কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম ছোট বোনের বাসায় গিয়েছিলাম। জরুরী একটা কাজে বোনকে নিয়ে বহদ্দাররহাট টার্মিনাল থেকে একটু এগুতেই বোন বললো, " আপা দেখো, স্বাধীনতা ঘোষনার প্রথম বেতার কেন্দ্র"। ঘাড় ফিরাতে ফিরাতেই, রিক্সা ড্রাইভার ছুঁ মন্তরের মত রিক্সা নিয়ে ছুটে চললো......!
মামা রিক্সা থামান বলতেই, মামা ব্রেক কষে রিক্সা থামালেন ঠিকই তবে বিরক্তি নিয়ে প্রশ্ন ছুড়লেন, " আপ্নেরা কি এইহানে নাম্বেন? "
আমি বললাম," আমাকে একটু পিছনে নিয়ে যাবেন, বেতার কেন্দ্রের কাছে?"
বেচারা নাছোড়বান্দা, পিছনে যাবে না।
বোন বললো, "আচ্ছা আপনার ভাড়ার চেয়ে দশ টাকা বেশি নিয়েন।"
এবার রিক্সা ঘুরালো, 'বাংলাদেশ বেতার কেন্দ্র চট্টগ্রাম, কালুরঘাট'। তেমন আহামরি কিছুই না।
আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত এর সামনে দাড়িয়ে আছি, অবাক বিষ্ময়ে ভাবছি, "এখান থেকে প্রথম ঘোষিত, বাংলাদেশ আজ থেকে স্বাধীন"।
মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না, "যেন এই জায়গাটার সম্মানে নীরবতা পালন করছি........!"
আমি একাত্তরের যুদ্ধ দেখিনি, আমি ২৬শে মার্চের দেশ স্বাধীনের প্রথম বেতার বার্তাও শুনিনি।
আমার স্বাধীন দেশের মাটিতে দাড়িয়ে থেকে যেন মনে হচ্ছে, আমি এই বেতার কেন্দ্র থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রথম বার্তাটি শুনতে পাচ্ছি।
সম্বিত ফিরে পেলাম রিক্সা ড্রাইভারের ডাকে, " চলেন দেরি হইতাছে।"
তাইতো, আমারও তো গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আজ আর ভিতরে ঢুকার সময় হলো না, দুইটা ছবি তুলে গন্তব্যে রওনা দিলাম।
ঝড়ের বেগে রিক্সা সামনের দিকে এগুচ্ছে, পিছনে ফেলে যাচ্ছি স্বাধীনতা ঘোষনার প্রথম বেতার কেন্দ্রটি...।
এই জায়গাটা চিনতে আমার এত সময় লাগলো, তাহলে আমাদের পরের প্রজন্মের কতদিন লাগবে?
চট্টগ্রাম বেড়ানোর কথা আসলেই বলি, কক্সবাজার, পতেঙ্গা, ফয়েজ লেক, কাপ্তাই লেক এসব।
বলিনা, স্বাধীনতা ঘোষনার প্রথম বেতার কেন্দ্রটিও দেখবো.......।
রিক্সা ড্রাইভারকে বললাম," মামা, আপনার প্যাসেঞ্জার যদি স্কুল, কলেজ, ভার্সিটির ছাত্রছাত্রী হয়। এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বলবেন, "এইটা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনার প্রথম বেতার কেন্দ্র"।
"মামা বলবেন তো...?"
তিনি বিজ্ঞের মত বললেন, "কমুনে, এইডা কইতে কি পইসা খরছ হইবো?"
"জানি না সেদিনের সেই রিক্সা ড্রাইভার আমার ছোট বার্তাটি, এই প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে কিনা.........?"
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:০৭