somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খোকাভাই এর চিঠি

২৬ শে জুন, ২০১০ দুপুর ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিরু
কবিতার ভাষায় লেখা
তোর চিঠিটা পড়লাম
ভুলে গিয়েছিলাম, অনেক কিছুই
কিছুটা ইচ্ছেই, কিছুটা অনিচ্ছেই।
চিঠিটা পড়তে পড়তে একরাশ স্মৃতি
হুড়মুড় করে নামলো, হৃদয়ের দূয়ারে।
আজকাল বুকে প্রায়ই একটা ব্যাথা হয়
অনিয়মিত জীবন যাপনের ফল।
চিঠিটা পড়ার পর থেকে চাপধরা ব্যাথাটা
যেন বেড়ে চলেছে।

যাইহোক, ভালোই আছিস তাহলে
মনেও রেখেছিস আমাকে?
ভালো আছিস
কেমন করে বুঝলাম জানিস?
মানুষ যখন সবচেয়ে বেশী সূখে থাকে
তখনি ধরে তাকে দুঃখবিলাস রোগ
তোরও হয়েছে সেটাই।
রাগ করিসনা, একটা সত্যি বলি
তোকে ভুলে গেছি
যদি বলিস ইচ্ছে করে, তাহলে তাই।
তোর সব গান , ছবি, কলকথা, সব ভুলেছি আমি
নইলে এই আমার
আর বেঁচে থাকার উপায় ছিলোনারে।

ভুল শুনেছিলি তুই
বিয়ের পরদিন থেকে নয়,
নিরুদিষ্ট আমি তোর বিয়ের দিনটি হতেই।
সেদিন সন্ধ্যায় টুনি বাল্বে সজ্জিত ঝলমলে বাড়ী থেকে
যখন তুই মেরুনরঙ মার্সিডিজে চড়ে
ভুস করে বেরিয়ে গেলি-
সন্ধ্যার আবছায়া আলোয়,
গলির ধারের বুড়ো অশত্থ গাছটার আড়ালে
দেখতে পাসনি আমাকে ।


সেদিন রাতের ট্রেনেই চলে গিয়েছিলাম
কক্সেস বাজার
বিশালতার অবগাহন অসীম সমুদ্ররাশ্রয়ে
সমুদ্র আমাকে আশ্রয় দিয়েছিলো
প্রতিদানে সমুদ্রকে দিয়েছিলাম
এই নিস্বের
কয়েকফোটা দূর্লভ অশ্রুজল।

ভালো থাকিস নিরু,
পারলে আমাকে ভুলে যাস।
প্রাচুর্য্য তোর সঙ্গী,
তুই চাইলেই মুঠো মুঠো দিতে পারিস।
বিত্ত বৈভবের কমতি নেই তোর
আমার মত ভ্যাগাবন্ডের থেকে
কি আর পাবার ছিলো বল?

এমন করে আর কখনও লিখিসনা আমাকে
আমার কষ্ট হয়,
ভীষন কষ্ট!
তুই কি পারিস আমাকে কষ্ট দিতে?



প্রতিত্তরে নিরুপমার ছোট্ট শেষ চিঠিটি।


খোকাভাই
আর কখনও লিখবোনা তোমাকে
জানতে চাইবো না আর কখনও
কেমন আছো?

শুধু

তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম।





এই ছিলো খোকাভাই ও নিরুর শেষ চিঠি। মানে আমি তাদের চিঠি লেখালিখিটা এখানেই শেষ করে দিলাম। পৃথিবীতে কিছুই অবিনস্মর নয়। সবকিছুই একদিন শেষ হয়। শেষ হতে হয়। তাই মনে হলো খোকাভাইকেও শেষ করে দেবার সময় এসেছে।

অনেকে অনেকদিন আমার কাছে জানতে চেয়েছেন কে এই খোকাভাই ? আমার লেখা যারা পড়েছেন তাদের মজা করে হোক বা সত্যি কৌতুহল থেকেই হোক খোকাভাইকে নিয়ে জানার কিছু ইচ্ছে ছিলো বলেই মনে হয়েছে আমার। অনেকে অনেককিছু সন্দেহ করেছেন। সাদেক হোসেন খোকা থেকে শুরু করে গলির ধারের পাগলা বুড়ো খোকা পর্যন্ত বাদ যায়নি সে সন্দেহ তালিকা থেকে।

মনে হলো, খোকাভাইকে শেষ করে দেবার আগে তার শুরুটা একটু খোলাসা করে দেই সবার কাছে। তবে তার আগে একটা কথা বলার আছে আমার, এই লেখাগুলোর মান যেমনই হোক, আমার কাছে এ ছিলো এক পরম ভালোলাগা ও ভালোবাসার লেখালিখি। যে কোনো ধরনের লেখায় লেখক বা লেখিকার আত্মতৃপ্তি বলে একটা কথা আছে বলে আমি মনে করি। সে যতই আমার মত অগা বগা লেখক বা লেখিকা হোক না কেনো? নিজের ভালো লাগার মূল্য সবার আগে। আমি সেই পরম আত্মতৃপ্তিটুকুই অনুভব করেছি খোকাভাই ও নিরুপমাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে। লেখার মান কি ছিলো সে বিচার করতে চাইনা আমি, শুধু আমি জানি কতখানি বক্ষে ধারন করেছি আমি এ দুটি চরিত্রকে।


খোকাভাই আমার এমন এক লেখা। নিরুপমা আর খোকাভাই এর কথা লিখতে গিয়ে আমি নিজেই রুপান্তরীত হয়েছি নিরুপমায়। নিরুপমার সাথে সাথে আমি চলে গেছি সেই জীর্ণ, পুরোনো, একটু সেকেলে বনেদী বাড়িটাতেই। সেখানেই কাটিয়ে এসেছি আমার শৈশব ও কিশোরীকাল।
কখন যে হয়ে গেছি আমি নিজেরি অজান্তে বেনীদুলানো স্কুল পালানো মেয়েটি ! আর খোকাভাই, বাড়ির মৃত বড়চাচার একমাত্র সন্তান। সঠিক কেয়ারিং এর অভাবে শেষ হয়ে যাওয়া অবহেলিত ছেলেটিকে পরম মমতায় বুকে টেনে নিয়েছি। ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে চেয়েছি। দূর করে দিতে চেয়েছি তার সকল কষ্ট ও বেদনা।

তবুও আর দশটা বাঙ্গালী কিশোরীর মত পারিনি সমাজ ও পরিবারে রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করতে । অসহায় কিন্তু লক্ষী মেয়েটির মত বাবা মায়ের পছন্দের প্রতিষ্ঠিত পাত্রকেই বরন করে নিয়েছি জীবন সঙ্গী হিসাবে। ঠিক যেমনটা হয় আমাদের এ স্বার্থপর সমাজে।

ওদের কষ্টটা সত্যিই যেন মনে প্রাণে অনুভব করেছি। কিন্তু কোথা থেকে উদয় হলো এই খোকাভাই আর নিরু? হ্যা নির্মলেন্দু গুণের সেই বিখ্যাত প্রিয় কবিতা অমীমাংসিত রমনী Click This Link আমার ভেতরে খোকাভাই চরিত্রের সূচনা। কবিতাটা পড়তে গিয়েই আমি চোখের সামনে যেন দেখতে পেলাম চুপচাপ শান্ত গভীর দুখী ছেলেটাকে। আর মমতা ? তার জায়গায় বসিয়ে নিলাম নিরুপমারুপী এই আমাকেই। খোকাভাইকে নিয়ে লেখা প্রথম কথামালা।
Click This Link

পরবর্তীগুলো
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link

একটা গোপন কথা বলি আজ, খোকাভাই আর নিরুকে আমি স্বপ্নে দেখেছি, ঘুমিয়ে, জেগে জেগে, ঘুম ভেঙে ওঠা ভোর সকালে, বা ঘুমুতে যাবার আগে নিদ্রা দেবীর আগমনের ঠিক আগেভাগে। রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে কলেজ ফেরৎ কোনো কিশোরীতে। বা কোনো বাড়ীর ছাদে হলুদ সবুজ জামা ঝুলে থাকবার দৃশ্যে। আমি খুব কল্পনা প্রবন একটা মানুষ। তাই আমার কল্পনা আর সামনে দেখা মানুষ আর দৃশ্য গুলো একসময় কবিতার নিরুপমা ও খোকাভাই হয়ে আমার অন্তরে প্রবিষ্ঠ হয়েছে।

যে যেভাবেই দেখুক, যে যাই ভাবুক আমার পঁচাঘচা কবিতা সমাদৃত হয়েছে কারো কারো কাছে। আর আমার নিজের কাছে তো বটেই। আমি অসংখ্য অসংখ্য কৃতজ্ঞতা জানাই যারা সেসব লেখা পড়েছেন আমাকে সঙ্গ দিয়েছেন আমার কল্পনার সাথী হয়ে। খোকাভাই আর নিরুপমা অনেক অনেকদিন, হয়তোবা সারাটাজীবন জেগে রইবে আমার হৃদয়ে। তাই নিরুপমার শেষকথাটিই হোক আমার অন্তরের কথা।

তুমি( খোকাভাই) আর তোমরা( যারা পড়েছিলো আমার লেখাগুলি) রবে নীরবে হৃদয়ে মম।

১২১টি মন্তব্য ১২২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×