somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইচ্ছে হলো পাগলা জগাই

০৬ ই মার্চ, ২০১০ বিকাল ৫:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনাদেরকে একটা কথা বলি। কথাটা আমার মনের খুবি গোপন আর সুপ্ত এক ইচ্ছের কথা। যে কথাটা আমি আজো কখনও কাউকেউই বলিনি। আসলে বলতে পারিনি। কিছুটা লজ্জায় বা কিছুটা হীনমন্যতায়।

আমি পারতপক্ষে একজন আত্নকেন্দ্রিক মানুষ। যাকে বলে ইন্ট্রোভার্ট।দূর ছাই! আত্নকেন্দ্রিক আবার ইন্ট্রোভার্টের বাংলা তো? নাকি সেটা সেলফিসের বাংলা? জানিনা , যেটাই হোক লিখে ফেলি । এই ভাষা জ্ঞান হলো আরেক সমস্যা আর আরেক সমস্যা বানান। যাও বা একটু খাতা কলমে বাংলা বানানগুলো লিখতে পারি কিবোর্ডে সেসব টাইপ করা সেতো আরো দূরহ ব্যাপার। যা বলছিলাম , আমি খুব মুখচোরা আর লাজুক টাইপ । মনের কথা তেমন প্রকাশ করতে পারিনা। এ কারনেই নিজের মাঝেই নিজেই গুমরে মরি। বা অনেক কথা শুনিয়ে যায় যখন কেউ বিনা অপরাধেও। সেটাও মেনে নেই। তাই বলে মিনমিনে স্বভাব আমার, মোটেই নয়। আসলে আমি পারিনা ঠিক মত গুছিয়ে বলতে আমি যা ঠিকঠিক বলতে চাই।

আচ্ছা অনেক ঘেনঘেন করেছি এবার আসল কথায় আসি। ছেলেবেলা হতেই যারা কবিতা লেখে বা গল্প লেখে তাদের প্রতি আমার বিশেষ দূর্বলতা। ঠিক ধরেছেন, আমি কবি ও লেখক যারা, তাদের কথাই বলছি। কি সুন্দরভাবে তারা গুছিয়ে গাছিয়ে লিখে ফেলে মানুষের মনের কথা! ঠিক যেন এক একজনের বুকের ভেতর ঢুকে গিয়ে অর্ন্তআত্মা দেখতে পায় তারা। আর কবিদের কথা? কি আর বলবো! তারা তো সাক্ষাৎ এক এক জন দেবতা! কোথা থেকে তারা পায় এত শব্দ ভান্ডার আর কিভাবেই বা লিখে ফেলে ছন্দ, চরণ মিলানো সব কবিতা!

মায়ের বই এর আলমারীতে যত রবীন্দ্র, নজরুল আর শরৎচন্দ্র ছিলো সেসব আমি স্কুলের গন্ডি পেরুবার আগেই শেষ করে ফেলেছিলাম। কত দুপুর চোখের জলে বুক ভিজিয়েছি অরক্ষনীয়া , পরিণীতা আর ঐযে কি গল্পটা, ছাই নামটাও ভুলে গেলাম। রবীন্দ্রনাথের ঐ গল্পটা যেখানে ভাইকে বাঁচাতে পাষন্ড স্বামী তার কিশোরী বঁধুকে তুলে দেয় আইনের হাতে! অভিমানিনী বঁধু অকপট কাঁধে তুলে নেয় এই অন্যায়। হ্যা মনে পড়ে গেলো। শাস্তি। গল্পটার নাম শাস্তি । যাক এত সব প্রিয় গল্পের নাম বলতে গেলে রাত ফুরিয়ে যাবে । এসব পড়ে পড়ে চোখের জলে বালিশ ভিজিয়েছি এক সময় গল্পের নায়ক নায়িকাদের দুঃখে।

স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে ঢুকতে না ঢুকতেই সেসবের পাট চুকিয়ে আমাকে শ্বসুর বাড়ী ঢুকিয়ে দেওয়া হলো। এক গাঁদা লোকজন, সদা ও সর্বদা ভ্রুকুটিমুখী শ্বাসুড়ী , ননদিনী রায় বাঘিনীদের মাঝে পড়ে আমি যখন দিশাহারা তখনি আবিষ্কার করলাম আমার শ্বসুরের এক বিশাল রত্ন-ভান্ডার। তার নিজস্ব লাইব্রেরী।

একেবারেই অচেনা নতুণ এই বাড়িটায় এই একটা মানুষকেউ আমার অতি আপন মনে হয়েছিলো। কাজেই তার সস্নেহ প্রশ্রয়েই লাইব্রেরীর চাবিখানাই ভাড়ারঘরের চাবীর আগে আমার আঁচলে উঠলো। আর হঠাৎ আমার সুকঠিন দিন গুলো বদলে যেতে শুরু করলো। আবার আমার দুপুর গুলো কেঁটে যেতে লাগলো কবিতাদের সাথে, নিত্য নতুন জ্ঞান বিজ্ঞান আর ইতিহাসের পাতায়, ছবিতে, গানে আর গল্প উপন্যাসে।রঙধনু আলোয় রঙ্গীন আবার আমার সব দুপুরবেলার অলস প্রহরগুলো।

মাঝে মাঝে ভাবি আমার উচ্চ-শিক্ষিত শ্বাসুড়ী, ননদ তারা কেনো তাদের বাড়ীর একমাত্র বউকে আর কলেজে যাবার অনুমতি দিলোনা? আর আমার অতি বিনয়ী, মাত্বভক্ত স্বামীরও অনীহা যে তাতে সেও কি আর বুঝতে আমার বাকী আছে?

সেও আমারই মত আরেক মুখচোরা আর লাজুক একজন মানুষ। অতি বিনয়ীও বটে।আমারই মতন অনায়াসে মেনে নিতে পারে মুখবুজে সকল কষ্ট ও দুঃখগুলোকে।

উফ! কথা কম বলি বটে কিন্তু লিখতে গেলে নিজের সাথে নিজেই লিখে লিখে যে কত কথাই না বলে ফেলি! বলতে গিয়েছিলাম এক কথা বলে ফেললাম শখানেক লাইন। যা বলছিলাম, আমার খুব লেখক হতে ইচ্ছে করে। মাঝে মাঝে কবিও। অনেক কবিতা লিখেছি। ডায়েরীর পাতা ভরে। কখনও কাউকেই পড়েও শুনাইনি। এমনকি আমার প্রিয়তম স্বামীকেও না। আগেই বলেছি আমি একটু মুখচোরা আর লাজুক প্রকৃতির। কাউকে পড়ে শুনাতে গেলে আমি নির্ঘাৎ দমবন্ধ হয়ে মারা যাবো ।


গত বছর আমার শ্বসুরের মৃত্যুর পর এই লাইব্রেরীটা পাকাপাকি ভাবেই এখন আমার । কিভাবে যেন এক অলিখিত চুক্তি হয়ে গেছে এ বাড়িতে আমার সাথে এই লাইব্রেরীটার। আসলে বিশ্বসংসারে আমার মত অকর্মা কে আর আছে যে সারাক্ষন এখানে পড়ে থাকবে? হঠাৎ একদিন দুপুরে অনেকদিন হতেই শ্বসুরের পড়ে থাকা ল্যাপটপটায় ব্রাউজ করতে গিয়ে সন্ধান পেলাম বাংলা এই সাইটির। মনে হলো এইতো সুযোগ। দুধের স্বাধ নাহয় ঘোলেই মিটুক।

এখানে আমি লিখবো। কেউ পড়ুক আর নাইবা পড়ুক। চুপিচুপি বলে রাখি, সকলের অজান্তে সকলের চোখ ফাকি দিয়ে কত গল্প কবিতাই যে পত্রিকা অফিসে পাঠিয়েছি আমি। সে সব আমার যে দিন ভেসে গেছে, কত সাধ আনন্দ দুঃখ কষ্ট ও ভালোবাসায় লেখা গল্প কবিতা। কখনও কেউ তা ছাঁপায়নি। আরে বাবা লেখালিখি কি এতই সোজা যে আমি যাতা লিখে দিলেই তারা সেসব ছেপে দেবে?

যে যা বলে বলুক, যে যা ভাবে ভাবুক, আমি লেখক হবোই। লিখতেই থাকবো। এই সামহ্য়্যার ইন ব্লগের পাতাও যদি প্রথম পাতায় সেসব কোনোদিনও না ছাপে তবুও। আমি লিখে যাবোই। :(


সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১০ বিকাল ৫:০০
৯২টি মন্তব্য ৯৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×