somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্ল্যাশ মোব ও কিছু কথা ! চার ছক্কা হইহই, বল গড়াইয়া গেল কই

১০ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগামী ১৬ মার্চ বাংলাদেশের মাটিতে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরু হচ্ছে এটা পুরোনো খবর। নতুন খবর হলো, এমন বড় আয়োজনের অফিসিয়াল ইভেন্ট সং ‘চার ছক্কা হইহই’ গানটির সাথে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের তিন ভেন্যু ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফ্ল্যাশ মোব বা স্ট্রিট ড্যান্স মিউজিক ভিডিও করেছে। এর সূত্র ধরেই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি ও আমার দল কাকতাড়ুয়া আইসিসির এই ‘অফিসিয়াল ইভেন্ট সং’ এর উপর ফ্ল্যাশ মোব করার পরিকল্পনা। সিলেটেরই ছেলে ফুয়াদ আল মুক্তাদির এর সঙ্গীতায়োজনে অদ্ভুৎ সুন্দর এ গানটি কমপক্ষে আমি ১০০০ বার শুনেছি । যতই শুনি ততই ভাল লাগে , মনে হয় শরীরের প্রতিটি কোষ নেচে উঠে । ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সিদ্ধান্ত সিলেটের মানুষকে চমক দেখাতে হবে। অভিনয়, সুদর্শন/সুদর্শনা এবং নৃত্য নৈপুন্যের উপর ভিত্তি করে বাছাইয়ের কাজ সম্পন্ন করেছিলাম ।


প্রথমদিন আমরা বসি ক্যাম্পাসের ছোট্ট শহীদ মিনারে । একুশের চেতনা আর বুকে লাল সবুজের শক্তি। প্রতিটি চোখ যেন জয়ের জন্য জ্বল জ্বল করা রাঙ্গা পোস্টার । ক্যাম্পাসের মিনি অডিটরিয়ামে যেদিন থেকে মহড়া শুরু তখন থেকেই সাজ সাজ রব । ড্যান্স গ্রুপ কোম্পানী ঈগল আমাদের টাইটেল স্টেপ গুলো শিখিয়ে দিচ্ছিল । দিনরাত খেটেও তরুনপ্রাণে বিশ্রাম নেই । প্রতিটি স্টেপ মূহুর্তেই আয়ত্ব করে নিচ্ছে । যে আগে কখনো ড্যান্স করেনি সেও হিপ হপের দোলায় মাথা নাড়াচ্ছে । আসলে গানে এক ধরনের মাদকতা আছে । যা শুনলে মনে হচ্ছে যেন দেহের প্রতিটি কোষ দোলে উঠবে ।
আগে থেকেই বলা ছিল ভিডিওটা হবে ফ্ল্যাশ মোব । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই স্ট্রিট ড্যান্স জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে অনেকেই এর নামও শুনেননি । আর সিলেটে তো প্রথমবারের মতো হচ্ছে ফ্ল্যাশ মোব । রিহার্সেল এর এক ফাঁকে সবাই চলে গেল সিকৃবি ক্যাম্পাসের ফুচকা চত্ত্বরে । খোলা আকাশের নিচে বিকেলে একদল ছেলে মেয়ের নাচ দেখে সবাই যার পর নাই অবাক হয়েছে । হচ্ছেটা কি? উত্তর না দিয়েই সবাই স্টেপ দেয়-চার ছক্কা হই হই, বল গড়াইয়া গেল কই..


বাংলাদেশের বড় একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানী গ্রে এর কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হিমসিম খাচ্ছিলাম । তবু বড়দের সাথে কাজ করার মজাই আলাদা, শেখার আছে অনেক কিছু । নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়ে ক্যাম্পাসে ফিরছিলাম । সিলেটের রাস্তায় ভীড় ঠেলে নির্বিকার ভাবে হেটে যাচ্ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সনজা স্টিফেন । তড়িৎ গতিতে মাথায় এলো একজন বিদেশী যদি আমাদের সাথে ড্যান্স করেন তাহলে আমাদের ফ্ল্যাশ মোবটি বৈশ্বিক রূপ পাবে । কাকতাড়–য়ার সহকর্মী শুভকে বলতেই সে বিদেশীনির পেছনে দৌড় । বিদেশীনিতে থামিয়েই ভাঙ্গা ইংরেজীতে তাকে আমার পরিকল্পনার কথা বললাম । সেও খুব আগ্রহ বোধ করলো । রাতে তাদের ইমেইলে যোগাযোগ করলাম পরদিনই সনজা তার আরেক বান্ধবী আমেরিকান মেয়ে এলিজাবেদ থমাসকে নিয়ে হাজির । সনজা ও এলিজাবেদকে পেয়ে আমাদের পুরো ইউনিট যেন নতুন করে প্রান পেল । বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত আমরা সবাই এক সাথে স্টেপ দিই- চার ছক্কা হই হই, বল গড়াইয়া গেল কই ।


শ্যুটিং এ প্রস্তুতি চলছে । ইতোমধ্যে আমাদের সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগ দিয়েছে এমসি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, মদনমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি থেকে কয়েকজন ড্যান্সার। বিদেশী ড্যান্সারদের পাশাপাশি ক্যাম্পাসের পাশের বস্তি থেকেও বাচ্চা এসেছে আমাদের দলে । কে কোন প্রতিষ্ঠানের, কে কোন দেশের, কে কালা কে ধলা সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো বাংলাদেশে বড় একটি আয়োজন হচ্ছে । এই ইতিহাসের অংশ হতে হবে ।


শ্রীলঙ্কায় ২০১২ সালে হয়ে যাওয়া টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের থীম সং- ভিস্যায় ভিস্যে শুনলাম । আর আমাদের ফুয়াদের “চার ছক্কা হইহই” ও শুনলাম । এ গানটি যথেষ্ঠ সুন্দর হয়েছে । মিউজিক কম্পোজিশন ভাল থাকলেও ভিস্যায় ভিস্যেতে সলো ভয়েস (একটি কন্ঠ) থাকার কারণে অতটো ভাল লাগেনি । গানের যে অফিসিয়াল ভিডিওটা বানানো হলো তাতে আমি পার্টিড্যান্স ছাড়া কিছু দেখলাম না । এক্ষেত্রে আমাদের ”চার ছক্কা হইহই” বড় কিছু হয়েছে । গানে অনেক ইংরেজী শব্দ রয়েছে যার কারণে এটি আরো বড় আন্তর্জাতিক মর্যাদা পেয়েছে । গানটি গেয়েছেনও অনেকজন, যা আরো গ্রহনযোগ্যতা বাড়িযেছে । । ভিডিওতে একটি টাইটেল স্টেপ আছে যা সবাই একসাথে করবে । যার নামই দেয়া হয়েছে ”চার ছক্কা হইহই স্টেপ”......খুব সুন্দর এ স্টেপটি যেকেউ একবার দেখলে আয়ত্ব করতে পারবে । আমি মনে করি সারা বিশ্বে আমাদের ”চার ছক্কা হইহই স্টেপ” টি “গ্যাংনাম স্টেপ” বা “ওয়াকা ওয়াকা স্টেপ”কে ও ছাড়িয়ে যাবে...


আকাঙ্খিত দিনটি ছিল শনিবার । নগরীর ব্যাস্ততম সড়ক চৌহাট্টা । মানুষ আর যানবাহনের জট, ট্রাফিক সামলাতে হিমশিম । কড়া রোদকে ছাড়িয়ে শুরু হলো উদযাপন । কেউ একজন গানটি ছেড়ে দিলো- একটি মেয়ে আইসক্রিম খেয়ে আসছিলো । গান শুনে থমকে গিয়ে শুরু করলো নাচ । তার সাথে যোগ দেয় স্কুল ছাত্র, গৃহিনী, ডাক্তার, খেলোয়ার, মধ্যবয়স্ক পুরুষ, তরুন জুটি, সাংবাদিক, কর্মকর্তা, মোয়া বিক্রেতা, চা ওয়ালি, উপজাতি, কলেজ ফেরত বখাটে, বিদেশীনি, সাইক্লিস্ট, সেকেলে যুবক, আম্পায়ার সকলেই নেচে গেয়ে বিশ্বকাপ উন্মাদনায় উদযাপন করে । ব্লকবাস্টার আয়োজনে হঠাত করেই যেন থমকে দাড়ায় সিলেট নগরী । এতো গুলো চরিত্র কোথা থেকে উদয় হলে আবার কোথায় মিলিয়ে গেল তার হদিস কেউ পাচ্ছে না । ইতোমধ্যে লুকানো ক্যামেরায় সবটুকু দৃশ্য ধারন করে নিয়েছে বিডি ফিল্ম ফ্যাক্টরী । ফ্ল্যাশ মুবের এ দৃশ্য বাংলাদেশের আরো তিনটি শহরে হয়েছে । এবং ইতোমধ্যে ফ্ল্যাশ মোবগুলো ইউটিউবে আপলোডও করে ফেলেছে আইসিসি। চলছে ভোটিং, মোস্টলি ওয়াচড হবে সেরা ।


সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় একটি ছোট বিশ্ববিদ্যালয় । অনেকেই এর নামও জানে না । এরকম একটি অবস্থায় থেকে আইসিসির লোগো আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছে সেটাও বড় ভাগ্যের ব্যাপার । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তো নামেই উঠে যাচ্ছে । বড় বড় সেলিব্রেটিরাও চবি, ঢাবি ও কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে প্রচারনায় নেমেছে । জুড়ি বোর্ডেও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা যেখানে দ্বিতীয় পজিশনে ছিলাম, দর্শক ভোটে আমরা এখন অনেক পিছিয়ে পড়ছি । সিকৃবির মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো: শহীদ উল্লাহ তালুকদার একটি ফেইসবুক ফ্যান পেইজ থেকে ভিডিওবার্তার মাধ্যমে দেশবাসী ও প্রবাসীদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেছেন । এর জন্য আমরা কৃতজ্ঞ । তবে পাঠক আপনাদের ফ্ল্যাশমোব নিয়ে আরো কয়েকটা বিষয় জানাতে চাই । অনেকেই খালি মাঠে হিপ হপ সুন্দরী দেখে ভোট করছেন অনলাইনে মেয়ার দিচ্ছেন । প্রকৃতপক্ষে ফ্ল্যামমোবের শর্ত হলো: ক্রাউড বা ভীর থাকতে হবেই । যত ভীর তত গ্রহনযোগ্যতা ।

বিভিন্ন চরিত্রের সন্নিবেশ থাকতে হবে যারা অভিনয় নয় বরং স্বতস্ফূর্ত ভাবে নেচে গেয়ে উঠবে । আইসিসি কর্তৃপক্ষ ফ্ল্যাশমোবে কোন ক্রিকেট খেলা না দেখাতেও অনুরোধ করেছিল । এসব দিক বিবেচনা করলে একমাত্র সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্ল্যাশ মোবটি সবচেয়ে বেশি যোগ্য । দুজন ভীনদেশি আমাদের সাথে যুক্ত হয়ে আমাদের গ্রহনযোগ্যতা আরো বাড়িয়েছে ।


আমরা রইলাম- আপনার মতামতের অপেক্ষায়...শুধু বাংলাদেশ ও ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা থেকেই কাজটা করেছি । আমাদের সব পরিশ্রম উতসর্গ করলাম টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নেয়া বাংলাদেশের দুটি টীমের প্রতি । সবাই চলুন একসাথে নেচে গেয়ে উঠি- চার ছক্কা হইহই...বল গড়াইয়া গেল কই.... আমারো বলতে ইচ্ছে করে- are you ready to roar ??


ভিডিওটির লিংক : http://www.youtube.com/watch?v=z3uQ3M1hvhQ
দেখুন এবং শেয়ার করুন । ধন্যবাদ ।

খলিলুর রহমান ফয়সাল
সমন্বয়ক, কাকতাড়ুয়া, সিলেট
প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতর, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
১৬টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×