somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে তাতা থই থই

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কি আনন্দ! কি আনন্দ ! কি আনন্দ !!
দিবা রাত্রী নাচে মুক্তি নাচে বন্ধ!!
রবীন্দ্রনাথের এই গানটি শুনলেই নাচতে জানেনা এমন মানুষের মনটাও যে আনন্দে নেচে ওঠে, তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আসলে নাচ মানেই আনন্দ, নাচ মানেই ভালোলাগার প্রকাশ! কিন্তু আমাদের বাঙ্গালী মুসলিম সমাজে এই অতি আনন্দদায়ক, অতি উপকারী সংস্কৃতিটি তেমন সমাদৃত নয় বললেই চলে।/:)

আমি সেই যখন ছোট্ট। স্কুলের মেইন গেটটাও মাড়াইনি। সেই সময়, আমার ছোটবেলায় টিভিটাই ছিলো আমার বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম। তাও আবার বিটিভি। তখন তো আর এখনকার বাচ্চাদের মত কম্পু গেম ছিলোনা, ছিলোনা এত শত চ্যানেল আর এত শত কার্টুন আর মুভ্যি।কাজেই বিকেল বেলা খেলাধুলা শেষ হবার পরই বসে যেতাম টিভিতে ছোটদের অনুষ্ঠান দেখতে। কেনো যেন আমি ছোটদের অনুষ্ঠাগুলোর অন্ধ ভক্ত ছিলাম। সেই আমার সব অনুষ্ঠানগুলোর মাঝে প্রথম ভালোলাগার নাচের অনুষ্ঠান রুমঝুম দেখা।

রুমঝুম অনুষ্ঠানে তখন বাচ্চাদেরকে নাচ শেখাতেন লায়লা হাসান। আমার অতি অতি শ্রদ্ধাভাজন একজন মানুষ। নাচের গুরু বলতে আমার জীবনে তিনিই আমার প্রথম গুরু। আমি তার এক অজানা ক্ষুদে শিস্য ছিলাম। সেকথা তিনি সে সময় জানতে পাননি, জেনেছিলেন অনেক অনেকদিন পরে আমি যখন প্রায় ষোড়শী। জাতীয় নৃত্য প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহন করি স্কুল থেকে।

লায়লা হাসান
এত সুন্দর মুখের হাসিখুশী মানুষটাকে প্রথম দর্শনে আমার স্বর্গের দেবীই মনে হয়েছিলো। শুনেছিলাম স্বর্গের অপ্সরী, মেনকা, রম্ভাদের নৃত্যকলায় পারদর্র্শীতার কথা। লায়লা হাসান । তিনিও আমার চোখে তখন তেমনি একজন স্বর্গেরই দেবী। আয়লো দেয়া নিশালে সকালে কি বিকালে........ রুমঝুম থেকে শেখা আমার প্রথম নাচ ।

নৃত্যকলায় পারদর্শী অপ্সরা:P
http://www.youtube.com/watch?v=tctP_i1KI-c
মর্ত্যের অপ্সরা নৃত্য

স্বর্গের কথা যখন এসেই গেলো তখন আর একটা কথা বলি, নৃত্যকলা আমাদের মুসলিম সমাজে যত না অসমাদৃত, হিন্দু ধর্মে ততটাই সমাদৃত। হিন্দু ধর্মে নাচ শুধু বিনোদনের উপকরণই নয় তা রিতীমত ধর্মীয় উপাসনার অঙ্গ। যাইহোক প্রাচীন শাস্ত্রীয় নৃত্যের উৎপত্তিস্থল যে দেবসভা সেতো সকলেরই জানা। তবে যত রকম শাস্ত্রীয় নৃত্য আছে সেসবের মধ্যে আমার সবচাইতে প্রিয় কথক।

কত্থক শাস্ত্রীয় নৃত্যের একটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ধারা। সব রকমের শাস্ত্রীয় নৃত্যের মধ্যে কত্থক সবচাইতে জনপ্রিয়। প্রাচীনকালে বিভিন্ন দেবদেবীর মহাত্ন বর্ণনায় কয়েকটি সম্প্রদায় ছিলো যারা নৃত্য ও গীত দিয়ে দেবদেবীর মহাত্নাবলী পরিবেশন করতেন। এসব সম্প্রদায়গুলো কথক, গ্রন্থিক, পাঠক ইত্যাদি ইত্যাদি। সবকটির মধ্যে কথক একটি বিশেষ স্থান আজও অধিকার করে রয়েছে।

কথক নৃত্যে প্রধানত রাধা কৃষ্ণের লীলা কাহিনীই রূপায়িত হত। দীর্ঘকাল ধরে ধর্মীয় উৎসব ও মন্দির কেন্দ্রিক পরিবেশনা হওয়ায় কথক নৃত্যের কোনো সুসংহত রুপ গড়ে ওঠেনি। মোঘল আমলে দরবারী সংগীত ও নৃত্যের যুগ সুচিত হলেই কথক নৃত্যের একটি সুসংহত রুপ গড়ে ওঠে। কথক নৃত্যের সবচাইতে বেশী বিকাশ ঘটে উনবিংশ শতাব্দীতে লোখনৌ এর আসাফুদ্দৌলা ও ওয়াজীদ আলী শাহ এর দরবারকে কেন্দ্র করে। কথকের দ্বিতীয় ধারার বিকাশ ঘটে জয়পুর রাজ দরবারে। পরবর্তীতে বারাণসীতেও কথক নৃত্যের বিস্তার ঘটে। নৃত্যই কথকের প্রাণ তবে সহযোগী সঙ্গীতও এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভুমিকা পালন করে।

কথক নৃত্যে মোট বারোটি পর্যায়। তবলা বা পাখোয়াজের লহরায় তাল নির্ভর নৃত্য পদ্ধতিটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বারোটি পর্যায়ে রয়েছে গনেশ বন্দনা, আমদ, থাট, নটবরী, পরমেলু, পরণ, ক্রমলয়, কবিতা, তোড়া ও টুকরা, সংগীত ও প্রাধান। প্রাম্ভিক প্রযায়ে থাকে গনেশ বন্দনা ও আমদ। নটবরী অংশে তাল সহযোগে নৃত্য পরিবেশিত হয়। পরমেলু অংশে বাদ্যধ্বনীর সাথে নৃত্য পরিবেশিত হয়।পরণ অংশে বাদক বোল উচ্চারণ করে ও নৃত্যশিলপী পায়ের তালে তার জবাব দেয়। এরপর তবলা বা পাখোয়াজের সাথে নৃত্য পরিবেশিত হয়। ক্রমানবয়ে বিলম্বিত ও পরে দ্রুত তালের সাথে নৃত্য পরিবেশিত হয়।করতালি দিয়ে তাল নির্দেশ করাকে বলে প্রাধান।
কতক নৃত্যের প্রধান পোষাক লম্বা গোড়ালী পর্যন্ত পেশোয়াজ নামক এক ধরণের সিল্কের জামা ও চুড়িদার পাজামা। উজ্জল প্রসাধন ও অলংকার ব্যাবহৃত হয়।

http://www.youtube.com/watch?v=twco50Te7nk

http://www.youtube.com/watch?v=Bk0xaIedlNU
http://www.youtube.com/watch?v=6_3bbYjgwdA

http://www.youtube.com/watch?v=PM4o0GrheFI

http://www.youtube.com/watch?v=QA3dwcSW42M
কথক


শাস্ত্রীয় নৃত্যের প্রধান চারটি ধারার অন্যতম কথাকলি। অন্য আর তিনটি ভরতনট্যম, কথক ও মনিপূরী। কেনো যেন কথকের পরপরই আমার দ্বিতীয় ভালো লাগা কথাকলি। কথাকলি নৃত্যের বিকাশ হয় দক্ষিন ভারতের কেরলা অন্চলে। বর্নাঢ্য পোষাক, নাচের মুদ্রা ও পদসন্চালন আর প্রবল সঙ্গীত সহযোগ এই নৃত্যের প্রধান বৈশিষ্ঠ। কথাকলি মূলত নৃত্যনাট্য। নৃত্য এবং অভিনয় দুই এ নাচের প্রধান বিষয়।

নৃত্যনাট্যগুলি সাধারণত গদ্য ও কাব্য দুই পর্যায়েই রচিত হয়।কাব্যাংশে সংস্কৃত ভাষা আর কথপোকথনে মালায়ম ভাষা ব্যবহৃত হয়। রামায়ন, মহাভারত বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনেই সাধারণত কথাকলি নৃত্যনাট্য রচিত হয়। নৃত্যাভিনেতারা মন্চে কথা বলেন না। নাচ ও অভিনয়ের মাধ্যমেই পুরা কাহিনী ফুটিয়ে তুলেন। অভিব্যাক্তি প্রকাশের জন্য শিল্পীকে হতে হয় মুকাভিনয়ে অতি সুক্ষ। সাধারনত ১৫ থেকে ২৫ জনের দল নিয়ে কথাকলি নৃত্য পরিবেশিত হয়। নৃত্যস্থলে থাকে একটিমাত্র পিলসুজের প্রদীপ।

এই নাচে নানা ধরণের চরিত্রের সমাবেশ ঘটে। সাত্বিক, রাজসিক ও তামসিক। এই চরিত্রগুলির অর্থ যথাক্রমে উত্তম , মধ্যম ও অধম। পরিচ্ছদ ও অঙ্গসজ্জার পরিকল্পনা করা হয় চরিত্রের গুণ অনুযায়ী। কথাকলি নৃত্যে পরিচ্ছদের ব্যাপারটিও জটিল। একজন শিল্পীকে পোষাকে কমপক্ষে আশিটি গিট দিতে হত বলে শোনা যায়। সঙ্গীত কথাকলি নৃত্যের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সঙ্গীত ব্যাতিরেকে কথাকলি নাচ হয়না।

কথাকলি তান্ডব প্রধান নৃত্য। তাই পুরুষের উপোযোগীতা বেশী । তবে সারি নামে এক দল লাস্যময়ী নারী চরিত্র এই নাচে অংশ গ্রহন করে। শাস্ত্রীয় নাচের নিয়মাবলি যেমন কথাকলিতে কঠোর ভাবে অনুসরিত হয় তেমনি স্থান বিশেষে নৃত্যশিল্পীদের স্বাধীনতা প্রকাশের সুযোগ থাকে। নৃত্য শেষে নাটকের নায়ক সকলের উদ্দেশ্যে আশীর্বাদ বাণী উচ্চারণ করেন।

সত্যের জয় অবশ্যসম্ভাবী। এটাই কথাকলি নৃত্যের মূল কথা আর তাই কথাকলি আমার এত প্রিয়।:)

http://www.youtube.com/watch?v=prQOdTmF8u0

ভরত নাট্যম

http://www.youtube.com/watch?v=Wd6McJodj5M

কথাকলি

যাইহোক অনেক হলো নৃত্যকথন....
সবশেষে বলি, আমার হৃদয় মাঝে যে গান বাজে ... আর তাহার সাথে এ মন নাচে সেই অনেক অনেক অনেক পছন্দের নাচটির একটি ভিডিও
http://www.youtube.com/watch?v=RwMmlzS5h-M
মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে !
তা তা থই থই তা তা থই থই তা তা থই থই।



শাস্ত্রীয় নৃত্য সম্পর্কীয় আমার এ লেখাটি বিশেষভাবে আমার শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পিপাসু রেজাভাই কে উৎসর্গ করা হলো।


আর আমার নাচের স্কুলের ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থী সোহামনি আর সারাহ মনিকে এখন থেকেই খালামনির নাচ পোস্ট দেখে নাচের প্রতি উৎসাহিত করবার জন্য পোস্টটি তাদেরকে গিফট দেওয়া হলো। :)


সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:৩৪
১২৩টি মন্তব্য ১২৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×