somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড় গল্প: "নতুন স্বপ্ন" পার্ট ২

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জটলার মাঝে তখন নিশাত কোমরে উড়না বেঁধে লুঙ্গি ডান্স দিতে ব্যস্ত। আমাকে দেখে থেমে কি যেন চিন্তা করলো আর একদিকে ভিড়ে মিশে গেল। একটু পর ছাদের সব মেয়েরা সেই চিৎকার দিয়ে উঠলো যেন আজকে ওরা সবাই গ্রাজুয়েশন লাভ করেছে। কিন্তু ঘটনা তখনো বাকি। "ঢাকার পোলা ভেরি ভেরি স্মার্ট" দিয়ে আমাকে সব নারীকুলের সামনে সেই ডান্স দিতে হয়েছিল তাও কপালে গামছা বেঁধে। সবাই চারদিকে এমন ভাবে চিয়ার করছিল যেন আমি ডান্স ক্লাবের কোনো পোল ডান্সার। সেই যাত্রায় আন্টি ছাদে এসে আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছিলেন।
পরদিন ২ পক্ষ যখন বিয়ের আসরে মিলিত হলো তখন আমি বিয়ের ব্রাইট সাইডটা দেখলাম। মানুষের ভিড় কখনোই ভালো লাগতো না। কিন্তু এখন একটা রোমাঞ্চ অনুভূত হচ্ছে। মেয়েরা যখন কনেকে স্টেজে নিয়ে আসতে হুমড়ি খেয়ে পড়লো তখন আমার চোখ আটকে গেলো নিশাতের উপর। একরাতে কি থেকে কি হয়ে গেলো রে বাবা! শাড়ীতে এই প্রথম দেখলাম তাকে। অফিসে শার্ট ,ব্লেজার, প্যান্ট আর ভার্সিটিতে থাকাকালীন মডার্ন ড্রেস ছাড়া কখনো তাকে দেখি নি। একবার এক গ্রামে ঘুরার সময় এক বুড়ি দাদি বলেছিলেন বাঙালি পুরুষদের মন কাড়ার জন্য শাড়ীই যথেষ্ট এবার সে যে লেভেলেরই হেডম হোক না কেন। তখন মনে করেছিলাম তিনি হয়তো উনার হ্যান্ডমেড শাড়ীর বিজনেস মার্কেটিং করার জন্য এভাবে বলছিলেন। কিন্তু এখন আমি উনার কথার সত্যতা সরাসরি দেখতে পেলাম। বাবা যখন মেহমানদের সামনে আমাকে ইনট্রুডাকসেন দিতে গিয়ে বারবার আটকে যাচ্ছিলেন আমি তখন উনার পাশে দাঁড়িয়ে ভেটকি দিয়ে নিশাতের দিকে তাকিয়ে আছি।ব্যাপারটা নিশাতের চোখের আড়াল হয় নি। প্রথমে আড়চোখে দেখছিল। যখন দেখলো আমি এমনি তাকিয়ে আছি তখন বারবার এদিক সেদিক যাচ্ছিল নজরের আড়াল হওয়ার জন্য। কিন্তু আমি এভাবেই রইলাম। ঘোর কাটলো যখন নিশাত সবার সামনে এসে মুখে এক গ্লাস কোকাকোলা ছুড়ে মারলো। ইজ্জতের ফালুদা হওয়ায় মাথা নিচু করে সেখান থেকে সোজা প্রস্তান নিলাম। পাঞ্জাবি পাল্টানোর উপায় নেই। ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানি দিচ্ছি আর রাগ আনার ট্রাই করছি। আমিও কি কোকাকোলা ছুড়ে মারবো গিয়ে? কিন্তু আমাকে দিয়ে কিছু হবে না তা বুঝতে বেশি সময় নিলো না। মান সম্মানের মাথা খেয়ে চুপ করে গিয়ে স্টেজে ভাইয়ার পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম। দেখলাম নিশাত তার সঙ্গীদের সাথে সেই খুশির আমেজে কথা বলে যাচ্ছে আর একটু পর পর চোখ বন্ধ করে দাত দেখিয়ে হাসি দিচ্ছে। আমাকে নিয়ে মজা করছে না তো আবার? ওর বান্ধবীগুলা বারবার এদিকে তাকাচ্ছে আর হাসিতে গড়াগড়ি দিচ্ছে। নিশাতও আড়চোখে দেখছে কিন্তু মুখে এমন লুক যেন রাস্তায় এক ইবটিজারকে জন্মের শিক্ষা দিয়েছে। যখন বিয়ে পড়ানো হচ্ছিল তখন নিজেকে ভাইয়ার জায়গায় বারবার কল্পনা করছিলাম। আমি কবে বিয়ে করবো? কে আমাকে বিয়ে করবে ? নিশাত? ও তো আমাকে সহ্যই করতে পারে না। আচ্ছা বিয়ে করলে আমার লাইফ তো অনেক পরিবর্তন হবে। আমার স্বপ্ন, আমার এম্বিশনগুলা সব চাপা পড়ে যাবে। চাকরি তো মাস্ট করতে হবে। আচ্ছা এরপর কি নিশাত রাজি হবে? না, আমি তো এসবের জন্য আমার ড্রিম লাইফকে কোরবানি দিতে পারবো না। আমার আরো অনেক দেখার বাকি, অনেক ছবি তুলতে হবে, অনেক গ্রাম পাহাড়ের রাস্তা আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি কোনো মূল্যেই ঐগুলা ছাড়তে পারবো না। দরকার হলে চিরকুমার থেকে যাবো।
বিয়ের পরদিন বিকেলে মা এসে বললেন যে উনি আমাকে এবার এতো সহজে যেতে দিচ্ছেন না। আমার ক্যামেরা, ল্যাপটপ উনি সব লুকিয়ে ফেলেছেন। ঐগুলা ছাড়া আমি কিছুই না। সারাঘর তন্য তন্য করে খুঁজেও যখন কোনো ক্লু পেলাম না তখন আশা ছেড়ে দিলাম। ভাইয়া ,অর্না আপু থুক্কু ভাবিও মায়ের পক্ষে। তারা আমাকে কোনো প্রকারের সাহায্য করতে নারাজ। বাহ্ ভালোই তো ভালো না? এবার আচ্ছা মতো ফেসেছি। কয়েকদিন বাসায় কাটানোর পর একদিন টিএসসির কথা মনে পড়লো। আহ.. কতদিন যাওয়া হয় না। ইচ্ছে হলো একটা রাউন্ড দিয়ে আসতে। সকালে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে বের হয়ে গেলাম। রিকশায় উঠে স্বস্তি ফিরে পেলাম। বাইরের বাতাস কত হালকা ইচ্ছে করছে সিলিন্ডারে করে ঘরে সংগ্রহ করে রাখি। কাজে লাগবে। ঘরের ওই বদ্ধ এসির বাতাস বড়ই অসহ্যকর। টিএসসির মোড়ে পৌঁছে দেখি সামনে কিসের যেন একটা ভিড়। মনে হয় কেউ পাগলা মলম বিক্রি করছে। ঐদিনের ঘটনার পর ভিড় দেখলে কেমন জানি ভয় করে। তবে আজকের ভিড়টা অন্য রকম লাগলো। সবাই মোবাইল বের করে ছবি তুলছে। কি ব্যাপার? কোনো সেলিব্রিটি কি পাগলা মলমের মার্কেটিং করতে আসছে নাকি?
আল্লাহর নাম নিয়ে ভিড় ঠেলে এগিয়ে গেলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৩৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×