somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

!!!তানসেন- অবাক করা এক সঙ্গীতের যাদুকর!!!!

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হুম তাকে আমার শুধুই একজন বিশিষ্ঠ সঙ্গীতজ্ঞ বা সঙ্গীত সম্রাটই মনে হয়নি। তাকে আমার অবাক করা, তাক লাগানো কোনো যাদুকরই মনে হয়েছিলো, যেদিন প্রথম শুনি তার কথা।
আমার প্রথম সঙ্গীত শিক্ষার গুরু দূর্গাপদ সেন তিনিই আমাকে শুনিয়েছিলেন তার গল্প, সেই আমি যখন এক্কেবারেই ছোট। সবেমাত্র স্কুলে যাওয়া আসা শুরু করেছি।

তিনি বলেছিলেন এমন এক যাদুকরের কথা যিনি নাকি চাইলেই গান গেয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারতেন, আবার চাইলেই তিনি নামাতে পারতেন আকাশ থেকে অঝর ধারার বৃষ্টি, সেও ঐ গান গেয়েই। এমন বিস্ময়! সে আমার জন্য এক বিস্ময় শুধু নয় ,আমি নিশ্চিৎ যারাই শুনেছিলেন তার এ গল্প বা তার কথা সবাই একটু আধটু বিস্মিত হয়েছিলেনই ঠিক আমার মত।

হ্যা আমি চিরকালের চিরযুগের সঙ্গীতের বিস্ময়, সঙ্গীতশ্রেষ্ঠ মিয়া তানসেনের কথাই বলছি। তানসেন কথার অর্থ যিনি সঙ্গীত দিয়ে হৃদয় দ্রবীভুত করে। তানসেন এক কিংবদন্তীর নাম। সত্যিকারের ঐতিহাসিক তানসেনকে নানারকম কিংবদন্তী থেকে বের করে আনা খুবই কঠিন এক ব্যাপার। তার জন্মসাল, মৃত্যু এসব সম্পর্কে নানা বিভ্রান্তি রয়েছে।

তানসেনের বাবার নাম মুকুন্দরাম পাড়ে। তিনি ছিলেন বারাণসীর বাসিন্দা। তার কোনো সন্তানই বেঁচে থাকতো না। শোনা যায় মৃতবৎসা স্ত্রীকে তিনি গোয়ালিয়রের মুহাম্মাদ গওস এর মাদুলী পরান। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আলৌকিক ক্ষমতাধর, সঙ্গীতের যাদুকর তানসেনের জন্ম আনুমানিক ১৫০৫ সালে। তার নাম রাখা হয় রামতনু।

কথিত আছে ১০ বছর বয়সে সঙ্গীতার্য্য স্বামী হরিদাসকে দেখে রামতনু গাছের আড়াল হতে বাঘের ডাক নকল করে দুষ্টুমীচ্ছলে ভয় দেখাতে চেষ্টা করে। সন্যাসী তা দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে শিষ্য হিসেবে গ্রহন করে। সেখানেই রামতনু সঙ্গীতের তালিম নেন বেশ কয়েক বছর। পিতার মৃত্যুর পর রামতনু গওসের কাছে যান আর তার সাথেই বসবাস শুরু করেন। এই সময় গওসের সহায়তায় রাজা মানসিংহের বিধবা স্ত্রীর সভায় যোগ দেন রামতনু। তিনি এসময় ধর্মান্তরীত মুসলমান রমনী প্রেমকুমারী, পরে যার নাম হয় হোসেনী তাকে বিয়ে করেন ও মুসলিম ধর্ম গ্রহন করেন। তার নাম হয় আতা আলি খাঁ। এই আতা আলী খাঁ, সঙ্গীত সম্রাট তানসেন পরবর্তীতে সুরত সেন, শরৎ সেন ও তরঙ্গ সেন ও বিলাস খাঁ ৪ ছেলে ও স্বরস্বতী নামে এক মেয়ের জন্ম দেন।

দিল্লীর সম্রাট আকবার সিংহাসনে বসার সাত বছর পর ১৫৬২ খ্রীস্টাব্দে আতা আলী খাঁ এর কথা জানতে পান ও তাকে দিল্লীর দরবারে অধিষ্ঠিত করেন। সে সময় তিনি রেওয়ার মহারাজা রাজারাম( রামচাঁদ) এর সভা গায়ক ছিলেন।
সম্রাট আকবার একদিন আতা আলী খাঁ এর গান শুনে এতই বিমোহিত হয়ে পড়েন যে তার গলা থেকে কন্ঠহার খুলে তাকে পরিয়ে দেন ও তার নাম দেন তানসেন। আকবরের সভায় নবরত্নের এক রত্ন ছিলেন মিয়া তানসেন।
তানসেন এর এমন সব সৌভাগ্যে তৎকালীন সমসাময়িক সঙ্গীতজ্ঞরা হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরে আর এক কুটকৌশলের আশ্রয় নেয়। তারা বলেন তানসেন যদি সত্যিকারের শিল্পী হয়ে থাকেন তবে যেন দীপক রাগ গেয়ে শুনান। দীপক রাগ এমনি এক শক্তিশালী রাগ যা গাইলে গান থেকে সৃষ্ট আগুনে তানসেনের শরীর ঝলসে যাবার সম্ভাবনা ছিলো। তানসেন তা জানতেন। তাই তিনি প্রথমে রাজী হননি। তিনি জানতেন, দীপক রাগ গাওয়ার পর যখন আগুন জ্বলবে তাকে নেভানোর জন্য প্রয়োজন হবে মেঘমল্লার রাগ। কিন্তু একার পক্ষে তো একসাথে দুটো রাগ গাওয়া সম্ভব নয়। তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবেলা করার জন্য নিজের মেয়ে ও তার গুরু কন্যাকে মেঘমল্লার গানে তালিম দিতে লাগলেন।

রাজসভায় নির্দিষ্ট দিনে লোকে লোকারণ্য। মাঝখানে বসে আছেন স্বয়ং সম্রাট আকবর যথাসময়ে বসল গানের আসর। শত্রু পক্ষের ধারণা, কিছুক্ষণের মধ্যে তানসেনের ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে যাবে। তানসেন শুরু করলেন দীপক রাগ। শুরু হওয়ার পর এক সময় সভাগৃহের সমস্ত মোমবাতিতে আগুন ধরে গেল। অবস্থা দেখে সবাই দিগ্বিদিক ছুটতে লাগলেন। তানসেনের নিজের শরীরেও আগুন জ্বলতে শুরু করলো। তিনি ছুটলেন বাড়ির দিকে। সেখানে নিজ কন্যা ও গুরুকন্যা সমস্বরে মেঘমল্লার গাইছে। আকাশ থেকে নামতে শুরু করেছে বৃষ্টিধারা। সেই বৃষ্টিজল নিভিয়ে দিলো তানসেনের শরীরের জলন্ত আগুন। শোনা যায় এই ঘটনার পর অসুস্থবস্থায় ছয়মাস তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন। http://www.youtube.com/watch?v=RJMqv48WNnU

http://www.youtube.com/watch?v=0hbyR6x1tqg
রাগ মেঘ মলহার

তানসেন শুধু বড় গায়কই ছিলেন না তিনি ছিলেন গীতিকার ও কবি।আধুনিক ধ্রুপদ সঙ্গীতের প্রবক্তা। তানসেন কিছু রাগের নবরুপ দিয়েছিলেন সে সকল রাগ তার নামের সাথে আজও জড়িয়ে আছে।
রাগ তোড়ী

রাগ মেঘ মল্লারের চিত্ররূপ
মিয়াকী দরবারী কানাড়া, মিয়াকী মল্লার,মিয়াকী তোড়ি এসব রাগ আজও সেই যুগ হতে সকলের কাছে সমান জনপ্রিয়।
http://www.youtube.com/watch?v=ADAdB7VX7LI
http://www.youtube.com/watch?v=0SPyQo9wBX8
Click This Link
দরবারী কানাড়া

তানসেন জীবনী নিয়ে রচিত হিন্দী মুভ্যি।
http://www.musicplug.in/songs.php?movieid=2326
তানসেন মুভ্যির কিছু মনোহরনকারী সঙ্গীত
এই মহান সঙ্গীত সাধক তানসেন ৮০ বছর বয়সে ১৫৮৫ সালে মৃত্যু বরণ করেন। গোয়ালিয়ের কাছে বেহাটে তাকে কবরস্থ করা হয়।

তাঁর জন্মস্থানের কাছে নির্মিত সমাধি আজও অটুট রয়েছে। বেহাটে সমাধিস্থলে প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে তানসেন স্মরণে জাতীয় পর্যায়ে সঙ্গীত উৎসব হয়। দেশ, বিদেশের সঙ্গীত শিল্পী, সঙ্গীতজ্ঞ, সংগীতানুরাগীরা সেখানে যোগ দেন।

সঙ্গীতের সেই চিরবিস্ময়, এক জীবন্ত কিংবদন্তী, সঙ্গীত সম্রাট তানসেনকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করি।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ২:৪৮
১৫৯টি মন্তব্য ১৫৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×