somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাহজাহান আলী
অামি শাহজাহান অালীnসবে মাত্র এমএসএস অর্থনীতিতে মাস্টার্স শেষ করলাম। ব্যাচেলার আছি। বর্তমানে ঢাকার একটি প্রাইেভট স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসাবে নিয়োজিত আছি। গল্প, কবিতা, সংবাদপত্র পড়তে ভালবাসি।

ছোট ছোট সমস্যা সময় ক্রমে বড়

০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৭:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক অনেক দিন আগের কথা। এক অলস লোক তার জীবনের সব কাজেই অলসতা করত। কোনো কাজেই সে সিরিয়াস ছিল না। আজ যে কাজটি করে ফেলা যায় সে কাজটিও ফেলে রাখত ভবিষ্যতের জন্য। আর আগামি দিনের কাজ তো ফেলে রাখত অনাদিকালের জন্য। লোকটি এতই অলস ছিল যে, ছোটখাট কাজও-যেটা যখন তখন করে ফেলা সম্ভব কিংবা করাটা খুব একটা কষ্টেরও নয়- তাও সে করত না। মনে মনে বলত: "ধুর ছাই! রাখো তো। যত্তোসব ছাইপাঁশ। বহু সময় পড়ে আছে, এখনই করার দরকার নেই- পরে দেখা যাবে।"

এভাবে ছোট ছোট কাজ দিনের পর দিন জমে যেতে যেতে বিরাট ঝামেলা তৈরি হয়ে যেত। ওই ছোট কাজগুলোই কোনটা রেখে কোনটা করবে-এরকম সমস্যায় পড়ে যেতে হতো।



এই অলস লোকের ঘরের পাশেই বেড়ে উঠেছিল এক গাছ। গাছটি সে নিজেই লাগিয়েছিল। গাছে কাঁটা ভরা। বড় বড় কাঁটা। গোড়া থেকে একেবারে আগা পর্যন্ত প্রতিটি শাখায় শাখায় বড় বড় কাঁটা পেরেকের মতো বের হয়ে ছিল। কাঁটাগুলো বেশ ধারাল। গাছটির আর কোনো বৈশিষ্ট্য ছিল না। না ছিল ফল ফুল, না ছিল বাস-গন্ধ, আর না ছিল পত্র পল্লব। কেবল কাঁটাই সার। ঘরের পাশে গাছটি বেড়ে উঠলেও জনগণের চলাচলের পথেই পড়েছিল কাঁটাগাছ। তাই প্রতিদিনই বহু মানুষ এই কাঁটাগাছের পাশ দিয়ে আসা যাওয়া করত। আনমনা ছিল যারা স্বাভাবিকভাবেই তাদের গায়ে এই গাছের কাঁটা বিদ্ধ হতো। মানুষ তাই খুবই বিরক্ত হতো, কষ্ট হতো তাদের এই কাঁটা গাছটির জন্য। পথচলার সময় বাতাসে গায়ের জামা উড়ে গিয়ে কাঁটায় বিঁধে যেত। টানতেই ছিঁড়ে যেত সেই জামা। পথচারীরা প্রত্যেক দিন ওই অলস লোকটিকে বলত সে যেন এই অপ্রয়োজনীয় কাঁটা গাছটি তার ঘরের দরোজা থেকে তুলে নেয়। কেননা এই গাছটির কোনো ব্যবহারও নেই। অলস লোকটি তাদের কথার জবাবে বলত: ঠিক আছে। কাল অবশ্যই ওই কাঁটা গাছটাকে শেকড়শুদ্ধ উপড়ে ফেলে দেব’।

কিন্তু গাছ গাছের জায়গায়ই থেকে যেত। তার গায়ে হাতও লাগাত না অলস। এভাবে গাছটি আরও মোটা তাজা এবং লম্বা হয়ে উঠল। পাল্লা দিয়ে অলস থেকে অলসতর হয়ে উঠল আমাদের গল্পের অলস লোকটিও। দিনের পর দিন এভাবে যেতে যেতে কাঁটা গাছটি আরও সারি হয়ে উঠল। এতোই শক্ত এবং মজবুত হয়ে উঠল যে এখন আর অলসের পক্ষে ওই গাছটি শেকড় শুদ্ধ উপড়ে ফেলা তো দূরের কথা গোড়া কেটে ফেলার মতো সাধ্যের মাঝেও আর রইল না। লোকজন এখন অলস লোকটিকে বলতে লাগল: 'এই অপদার্থ কাঁটা গাছটি যদি শিগগিরি আমাদের চলাচলের পথ থেকে সরানো না হয় তাহলে আমরা নগরপতির কাছে তোমার বিরুদ্ধে নালিশ দেব।'



তারপরও তার কোনো হুশ হলো না। অবশেষে লোকজন ঠিকই তার বিরুদ্ধে শহরের মেয়রের কাছে অভিযোগ দিল। মেয়র যথারীতি তাকে হাজির করার আদেশ দিল। নগরপতি অলস লোকটাকে বলল: 'এই অলসের হাড্ডি! তোর আলসেমির কথা সারা শহরের মানুষের মুখে মুখে। তুই তোর ঘরের সামনে থেকে কাঁটাগাছটাকে সরাচ্ছিস না কেন? কেন ওই কাঁটাগাছ দিয়ে জনগণকে কষ্ট দিচ্ছিস? তুই কি দেখতে পাস না প্রতিদিনই কেউ না কেউ ওই গাছের কাঁটায় আহত হয় কিংবা কারো না কারো জামা কাপড় ছিঁড়ে যায়? মানুষজন যে এতো করে তোকে বলল তুই তাদের কথায় কান দিচ্ছিস না কেন? কেন এখনো গাছটা কেটে ফেলছিস না?'



অলস লোকটি বলল: আমি তো সকলকেই বলেছি-যে ই আমার কাছে অভিযোগ করেছে তাকেই বলেছি-শিগগিরি আমি গাছটা কেটে ফেলব।

নগরপতি বলল: 'কিন্তু লোকজন তো বলছে বহুদিন ধরেই তারা তোকে এই গাছটা কেটে ফেলার জন্য বলে আসছে আর তুই কাল পরশু করে করে এ পর্যন্তও গাছটা কাটিস নি। সেই ছোট্ট থাকতেই লোকজন তোকে বলেছিল আর আজ গাছটা মোটা তাজা হয়ে বিশাল আকার ধারণ করেছে।'

অলস লোকটা বলল: ঠিকই বলছেন। আর এমনটি হবে না। কালই আমি গাছটা কেটে ফেলব।



নগরপতি হাসলেন। এরপর বললেন: 'অলসতা বাদ দে। কাল কেন? আজই কাজটা সেরে ফেল যাতে মানুষ একটু স্বস্তি পায়, হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে পারে। তোকে আমি একটা পরামর্শ দেই। এটাকে উপদেশ হিসেবেও নিতে পারিস। সেটা হলো, তোর জীবনের সকল কাজের ক্ষেত্রে ‘কাল পরশু’ করব-এই অভ্যাস বাদ দে। মনোযোগ দিয়ে শোন। কক্ষণো ছোট হোক কিংবা বড় হোক কোনো কাজকেই আগামিকালের জন্য রেখে দিবি না। যে কাজটা এই মুহূর্তেই করে ফেলা সম্ভব সে কাজ ‘পরে করব’ এরকম চিন্তা করবি না। সুতরাং এক্ষুণি যা, ওই কাঁটাগাছটা কেটে ফেল’।



নগরপতির কাছে যে কয়জন এসেছিল অলসের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে তারা অলস লোকটা ‘পরে, কাল, পরশু’ ইত্যাদি উপহাসমূলক শব্দ শুনিয়ে ঠাট্টা মশকরা করতে লাগল। একজন বলল: 'এই লোককে আমি ভালো করেই চিনি, ও কোনোদিনও ঠিক হবে না। সে একা এই গাছ কাটতেও পারবে না। আমাদের উচিত সবাই তাকে সাহায্য করা এবং সবাই মিলে গাছটা কেটে ফেলা। গাছটার গোড়া উপড়ে ফেলে একেবারে পুড়ে ফেলা উচিত।'

একথা শুনে অলস লোকটি বিরক্ত হলো। বলল: 'তোমরা আমাকে নিয়ে মশকরা করছ! আমি একা পারব না গাছটা কাটতে! এক্ষুণি আমি দেখাচ্ছি একা কী করে কাটা যায়।'



এই বলে অলস লোকটি ঘরে গেল। একটা কুঠার নিয়ে গাছের গোড়ায় কোপাতে লাগল। কিন্তু কিছুক্ষণ কুপিয়ে সে বুঝতে পারল আসলেই একার পক্ষে গাছটা কাটা সম্ভব নয়। লোহার মতো শক্ত হয়ে গেছে গাছের গোড়া। কুড়াল ফিরে আসে, কাটে না। তার মাথা থেকে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম ঝরে পড়তে লাগল। কিন্তু সে থামল না, কুঠার চালাতে লাগল। অবশেষে ঠিকই সে সফল হলো। কেটে ফেলল গাছটি। এখন বাকি রইল গাছের শেকড়শুদ্ধ গোড়া। এটা সত্যিই কঠিন কাজ। একা সে পারছিল না। হঠাৎ দেখা গেল আশেপাশের প্রতিবেশিরা এগিয়ে এল কুঠার শাবল হাতে নিয়ে। তারা বলল: 'তুমি গাছ কেটেছ, অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছ। এবার আমরা শেকড় তুলব।'



এই বলে শুরু করে দিল সবাই। সকলের চেষ্টায় শেকড় তোলা হলো এবং শেকড় পুড়ে ফেলল। এরপর থেকে লোকজন নিশ্চিন্ত মনে ওই পথ দিয়ে যাওয়া আসা করতে লাগল। কাউকেই আর কাঁটায় আহত হতে হলো না কিংবা কারও জামা কাপড়ও আর কাঁটায় ছিঁড়তে হলো না।



বন্ধুরা, দেখলে তো অলস লোকটি আলস্য ছেড়ে কাঁটাগাছটি কেটে ফেলার ফলে পথচারীদের কেমন সুবিধা হলো! তোমরাও অলসতা ঝেড়ে ফেলে সংসারের ছোটখাট কাজ ও পড়াশোনায় এখন থেকে গভীর মনোযোগ দেবে কেমন? আর তাহলেই তোমার ভবিষ্যৎ হবে সুন্দর ও চিন্তামুক্ত।#
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৭:৪০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×