১.
দুপুরবেলা বাড়ির সামনের আঙিনায় বাচ্চাটি খেলছে।বয়স হবে তিন বছর।এই এদিক হাটে, তো ওই ওদিক হাটে।একটু দূরে চেয়ারে বসে দুপুর রোদে চাল বেছে চলেছেন বাচ্চাটির মা।ময়লা খুজতে চালের ভেতর যতটা না দৃষ্টি দিচ্ছেন তার চেয়েও বেশী কড়া নজর রাখছেন তার বাচ্চাটি যেন খুব বেশী দূরে চলে না যায়।হঠাত বাচ্চার হাটা দৌড়ে রুপান্তরিত হলো এবং নিজের গতির সাথে নিজেই তাল মেলাতে না পেরে বাচ্চাটি ধপাস পড়ে গেলো।মা চালের কূলা রেখে দৌড়ে আসলেন।না তেমন কোন ক্ষতি হয় নাই। বাচ্চাটিও হেসে হেসে বলছে, “আমি পড়ে গেসি, আমি পড়ে গেসি”।মা বাচ্চাকে উঠিয়ে বাচ্চার গায়ে লাগা ধূলো-টূলো ঝেড়ে দিলেন।সন্তানকে আবার আগের মতো খেলতে দিয়ে চেয়ারে গিয়ে বসলেন।তবে এবার নজর আগের থেকেও সতর্ক।এত কম বয়সেই সন্তানকে উসাইন বোল্ট বানাবার কোন ইচ্ছে তার নেই।
২.
মা কাক বসে আছে ডালে। ডালের এক কোণায় রয়েছে তার বাসাটি।না, সেই বাসায় কোন কোকিলের ডিম নেই।আছে মা কাকের দুটি ছানা।তারা এই মুহুর্তে উড়াউড়ি প্রশিক্ষনে ব্যাস্ত।একটি ছানা উড়ে এক ডাল থেকে আরেক ডালে গেলো।এবার দ্বীতিয় ছানাটির পালা। মা কাক কা কা করে যেন তাগাদা দিলো ছানাটিকে।কিন্তু মা কাকের জানা নেই তার এই সন্তানটি রোগে ভুগছে এবং দুর্বল হয়ে পড়েছে।তবু মায়ের ডাকে সাড়া দিতে সন্তানটি ডানা মেলে উড়তে গেলো এবং বিধ্বস্ত বিমানের মতো ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করলো নিচের মাটিতে।
৩.
একটি একতালা ঘর।সেটার বারান্দার নিচে দেয়াল ঘেষে মাটি খুবলে বানানো হয়েছে ছোট ছোট তিনটি ফুকো।কুকুর মা এসে দেখে তার বানানো তিনটি ফুকোই খালি।এইগুলোতে তার তিনটে ছানা থাকে আর কুকুর মা তাদের পাহাড়া দিয়ে কাটায় সামনে বসে।পাজি ছেলেমেয়েদের দল এসে যখন ঢিল মারতে শুরু করে তখন তার ছানাগুলো ফুকোর আরো গভিরে ঢুকে যায়, আর মা কুকুরের না পালিয়ে উপায় থাকে না।কিছুক্ষন পর সে আবার ফিরে আসে সন্তানদের পাহাড়া দেবার উদ্দ্যেশ্যে।প্রতিদিন তিন চারটে ঢিলের আঘাত খাওয়া ইদানিং তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।আগে কুই কুই করে ছুটে পালাতো।এখন ধীরেসুস্থে পিছু হাটে।খাবারের খোজে কুকুরর মাকে যেতে হয়েছিলো কাছের এক ডাস্টবিনে, পচা মুরগীর মাংসের গন্ধ সে পেয়েছিলো।তার পৌছবার আগেই এলাকার অন্যান্য কুকুরেরা যে যার ভাগ ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে।মা কুকুর শূন্য মুখে ফিরে এসে এখন দেখে তার ছানাগুলোও নেই।এদিক ওদিক গন্ধ শুকে সে তার ছানাদের খোজ করে।
৪.
বাচ্চাটি দেখে তিনটে কুকুর ছানা তার দিকে এগিয়ে আসছে।বাচ্চাটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে না তারো কি তাদের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত কি না।তার মা চাল বেছে নিতে ব্যাস্ত থাকায় ব্যাপারটি খেয়াল করলো না।বাচ্চা আর কুকুর ছানাগুলোর মাঝের দূরত্বে ধপ করে পড়লো কাকের ছানাটি।মা কাকও কা কা করে এসে দাঁড়ালো পাশের বাড়ির সানসেটে।মানুষ দেখে কাছাকাছি আসার সাহস পাচ্ছে না।ওদিকে বাচ্চার কথা ভুলে গিয়ে কুকুর ছানারা উল্টে হয়ে পড়ে থাকা কাকের ছানার দিকে ছুটলো।মা কাক এবার আর কোন দ্বিধা না করে কুকুর ছানাগুলোর সামনে দিয়ে কা কা করতে করতে দু-পাক চক্কর মেরে বুঝিয়ে দিলো সে তার ছানার কোন ক্ষতি হতে দিবে না।ওদিকে কা কা জুড়ে দিয়েছে আশেপাশের গাছে থাকা কাকগুলোও।ততক্ষনে কুকুরছানা খুজতে থাকা কুকুর মাও ঘটনাস্থলে হাজির।রাগণ্বিত ঘেউ ঘেউ করে নিজের অস্তিত্বের কথা জানিয়ে দিলো সে কাকদেরকে।এতো কোলাহলে হুশ হলো চাল বাছতে থাকা বাচ্চার মায়ের।বাচ্চাটি তখনো আগের জায়গায় স্থির দাঁড়িয়ে, টিভির কার্টুনগুলো যেন সব তার সামনে এসে দাড়িয়েছে। পাশে পড়ে থাকা এক সরু বাশদন্ড তুলে নিয়ে বাচ্চার মা তেড়ে এলেন।কুকুরছানাগুলোকে কাছে পেয়ে দু ঘা বসিয়ে দিলেন, ছানাগুলো কুই কুই করে তাদের মায়ের কাছে ফিরে গেলো।মা কাক উড়ে গিয়ে সেই সানসেটে বসলো।নিজের বাচ্চাকে সরিয়ে আনলেন মা।ভালো করে দেখে নিলেন বাচ্চার শরীরে কুকুরের কামড় বা কাকের ঠোকরের দাগ আছে কি না।
দূরে সরে যেতে হয়েছে কুকুরগুলোকেও।মা কুকুর তার ছানাদের শরীরের যেসব জায়গায় বাশের বাড়ি লেগেছে সেখানে জিহবা দিয়ে চেটে দিতে লাগলো।কাকের ছানাটি তখনো পড়ে ছিলো আগের জায়গায়।টু শব্দ করার শক্তি ওটার কাছে আর অবশিষ্ট নেই।শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সময় চলে এসেছে।মা কাক উড়ে এসে পাশে দারালো।সন্তান বিদায় নেবার আগ পর্যন্ত সে পাশে দাঁড়িয়ে পাহারা দিবে।
(লেখালিখি ভালো লাগলে এই পেইজে লাইক দিতে পারেন।এখান থেকে নিজের এবং অন্যান্য ব্লগারদের লেখা শেয়ার করে থাকি)
কাক মা, কুকুর মা এবং মানুষ মা (মা দিবসে তিন মা'কে নিয়ে ছোটগল্প)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।
১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন
৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন
১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।