বিএনপির ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ।
১৯৭৮ সালের এ দিনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান গঠন করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দর্শন সামনে রেখে উন্নয়নের রাজনৈতিক স্লোগান নিয়ে শুরু হয়েছিল বিএনপি’র যাত্রা। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রথমে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে গঠন করেন নির্বাচনী জোট জাগদল। ১৯৭৮ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর জাগদলকে রাজনৈতিক দলে রূপ দেন। গঠিত হয় জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। প্রেসিডেন্ট জিয়া গ্রামে-গ্রামান্তরে ঘুরে গ্রামের মানুষের কাছে উন্নয়নের পক্ষে তার ১৯ দফা পৌঁছে দেন। মাত্র আড়াই বছরে তিনি বিএনপিকে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দলে পরিণত করেন। ১৯৮১ সালের ৩০শে মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদতের পর দলটির অস্তিত্ব নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিল। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা যখন একে একে সামরিক শাসক এরশাদের দলে যোগ দিতে থাকেন সত্যিকার অর্থেই তখন দলের অস্তিত্ব বাহ্যিকভাবে সঙ্কটের মধ্যে পড়ে। তখন তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুস সাত্তার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে এবং দলের তরুণ নেতৃত্বের অনুরোধে বেগম খালেদা জিয়া বিএনপি’র হাল ধরেন। ১৯৮৩ সালে প্রথমে ভাইস চেয়ারম্যান পরে ১৯৮৪ সালে দলের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব নেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তিনি নিজেকে আপসহীন নেত্রী হিসেবে তুলে ধরে বিএনপিকে জনপ্রিয় দলে পরিণত করেন। ক্ষমতার প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠিত বিএনপির বর্তমানে সারা দেশে রয়েছে শক্ত অবস্থান। ৭৫টি সাংগঠনিক জেলায় ১১টি অঙ্গ ও বহু সহযোগী সংগঠন রয়েছে। কালের পরিক্রমায় বিএনপি আজ একটি পুরনো ও পরিণত দল। সংসদীয় পদ্ধতি প্রবর্তনের পর তিনবার ক্ষমতায় গেছে বিএনপি। চারদলীয় জোটের প্রধান দল হিসেবে সর্বশেষ সংসদে সরকার গঠন করেছিল। ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদেও ১১৬ আসন পেয়ে বিএনপি দেশের ইতিহাসে বৃহত্তম বিরোধী হিসেবে সংসদে যায়। তবে ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের পর আবারও বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়ে দলটি। গ্রেপ্তার করা হয় দলের চেয়ারপারসনসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। অনেকের বিরুদ্ধেই আনা হয় দুর্নীতির অভিযোগ। ওয়ান ইলেভেনের সে সেনাসমর্থিত সরকারের সময়ে বিএনপিকে ভাঙার জন্য নেয়া হয় একের পর এক পদক্ষেপ। তবে শেষ পর্যন্ত আপসহীন মনোভাবেই অটল থাকেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার অনড় অবস্থানের কারণে নবম জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশ থেকে জরুরি অবস্থা তুলে নেয়া হলেও নির্বাচনে ভূমিধস পরাজয়ের মুখোমুখি হয় বিএনপি। নির্বাচনে মাত্র এক-দশমাংশ (৩০টি) আসন পায় দলটি। তবে নির্বাচনোত্তর স্মরণকালের বিশাল জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে সাংগঠনিক পুনর্গঠনের মাধ্যমে বর্তমানে ঘুরে দাঁড়ানোর নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বিএনপি। এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ আলোচনা সভা এবং প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণের কর্মসূচি রয়েছে। ওদিকে বিএনপি’র ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এক বাণীতে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত দলের সব সদস্য, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসী সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ নানামুখী ষড়যন্ত্রের শিকার। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপর্যস্ত করে আমাদের একটি পদানত জাতিতে পরিণত করার হীন ষড়যন্ত্র আজ স্পষ্ট। দেশী-বিদেশী এসব ষড়যন্ত্রের হাত থেকে রক্তে কেনা স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং প্রিয় মাতৃভূমির অখণ্ডতা রক্ষায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। গণতন্ত্র কুক্ষিগত করার যে নীলনকশা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে তা প্রতিহত করতে সবাইকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে। আজকের এই শুভদিনে সেই দৃঢ়প্রত্যয় গ্রহণের জন্য আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাই। তিনি বলেন, দেশের এক ক্রান্তিকালে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠা হয়। যখন আধিপত্যবাদী শক্তি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব খর্ব করতে তৎপর, যখন দেশের তৎকালীন ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী স্বাধীনতা-উত্তর তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় কর্তৃত্বমূলক শাসন জারি করে মানুষের বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়। যখন হত্যা ও খুন রাজনীতির জাতীয় জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা যখন চরমভাবে বিপন্ন ঠিক সেই অরাজককালে সিপাহি জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের ফলস্বরূপ রাজনৈতিক অঙ্গনে আবির্ভূত হন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি বিএনপিকে গণতন্ত্র, উন্নয়ন, উৎপাদন ও জাতীয় স্বার্থরক্ষার উপযুক্ত করে গড়ে তোলেন।