somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-১

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


২২শে ডিসেম্বর ২০২৩ প্লেনে উঠেছিলাম অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে। কুয়ালালামপুর হয়ে সিডনী কিংসফোর্ড। প্লেনের টিকেট সিলেক্ট করেছিলাম জানালার ধারে কারণ একা একা যাচ্ছি একপাশেই থাকি। জানালা দিয়ে ভোরের, দুপুরের রাতের আকাশ দেখবো! আমার পাশের সিটটা ফাকাই ছিলো। ভাবলাম আরাম করে হাত পা ছড়িয়ে বসা যাবে। কিন্তু বিঁধি বাম এক দল কোনো এক ফার্মেসীর ছেলেমেয়ে বা কলিগেরা যাচ্ছিলো মালায়শিয়া। তারা হই হই করে উঠলো প্লেনে। তাদের মাঝের মেয়েগুলোর একটার সিট পিছের দিকে ছিলো আর তাতেই ছেলেগুলো থেকে অতি পণ্ডিত সবজান্তা শমসের গায়ে মানে না আপনি মোড়ল টাইপ একজন বললো তুমি এইখানে এই আপুর পাশে এসে বসো। বাহ! সব আপুরা একসাথে কত সৌন্দর্য্য! আমি এমনিতে হাসিমুখী কিন্তু এই গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল পণ্ডিত এর পণ্ডিতি পছন্দ হলো না মোটেও। মুখ গম্ভীর করে মাস্টারমশাই মুখ করে জানালার দিকে চেয়ে বসে রইলাম। যাইহোক ঢাকা থেকে মালায়শিয়া এই চার ঘন্টা সবাইকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে ছেড়েছিলো ঐ ৭২ জনের বিশাল দলটা। একটু পর পর উঠে এসে একেক সিটের সামনে দাঁড়িয়ে হে হে করে গল্প করে। এক্সাইটমেন্টে তারা তখন ওভারস্মার্ট পাগলের দল! যাইহোক ওদের মাঝে একজনের গল্প মনে আছে। ছেলেটার নামও মনে করে রেখেছিলাম কিন্তু এখন ভুলে গেলাম। যাইহোক সে বলছিলো জানোস, আমার মা আসার সময় আমাকে গালে তুলে ভাত খাইয়ে দিয়েছে। আমাকে সারাক্ষন জড়ায় ধরে রেখেছিলো। আমি এখন মইরা গেলেও আমার আর দুঃখ নাই। আহারে বেচারা বড়সড় বালক! সবকিছুর মাঝে এই ছেলেটার এই কথাটার জন্য আমার সারাজীবন মনে থাকবে তাকে।

দুনিয়ায় যত বাস ট্রাক পিকআপ ভ্যান রিক্সা লঞ্চ জাহাজ ফেরী নৌকা যত রকমের যানবাহন আছে তার মাঝে প্লেন জার্নি আমার কাছে সবচেয়ে নিরানন্দের। আমার বোন যাকে বলতে গেলে প্রতি সপ্তাহেই প্লেনে করে একখান থেকে অন্যখানে জবের প্রয়োজনে যেতে হয় । সে বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে আমেরিকায় পিএইচডি কমপ্লিট করে বেশ ভালো গুরুত্বপূর্ণ পদেই জব করছে সেও বলে প্লেনে ওঠা আর অপারেশন টেবিলে যাওয়া দুইই এক। হা হা এই কথা প্লেনে বসে আমার সবসময়ই মনে হয়। অপারেশনে যেমন জীবন বাঁধা থাকে ডক্টরের হাতে, চাইলেই সে এক ছুরি বা চাকুর পোঁচে কেটে নিয়ে আসতে পারে হার্ট, ফুসফুস, যকৃৎ, নাড়িভূড়ি গিলা কলিজা, শিরা উপশিরা। চাইলেও অপারেশন বা সার্জারীর রুম ছেড়ে পালানো যায় না ঠিক তেমনই প্লেনেও পাইলটের হাতে জীবন আর প্লেন ছেড়ে পালানো তো দূরের কথা। অপারেশন থিয়েটারের দরজার দিয়ে কোনো রকমে পালাতে পারলেও বাঁচার সম্ভাবনা আছে কিন্তু হায় প্লেনের দরজা! খুলবো কিভাবে আর খুললেও কোথায় ঝাঁপ দেবো!! এই সব সাত পাঁচ কারনেই আমি আমার নিজের ল্যাপটপ, গল্পের বই, নিজের স্নাকস সবই সাথে রাখি দিন দুনিয়া ভুলে থাকার চেষ্টায় আর কি। শূন্যে থাকলে দিন দুনিয়ার কথা ভেবে কি লাভ? যাইহোক লালনের একটা গান আছে "বেঁধেছো এমনই ঘর শূন্যের উপর প্রচ্চা করে" এই গানও মনে পড়ে আমার যখন আমি প্লেনের মাঝে শূন্যে বাঁধা উড়ন্ত ঘরে থাকি।

যাইহোক কুয়ালালামপুরে পৌছে ট্রানজিট ছিলো ২ ঘন্টা। আমি যেই গেট থেকে বের হলাম সেই গেটই ছিলো নেক্সট কানেকন্টিং ফ্লাইটের গেট। আমি সে দিকে না তাকিয়েই সোজা মনিটর খুঁজতে খুঁজতে সামনে হাঁটা দিলাম। একা একা আমি ঢাকা শহরের শপিং সেন্টার ভ্রমনে এক্সপার্ট কিন্তু একা একা আমি বৈদেশ ভ্রমনে বারংবার দারুন ভীত থাকি। ঢাকার বাইরের শহরগুলোতেও আমি কখনও একা একা ভ্রমন করিনি, জীবনে কোনোদিন কোনো ভারচুয়াল বা অনলাইনের পরিচিত শত প্রিয় মানুষ হলেও তার সাথে দেখা করিনি শুধু একজন ছাড়া। এমনই সেফ সাইডার আমি সেই আমাকে আমার জীবনে বহুবার একা একা বৈদেশ ভ্রমন করতে হয়েছে।:( যাইহোক ভয়ে ভয়ে হাঁটতে হাঁটতে ইনফরমেশনে গিয়ে খবর নিতে দেখি যে পথ দিয়ে চলে এলি সে পথ আবার ভুলেও গেলি রে মানে সেই পথের ধারেই গেট ছিলো। :( কি আর করা! ২ ঘন্টা বসে বসে কিছুতেই ইন্টারনেট কানেক্ট করতে পারছিলাম না। তাই রোমিং দিয়ে কল দিলাম বাসায়।

এরমাঝে একজন বয়স্ক মানুষ যাকে দেখে আমার নিজের বাবার কথা মনে হচ্ছিলো সে আমার ফোন দেওয়া দেখে বলে আপনি কি নেট কানেক্ট করতে পেরেছেন? আমি বললাম না পারিনি কিন্তু একই সাথে মহাগৌরবে বলে দিলাম রোমিং দিয়ে কল করেছিলাম বাসায়। সে বলে আমি আমার মেয়ের সাথে কথা বলতে পারছি না কারণ নেট কানেক্ট করতে পারছি না বলে। আমি মনে মনে ভাবলাম হায় হায় এখন আবার তাকে রোমিং দিয়ে আমার ফোন থেকে কথা বলাতে হবে নাকি? যাইহোক তিনি সেটা চাইলেন না কিন্তু বসে বসে বলতে লাগলেন তার জীবনের নানা গৌরবময় ইতিহাস। আগেই বলেছি আমি হাসিমুখী এবং ফ্রেন্ডলী লুক তাই যে কোনো মানুষ আমার সাথে কথা বলতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কিন্তু একই সাথে ভেতরে ভেতরে আমার আরেকটা রুপ বা আরওকিছু রুপ আছে যা অনেকেই দেখতে পায় না। যাইহোক তিনি বলতে শুরু করলেন তিনি আমেরিকান সিটিজেনশীপ কেমনে পেয়েছে। তার পরিবারের কতজন মানুষকে আমেরিকান সিটিজেন বানিয়ে দিয়েছেন। তিনি সর্বদাই বিজনেস ক্লাসেই ভ্রমন করেন ইত্যাদি ইত্যাদি সফলতার গল্প! তার জীবনের সফলতা ও আত্মতৃপ্তির গল্পগুলো শুনে খুব ভালো লাগছিলো। নেক্সট ফ্লাইটে আবারও পাশের সিট খালি ছিলো আর ঐ ৭২ জনের পণ্ডিতি ছেলেমেয়েদের দল না থাকায় আমি সেই ৮ ঘন্টার সফর হাত পা ছড়িয়ে নিজের কুইল্ট পাশের সিটের কুইল্ট পাশের সিটের পিলো সব নিয়ে আরামসে পাড়ি দিলাম সাগরের পর সাগর।

সিডনী কিংসফোর্ডে পৌছালাম সেদিন ২৩শে ডিসেম্বর। এয়ারপোর্টে পৌছুবার পরও আবার সেই একই ঝামেলা মানে না মানে ঝামেলা না হলেও আমাকে ঝামেলা পাঁকাতেই হবে। আগেরবারে ২০২৩ এ কোনো লাগেজই আনিনি। শুধু পিঠে কয়েকটা কাপড় আর সাজুগুজু সমেত ব্যাগপ্যাক নিয়ে চলে এসেছিলাম লাগেজ মাগেজের ঝক্কি না পোহাতে। কিন্তু এবার বিশাল এক লাগেজ ভর্তি কাপড় চোপড় জুতা সাজুগুজু গয়নাগাটি, মেডিসিন এই সব নিয়ে এসেছিলাম। কাজেই লাগেজ আমার অমূল্য রতন। সেই লাগেজ ছাড়া আমি সাজুগুজু করবো কেমনে । ছবি তুলে তুলে ফেসবুকে দেবো কেমনে? লাগেজ খুঁজতে গিয়ে তো আমি হিমশিম। আমার লাগেজ খুঁজেই পাচ্ছিলাম না।

হঠাৎ সামনে পেয়ে গেলাম এক ড্যাশিং পুশিং মহিলা। এয়ারপোর্টের সেই ড্যাশিং পুশিং মহিলাকে জিগাসা করতেই সে বলে উঠলো আমার চেহারা সুরৎ দেখেই যে আপনি কি বাংলাদেশী? আমি তো ওরে আমার স্বদেশী বইন রে পাইছি রে তোরে শিঘ্রী আমার লাগেজ খুঁজে দে রে হাউ মাউ খাউ লাগায় দিলাম। সে মহা মাতবরী চালে আমার টিকেটখানা দেখে বলে আরে আমি ১৫ নং আসছেন কেন আপনার তো ১৪ নং এ । আমি তো থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ করে দৌড় সেদিকে। কিন্তু তারে ছাড়লেও স্বদেশী বইন আমারে ছাড়ে না।

আরে আপা দাঁড়ান দাঁড়ান কই যান? আমার সাথে আসেন চলেন হাঁটেন আমি আপনার রক্ষাকর্তা(এমন ভাব)। মানে আমি তখন পড়ে গেলাম তার খপ্পরে। কিন্তু অভিনয়টাতো আমি ভালোই জানি তাই বোকা বোকা সেজে তার খপ্পর থেকে বেরিয়ে এলাম। আমি প্যাকেট ফুড আর মেডিসিন নিয়ে এসেছিলাম বলে ডেকলেয়ার করেছিলাম আর আমি প্রতিবারই আসার আগে খুব ভালো করেই জেনে বুঝে যা আনা যায় তাই আনি কারণ কোনো উটকো ঝামেলায় পড়তে চাইনা, আগেই বলেছি আমি সেফ সাইডার। যখন আমি সেটা দেখাচ্ছিলাম এয়ারপোর্টের চেকিং এর লোকজন কিছু বলার আগেই সেই স্বদেশী মহিলা ও মাই গড!!!!!!!!! করে কপালে হাত দিয়ে খুবই থার্ড ক্লাস মুকাভিনয় দেখালো আমাদেরকে! যেন এইটা কি করছেন! এখন তো আপনার জেল হবে জরিমানা হবে আপনে তো শেষ বইন! তার থার্ড ক্লাস অভিনয়ে চেকিং এর লোকটা মোটেও মুগ্ধ তো দূরের কথা পাত্তাও দিলো না। বললো ইটস ওকে। আমি বেরিয়ে এলাম হি হি হি হি করতে করতে।

পিছে ঐ স্বদেশী বইন এক ডিসাবল লেডির হুইল চেয়ার ঠেলতে ঠেলতে হাত উঁচু করে আমার পিছন পিছন দৌড়াতে লাগলো। আপা দাঁড়ান দাঁড়ান খাড়ান খাড়ান কি যেন বলছিলো। আমি তো যা ভাগ খারাপ অভিনেত্রী। ধোকাবাজীটাও ভালো মত শিখলি না। তোর কোনো দাম নাই আমার কাছে। মনে হয় ভেবেছিলো এই বোকা গাধী মহিলাকে অভিনয় দেখিয়ে মুগ্ধ করে কিছু টাকা খসিয়ে নেবো। সোজা দৌড়ে গিয়ে সিনামাস্টাইলে ঝাঁপিয়ে পড়লাম যারা আমার জন্য গেইটে ওয়েট করছিলো তাহাদের বুকে। আর পেছনে আড়চোখ দেখলাম সেই মহিলা ঐ ডিসাবল লেডির হুইল চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে করুণ চোখে আমার পথ পানে চেয়ে আছেন। তারপর গাড়িতে বসে চারিদিকের ক্রিসমাসের আলোক সজ্জা দেখে মুগ্ধ হলাম। আহা! ওহ গাড়িতে ওঠার আগে অবশ্য তাড়াতাড়ি এয়ারপোর্টের ক্রিস্টমাস ট্রি আলোকসজ্জার সাথে ছবি তুলে নিয়েছিলাম।


২৪শে ডিসেম্বর ক্রিসমাস ইভ। আমাকে তো ক্রিসমাস ট্রি এর সাথে ছবি তুলতেই হবে। তাই গেলাম প্রথমেই ডার্লিং হারবারে।

সেখানে গিয়ে তো আমি অবাক ক্রিসমাস ইভের নাম গন্ধ নাই শুধুই জাহাজ আর জাহাজ! আর এই দিকে কেনো জানিনা আমার অনেক খিধা লাগছিলো সমুদ্দুরের হাওয়ায়।


আর সেখানে একের পর এক দোকান সবখানেই এলকোহল পান চলছে। সব কিছু বার বার দেখতে দেখতে পেয়ে গেলাম মেক্কা বাহ। আহা আলাদীনের প্রদীপ ওয়ালা সেই ফুড শপ আর সাথে মেক্কা নাম দেখে আশস্ত হলাম, এখানে নিশ্চয় হালাল খানাদানা পাওয়া যাবে।
হাতে চাঁদ পেয়েই দৌড়ে ঢুকলাম সেখানে। এরপর মেন্যু উলটে বুঝে গেলাম এই বাহ মানে সেই বাহ নহে এই বাহ মানেও বারই। হা হা হা যাইহোক সব খাবারের দামই আকাশচুম্বী ছিলো।


কিন্তু কি আর করা একটা প্রেস্টিজ আছে না ঢুকেছি আর না খেয়ে বের হবো!! তাই কি হয়! তাই ভেবে চিন্তে অর্ডার দিলাম শীসকাবাব প্লাটার! খেতে ভালোই কিন্তু দেখতে খুবই সুন্দর!


টাউনহলে ক্রিসমাস ইভে সবাই ঘুরতে এসেছিলো।


চারিদিক ক্রিসমাস সাজে রঙ্গীন।


ক্রিসমাস মেলা.... অনেকটা আমাদের দেশের পহেলা বৈশাখের মেলার মত। মানুষ জন ক্রিসমাসের রেইন ডিয়ার বা ছোট ছোট ক্রিসমাস ট্রি মাথায় লাগানো ব্যান্ড পরে হাঁটছিলো। ছবি তুলছিলো। আমি ছাই কোথায় সেটা খুঁজেই পেলাম না সেদিন। পরদিন পেয়েছিলাম। কিন্তু কি লাভ সেদিন সেসব পেয়ে!


এখানটায় এই অপরূপা প্রাচীন ভাস্কার্য্যও ছিলো।এরমাঝে ঝমঝম বৃষ্টি। আমি তো রেইনকোট পরে ভূত সাজলাম। কিছু পরে বৃষ্টি থামলো আমরা গেলাম চায়না টাউন।

অনেক খানা পিনা পার্টি ম্যুড চলছিলো রং বেরং এর দোকানগুলোতে আর গানা বাজনায় মনে হচ্ছিলো সেটা থাইল্যান্ডের পাতায়া।


তবে পোল ড্যান্স ছাড়া আর কি।


যাইহোক ডার্লিং স্কয়ারের একটা আলোকসজ্জিত বাগানে ছবি তুলে সেদিনের মত বেড়াবেড়িতে ইস্তফা দিলাম আমরা।


তবে আমার আর হাঁটার ক্ষমতা ছিলো না তাই লাইট রেলে চড়ে স্টেশনে ফিরলাম। তারপর বাসায়। এত্ত এত্ত হাঁটাহাঁটি করে আমার তখন ক্রিসমাস ইভের রাত বারোটায় নিজের বেঁজেছিলো তেরোটা.........

পর পর দুই বছরেই ২৫শে ডিসেম্বরে যেতে হলো লাকেম্বা বাঙ্গালীপাড়া সিডনীতে। কারণ আর কিছুই না অত্যাবশ্যকীয় কিছু বাঙ্গালী কেনা কাটা যা আমার লাগবেই। তাই চললাম লাকেম্বা। বাসা থেকে বের হলেই সামনেই পার্ক। সেই পার্কে রোজ রোজ আমার ছবি তোলা লাগবেই।


সেদিন আবার বাচ্চাকাচ্চা কেউ না থাকায় আমি পার্কের গোলাপী নুড়ি পাথরে বাচ্চা হয়ে পোজ দিলাম। হা হা


তারপর সিডনীর মেট্রো। মেট্রোর মুখেই দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম তারপর চেপে বসলাম মেট্রোতে। যাবার পথে থামলাম হাইড পার্কে! অপরূপা হাইড পার্কের রুপে মুগ্ধ হলাম আমি। আর এই বড়দিনে চার্চে কি কর্মকান্ড হয় সেটা দেখার বড় সাধ ছিলো আমার। পার্কে ঢুকে আমি তার শৈল্পিক সৌন্দর্য্যে আর চারিদিকের মনোরম নৈস্বর্গিক দৃশ্যে মন হারালাম!


চার্চের সামনে অপরূপা সব মনুমেন্ট! চোখ জুড়িয়ে যায়।মন ভরিয়ে দেয়!


এত মানুষের সমাগম। একটু একা একা হতেই পারিনা। কেউ না কেউ চলেই আসে।


অবশেষে অনেক কষ্টে একা একা ছবি!

আর এই জায়গাটা আমার অনেক ভালো লেগেছিলো। চারিদিকে যেন শান্তির পরশ বুলানো.....


ওহ সেখানে ঘাসের উপরে পাতা বিশাল বড় দাবার ছকের সাথে সাথে ছিলো বিশাল সব দাবার গুটিগুলি।

আরও এমন সব চেয়ারে চেয়ারে ছিলো টেবিলে পাতা দাবার ছক। এমন সব টেবিলে বসে অনেকেই খেলছিলো দাবা।


এই লোকটা সোনালী রঙের বিশাল এক ট্রাম্পপেট বাঁজাচ্ছিলো।


এই সেই হাইড পার্ক
পার্কের সাথেই ছিলো চার্চ! আমরা গেলাম সেইন্ট ম্যারী অব দ্যা ক্রস। চার্চের প্রবেশ দ্বারেই বাচ্চাকাচ্চারা বই নিয়ে পড়াশুনে করছিলো। এই স্টাচু আমার ভীষন পছন্দ হয়ে গেলো।


আমিও সেইন্ট ম্যারীর পদতলে বসে ওদেরকে পড়ালেখা করাতে শুরু করে দিলাম। এরপর চার্চের মাঝে অপরুপা সব স্ট্যাচুগুলি। আমি মুগ্ধ আর মুগ্ধ!!


মা মেরীর কোলে শিশু যীশু। কি যে অপরূপ ছবিখানা!!



২৫শে ডিসেম্বর উপলক্ষ্যে যীশু খ্রীষ্ঠের জন্ম ইতিহাস উপস্থাপন...


আরও বিস্তৃত ছবি খানি...


আহা কষ্টকর দৃশ্যটি।


এমন সব অপরুপা শিল্পকার্য্যে সাজানো ছিলো চার্চের অভ্যন্তর!


চার্চ দর্শনের পরে চললাম লাকেম্বাতে। যাবার পথে সেইন্ট জেমস স্টেশনের সৌন্দর্য্যেও মুগ্ধ হলাম আমি।


কত শত বছর আগের এই স্টেশন। এতটুকু নষ্ট না করে বরং সেই অতীত ইতিহাসকে সংরক্ষন করে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছে তারা। টিকেট কাউন্টার বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু তার কারুকার্য্যময় দাঁড়াবার স্থানটি যেন অবিকল তার সৌন্দর্য্য ধরে রেখেছে।
কত বছরের পুরোনো ইতিহাস এসব! সেই ইতিহাস জানতে হবে আমাকে।
সেইন্ট জেমস স্টেশনের ইতিহাস
লাকেম্বা বাঙ্গালীপারায় দুপুরের খানা সেখানেই খাবার মনোস্থ করলাম। দোকানটা ছিলো খুশবু স্যুইটস এন্ড রেস্টুরেন্ট! আমরা খেলাম কাবাব পরোটা এবং সাথে করে একই জিনিস টেকএওয়েও নিয়েছিলাম কিন্তু দুঃখের বিষয় নিজেদের খাবারটা ফেলে এলাম। বাসায় ফিরে দেখি ব্যাগে ফুচকা আর ফুচকার ডাল। হায় হায় এই জিনিস কেমনে এলো! আমরা দোকানে ফোন দিলাম। দোকান বলে এই জিনিস তো আমাদের দোকানের না। হায় হায় আমরা ভুল করে আরেক কাস্টমারের প্যাক নিয়ে চলে এসেছি আর সেই লোক আমাদেরটা! এই দুস্ক কোথায় রাখি !!!


শপিংমলের মাঝে সাজানো বাগান ক্রিসমাস ডে উপলক্ষে ...
২৬ আর ২৭ শে তেমন কোনো কাজ ছিলো না শুধুই রান্না করে করে বাঙ্গালী খানাপিনা বিদেশীদেরকে খাওয়ানো ছাড়া। যাইহোক আমার ছোট বোন যার কথা বলেছিলাম আমেরিকা থেকে পি এইচ ডি করে ভালো একখানা জব করছে তবুও প্লেন জার্নীকে অপারেশনের টেবিল ভাবে, সে বার বার বলে দিয়েছিলো ক্রিসমাসের পরেরদিন অবশ্যই ক্রিসমাস ডেকোরেশন কিনতে দোকানে যাবি তখন সব সস্তায় পাওয়া যায়। আমি তো তাই শুনে ছুটলাম শপিং সেন্টারে।

পেয়েও গেলাম ক্রিসমাস দাদু,হরিণের গাড়ি, অপূর্ব ল্যাম্প ! কিন্তু হায়! সেল দেবার পরেও সব আকাশচুম্বী দাম! মনে মনে বললাম কে কিনে এই সব কাঁচকলা! দূর দূর দূর!!!আসলেই আঙ্গুর ফল টক গল্পটা মিথ্যা নহে!

২৭ তারিখও ছিলো এলেবেলে ঘরবাড়ি গুছিয়ে রান্নাবান্না করে কাটিয়ে দেবার দিন। তবে সেদিন গেলাম সিনেমা দেখতে। যাইহোক সিনেমা দেখতে আমরা ইভেন্টে গেলাম।


সবুজ নীল গোলাপী ড্রিংকস সবগুলো থেকে একটু একটু করে নিয়ে এক গাদা টাকা খরচ করে সব মিলিয়ে ভূত বানিয়ে খেলাম। আইস্ক্রিম, চকলেট চিপস যা সামনে পড়লো তাই নিয়ে ম্যুভি দেখতে বসলাম।


ম্যুভির নাম ওঙ্কা! আহা সে একেবারেই আমার মনের মত ম্যুভি চকলেটের রাজ্যের রুপকথা! আমি মুগ্ধ হলাম আমি মুগ্ধ হলাম! :)

২৮ তারিখে গেলাম চ্যাটসউডের খানাপিনা মানে তাদের মজাদার স্ট্রিট ফুড খেতে। তো সেখানে যাবার আগে আমি আগের দিনে ট্রেইন থেকে দেখেছিলাম রোজ গার্ডেন।


আহা কি সুন্দর সবুজ সজীব! সেখানে আমাকে যেতেই হবে। সেখানে কিছুক্ষণ ঘুরে আমরা গেলাম চ্যাটসউডের খানাপিনা খাবার আশায়। কিন্তু হায় ! কোনো খানাই পছন্দ হলো না । শেষ মেশ টাকো আর লেমোনেড খেয়েই ফিরে চললাম বাসার উদ্দেশ্যে।


বাসার পাশের পার্কের চেয়ারে। যেখানে রোজ রোজ বাসা থেকে বের হয়েই প্রথম কাজটাই ছিলো আমার ছবি তোলা। :)
২৯ ডিসেম্বর চললাম অবার্নের উদ্দেশ্যে।তাদের মান্ডি আর হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানীর জন্য। আর আমার আরেক উদ্দেশ্য ছিলো। গতবারে ২টা টার্কিশ কুশন কাভার নিয়ে গেছিলাম সেখান থেকে। অনেক বেশি দাম হওয়ায় বেশি কিনতে পারিনি সেই দুঃখ ছিলো। তো এবারে আরও কিছু কিনবোই বাঁচি আর মরি এমনই সাধ ছিলো মনে। আরও একটা সাধ ছিলো তা হলো স্পুন অরগানাইজার। আমি এই জিনিস বাংলাদেশে অনেক খুঁজেছি। কিন্তু পাইনি। কিচেনের ড্রয়ারে ঢুকিয়ে দিলে নানা রকম চামচ কাঁটা, ছুরি কাঁচি নানা খোপে সাজিয়ে রাখা যায়। গতবার শুধুই ব্যাগপ্যাক ছিলো তাই নিতে পারিনি। এবারে নিতেই হবে। যাইহোক প্রথমেই ঢুকতে হলো হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানী খেতে তারপর সেই টার্কিশ শপ। যেখানে রানা নামের একজন টার্কিশ মহিলা আছেন যিনি কথায় বড়ই আন্তরিক কিন্তু দরদামে এক্কেবারেই স্ট্যাচু অব দ্যা লিবার্টি। নট নড়ন চড়ন। যত কথাই বলো সে তার দামে অনড় অবিচল।

আমিও কথার রাজা হয়ে গেছি স্টুডেন্ট আর প্যারেন্টস ভুলাতে ভুলাতে কাজেই সেই বিদ্যা কাজে লাগালাম কিন্তু কোনোই লাভ হলো না। সে আমাকে বিউটিক্যুইন বানায় দিলো আমাকে দেখে তার মুগ্ধতা ভালোবাসা জানায় দিলো কিন্তু দামে সে অবিচল রহিলো। কি আর করা আমিও তো আমার সিদ্ধান্তে অবিচল আসলে যতই দাম হোক না কেনো আমি তো নেবোই। :) তো সেই কুশন কাভারগুলো নিয়ে চললাম আরও কিছু এরাবিয়ান মেক্সিকান, পাকিস্তানী আফগানী শপগুলো পরিদর্শনে। প্রথমেই ঢুকলাম এক মহা দশাসই, মহা বেয়াদপ মহিলার দোকানে। দোকান সাজিয়ে সে যেন কাস্টমারদেরকে উদ্ধার করে ফেলেছেন। গতবার অস্ট্রেলিয়ায় এসে দেখেছিলাম একমাত্র বেয়াদপ রেন্ট বাড়ির এজেন্ট আর এবার দেখলাম এই বেয়াদপ দোকানী মহিলাকে। সে সবার সাথে যাচ্ছেতাই বিহেব করছিলো। যাইহোক এর দোকান থেকে কিছুই নেবোনা মনোস্থ করে আমরা বেরিয়ে এলাম।

এরপর ঢুকলাম কাবুল শপে। ঢুকেই আমার মন ভরালো চোখ জুড়ালো। এত সুন্দর সব কারুকার্য্যময় জামাকাপড় গয়না গাটি! আমি বড়ই স্বদেশী পন্য কিনে হও ধন্য টাইপ মানুষ। স্বেদেশী সালোয়ার কামিজ শাড়ি ছাড়া পরিই না বাংলাদেশে। আর যা কিছু পরি না কেন ইন্ডিয়ান বা পাকিস্তানী সালোয়ার কামিজ বা শাড়ি ভুলেও সেদিক মাড়াই না। কিন্তু এই কাবুল শপে ঢুকেই আমার চোখ আটকে গেলো তাদের একটা মাথায় পরা অর্নামেন্টস এ। যার নাম কোলা। এই জিনিস জম্বু কাশ্মীর বা আফগান মেয়েদের মাথায়ই দেখেছি মনে হয়। আমি তো সেই জিনিস না নিয়ে নড়বোই না। কিন্তু তারা দাম হাঁকলো ১২০ ডলার! আমাকে যারা চেনে সবাই জানে শখের তোলা ৮০ টাকা। আমি তো ১২০ বা ২২০ যাইহোক নিতেই হবে। এই জিনিস জীবনে কখনও পরা হবে কিনা জানিনা কিন্তু ছবি তো তোলা হবে আরও বড় কথা সাজিয়ে রাখলেও আমি নিজেই মুগ্ধ হবো। যাইহোক এরপর আরও কিছু আউলফাউল কাজে এক গাদা টাকা নষ্ট করে ফিরলাম বাসায়। তবে সেটা ছিলো শপিং ডে। টাকা তো নষ্ট হবেই। তাই না?


অবার্নের একটা গোলাপী গোলাপী বারবিডল মার্কা মেডিসিন শপের সামনে। এই বারবিডল মার্কা শপটা আমার অনেক ভালো লেগেছিলো। :)

এই ছিলো এ বছরের অস্ট্রেলিয়া ভ্রমনের প্রথম সাত দিনের গল্প......... বাকী গল্প নিয়ে আবারও হাজির হবো একটু অবসরে.......
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:০৯
৬৭টি মন্তব্য ৭৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×