somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড় গল্প: "নতুন স্বপ্ন" পার্ট ৫

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কিন্তু ততখনে আমি নিশাতের মুখের একদম কাছাকাছি চলে এসেছি। ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কি যেন খুঁজার চেষ্টা করছে। আমি তখন ওর হালকা ভেজা মুখাবয়বে হারিয়ে গেছি। নিজেকে তুলতে যাবো তখন নিশাত একটা কান্ড করে বসলো। আমার কলার চেপে ধরে কাছে টেনে এনে ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিলো। কতক্ষনের জন্য পৃথিবী থেকে হারিয়ে ছিলাম জানি না। মুহূর্তটার শেষ হলো ফোনের রিংটোনে।

আঙ্কেল আমাদের জন্য গাড়ি পাঠিয়ে ছিলেন। ফেরার পথে আমরা কেউ একটু টু শব্দও করি নি। একবার আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম নিশাত তখনো মুচকি হাসি চেপে রেখেছে। বাসায় আসার পর ভাবি এসে জিজ্ঞাসা করলেন "সময় কেমন কেটেছে ভাইজান?" উনার মুখে তখন সেই হাসি চাপা। তাহলে কি উনি প্ল্যান করেই পাঠিয়েছেন আমাকে? নিশাতও কি এই প্ল্যানের রূপকার? আমার মাথায় তখন হাজার প্রশ্ন কিন্তু উত্তর ছিল একটাই নিশাত আমাকে ভালোবাসে। আমিও যে ওকে অনেক আগে থেকেই মনে বসিয়ে নিয়েছিলাম। আমার অবাক হওয়া হা করা চেহারা দেখে উনি আর হাসি চেপে রাখতে পারলেন না। হো হো করে হেসে উঠলেন আর আমার লজ্জায় মাথা কাটার জোগাড় তখন। সকালে ব্যাপারটা আমাদের পরিবারের সবার জানাজানি হয়ে গেলো যে আমার আর নিশাতের মধ্যে কিছু একটা চলছে। এটার ক্রেডিট অবশ্য ভাবীর। বাবা যখন জানলেন তখন আমার উপর অগ্নিদৃষ্টিপাত করলেন। ফোন বের করে সরাসরি নিশাতকে বাসায় ডাকলেন। এতো বড় ব্যাপার আগে কনফার্ম করবেন নিশাতের নিজ মুখ থেকে শুনে তাই নিশাতের বাবার সাথে আগে কথা বলেন নি এমনটাই জানিয়ে দিলেন সবাইকে।

নিশাত মায়ের পাশে বসে মাথা নিচু করে আছে। বাবা যখন জিজ্ঞাসা করলেন তখন ও লজ্জায় মায়ের কাছে মুখ লুকানোর জন্য আশ্রয় খুঁজতে লাগলো। বাবার আর বুঝতে বাকি রইলো না কিছু। মা তো খবর শোনার পরই এমন হাসি দিয়ে রইলেন যেন আজ ঈদ। আমি তখনো এমনি দাঁড়িয়ে সব দেখে যাচ্ছিলাম। আসলে গতকালকের পর থেকে আমার মাথায় কিছু কাজ করছে না। বাবা আমার দিকে ফিরে তাকালেন। উনার মুখেও কিছুটা সন্তুষ্টির লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল। আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন "এমন ভবঘুরে ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিয়ে আমি ওর জীবন নষ্ট করতে চাই না। বিয়ে করতে হলে কালকে থেকে সব ছেড়ে অফিসে জয়েন করতে হবে। এবার লাইফ সেটেল করার পালা"। নিশাত আমার দিকে মুখ তুলে তাকালো। সেই মুখে আমি হাজারো ভালোবাসা আর আশার আলো খুঁজে পেলাম। কিন্তু আমার মাঝে যে অন্য চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। সব কিছু এতো জলদি হয়ে যাচ্ছে যে আমি কিছুই ধারস্ত করতে পারছি না। আমার স্বপ্ন ,আমার এম্বিশন? এগুলা কি এমনি বৃথা যাবে? আমার যে আরো হাজারো কিছু দেখার বাকি। হাজারো নতুন মুহূর্ত অনুভব করা বাকি। এসব কিছু এমনি এমনি তলিয়ে যাবে? আমি কি পারবো?

বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় কেউ আমাকে এগিয়ে দিতে আসে নি। মা আমার মুখ পর্যন্ত দেখতে নারাজ। যখন বাবা নিজের বন্ধুকে খুশির খবর দিতে যাবেন তখন আমি বললাম যে "না। আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।" সবাই তখন একটা শকের মধ্যে চলে গেছে। একদম নিস্তব্ধ। নিশাত উঠে দাঁড়ালো তার মুখে রাজ্যের অবাক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। চোখের কোণায় জমা পানি টুপ করে নিচে পড়লো। আমি তখন বলেই যাচ্ছি "দেখো নিশাত। আমি আমার স্বপ্ন আমার ইচ্ছাকে বছরের পর বছর চেস করছি। এটাই আমার লাইফ। আমি এটা ছাড়া থাকতে পারবো না। আমার এখনো পুরো পৃথিবীটাকে ঘুরে দেখা বাকি। আমি তোমাদের মতো কর্পোরেট লাইফ লিড করতে পারবো না। আমার দুনিয়া অন্য কোথাও এখানে না। আই এম সরি"। নিশাত আর ২ মিনিটও দাঁড়ায় নি। কাঁদতে কাঁদতে চলে গেছে। বাবা এসে কানে গালে একটা চড় বসিয়ে দিলেন। এখনো কানে তাক লেগে আছে। মা আর ভাবি নিজেদের রুমে চলে গেলেন। বাবা বের হয়ে গেলেন। শুধু আমি আর ভাই দাঁড়িয়ে ছিলাম। ভাইয়া কি করবেন তা ডিসাইড করতে পারছিলেন না বোধ হয়। সিলেটে আসার পর কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করে নি। মাকে কয়েকবার ফোন দিলাম কিন্তু ধরেন নি। ভাইয়াও না। এখানে আমি কাজে মন বসাতে পারছি না। আমার অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল সিলেট আসার। কিন্তু এখন যখন আমি এখানে আমার মন রয়ে গেছে আরেক জায়গায়। সারাক্ষন নিশাতের কথাই ভাবছি। না আর্টিকেল লেখতে পারছি, না হাইকিংয়ে মন বসছে। ঠিক মতো ফটো ক্যাপচার করাও সম্ভব হচ্ছে না আমাকে দিয়ে। হাত কাঁপছে। মন স্থির করে বের হলে কয়েক মিনিট পর আবার সব উল্টা পাল্টা হয়ে যেত। এদিক সেদিক হাঁটাহাঁটি করে ফিরে আসতাম। এভাবে সিলেটের পাহাড়ে শখের ক্যামেরার লেন্সটাও হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু আমার মধ্যে কিছুই কাজ করছিল না নিশাত ছাড়া। ১ সপ্তাহ পর রাতে ফোনে একটা মেসেজ আসলো। "পরশু আমার বিয়ে"।
বুঝতে বাকি রইলো না আর কিছু। ফোন ব্যাক করলাম। সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। মন থেকে কোনো জবাব আসছে না।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×