somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অঙ্ক নিয়ে হাসাহাসি:)

২১ শে মে, ২০১০ রাত ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাসি বলে হাসা, হাসা বলে হাসি
তাই নিয়ে দুইজনে করে হাসাহাসি।

এই ছড়াটি যখন পড়েছিলামখুব ছোটবেলায়, প্রথমে কথাগুলো একটু ভাবিয়েছিলো, তারপর নিজেই শুরু করেছিলাম হাসাহাসি, বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেক ভেবেছি ছড়াকারদের নিয়ে , গল্প ঔপন্যাসিকদের নিয়ে। মুগ্ধ হয়েছি এমন সব ছড়াকারের শব্দচয়ন, শব্দবিন্যাস ও ভাবনার সৃষ্টিশীলতা নিয়ে।

এই হাসাহাসি আমাকে আর ছাড়লোনা। এ যাবৎকালে যত গল্প উপন্যাস পড়েছি, আবেগে আপ্লুত হয়েছি, হাসির ছড়া, কবিতা ও গল্পের সাথে সেসব দাড়িপাললায় ওজন করালে জানিনা ভালোলাগার পরিমানটা সমান হবে কিনা। বরং হাসির পাল্লাটা অনেক খানি ঝুলে পড়ব সে আমি নিশ্চিৎ।

আর এই ঝুলে পড়া পাল্লার অনেকখানি জুড়েই রয়েছেন একজন কীর্তিমান গল্পকার। যার রচনাগুলো একসময় পড়তে গিয়ে হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাবার যোগাড় হয়েছে, বন্ধু বান্ধব আত্নীয় স্বজনদেরকে বস্তুত আমার প্রিয়জনদেরকে ধরে ধরে শুনিয়েছি সেসব। এমন বুদ্ধিদীপ্ত নির্মল আনন্দ বুঝি তিনি ছাড়া আর পক্ষেই দেওয়া সম্ভব নয়।

আজ আমি তারি কথা আবারও ধরে ধরে শুনাতে চাই আপনাদেরকে। আসলে প্রিয়জনদের সাথে প্রিয়জিনিসগুলো শেয়ার না করলে ভালোলাগাটা পরিপূর্ণতা পায়না বলেই আমার ধারনা।

যাইহোক আমি তার কথা বলি , তিনি আমার অতি প্রিয় হাসাহাসি গল্পকার শিবরাম চক্রবর্তী। এজীবনে তিনি কত গল্প লিখেছেন তা নাকি নিজেও জানতেন না। কারন তিনি ছিলেন একজন প্রচন্ড রকম অগোছালো মানুষ কাজেই তার লেখালিখিগুলোও কখনও গুছিয়ে রাখেননি। খুব দুঃখ হয় তার আরো না জানি কত লেখা আমার জানা হলোনা। হাসা হলোনা আরো একটু বেশী।

তার অগুনিত গল্পের মধ্যে প্রতিটা গল্পই খুব শুনাতে ইচ্ছে করছে আপনাদেরকে।যদিও জানি আপনারা অনেকেই সেসব আমার আগেই পড়ে ফেলেছেন। তবুও সেসব একটু মনে করিয়ে দিতে আর সবাইকে হাসাহাসিতে অংশগ্রহন করাতে ইচ্ছে জাগে প্রাণে। তবে সব গলপই মনে করাতে গেলে সামুর পাতাতে জায়গা কুলোবেনা তাই সংক্ষেপে শুনাতে চাই, শিবরামের বহূ গল্পের জনপ্রিয় দুই ভাই চরিত্র যুগল হর্ষবর্ধন ও গোবর্ধনের ১টি গল্প। অতি সংক্ষেপে শুনাবো কেউ যেন বিরক্ত না হতে পারে । /:) আগেই বলেছি প্রিয়জিনিসগুলো প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার না করলে ভালোলাগাটা ঠিক পরিপূর্ণতা পায়না।/:)

গল্পের নাম মামির বাড়ির আবদার

ছোটভাই গোবর্ধন, দাদা হর্ষবরধন ও বৌদি শহরে মামাবাড়ি যাবার পরিকল্পনা করেন ।একশো টাকার একটি নোট নিয়ে তারা নিশ্চিন্তে রওয়ানা দেন শহরের উদ্দেশ্যে। ছোটভাই সন্দিহান হন টাকার অংকটাতে। জিগাসা করে "এতে কুলোবে কিনা? "

বড়ভাই প্রীত মুখে জানায়, ঢের চলবে। একশো টাকা ও বাকী খুচরো খাচরা মিলিয়ে চাইলে এই টাকায় মামা বাড়ি নয় শুধু মামির বাড়িও ঘুরিয়ে আনতে পারবেন তিনি তাদেরকে। :)গোবরা তো শুনে অবাক! মামির বাড়ি আবার কি? মামা আর মামি কি আলাদা জায়গায় থাকেন নাকি?

বড়ভাই ধমক দিয়ে ওঠেন এই মামি সেই মামি নয়রে মুখ্যু। এই মামি হলো সেই মামি যেই মামির মামা নেই। মামা থাকেনা।
ভাইএর বোকামীতে বিরক্ত হয়ে ওঠেন হর্ষবর্ধন, বলেন "এই মামি হলো মামার মামি না মিশরের মামি। "
গোবরা তো আবারও অবাক ! মিশর আবার কেটা? এই মামার নাম তো জীবনে শুনিনি।
বড়ভাই বুঝ দেন আবারও মিশর কোনো মামা নয় । যাদুঘরে থাকে এই মিশরের মামি। সেই মামিই তিনি দেখাবেন তাদেরকে।

যাদুঘরে গিয়ে মিশরের মামি দেখে তো গোবরার বৌদি আর গোবরা হতবাক। বৌদি বলেন,"ওমা এই তোমার মামির ছিরি! ছি ছি । "
ভাই বুঝ দেয় আবারও, মরা যে ।অনেকদিন আগেই মারা গেছেন । মারা গেলে কি আর চেহারা ঠিক থাকে বলো?
মামির গায়ে একটা টিকেট লাগানো ছিলো B.C 2299 গোবরা তার পন্ডিৎ দাদাকে জিগাসা করে । এটা কিগো দাদা? কিসের নম্বর?

দাদা বিগ্গ চালে বলেন। এটাও বুঝিসেন হাঁদা? যে মোটর চাপা পড়ে মেয়েটি মরেছিলো এটা সেই মোটর গাড়ির নম্বর।

বৌদি হা হা করে ওঠে, আহা মোটর চাপা পড়ে মরেছিলো বুঝি মেয়েটা? এই জন্য কত করে বলি তোমাদেরকে দেখে শুনে পথ চলতে। তাই যদি এই দেখে তোমাদের শিক্ষা হয় একটু।

এমন সময় যাদুঘরের এক কর্মচারী এসে বলেন "মশাই সিগারেট টা নিবিয়ে ফেলুন।"

হর্ষবর্ধন ক্ষেপে ওঠেন, "কেনো বলুনতো? নিজের পয়সায় খাচ্ছি আপনার পয়সায় নয়। মামা বাড়ি আই মিন মামি বাড়ির আবদার নাকি?"

হ্যা মশাই তাই মামির ঘরে সিগারেট খাওয়া নিষেধ।

কেনো খেলে কি হয়? গোবরা জানতে চায়।

কর্মচারীর উত্তর, খেলে জরিমানা হয়। পন্চাশ টাকা।সামনেই নোটিস ঝুলছে দেখছেন না?

সত্যি ওরা তাকিয়ে দেখে দেওয়ালে নোটিস ঝুলছে। তাই বলে সবে ধরিয়েছে সিগারেট নেবানো তো যায়না। যাইহোক একশো টাকার নোটখানি ধরিয়ে দেন হর্ষবর্ধন করমচারীর হাতে। এই নিন জরিমানা। পন্চাশ টাকা ফেরৎ দিন।

কর্মচারী গরীব মানুষ, তায় অফিস ঘরেও এত টাকা জমা নেই। এখন পন্চাশ টাকা পাবেন কোথায়? তাইতো মহা চিন্তায় পড়লেন হর্ষবর্ধন । শেষ মেষ গিন্নিকে বললেন আরো একখানা সিগারেট ধরাতে। তাহলে পন্চাশে পন্চাশে একশো হয়ে যাবে । সমস্যার সমাধান।

গিন্নির রাজী হলেন না বরং তার মুখ ঝামটি খেয়ে কর্মচারীকে আরেকখানা সিগারেট ধরিয়ে দিয়ে পন্চাশ দুগুনে একশো টাকা পুরন জরিমানা দিয়ে বেরিয়ে আসলেন তারা।

এদিকে শেয়ালদা ষ্টেশনে এসে পকেট উলটে পালটে তিনজনের টিকেটের পয়সা যোগাড় হয়না। যা সব টাকা তো যাদুঘরেই খুইয়ে এসেছেন।
এপকেট ওপকেট হাতড়ে শেষ পর্যন্ত যোগাড় হল একটি হাফটিকেটের পয়সা। তা দেখে গোবর্ধন নিশ্চিন্তে বললেন ওতেই হবে।

গিন্নী আর গোবরা কপালে চোখ তোলে। হর্ষবর্ধনকে দেখা যায় তবুও নিশ্চিৎ।

বলেন তিনি, "কোনো চিন্তা করোনা অংকের জোরে চলে যাবো।" আরো গরব করে বলেন তিনি "অংকের মাথা থাকলে এভাবেই যাওয়া যায়।" তারপর একটা খালি কামরা দেখে উঠে বসেন রেলগাড়িতে।


গোবর্বধন বলেন ভাই ও বৌ এর উদ্দেশ্যে, "তোমরা বেন্চির উপরে বস নাগো। বেন্চির তলায় ঢুকে যাও। আমি কেবল একলা বসবো বেন্চির উপরে।"

গিন্নী খেকিয়ে ওঠেন । "কেনো তুমি কি লাট সাহেব?"

গোবর্ধন বিরক্ত হন, "আবার এসব কি কথা? টিকেট কই তোমাদের ?
বিনা টিকেটে যেতে দেখলে চেকার এসে জেলে ঢুকিয়ে দেবে। যাও ঢুকে পড় ঝটপট বেন্চের তলে।"

জেলের ভয় দেখিয়ে তিনি ভাই আর বৌকে বেন্চের তলায় ঠেলে দেন।
নিজে বসেন গ্যাট হয়ে বেন্চের উপরে । গাড়ি ছেড়ে দেয়। কয়েক ষ্টেশন যেতে চলতি গাড়িতেই চেকার ঢোকেন। বলেন, "টিকিট দেখি।"

হর্ষবর্ধন হাফ টিকিট দেখান।
"হাফ টিকেট ! একি! " চেকার তো অবাক!
"এত বুড়ো ধাড়ি হয়ে হাফ টিকেটে যাচ্ছেন মশাই? লজ্জা করেনা?"

কেনো যাবোনা? হর্ষবর্ধন প্রতিবাদ করেন । যাচ্ছি তো অংকের জোরেই । অংকের জোরেই যাচ্ছি।
"অংকের জোরে? সে আবার কি ? বুঝলাম না।"

"অংকের মাথা থাকলে তো বুঝবেন? বেন্চির তলায় তাকিয়ে দেখুন না বুঝবেন তাহলে। :P "
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১০ রাত ১১:৫০
১১৪টি মন্তব্য ১১৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×