somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কন্যা লো, বিয়ার ফেসবুক সাঁজাও

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ৯:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'বল মা, কবুল' এক মাতৃস্থানীয় মহিলা কন্যার পাশে বসে নরম গলায় সুধাচ্ছেন। কন্যার মুখ আনত, পাশে বসা ভাবীর হাতের উপর আরও শক্ত হয়ে চেপে বসছে হাতখানা। প্রিয় মা একটু দূরে দাঁড়িয়ে মুখে আঁচল চাঁপা দিয়ে আছেন, একটু পরেই যে মাত্র ৩বার বলা শব্দটির ব্যবধানে মেয়ে দূরে চলে যাবে। আশেপাশে আরও কণ্ঠ উচ্চকিত হয়,
বান্ধবীরা বলে- 'বল নাদিয়া';
কাজি সাহেবও পীড়া দেন-'মা বলেন';
পাত্র পক্ষের একজন সুধায়- 'বল মা, আমাদের দেরী হয়ে যাচ্ছে'।
এদিকে কন্যার দেহ যেন আরও মাটির সাথে মিশে যেতে চাচ্ছে, কোন বল পাচ্ছেনা দেহে। দু'চারটি হাত চারদিক হতে শক্ত করে চেপে ধরে তাকে, অবশেষে যেন কিঞ্চিত বল সঞ্চারিত হয়। অন্তরে থাকা শব্দটি একে একে সব জ্যাম পেরিয়ে কণ্ঠনালীর ওয়ান ওয়ে'তে এসে পৌঁছায়, মাঝে একটু থেমে যেতে চাইলেই পিছন হতে বাসের হেল্পারের মত হালকা চাপড়ে অবশেষে কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছায় 'কবুল'। হালকা গোঙ্গানো ও অস্ফুটস্বরে কন্যা প্রসব করে প্রথম কবুল। পাশে বসা মুরব্বি বলে উঠলেন, 'আলহামদুলিল্লাহ! সবাই শুনছেন।'

এখানেই কন্যা'কে ঘিরে বিয়ের যে আকর্ষণ, তার সমাপ্তি। এখন তো কমিউনিটি সেন্টার ছাড়া বিয়ে খাওয়া হয়না, তাই বহুদিন এই নাটকটি দেখা হয়না। কিন্তু ছোট বেলায় বহুবার দেখা ঘটনা এখনো মাথায় এতো ভালোভাবে গেঁথে আছে যে, ঘোমটা পড়ে বসিয়ে দিলে হুবহু অ্যাকটিং করে দিতে পারবো। তো যা বলছিলাম, দ্বিতীয় আর তৃতীয় কবুলের সময় আর এতো নাটক হয়না। ইনিংস ব্যবধানে পিছিয়ে, দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের একাদশতম ব্যাটসম্যানের মতই সপাটে চালিয়ে খেলা শেষ করে দেন এবং ঐ খেলার মতই কিছু বেকুব দর্শক ছাড়া বাকি সবাই আগেই কক্ষ ত্যাগ করেন।

আজ থেকে বছর দু'য়েক আগে যেসব বান্ধবীদের বিয়ে হয়েছে এবং দাওয়াত পেয়ে উপস্থিত হয়েছি, তাদের সাথে মোটামোটি ঐ বিয়ের আসরের পর থেকেই দীর্ঘবিচ্ছেদের সূচনা হত। জামাই মিয়া চাকুরি সুবাদে পাত্রী-সমেত বিদেশ অথবা অন্যত্র গমন, শ্বশুর বাড়ির আপত্তি, নানাবিধ কারণে কন্যার বিবাহিত পরবর্তী জীবন সম্পর্কে জানার কোন সুযোগ হতোনা। বান্ধবী সুন্দরী হলে বেশ কিছুদিন বন্ধুমহলের আলোচনায় তার নাম ঘুরাঘুরি করত, অন্তত যদ্দিন সবাইকে একসাথে মামা না বানাচ্ছে। :((

গত কয়েকদিনে আমার অনেকগুলো বান্ধবীর বিয়ে হয়ে গেল। আশ্চর্য লাগে এখন যতগুলা দাওয়াত পাই, দেশে থাকতে তার দশ ভাগের একভাগও বলেনি!! সুন্দরী একটা বান্ধবী যখন বলে, 'চান্দু তুই থাকলিনা, তোরে মিস করুম রে' তখন বেশ ভালই লাগে। এমতাবস্থায় বর্ণ, উচ্চতা, পাত্তি নির্বিশেষে সবাইকেই বলি, ধুরু! মিস করবি কেন? ফেবুতে যোগাযোগ থাকবেনা। B-))

বিয়ে ঠিক হওয়ার পরে পাত্রী কাঙ্ক্ষিত দিনটির অপেক্ষায় মোটামোটি লম্বা ক্ষণ পাড়ি দেয়। আংটি পরানো, পাত্রের হালকা বর্ণনা, গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠান এইগুলো অল্প-স্বল্প জানা যায় ও দেখা যায় ফেবুর কল্যাণে। অবশেষে সেই দিনটিতে দুটি জীবন এক পথে মিলিত হয় এবং আমি নিশ্চিত এই মিলনের আগে পাত্রী সেই কুঁড়ি বছর আগের বউদের মতই 'কবুল নাটক'টি মঞ্চস্থ করে। কিন্তু কন্যার মনে বোধ হয়, প্রশ্ন থেকে যায় 'কবুল' সবাই শুনতে পারছে কিনা!! কিন্তু এখন তো তার হাতে ফেবু নামক ক্ষেপনাস্ত্র আছে, তাই সে সহজেই কবুল কে কাবুল পাঠিয়ে দিতে পারে বলে কিছুটা ভারমুক্ত হয়। 8-|

বাপের বাড়ির ডেস্কটপ জীবন থেকে জামাইয়ের ল্যাপটপ জীবনে প্রবেশ ঘটে, হয়তো অন্যকিছু দেখতে ব্যস্ত থাকাটা খুবই স্বাভাবিক এই সময় :P । কিন্তু আমার বান্ধবীরা আমাকে খুব মিস করে, তাই টেনশন মুক্ত করতে তৎক্ষণাৎ ফেবুতে আমিসহ আরও ২৬৩জন ফেবু বন্ধুর উদ্দেশ্যে স্ট্যাটাস নাযিল হয় 'কাম সারা, দোআ রেখো'।

প্রথম দিনের স্ট্যাটাসে শ্বশুর বাড়ির মোটামোটি একটা ধারণা পাওয়া যায় এবং দিনের ৩নং স্ট্যাটাসের মন্তব্য চালাচালির এক পর্যায়ে অপর বান্ধবীকে বলে, 'অনেক ব্যস্তরে, সারাদিন মানুষজন দেখতে আসছে, নেটে বসতেই পারছিনা পরে কথা হবে রে' :(
যাই হোক ধীরে ধীরে কন্যার ব্যস্ততা কমতে থাকে, ফেবুর হোমপেজের হিমালয় থেকে সুন্দরবনের প্রতি ইঞ্চিতে 'হঠাৎ কন্যা' দেখা যায়। আমাদের তখন মুগ্ধ হয়ে না তাকিয়ে উপায় নেই। বিয়ের সবচেয়ে ঝাক্কাস ছবিগুলোতে(উপরে নাম না থাকলে, জীবনেও বুঝতামনা কারিনার মত দেখতে মাইয়াডা আমার বান্ধবী) প্রথমে লাইক মারি, পরে এইগুলাই সিরিয়াল ধইরা একটার পর একটা প্রোফাইল পিকচারে আসে, ঐ গুলাও লাইকাইলাম; দিনে একডজন স্ট্যাটাস তাতেও লাইক।
তারপর স্বামীর সাথে অন্তরঙ্গ ছবি(এই গুলায় লাইক মাইরা ভাব নেই, তোর লাইগ্যা একটুও কষ্ট পাইনাই) আর যদি মধু-চন্দ্রে যায় তাইলে যত গুলান ছবি আপলোড হয়, অ্যাপোলো-১১ খোদ চান্দে গিয়াও অতগুলা ছবি তুলবার পারে নাই।

বইনেরা মাপ চাই, আর পারতাছিনা। এই সূচক ৩মাসের আগে একটুও কমেনা তোমাগো। এই টাইমে তোমরা এমনি ঘোরের মধ্যে থাকো যে বাকি দুনিয়ায় কি ঘটতাছে, মাইনষেও যে কিছু কইবার চায় তা ভুলেও নজরে আসেনা। এই দুনিয়া সৃষ্টি হইছে, মেয়েরা কইবো আর দেখাইবো আর পুরুষ মানুষ শুনবো আর দেখবো। কিন্তু বলগ পইড়া আমি এখন সচেতন, তাই তোমাগো কিছু ক্ষোভের কথা কইয়া গেলাম পারলে আইসা পইড়া যাইও। X(

'সুন্দর কনজ্যুগাল লাইফ কামনা রইল সবার প্রতি' |-)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:০৪
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×