somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা পাপেট শো-জিদ

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


খুব ছোটবেলায় টিভিতে মুগ্ধ হয়ে দেখতাম পাপেট শো। বিদেশীগুলোর তুলনায় মুস্তাফা মনোয়ারের পাপেট শোগুলিই আমার বেশি প্রিয় ছিলো কিন্তু কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবিনি এই পাপেট শো করার ভুতও আমার মাথায় একদিন চাপবে।
দু'বছর আগে আমার স্কুলে ছিলো পহেলা বৈশাখের মেলা। সবাই স্টল দিচ্ছে, কেউ মেহেদী লাগাবে, কেউ বা ফেইস পেইন্টিং করবে। আমার যদিও সেসবেও উৎসাহের কমতি ছিলোনা, তারপরও একঘেয়ে কোনো জিনিসই আমার বেশিদিন ভালো লাগেনা। সবাই নানা রকম সাজেশন দিচ্ছিলো। একজন বললো পাপেট শো টিমকে আনার কথা। সেটা অনেক বেশি এক্সপেনসিভ হওয়ায় এই পরিকল্পনা বাদ পড়েই যাচ্ছিলো । শেষ মুহুর্তে আমি লুফে নিলাম চ্যালেন্জ। কোনোরকম পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়া শুধুই শখের বসে চোখ বুজে পানিতে ঝাঁপ দেওয়া বলে যাকে আর কি। অবশ্য জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই এমন অথৈ সাগরে আমি চোখ বুজে ঝাঁপ দিয়েছি ও হাঁচড়ে পাঁচড়ে তীরে ঠিকই উঠে গেছি।:P আসলেই "হাঁটিতে শেখেনা কেউ না খেয়ে আছাড়!" কেনো যে আমরা বড় হতে হতে এই বেদবাক্যের মত সত্য কথনটি ভুলে যাই!/:)
তো সেবারে শেষমেষ করেই ফেলেছিলাম এক আশ্চর্য্য সুন্দর মনের মত সারাজীবনে আমার করা সেরা কাজগুলোর একটা!
http://www.somewhereinblog.net/blog/saimahq/29581415


আমার সেই ফার্স্ট পাপেট শো "রাখাল ছেলে ও বাঘ"

গতবছর হরতাল ও নানা রকম ঝামেলায় করা হয়ে ওঠেনি কোনো পাপেট শো। কিন্তু এবারে এসে গেলো আরেক বিশাল সুযোগ । আমার পাপেট শো শুধু আমার স্কুল নয়, মোট ৭ টা স্কুলে ৭দিন দেখানো হবে। এর মাঝে একদিন সেটা চীন মৈত্রীতেও প্রদর্শিত হবে। খুশীতে নেচে উঠলাম আমি।আবারও পুতুল খেলা, আবারও পাপেট শো।
শুরু হলো গল্প নির্বাচন। আগের বারে ছিলো ঈশপের গল্প কিন্তু এবারে ডিসিশন নিয়েছি যেহেতু বাংলা নতুন বছরের বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব এই পহেলা বৈশাখ আর সে উপলক্ষে করা আমার পাপেট শো বা পুতুলনাচে গল্প ও গল্পকার অবশ্যই হতে হবে আমাদের দেশের মানে খাঁটি একজন বাঙ্গালীকে। পান্তাবুড়ি, গোপাল ভাঁড়, শেয়াল পন্ডিতের পাঠশালা এটা সেটা নানা গল্প ভাবতে ভাবতে পেয়ে গেলাম খাঁটি নির্ভেজাল গ্রাম বাংলার একজন প্রাণের লেখককেই। জসিম উদ্দীন ও তার বিখ্যাত "বাঙ্গালীর হাসির গল্প" বইটা থেকে বেছে নিলাম "জিদ" গল্পটি। ভেবে চিন্তে বেশ যুৎসই একটা মোরালও বের করে ফেল্লাম বাচ্চাদের জন্য।

এবার স্ক্রিপ্ট রাইটি...
গল্প "জিদ"- জসিম উদ্ দীন
সূচনা সঙ্গীত-
তাঁতীর বাড়ি ব্যাঙের বাসা, কোলাব্যাঙের ছা,
খায় দায় গান গায় তাইরে নাইরে না।


দৃশ্য-১
ব্যাক গ্রাউন্ড সিনারী- সূর্য্য মাথার উপরে, মেঘ আর দূরের ঝোঁপঝাড়
ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিক- বাংলা গান


কুঁড়েঘরের দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসবে তাঁতী।
তাঁতীঃআমি রহিমুদ্দীন।লোকে ডাকে রহিমুদ্দী তাঁতী।কারণ আমার পেশা তাঁত বোনা। তোমরা আজকালকার দিনের মানুষ। তোমরা কি তাঁত চেনো? উমহু মনে হয় না। তাঁত আর তাঁতে তৈরী মসলিন, জামদানী সে সব মোলাম, সোনার জরী সুতোয় কাজ করা কাপড় চিনতো আগের দিনের মানুষেরা।আমাদের হাতে তৈরী এক একখানা কাপড়ের জন্য কত বাদশাহজাদী, নবাবজাদীরা সেই আমলে আমাদের উঠানে গড়াগড়ি যেত। এখনকার দিনে কল কারখানা, মেশিনে তৈরী কতই না বাহারী কাপড় পাওয়া যায়। তাঁতে তৈরী সাধারণ কাপড়ের তেমন আর কদর নেই। আমার সেই আদ্দিকালের পুরানো লক্কর ঝক্কড় তাঁতে আমাকে আজকাল বানাতে হয় মিলের তৈরী মোটা সুতার কাপড়। সে কাপড় যেমনি সস্তা তেমনি বিচ্ছিরি। মনে চায় না, মনে চায়না গো। আর সে কাঁপড় বেঁচে দুবেলা পেটের ভাতই যোগাড় হয়না।


তাঁতী বউ বেরিয়ে আসবে...
তাঁতী বউঃ মরিচ পোড়া, কচু ঘেচু ঘন্ট আর ডুমুর সড়সড়ি খেতে খেতে পেটে চড়া পড়ে গেলো গো। এত বলি হাঁটে যাও, হাঁটে যাও, ভালো মত একখানা মাছ কিনে আনো। সে কথা তো তোমার কানেই যায়না। যত সব । ( রাগ করে) এমন সোয়ামীর হাতে পড়ে আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেলো গো। একটা বেলাও ভালো মত খাইতে পাইনা। ( নাকি কান্না) ও বাবা গো, ও মাগো কই গো তোমরা। সেই কবে তোমাদের বাড়ী রুইমাছের মুড়ো দিয়ে বিন্নীচালের ভাত খাইছিলাম গো। সেই ভাতের ঘিরান আজও নাকে লেগে আছে গো । এ্যা এ্যা এ্যা।( কান্না)
তাঁতীঃ হইসে হইসে। থামো থামো। কান্দেনা। লক্ষীসোনা। থামো এইবার । এই সামনের হাঁটে তোমার জন্য ভালো মত ইয়াব্বড় একখানা মাছ কিনে আনবো। রুই মাছ, না না বোয়াল মাছ, না না পাঙ্গাস মাছে বেশী সোয়াদ!! আহা
তাঁতী বউঃ রাখো তোমার পাঙ্গাস মাছ। আমি ইলিশ মাছ চাই। পদ্মার ইলিশ। বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ইলিশের মত কোনো মাছ কি এই দুনিয়ায় আছে?


তাঁতী- ঠিক আছে। ঠিক আছে তাই হইবে। এই হাঁটে আমি তোমার জন্য একখান খাঁটি পদ্মার নদীর খাঁটি ইলিশ আনবো।
তাঁতী বউঃ এহহহহহহহহহহহহহহ!! খাঁটি পদ্মার, খাঁটি ইলিশ। বলি ঐ তাঁতী, এই হাট ঐ হাট সেই হাট করে কত হাঁট গেলো শুনি। জন্মে তো তোমার খাঁটি পদ্মা নদীর খাঁটি ইলিশ তো দূরের কথা, ডোবা নালার চুনোপুটি, খরশোলা, টাকী, চ্যাং বা ব্যাঙ কিছুই তো আনতে দেখলাম না। এই সামনের হাঁটে যদি আমার মাছ না পাই তো থাকলো পড়ে তোমার সংসার। আমি বাপের বাড়ি চলে যাবো। রোজ রোজ তোমার কচু, ঘেচু, থোড়, ডুমুর পোড়া খেতে পারবোনা। সে তুমি নিজেই পোড়াও, নিজেই খাও। তাও যদি একবেলা পেট ভরে খেতে পারতাম।হুহ কি কপাল আমার!!! ( কান্না)

কাঁদতে কাঁদতে ঘরের ভেতরে চলে যাবে। তাঁতীও মন খারাপ করে আরেক দিকের আমগাছের আড়ালে চলে যাবে।

দৃশ্য-২
ব্যাক গ্রাউন্ড সিনারী- সূর্য্যদয়, মেঘ আর দূরের ঝোঁপঝাড়
ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিক- ভোরের পাখির কলকাকলী।
তাঁতীঃ বউ বউ ও বউ। দেখ দেখ তোর জন্য একটা না, দুইটা না, তিন তিনটে মাছ নিয়ে আসিছি। কই গেলে গো, কই গো, ও বউ, রাঙ্গা বউ মাছ কোটেরে। উঠানে বসিয়া... রকম রকম মাছ কোটে বঠিতে ফেলিয়া..।
তাঁতী বউঃ (ঘরের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসবে।) বলি কি হইসে? বাড়িতে ডাকাত পড়িছে নাকি? কিসের এত শোরগোল?
দেখ দেখ তোর জন্য একটা না, দুইটে না তিন তিনটে মাছ নিয়ে আসিছি। হে হে হে । রাঙ্গা বউ মাছ কোটেরে। উঠানে বসিয়া... রকম রকম মাছ কোটে ?
তাঁতী বউঃ এহহহহহহহহ!! তিন তিনটে মাছ নিয়ে আসিছি। এই তোমার খাঁটি পদ্মার, খাঁটি ইলিশ, এব্বড় ইলিশ না! তিন তিনটে এত্তটুকুন এত্তটুকুন পুটি মাছ নিয়ে এসে এত শোরগোল!
তাঁতীঃ হে হে বউ আপাতত এই তিনটে পুটিই ভালো করে মসল্লা মাখায় প্যাজ মরিচ দিয়ে রান্না কর। সামনের হাঁটে খাঁটি পদ্মার খাঁটি ইলিশ আনে দেবো। হে হে হে রাঙ্গা বউ মাছ কোটেরে। উঠানে বসিয়া... রকম রকম মাছ কোটে বঠিতে ফেলিয়া বউ মাছ কোটেরে।
তাঁতীঃ হইসে। ঠিক আছে যা আনিছো তাতেই আমি খুশী যাই মাছ কুটি, রান্না চড়াই।
তাঁতীঃ হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক কথা। আমিও ততখনে পুকুর থেকে একখান ডুব দিয়ে আসি। ( তাঁতীর প্রস্থান)


বউ বটির সামনে হাতে মাছ নিয়ে বসে দুলে দুলে মাছ কাঁটে আর গান গায়। রাঙ্গা বউ মাছ কোটে রে। উঠানে বসিয়া। ( সুতায় বাঁধা কর্কশিটের মাছ বউ এর ঘুরে ঘুরে নাচের সময় টেনে নামিয়ে ফেলা হবে। ( কড়াই আর চুলার উপর আটকানো মাছ ঘরের আড়াল থেকে ঠেলে দেওয়া হবে তার সামনে আবার বউ গিয়ে রান্নার ভান করবে)
সাথে গান গাইতে থাকবে, রাঙ্গা বউ মাছ কোটেরে। উঠানে বসিয়া... রকম রকম মাছ কোটে বঠিতে ফেলিয়া বউ মাছ কোটেরে। (থালায় রাখা মাছ এগিয়ে দেওয়া হবে ও বউ চুলার সামনে যাবে ও চুলাসহ কড়াই নামিয়ে ফেলা হবে)
তাঁতির প্রবেশঃ কই রান্না হইসে।
তাঁতী বউ হ্যাঁ হাঁ হইসে। খেতে বসো।
তাঁতীঃ একি আমার পাতে একটা মাছ কেনো? আর তোমার পাতে দুইটা? আমি এত কষ্ট করে কামাই করে, দূরের হাঁটে হেঁটে গিয়ে মাছ কিনে আনলাম আর এখন পাবো একটা? তা তো হয়না।
তাঁতি বউঃ আহারে!!!!!!! আর আমি যে এতদিন ধরে বলে বলে একটা মাছ আনালাম আর তারপর আবার এই বৈশাখের গরমের দুপুরে ঘেমে নেয়ে রান্না করলাম এখন তুমি খাবে দুইটা আমি খাবো একটা? কিছুতেই না, কোনো মতেই না কোনো ভাবেই না!!!!!!!!!!!
তাঁতীঃ তবেরে পাঁজী মহিলা? স্বামীকে রেখে নিজে বেশি খাওয়া? আজ তোর একদিন কি আমার একদিন?


তাঁতীঃ ওরে !! যত বড় মুখ নয় ততবড় কথা!!! স্বামীকে রেখে বেশি খাওয়া না??? একবেলা পেট ভরে ভাত দিতে পারেনা । রোজ রোজ থোড় , কচু ঘেচু খেয়ে আমার সোনার অঙ্গ কালি হয়ে গেলো রে!!! আল্লাহ গো!!!!!!!! (কান্না )কত বলে কয়ে এই মাছ আনালাম এখন উনি খাবেন বেশী। কখখনো না!!!!!!!!!!!!কিছুতেই না। কাভি নেহি।
তাঁতীঃ ঐ খাঁটি বাংলাদেশের মানুষ হয়ে তুই আমাকে হিন্দী গালি দেস? তাও আবার বাংলা মাসের প্রথম দিনে?
(মারামারি)
তাঁতীঃ শোনো শোনো ঝগড়া ঝাঁটি মারামারি করে লাভ নেই। চলো একটা মীমাংসা করি। কে কতখন কথা না বলে থাকতে পারে। ( মনে মনে আমার বউ যে বাঁচাল মহিলা সে কি আর বেশী খন চুপ করে থাকে পারবে? সে বেশি খন চুপ থাকতে পারবেনা, বাজীতে হারবে আর আমি বাজী জিতে খাবো দুইটা মাছ আর বউ খাবে একটা। হে হে হে ) চলো চলো দুজনে চুপ করে ঘুমাই থাকবো। যে আগে কথা বলবে মানে যে এই বাজী্তে হারবে। সে খাবে একটা আর যে পরে মানে যে বেশি খন চুপ করে থাকতে পারবে সে খাবে দুইটা।
তাঁতী বউঃ ঠিক আছে তাহাই হোক। আমিও হারার পাত্রী নই।(দুজনে মরার মত পড়ে রইলো। নাক ডাকার শব্দ - ঘড়র ঘড়ড়, )

দৃশ্য- ৩
ব্যাক গ্রাউন্ডঃ দিন পার হয়ে সন্ধা হলো। আকাশে তারা জেগে উঠলো।
ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকঃ আমার দিন তো গেলো সন্ধ্যা হলো পার করো আমারে ......... গান গাইতে গাইতে দুজন গায়ের লোকের প্রবেশ।
গায়ের লোকঃ ও ভাই তাঁতী, তাঁতী বাড়ি আছো নাকি??ও তাঁতী ভাই ও তাঁতি বউ।
গায়ের লোকঃ আরে এরা এইভাবে পড়ে আছে কেনো? কি হলো ? কি হলো? মার টারা গেলো নাকি!!
গায়ের লোকঃ তাই তো তাই তো।আরে মারাই তো গেছে কোনো সাড়া শব্দ নাই। হায় হায় রে । তাতী তাতী বউ বড় ভালো মানুষ ছিলো গো।

আরও দুতিনজনের প্রবেশ
তারা সকলে আহারে বেচারারা খাবারটাও খেতে পারেনি। মাছ, ভাত সব শুকিয়ে কড়কড়া। কখন যে মারা গেছে। চলো দাফন কাফনের ব্যাবস্থা করি। হুজুর ডাকো, হুজুর ডাকো।


হুজুরের প্রবেশ।
হুজুর: ইন্নানিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহে রাজিউন। দাফনের ব্যাবস্থা করো।
লোক দুজন: ধরো ধরো সাবধানে ধর। কবর দিতে হবে।
হঠাৎ তাঁতী তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠে।
তাতীঃ তুই দুইটা খা আমি একটাই খাবো।
শুনে তাঁতী বউও হাসতে হাসতে উঠে বসলো।
তাঁতী বউঃ হি হি হি। ঠিক ঠিক আমি দুইটা খাবো তুমি একটা। হি হি হি


লোক জনঃ এ্যা এ্যা এ্যা !!! এই সব কি !!!!!!!!!!!!ওরে বাবারে মারে , ওরে বাবারে মারে এযে ভু.....ত। জ্যান্ত ভুত.......তাঁতী আর তাঁতী বউ মরে ভুত হয়ে গেছে । এখন দুজন মিলে আমাদের তিনজনকে খেতে চায়। ওরে বাবারে মারে , ওরে বাবারে মারে…. বাঁচাও...
শুনে ৩ জন ছুটে পালালো।
তাঁতীঃ হা হা হা হা হো হো হো হো হা হা হা হা
তাঁতী বউঃ হাসছো কেনো ?
তাঁতীঃ হা হা হা হা হা হা হা হা
তাঁতী বউঃ বলি হাসছো কেনো ? আচ্ছা হ্যাঁগো ও তিনজন লোক ওমন ছুটে পালালো কেনো?
তাঁতীঃ আরও জোরে হা হা হা হা হো হো হো হো । তাও বুঝলে না তাঁতি বউ। আমরা যে দুইটা মাছ আর একটা মাছ খেতে চেয়েছি তা ঐ তিনজন লোক বুঝতে পারেনি। তারা ভেবেছে আমরা মরে ভুত হয়ে গেছি।এখন তুমি দুইটা আর আমি একটা বুঝি ঘাড় মটকে খেতে চাই। হা হা হা হা হা হো হো হো আর তাই আর তাই ছুটে পালিয়েছে।

তাঁতীঃ হি হি হি হি হি হি তাই বলো এতখনে বুঝলাম ওরা আমাদেরকে ভুত ভেবেছে হি হি হি হি আর ভেবেছে আমরা ওদের তিনজনকেই খেতে চাই হি হি হি ।সে যাই হোক চলো এখন খেতে বসি। ওমা এমন পঁচা পঁচা গন্ধ কিসের !!!
তাঁতী ঃ তাই তো তাইতো । আরে আমাদের এত সাধের এত ঝগড়া ঝাটির মাছ পঁচে তো দূর্গন্ধ বের হচ্ছে।
তাঁতি বউঃ কি!!!!!!!!!!!!!!!! এ্যা এ্যা এ্যা এ্যা। এত কষ্টে এত দিন পর তিনটা মাছ পেলাম। তাও এত সাধ করে রাঁধলাম। খেতে চাইলাম । কিন্তু বেশী লোভ ও জিদের কারণে তা আমাদের কারো ভাগ্যেই জুটলো না।
তাঁতীঃ আজ থেকে বুঝলাম লোভ এবং জিদ কোনোটাই বেশি ভালো নয়। কোনোটাই বেশি ভালো নয়। ছোট্ট বন্ধুরা তোমরা কখনও বেশী লোভ আর জিদ করোনা।
সব পুতুল উঠে আসবে একসাথেঃ বিদায়।

স্ক্রিপ্ট রাইটিং শেষ হলো। এরপর ভয়েস দেবার পালা। চলে গেলাম এরপর স্ক্রিপ্ট নিয়ে স্টুডিওতে। ১০টা থেকে ৪টা। টানা ৬ ঘন্টায় রেকর্ডিং, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকসহ সিডি মাস্টার করে আনলাম।


এরপর পুতুল কালেকশন। কিছু পুতুল আগেই ছিলো। শুধু তাঁতী বউটা চাই মনের মত। আমার তাঁতী ছেলে বড়ই সৌন্দর্য্য! তার জন্য চাই যোগ্য বউ। বনানির আর্চিজ থেকে কিনে আনলাম দুইবেনী ঝোলানো বাচ্চা মেয়ে পুতুল। তারপর সেই বিদেশী মেমকেই সারারাত জেগে সাজালাম শাড়ী, চুড়ি, টিপ, দুল মালায়। হাজার হোক আমারই তো বৌমা আর তাই নিজের গয়নায় সাজিয়ে দিলাম তাকে। ওড়না থেকে বেঁচে যাওয়া লেসের টুকরোও সেলাই করে দিলাম ওর লালশাড়ির পাড়ে।


এর পর স্টেজ ডেকোরেশনের পালা। যেহেতু এটা হবে সাত সাতটা স্কুলে। কাজেই বিভিন্ন রকম ব্যাবস্থা থাকতে হবে। কোথাও হবে ইনডোর উইথ লাইটিং সিস্টেম কোথাও বা সানলাইটেই খোলা স্টেজে। কাজেই এবারে ঝামেলা একটু বেশীই। সে যাইহোক বসে গেলাম মনের মত স্টেজ সাজাতে। এই কাজ একা করা সম্ভব ছিলোনা কাজেই সাথে নিলাম বেশ কয়েকজনকে। শুধু ব্যাকগ্রাউন্ডে একটা বিশাল ডিসপ্লে বোর্ড ইউজ করেছিলাম সেটা কাটিং পেস্টিং আর ড্রইং এ ফুটিয়ে তুল্লাম নিজের হাতেই। বাকীরা শোলার কাজ, গাছ ফুল পাতা সবই বানিয়ে ফেললো সুন্দর করে।



এরপর প্রাকটিসের পালা। আর সেই প্রাকটিস করতে গিয়ে আমার গলায় তাঁতী বউ এর ঝগড়া দেখে তারা নিজেরাই হেসে কুটিপাটি। বলে তুমি এত ভালো ঝগড়া জানো সেটা তো জানতাম না!!! আসলে কি তাই? আমি তো শুধু অভিনয় করেছি।:(:(:( আমার মত ভালো মানুষ কি এই দুনিয়ায় দুইটা আর আছে?:P


সে যাইহোক নানারকম মজার অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে সাত সাতটি মঞ্চে পরিবেশিত হলো আমার ভীষন ভীষন ভীষণ মজার ( নিজের কাছে) কাজটা মানে সেই পাপেট শো "জিদ"। এরপর ভিডিও দেখে তো আমি একদম অবাক। যদিও অফিসিয়াল ভিডিওগুলি কপিরাইট থাকায় সেটা দেখাতে পারছিনা।

অনেক অনেক ভালো থেকো সবাই। সবাইকে নতুন বাংলা বছরের শুভেচ্ছা!!
ইদানিং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে একটু বেশি ব্যাস্ত হয়ে পড়েছি। এই ব্যাস্ততা হয়তো সহজে কাটবেনা । তবুও সামহ্যোয়ারইন ব্লগ আর এর থেকে পাওয়া আমার সব প্রিয় ভাইয়া আপুনিরা সবসময় থাকবে আমার মনের মাঝারে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৫৬
১৬০টি মন্তব্য ১৫৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×