ঈদ-উল-ফিতর এই বিশেষ দিনটি দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পরবর্তী আনন্দ নিয়ে আসে। ঈদ-উল-আযহা আনে ত্যাগের আনন্দ। সংযম বা ত্যাগ সব কিছু ছাপিয়েও ঈদ প্রতি মুসলিম জীবনেই বিশেষ আনন্দের বিশেষ বার্তা বাহক। আর আনন্দ মানেরই বিশেষ রকম খানাপিনা, পোষাক-আষাক, সাজসজ্জা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধব মিলে মিশে একাকার হবার ক্ষন। তাই মুসলিম তথা বাঙ্গালী সমাজে ঈদ মানেই বিশেষ আয়োজন, বিশেষভাবে একটু আনন্দ খোঁজার দিন। ক্রম নিমজ্জিত ক্রুঢ়, কঠিন, নিষ্ঠুর পৃথিবীর এই হতাশা- বিষন্নতায় ঢেকে আসা ধোয়াশার মাঝেও এক চিলতে আনন্দ আহরনের বিশেষ দিন। তাই দিনটিকে ঘিরে চলে যার যার সামর্থ্য মত আনন্দ জিনে নেবার চেষ্টা।
ঈদের সবচাইতে মেইন পার্ট জুড়েই থাকে বিশেষ খাদ্য আয়োজন। তাই আমরা প্রতিবছরই যে যার মত খাদ্যের আয়োজন করি ঈদ উৎসবকে ঘিরে আর এই কাজটি আমার বিশেষ প্রিয় সে এই ব্লগে যারা আমাকে চেনেন তারা সকলেই জানেন। আসলে নিত্য নতুন এক্সপেরিমেন্ট এবং তার সাজসজ্জা বা প্রেজেন্টেশন এটাই আমাকে ভালো রাখে, আনন্দে রাখে সবচাইতে বেশি আর সেটাই সবার সাথে ভাগ করে নেবার জন্যই প্রতি বছর আমার থাকে এই ঈদ আয়োজন। পুরোনো বছরগুলোর ব্লগে পাতা খুলে যখন আমি দেখি আমার স্মৃতির ঝাঁপি। এক রাশ আনন্দ হুড়মুড় করে নামে আমার চোখের পাতায়।
সে যাইহোক আমার ঈদ-উল- আযহা-২০১৭ এর বিশেষ আয়োজনে এবারেও ছিলো নিত্য নতুন কিছু আয়োজন। তবে লাস্ট মোমেন্ট পর্যন্ত স্কুল খোলা থাকায় আমার প্ল্যানিং এ একটু ঝামেলা হয়ে যাচ্ছিলো তবে একদিন আগে বন্ধ পেতেই বসলাম আমার ইদানিং কালের বেস্ট ফ্রেন্ড ইউটিউবের সাথে! ব্যাস লিস্টি করে ফেললাম কি কি বানাবো এবার আর কি কি লাগবে। তবে খানা খাদ্যের সাথে সাথে তাদের সাজুগুজুটাও আমার বিশেষ প্রিয় আর তাই সেটা নিয়েও ভাবতে হলো। আগেরবারে গোল্ডেন থিমে টেবিল ডেকোরেশন ছিলো এবার তাই সিলভারটাই বেঁছে নিলাম।
আমার এবারের ঈদের রুইমাছের মুচমুচে ভাঁজি এবং গরুর রেজালার সাথে স্পেশাল ডিশ ছিলো হানি গারলিক গ্লেজড মিটবল, স্টায়ার বিফ ফ্রাই, স্যুইট এ্যান্ড সাওয়ার প্রণ এবং বিয়ে বাড়ি স্টাইল চিকেন তন্দুরী! এছাড়া প্লেইন পোলাও সেমাই, জর্দা এসব তো ছিলোই!
এই যে আমার চকচকে রুপোর থালায় মুচমুচে রুই মাছের ফ্রাই। হলুদ লবন আর মরিচের গুড়ো মাখিয়ে ভেঁজে নিয়েছি সাথে একটু পেঁয়াজ ভাঁজা ব্যাস!
বিফ স্টায়ার ফ্রাই ছবি এবং রেসিপি - ১. গরুর মাংস : আধা কেজি ২. ক্যাপসিক্যাম এবং টমেটো ১/১ ৩. শুকনো মরিচ গুড়া : আধা চা চামচ ৪. পেঁয়াজ কুঁচি : ২টা ৫. তেল : ৩ টে চামচ ৬. রসুন : ৮/১০ কোয়া ৭. রেড চিলি সস : আধা কাপ ৮. সয়া সস : ২ টে চা ৯. গোলমরিচ একটু।
ফ্রাইপ্যানে তেল দিয়ে রসুন এবং মরিচ গুড়ো দিয়ে নেড়ে নিতে হবে। এবার গরুর মাংস গুলো ছেড়ে দিয়ে ক্যাপসিকাম, টমেটো, রসুন, লবণ, গোলমরিচ, পেঁয়াজ, লাল মরিচ, সয়াসস, টমেটো সস দিয়ে রান্না করে সিদ্ধ হলে নামাতে হবে। কত্ত ইজি! তবুও না পারলে ইউটিউব তো আছেই।
হানি গারলিক গ্লেজড মিটবল- ১. ফ্রোজেন মিটবল ১ প্যাকেট ২. রসুন কুচি- ৪/৫ কোয়া ৩. লবণ ১ চা চামচ ৪. শুকনা মরিচ ১ চা চামচ ৫. গোলমরিচ গুঁড়ো ১ চা চামচ, ৬. কর্ন ফ্লাওয়ার ২ চা চামচ, তেল- ২ টেবিল, মধু ৩ টেবিল চামচ, সয়া সস - ২ চা চামচ, পেঁয়াজ বা পেঁয়াজকলি ২ টে চা
আমি ফ্রোজেন মিটবল ভেজে নিয়েছি। এরপর নন স্টিক প্যানে রসুন এবং শুকনো মরিচ দিয়ে সোনালি করে ভেঁজে মধু, লবণ,গোলমরিচ, সয়া সস দিতে হবে। কর্ন ফ্লাওয়ারটাকে ২ টেবিল চামচ পানিতে মিশিয়ে সসের সাথে দিতে হবে। এরপর মিটবলগুলো দিয়ে ভালো করে নেড়ে নামাতে হবে।
স্যুইট এ্যান্ড সাওয়ার প্রন - চিংড়ি - হাফ কেজি, লবন ১ চা চামচ, গোলমরিচ ১/৪ চা চামচ, কর্ণফ্লাওয়ার ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ ৪ টা - ক্যাপসিকাম ১ টা টমেটো ১টা, শুকনো মরিচ ২ টা, আদা ১ টেবিল চামচ, রসুন ৪/৫ কোয়া, চিলি সস - ১ টে চা, অয়েস্টার সস ১ চা চামচ, ২ টেবিল চামচ লেবুর রস। সস তৈরির জন্য - সিরকা ১/২ চা চামচ, ব্রাউন সুগার ২ টেবিল চামচ, লবণ আধা চা চামচ, সয়াসস ২ টেবিল চামচ।
একটা প্যানে সসের জন্য রাখা সব উপকরণ একসাথে মেশাতে হবে। চুলায় দিয়ে ঘন হয়ে এলে ৩/৪ টেবিল চামচ পানিতে কর্নফ্লাওয়ার গুলিয়ে নিয়ে দিতে হবে। ফ্রাইংপ্যানে তেল গরম করে নিয়ে মাখিয়ে রাখা চিংড়ি ডুবো তেলে লালচে করে ভেজে তুলে নিতে হবে। আরেকটি প্যানে অল্প তেল দিয়ে পেঁয়াজ দিয়ে নরম করে নিতে হবে। শুকনা মরিচ, রসুন, আদা কুঁচি, গোলমরিচ গুঁড়ো দিতে হবে। ভালো করে নেড়ে নিয়ে চিলি ও অয়েস্টার সস, ক্যাপসিকাম, টমেটো দিয়ে দিতে হবে। এরপর চিংড়ি দিয়ে সস দিতে হবে। লেবুর রস দিয়ে মাখা মাখা হয়ে এলে হয়ে গেলো স্যুইট এ্যান্ড সাওয়ার প্রন!!!!!
চিকেন তন্দুরী- মুরগী, তেল, টক দই ,পেঁয়াজ,লেবুর রস,রসুন বাটা,আদাবাটা,ধনে গুঁড়ো, জিরা গুঁড়া,ধনে গুঁড়া, কাঁচা মরিচ,গরম মশলা লবন।প্রথমেই মাংসের গা চিরে নিতে হবে। লবন আর লেবু ভাল করে মিশিয়ে মশলার মিশ্রণটা ভাল করে ঘষে ঘষে মাংসের গায়ে লাগিয়ে আধা ঘন্টা রেখে দিতে হবে। বাটা পেঁয়াজ, আদা, রসুন, লঙ্কা, ও অন্যান্য শুকনো মশলাগুলি ভাল করে মিশিয়ে টক দই মিশিয়ে নিতে হবে। এতে মাংস ভাল করে ম্যারিনেট করে রাখতে হবে ৫/৬ ঘন্টা। এবার একটি ফ্রাইং প্যানে ঢাকা দিয়ে এক একটা দিক ১০-১৫ মিনিট হাল্কা আঁচে ভাঁজতে হবে। রুটি সেঁকার জালি বা অন্য কেনও জালি উপরে মাংসের টুকরোগুলি রেখে গনগনে আঁচে একটু সেঁকে নিন। তন্দুরের ওই পোড়ো পোড়ো ব্যাপারটা এতে চলে আসবে। আর খেতেও একেবারেই তন্দুরে তৈরি তন্দুরি চিকেনের মতোই হবে। অনেকে চারকোল ব্যাবহার করে কিন্তু আমি সেটা করিনি।
বিফ রেজালা- ৪ কেজি গরুর মাংস, টক দই ২ কাপ,চিনি ২ অল্প একটু,বাদাম বাটা,আদা-রসুন বাটা,তেল ১ কাপ,তেজপাতা ৬-৭টা,কাঁচামরিচ ১৫/১৬টা,মরিচ গুঁড়া ২ চা চামচ,হলুদ গুঁড়া ৩ চা চামচ,পেঁয়াজ বাটা ৪ কাপ। মাংস ধুয়ে পানি ঝরিয়ে চুলায় পাত্র তেল গরম হলে এলাচ,পেঁয়াজ বাটা একটু ভেজে নিতে হবে। মাংস আগে থেকেই টক দই ও বাটা মশলা দিয়ে মাখিয়ে রাখতে হবেএবার তেলের মধ্যে মাংস ও বাদাম বাটা দিন,সিদ্ধ করে,সব শেষে চিনি ও কাঁচামরিচ দিয়ে দমে ১ ঘণ্টা রাখতে হবে । নামানোর আগে ঘি উপরে ছড়িয়ে দিতে হবে।
ফিস ফ্রাই- রুই মাছের টুকরোগুলো লবন, হলুদ, মরিচে মাখিয়ে ডুবো তেলে ভাজা!
অবশেষে সেমাই
আর পোলাও এর ছবিটা আলাদা করে তোলা হয়নি বলে টেবিলশুদ্ধু দিয়ে দিলাম!
টেবিল চিত্র- ১
টেবিল চিত্র-২
টেবিল চিত্র- ৩
টেবিল চিত্র- ৪
টেবিল চিত্র- ৫
এইবার নাদিয়া আন্টির বাসায়
উনিও আমার মতনই ডেকোরেটিভ লেডি!
খানার সাজুগুজু তাহারও পছন্দ...
তিনিও খানা সাজান মনের মত...
তাই তাকে আমার এত পছন্দ...
এই যে আমার নাদিয়া আন্টি.....
এই বছরের রোজার ঈদে কয়েকজন টেবিল চোর আমার টেবিল চুরি করে সারা ব্লগ দৌড়াদৌড়ি করেছিলো। পরে মডুভাইয়ার আগমনে তাদের কোমরে দড়ি পড়ায় আমার টেবিল শেষমেষ রক্ষা পেয়েছিলো। এই ঈদে তারা ছাড়া পেয়েছে নাকি কে জানে! ভয়ে আছি কখন আমার থালাবাটি আবার না তারা চুরি করতে আসে। যাই হোক সেসব চোরসহ --------------
আমার সকল ভাইয়া আপুনিদেরকে ঈদ-উল-আযহা-২০১৭ এর প্রাণঢালা শুভেচ্ছা!!! সকলে ভালো থাকো, আনন্দে থাকো অনেক অনেক এবং অনেক!!!
আমার খানা পিনা দেখে ডানা খাইয়ার গানা তাহা দেখে নয়নভাইয়ার চক্ষু ছানা ছানা
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:১২