জার্মানীর মিউনিখের উদ্দেশ্যে ফিরতে হবে । সে সুবাদে সিনিয়র বন্ধু বাসের জন্য অপেক্ষমান প্যারিসের জনব্যস্ত কোচ স্টেশন পোর্ট দ্যু মায়ওতে । তথ্য বিভাগে জিজ্ঞেস করতেই কর্তৃপক্ষ জানালো বাস এসে গেছে চাইলে উঠে আসন পেতে বসে যেতে পারি । সামনের দিকে পা বাড়ালাম । খুঁজতে লাগলাম গন্তব্যের বাহন ।
সারি সারি সবুজ রঙের বাস দাড়ানো স্টেশনে । দেশের মত ঝাল মুড়ি, পানি, শশা, হকার নেই ।ইংরেজী শব্দে নান্দনিক মোড়কে আঁকা বাসগুলো । কিছুদূর যাবার পর সবুজ রঙের জ্যাকেট পরিধান করা ৭/৮ সংখ্যা বয়সের একটি ছেলে স্মার্টফোন নিয়ে দাড়ানো । বিড়বিড় করে কি যেন বলতে লাগল । কানে বাতাস লাগতেই ধারনা বলে দিল ডয়েছ বলছে | আমি জার্মান ভাষা একেবারেই জানি না বললে চলে । দু একটি শব্দও না ।
আমি bonjour[হ্যালো] বলে শুরু করে জানতে চাচ্ছিলাম চালক কোথায় । ফ্রেন্চ শুনে সে আমার দিকে তাকিয়ে রইল । কিছুই প্রতিউত্তর করতে পারছে না । কিছু একটা বলে সে বাসে উঠল । কিছুক্ষন পর সাদা রুপধারী মধ্যবয়সি সরল মানুষের আগমন হল । সাথে শিশুটিও ।
হ্যালো স্যার, হাউ মে আই হেল্প ইউ ? গোরা ভদ্রলোক আমাকে জিগেজ্ঞ করল । বললাম আমি আসলে মিউনিকের বাস খুঁজছিলাম । তুমি কি বলতে পার আমার বাসটি কোথায় । তখন সে ছোট ছেলেটিকে ডয়েছ ভাষায় কিছু একটা ইঙ্গিত করলেন, ছেলেটি হাতে থাকা স্মার্টফোনটি এগিয়ে দিল । ভদ্রলোক বলল ও আমার ছেলে আপনার টিকেট খানা দিন তো । আমার অনলাইনে টিকেট নেওয়া বার কোড স্কেন করলেই বেরিয়ে আসবে । ছোট ছেলেটি স্কেন করে টিকেট চেক করে ফেলল তড়িৎ গতিতে ।
ভদ্রলোককে বললাম তোমার ছেলেটি কি ভ্রমন করতে এসেছে । ছেলেটিকে হেসে বললাম ডো ইউ লাইক প্যারিস । উত্তর আসল তার বাবার কাছ থেকে । সে জানালো সাপ্তাহিক ছুটিতে স্কুল বন্ধ । সাথে করে নিয়ে এসেছি আর আমার পেশা কি পাশাপাশি সেটিও তাকে দেখানো গুরুত্বপূর্ণ ।
জানতে চাইলাম কেন এমন মনে হল ? সে বলল পড়াশুনার পাশাপাশি সে যাতে আত্ন নির্ভর হতে পারে আমি এখন থেকে তাকে তৈরী করছি । আর আমিও তার বয়সে আমার বাবাকে কাজে সাহায্য করতাম । আমার বাবা আমাকে যা শিখিয়েছেন আমি হুবহুব তাই শিখাচ্ছি
অবাক হলাম । ধন্যবাদ দিলাম এপ্রেশিয়ট করার জন্য বললাম আপনি অনেক স্মার্ট । সে বলল আমি নই, আমরাই জার্মানী ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৭