পর এক এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার তৈরি করতে থাকে আর সোভিয়েত ইউনিয়ন এর ডিফেন্স এ বানাতে থাকে বিভিন্ন ক্লাসের সাবমেরিন ডেল্টা ক্লাস ,ব্যারিং ক্লাস ইত্যাদি।

কিন্তু সোভিয়েতরা চিন্তা করে এমন কোন কিছুর যার দ্বারা আমেরিকার ভুখন্ডে আঘাত করে তাদের অচল করে দেওয়া যাবে। সেই চিন্তার বাস্তবায়নের জন্য বেছে নেওয়া হয় সাবমেরিন যা কিনা থাকবে এন্টার্কটিকের নিচে এবং দরকার হলে বরফ ভেন্গে উপরে উঠে এসে একের পর এক আইসিবিএম ছুড়তে পারবে :-*
তৎকালিন সময়ে এই জাতীয় কোন সাবমেরিনের চিন্তা করাও বেশ কঠিন ছিলো কারন
প্রথমত, এন্টার্টিকের মত জায়গায় যেখানে গড়পড়তা ভাসমান বরফের পুরুত্ব ছিলো ৯ ফিট সেখানে বরফ ভেন্গে উঠার জন্য দরকার ছিলো ভয়াবহ শক্তিশালী বডি
২য়ত, পুরো আমেরিকা কে মোটামুটি অচল করতে যে পরিমান আইসিবিএম আর নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড দরকার তা একটা সাবমেরিন এ রাখা ছিলো বেশ কঠিন এবং ভয়ংকর ও বটে।
কিন্তু সোভিয়েতরা এই চিন্তা বাস্তবায়ন করেছিলো।
সোভিয়েত Rubin Design Bureau এই অসম্ভব চিন্তা বাস্তবায়নের জন্য একটা প্রযেক্ট হাতে নেয় যার কোড ছিলো Project 941। এই প্রযেক্টেই তৈরি হয় "Акула" ক্লাস সাবমেরিনের ডিজাইন যা পূরন করেছিলো প্রত্যেকটি অসম্ভব চিন্তাকে।


১৯৭০ দশকের এর শেষের এটি তৈরির সময় আমেরিকা টের পেয়েছিলো যে সোভিয়েতরা কিছু একটা বানাচ্ছে। তারা ধারনা করেছিলো নিউক্লিয়ার ক্লাস সাবমেরিন জাতীয় কিছু কারন তৎকালিন সময় দুই পরাশক্তির মাঝে নিউক্লিয়ার ক্লাস সাবমেরিন নিয়ে স্নায়ু যুদ্ধ চলচিলো। ১৯৮১ সালের ১২ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন "Акула" ক্লাস সাবমেরিনের ঘোষনা দেয়।ঘোষনার আগ পর্যন্ত আমেরিকা বা পশ্চিমা ব্লকের কেউ ধারানাও করতে পারেনি যে এত বিশাল সাবমেরিনের কথা।ক্রিসমাসের আগে ২০০টা নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড সহ ২০টা আইসিবিএম বাহি এই সাবমেরিনের ঘোষনা পশ্চিমাদের নিদারুন চমকে রীতিমত আত্বন্কে ফেলে দেয়। পেন্টাগনের বড়দিনের ছুটি বাতিল করে এই সাবমেরিনের উপর রিপোর্ট করতে বলা হয়।:D ন্যাটো এর এই সাবমেরিনকে রিপোর্ট করে "টাইফুন ক্লাস" নামে।


"Акула" / টাইফুন ক্লাসের বলতে গেলে সবই ইউনিক। এর পাওয়ার সিষ্টেম হিসাবে আছে
* ২টা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট যার প্রতিটা ১৯৮ মেগাওয়াটের :-* এবং
* ২টা ষ্টিম টারবাইন প্রতিটা ৩৭ মেগাওয়াট :-*
এটি লম্বায় ৫৭৪ ফিট (প্রায় ৬টা ফুটবল মাঠের সমান :-* ) এবং এর ডায়মিটার হল ৭৬ ফিট :-/ যা কিনা বর্তমান কালের অনেক যুদ্ধ জাহাজের থেকেও বেশি।

"Акула" / টাইফুন ক্লাসেরএর সবচেয়ে বড় বিষয় হল এর ক্রুদের জন্য নিরাপত্তা ব্যাবস্তা । কারন তৎকালিন নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড গুলো থেকে রেডিয়েশন হত এই ক্লাসে সাবমেরিন গুলোতে এই রেডিয়েশন থেকে ক্রুদের বাচাতে আলাদা শিল্ড দেয়া ছিলো।যা কিনা ঐ রেডিয়েশন কে বাইরে ঠেলে দিতো। ঐ শিল্ড গুলো আজও দুনিয়ার কাছে রহস্য। আমেরিকা কিংবা পশ্চিমারা এই শিল্ডের রহস্য জানার জন্য আজও একপায়ে খাড়া ।
এই সাবমেরিন একবার ডুব দিয়ে টানা ১৮০দিন এন্টার্টিকের ৪৫০ মিটার (১৪৬২.৫ ফিট) পানির গভীরে থাকতে পারত। যার ফলে এর অবস্তান বের করাও ছিলো অসম্ভব। আর উন্নত যোগাযোগ ব্যাবস্তার মাধ্যমে ৫৫০ মিটার গভীর থেকেও মস্কোর সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখত এই সাবমেরিন।
"Акула" / টাইফুন ক্লাসের ভিতরে ক্রুদের জন্য থাকা সুবিধাও ছিলো রীতিমত দেখার মতন।


ক্রুদের জন্য জিম থেকে শুরু করে সুইমিং পুল, হটওয়াটার পুল, কনফারেনস রুম সবই ছিলো। সার্ভিস কলে এন্টার্কটিকের ১২ ফিট বরফ ভেন্গে উঠার রেকর্ড ছিলো এই সাবমেরিনের।

"Акула" / টাইফুন ক্লাসের একটি সাবমেরিন ২০ টি আইসিবিএম (SLBM - Submarine-launched ballistic missile) ক্যারি করত এবং সবগুলোই ছিলো MIRV (Multiple independently targetable reentry vehicles) এনাবেলড। মোটমাট এই ক্লাসের একটা সাবমেরিন একাই ২০০টা নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ক্যারি করত এবং প্রয়োজনে ১ ঘন্টার মাঝে এই আইসিবিএন আর ওয়ারহেডের সাহায্যে এই সাবমেরিন একাই ২০০ শহর ধ্বংস করতে পারত:|
পেন্টাগনের রিপোর্টে বলা হয়েছিলো এই ক্লাসের ব্যাপারে বলা হয়েছিলো
"যদি নিউক্লিয়ার যুদ্ধের কারনে পৃথিবির পুরোটা ধ্বংসও হয়ে যায় তবে শেষ পান্চ দিয়ে জয় নিজের পক্ষে নিবে এই সাবমেরিনের ক্রুরা" :P

বিবরন:

টাইপ : ইন্টার ব্যালেস্টিক মিসাইল সাবমেরিন
অপসারিত ভর : ভেসে থাকা অবস্তায় ২৪৫০০ টন :|
ডুবে থাকার সময় ৪৮০০০ টন মাত্র :-*:-/
দৈর্ঘ: ৫৭৪ ফিট
ডায়ামিটার : ৭৬ ফিট
পাওয়াট প্লান্ট: * ১৯৮ মেগাওয়াটের ২টা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট :-*
* ২টা ষ্টিম টারবাইন প্রতিটা ৩৭ মেগাওয়াট :-*
গতি: ভেসে থাকাকালীন সময় ২৩ নট
ডুবে থাকাকালীন সময় ৩০ নট
আর্মামেন্ট: * ২০০টি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড সহ ২০ টি MIRVএনাবেলড আইসিবিএম(SLBM)
*২৪টা বিভিন্ন জাতের টর্পেডো (রেডি টু ফায়ার মোড)
*৮টা RPK-2 Viyuga ক্রুজ মিসাইল
*৬টা সারফেস টু এয়ার মিসাইল

১৯৮১ সালে ঘোষনার আগে থেকেই এই সাবমেরিন এন্টার্টিকের নিচে অবস্তান নিয়েছিলো আর তা আমেরিকান জানতে পেরেছিলো ১৯৮৫ এর পরে :D । সোভিয়েত ইউনিয়ন ভান্গার পরে আমেরিকা রাশিয়াকে প্রথম যে বিষয়ে চাপ দিয়েছিলো তা হল এই ক্লাসের সব সাবমেরিন ভান্গার জন্য। দুর্বল সেই সময়ে রাশিয়া চাপে পড়ে তাদের ২টি "Акула" / টাইফুন ক্লাসের সাবমেরিন ভেন্গে ফেলে। পরে পুতিন এসে এই ক্লাসের সাবমেরিন ভান্গা বন্দ্ধের নির্দেশ দেয়। এবং সাবমেরিন গুলোকে পুনরায় সার্ভিসে নিয়ে আসে।:D উইকি মোতাবেক Акула ক্লাসের সাবমেরিন মোট তৈরি হইছে ১৫টা। এর মধ্যে ২টা ভান্গা হইছে বাকি ১০টা সার্ভিসে আছে আর ৩ টা আছে রিজার্ভে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১০ সকাল ৭:৪২
৫০টি মন্তব্য ৪৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×