পানি আর বিয়ারে খুব একটা ফারাক নাই। এক বোতল পানি ২০ টাকা আর একটা বিয়ার ৩০ টাকা; তো কি বিয়ার খাও। শরীরটা হালকা ম্যাজ ম্যাজ করতাছে, বিয়ার খাও। সন্ধ্যায় দুই বন্ধু একসাথে একঘণ্টা কাঁটাল তো দুই দু'গুনে চারটা বিয়ারের বোতলের মুখ খোল।
ভারী খাবার পেটে কিছু না পড়লেও চলবো, জার্মান থিওরি অনুযায়ী; ৪টা বিয়ার(২ লিটার)= ১টা মুরগী।
একসময় প্রতিটি জার্মান বাড়িতেই নিজেরা বিয়ার বানাত; গ্রামের দিকে এখনো চালু থাকলেও শহুরে ব্যস্ত জার্মানদের পক্ষে আর সম্ভব হয়ে উঠেনা। এক অঞ্চলের সাথে অন্য অঞ্চলের বিয়ারে অনেক তফাৎ; স্বাদ, রং, মাল-মশলায় পার্থক্য থাকে এবং সবার কাছে নিজেদেরটাই সেরা। উত্তরের কাছে দক্ষিনের বিয়ার ঘোড়ার মুত্রের মতই লাগে। কারও কাছে যত তিতা হবে, স্বাদ ততই উন্নত । তবে একই বিয়ার, পাত্রের ধরন অনুযায়ী বেশ কম হয়; প্রায় সবারই প্রথম পছন্দ ব্যারেল, তারপর কাঁচের বোতল, তারপর টিনের ক্যান আর প্লাস্টিক বোতল বেশীরভাগের কাছেই পরিত্যাজ্য।
আপনি কি জানেন পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন 'খাদ্যগুন নিয়ন্ত্রক' আইন কোনটি?? এইটি এই জার্মান বিয়ার উৎপাদন নীতিমালা, যা ১৪৩৪ খ্রিস্টাব্দে লেখা হয়েছিল । বর্তমানে সারা জার্মানিতে বিভিন্ন জাতের প্রায় ৫০০০ বিয়ার ব্র্যান্ড আছে। জনপ্রিয় কয়েকটির পরিচয় তুলে ধরলাম
১। ওটিঙ্গার বিয়ার; বেয়ার্ন (Ottinger beer)
সবচেয়ে পুরান(১৩৩৩ খ্রি), সস্তা এবং জনপ্রিয় বিয়ার ব্র্যান্ড। কিন্তু আশ্চর্যের কথা, কোনরূপ বিজ্ঞাপন ছাড়াই শুধুমাত্র গুনের কারণেই এটি শীর্ষস্থান দখল নিয়েছে। এমন আর কিছুতে সম্ভব হয়েছে আমার জানা নেই। । বার্ষিক উৎপাদন ৬৬,১০,০০,০০০ লিটার।
২। বিটবার্গার বিয়ার; রাইনল্যান্ড (Bitburger)
সম্ভবত বাহিরের দুনিয়ায় সর্বাধিক পরিচিত জার্মান বিয়ার ব্র্যান্ড। তুলনামূলক কম তিক্ত স্বাদের কারণে, বাহির বিশ্বের মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য বেশী। ২০১১ তে মুক্তি প্রাপ্ত 'X-man first class ' সিনামার একটি দৃশ্যে একে সেরা জার্মান বিয়ারের উপাধি দেয়া হয়েছিল।
৩। বেকস বিয়ার; ব্রেমেন (Beck's)
লেমন, কোলা এমন নানা স্বাদযুক্ত এই বিয়ার ডার্ক, গোল্ড, সিলভার ইত্যাদি নানা নামের বোতলে পাওয়া যায়। তরুণদের বিশেষ করে মেয়েদের কাছে অধিক জনপ্রিয়।
৪। রথাউস; বাডেন-ভুরটেমবার্গ (Rothaus)
বাডেন-ভুরটেমবার্গ রাজ্যের নিজস্ব পরিচালিত, তবে এইটি ব্ল্যাকফরেস্টে'র বিয়ার হিসেবেই অধিক পরিচিত। ১৭৯১ সালে রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এই প্রতিষ্ঠান।
৫। পওলানের; মিউনিখ (Paulaner)
মূলত ভাইসবিয়ার (জার্মান শব্দ ভাইস= সাদা) উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। ঘোলাটে বর্ণের এই বিয়ার প্রস্তুত হয় গম থেকে। এই বিয়ার ঢালার জন্যও বিশেষ ধরনের গ্লাস ব্যবহার করা হয়। ঢালা হলে উপরে ফেনার পুরু স্তর তৈরি করে, খেতেও ভালো।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিয়ার উৎসব হয় জার্মানির মিউনিখে, যা 'অক্টোবর ফেস্ট' নামে পরিচিত। বিয়ার জার্মান সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। একইসাথে জার্মান বিয়ার আর সংস্কৃতি উপভোগ করতে হাজার হাজার ভিনদেশী এইসময় পাড়ি জমায় জার্মানি।
অল্প একটু পরিচিতি দেয়ার চেষ্টা করলাম, আসলে জার্মান বিয়ারের যেই ঐতিহ্য, বৈচিত্র্য আর ব্যাপ্তি তা এই স্বল্প পরিসরে সাগরের পাশে ক্ষুদ্র বালিকনার মতই। আমার পক্ষেও এখনো সাগরে নামা হয়নি, বালিকনাই ঘেঁটে যাচ্ছি ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১২ ভোর ৫:৪৭