আস্সালামুআলাইকুম,
যুক্তরাজ্যে রামাদান এর শেষ দিন ছিল আজ।
যা চলে গেছে তার বন্দনা করে এখন আর লাভ নেই, কিণ্তু আমাদের মধ্যে যাদের আগামী রামাদান পাবার সৌভাগ্য হবে, তাদের জন্য শেখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ (হাফিযাহুল্লাহ) এর একটি বানী উল্লেখ করতে চাই, "রামাদান আল্লাহর পক্ষ থেকে কি দয়া, আপনাদের কেমন করে বোঝাই?"
ঈদ আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী উদযাপনের দিন। এই দিনে আমরা আল্লাহর অগনিত নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করি, রামাদান কবুল হওয়ার জন্য দোয়া করি আর ভুলে যাইনা সেই সব অবহেলিত মুসলমান ভাই-বোনদের যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের চেয়ে ভিন্ন কোন এক পরীক্ষার সম্মুখীন আছে।
"কসম সময়ের, নীশ্চয় সকল মানুষ বিপদগ্রস্হ, ব্যাতিক্রম তারা যারা (১)ঈমান আনে, (২) সতকর্ম করে আর একে অপরকে (৩) সত্য আলিংগন এবং (৪) ধৈর্য ধারনের আহবান করে"।
না, উপরের কথাগুলো আমার নয়, আল-কোরআনের ১০৩ নম্বর সুরা। আমার কোরআন তাফছির করার মত জ্ঞান নেই, নীচের পয়েন্টগুলো সমসাময়ীক কিছু বিষয়ে আমার আলেচনা মাএ।
(১) মুসলমান দাবি করা সকলেই ঈমানেরও দাবি করেন। কার দাবি কতটা সত্য তা শুধুমাএ আল্লাহ নির্ধারন করতে পারেন, আমরা শুধু বাহ্যিক আমলগুলো নিয়ে কথা বলতে পারি। আল্লাহর তাওহীদের প্রতি ঈমানই একমাএ বিশুদ্ধ ঈমান এবং আপনার ঈমান রাসুল (স: ) এর ঘোষনা করা ঈমান কিনা তা পড়ালেখা করে যাচাই করে নেবেন। সতকর্ম, সত্য আলিংগন এবং ধৈর্য ধারনের আহবান, কোনটাই আপনাকে জান্নাতে নিয়ে যেতে পারবেনা, যদিনা আপনার ঈমান সঠিক হয়। এ সংক্রান্ত একটি চমৎকার বইয়ের লিংক নীচে দেয়া আছে। দয়া করে পড়ে নেবেন।
(২) সতকর্ম অধিকাংশ মানুষের কাছে একটি আত্মবাদী বিষয়। কোরআন সুন্নাহর ধার না ধেরে প্রায় সবাই সতকর্মকে নিজের মত করে ব্যাখ্যা করে।
(ক) যুক্তরাজ্যের অনেক মুসলমান রেষ্টুরেন্ট ব্যাবসায়ীর কাছে সতকর্ম হচ্ছে রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সালাত আদায় করা, শুক্র এবং শনিবারের রেষ্টুরেন্ট চলাকালীন সময়ের সালাতগুলো জমিয়ে আদায় করা এবং রামাদান মাসে পাওনা যাকাতের একটি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ দেশে পাঠিয়ে তা আশপাশের মানুষের কাছে জাহির করা। মদ বিক্রী ও পরিবেশন, কর ফাকি দেওয়া, বেতন কম দেখিয়ে সরকারী ভাতা নেওয়া হল "এমন কিছু নয় যা আল্লাহ খুব বেশী অপছন্দ করেন"। "আরে ভাই আমি তো আর কারও টাকা চুরি করছিনা, কারও হক মেরে খাচ্ছিনা?"। খাচ্ছেন চাচা, আল্লাহর নিষেধ অমান্য করছেন, নবীজির লানত নিজের ওপর নিচ্ছেন আর আমি কাজ করে যে কর সরকারকে দিই তা লুটে খাচ্চেন।
(খ) মুসলামনদের মধ্যে যারা রাজনীতিতে সক্রিয়, তাদের সতকর্মের সংজ্ঞা হচ্ছে নিপীড়িত মানুষের (যে দলের নেতা সেই দলের কর্মীদের ও নিজের আখের গোছানোর) অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। এতে বিরোধী মতের দমন, সাধারন মানুষ নিধন ও অবৈধ সম্পদ আহরন হল "সমপার্শ্বিক" ক্ষতি। একটি ছোট উদাহরন দিয়ে এই পয়েন্ট শেষ করব, কালকে পএিকায় দেখলাম জামায়াতের সিলেটের আমীর সহ একটি প্রতিনিধিদল নিহত রাজনের বাসায় গিয়ে তার মা-বাবাকে সমবেদনা জানাচ্ছেন ও আর্থিক সহযোগিতা করছেন। দেশে নির্মম হত্যা এই প্রথম নয়, এই শেষও নয়। কিন্তু যেখানে রাজনৈতিক সুবিধা নেই, সেখানে সহযোগিতা ও সহমর্মিতারও প্রয়োজন নেই।
(গ) তাবলীগ জামাতের কাছে সৎকর্ম হচ্ছে চিল্লা লাগানো। ৩ দিন, ৪০ দিন, ৪ মাস ঘর বাড়ি, মা-বাবা, বউ-বাচ্চা সব ছেড়ে চলে যাওয়া আল্লাহর রাস্তায়, মোটা মোটা ফজীলতের দোয়া পড়া আর কদমে কদমে নেকি হাসিল করা। আল্লাহ রিজিক দাতা-সুরক্ষাকারী, আল্লাহ মা-বাবা, বউ-সন্তানদের দেখাশোনা করবেন।
চাচা, আল্লাহর সিফাতের শুধু দুইটাই দেখলেন, আল্লাহ যে তার দ্বীন তার তরিকামতে সংরক্ষন এবং প্রসার করবেন সেটা পড়লেন না?। যদি মানুষের মন গড়া ফাযায়েলে আমল আর ফাযায়েলে দুরুদ রেখে কোরআন আর সহীহ হাদিস একটু ঘাটতেন তাহলে দেখতেন আল্লাহর চাহিদা আর রাসুলের শিক্ষা থেকে আপনার কত দুরে আছেন।
"মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তাআলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে।" আত-তাহরীম - ৬
পরিশেষে: সতকর্মের কোন শেষ নেই, রাস্তা থেকে কলার খোসা সরানোও ঈমানের একটি স্তর। ইসলামের খেদমত করতে চাইলে ইসলামের নিয়মে করতে হবে, মওদুদী সাহেব আর ইলিয়াছ সাহেবের নিয়মে করলে হবেনা। হারাম কাজ থেকে বিরত থাকুন। নিচে একটি ইংলিশ বইয়ের লিংক দিলাম, বইটির বাংলা অনুবাদ আমার কাছে আছে, কিন্তু অনলাইনে খুজে পাইনি।
(৩) সত্য আলিংগনের আহবান করতে হলে আগে নিজে সত্যের উপর কায়েম থাকতে হবে। সত্য কি তা জানতে হলে প্রথমে আল্লাহর কাছে এর সক্ষমতা অর্জনের জন্য দোআ করতে হবে। এরপর জ্ঞান আহরনে মনযোগী হতে হবে। দুনিয়াতে সফল হওয়ার জন্য নুন্যতম ১৬ বছর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনে ব্যায় করলেন, আখিরাতে সফল হওয়ার জন্য রোজ সামান্য সময় ব্যায় করতে পারবেন না?
(৪) ধৈর্য ধারন মানে এই নয় যে আপনার সামনে আপনার মাকে মারবে আর আপনি দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখবেন। ধৈর্য ধারন হল আল্লাহর দেখানো পথে চলে আল্লাহর ওয়াদাকৃত বিজয় ও সাফল্যের কামনা করা, সাফল্য যা এই জীবনেও হতে পারে, আর আখিরাতে হবে ত বটেই। বাংলাদেশে আমরা চোর ধরলেই পিটাই, কারন পুলিশে ধরিয়ে দিলে সে বেরিয়ে এসে আবার চুরি করবে। একবারও আমরা চিন্তা করিনা যে সে যা চুরি করছে, চোরের জীবন তার চেয়ে অনেক দামী। চুরির জিনিস আজ না হক কাল মিলবে বা আবার কিনতে পারব, কিন্তু যে জীবনটা কেড়ে নিলাম বা তার যে অংগহানি করলাম তা তো আর ফেরত দিতে পারবনা। ইসলামী শাসন ব্যাবস্হার নাম শুনলে সর্বপ্রথম মুসলমানদের গায়ে জ্বর ওঠে, অমুসলিম আর অশিক্ষিত নাস্তিকদের কথা নাহয় বাদই দিলাম। ইসলামী শাসন ব্যাবস্হায় কারোর চুরি করার প্রয়োজন হয়না, আর পর্যাপ্ত থাকার পরেও কেউ লোভের বশবর্তী হয়ে চুরি করলে তার হাত কাটা যায়, এতে করে সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় আর জীবন, যা আল্লাহর স্রেষ্ঠ দান, সুরক্ষিত থাকে। ইসলাম সমস্যার মূলে গিয়ে এর জড় উপড়ে ফেলে, অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে শেষ অবলম্বন।
কাল ঈদ, আমাদের সমাজে পরসহনশীলতা, ধর্মীয় শিক্ষা ও ধৈর্যের প্রচলন থাকলে আজ রাজন আমাদের সাথে ঈদ করত। রাজন একজন ব্যাক্তি নয়, সে আমাদের সমাজের অবহেলিত, নিপিড়িত অংশের প্রতিনীধি, আমাদের ঘুনে ধরা সমাজের প্রতিচ্ছবি আর সেই তান্ত্রিক যে প্রায়ই আমাদের ভেতরকার হিংস্র দানবটাকে বাইরে বের করে আনে, যদিও আমরা দানবটার অস্তিত্বকে স্বীকারই করিনা।
আল্লাহ যেন প্বথিবীর প্রতিটি মানুষকে, হউক সে হিটলার বা শেখ হাসিনা, ন্যায় বিচার পাওয়ার তাওফিক দেন। আল্লাহ আমাদের রামাদানের সমস্ত ইবাদতকে কবুল করুন আর সারা জীবন রামাদানের চেয়েও ভাল আমল করার তওফিক দান করুন। আমিন।
সবাইকে ঈদ মোবারক। তাকাব্বাল আল্লাহ মিন্না ওয়া মিনকুম।
সাদি আবু আবদুল্লাহ
বার্মিংহাম, ১৭ই জুলাই ২০১৫, রাত ০৩৩৬।
তাওহীদের মূল নীতিমালা Click This Link
কতিপয় হারাম কাজ যা আমরা হালকা মনে করি http://www.kalamullah.com/forbidden.html
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:৩৬