somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা কিছু জয় এবং আমি (ভিডিও সহ) প্রথম পর্ব

০৫ ই মে, ২০১৬ সকাল ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ ক্রিকেট আমার জীবনের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে। সেই প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চা মেয়েটা বাচ্চা থেকে কিশোরি, কিশোরি থেকে তরুনী, তরুনী থেকে যুবতী হতে হতে বাংলাদেশ ক্রিকেটকেও একইভাবে বেড়ে উঠতে দেখেছে। আমার জীবনের সাথে সাথে কিভাবে ক্রিকেট বেড়ে উঠতে থাকল তা নিয়ে লিখব আজ। আজকে কোন কানাডার আলোচনা না, শুধুই বাংলাদেশ।



সাল ২০০৭: আমার দেখা প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ। ভারতের সাথে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ম্যাচ হচ্ছে। রাতে আমি মা বাবার সাথে শুয়েছিলাম। আমার বাবা হঠাৎ খেলার দিকে তাকিয়ে বলল, "মারে আমরা তো মনে হয় জিতে যাব"!! আমি ক্রিকেট বুঝতাম না, আধো ঘুমন্ত অবস্থায় বাবার কাঁপা কাঁপা গলা শুনে জেগে উঠলাম। আমি জানতাম না ভারত কত শক্তিশালী, বা বাংলাদেশ কতো দূর্বল। পুতুল আর রান্নাবাটি খেলা আমি ক্রিকেটের কোন নিয়ম বুঝতাম না। আমি শুধু আমার বাবাকে কাঁপতে দেখে বুঝলাম ব্যাপারটা অনেক বড় কিছু। চোখ থেকে ঘুম উধাও হয়ে গেল। আমি বাবাকে প্রতিটা বলের পরে জিজ্ঞেস করছিলাম, বাবা এটা কি বাংলাদেশের জন্যে ভালো না খারাপ? আমি তো কিছু বুঝতাম না!! বাবা কি যে ধৈর্য্য নিয়ে আমাকে প্রতিটা জিনিস বুঝিয়ে দিচ্ছিল!! বাংলাদেশ জিতে গেল আর সাথে সাথে সেই রাতের বেলাতেই আশেপাশের মানুষের বিজয় উল্লাস শুনতে পাচ্ছিলাম। কি যে অসহ্য রকমের একটা আনন্দ! ওইটুকু জীবনে দুঃখ না দেখা আমি প্রচন্ড সুখ দেখতে শুরু করলাম। সেদিন মনে হয়েছিল এতদিন কেন ক্রিকেট দেখিনি! বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম বাংলাদেশ কি কাপ জিতবে বাবা? তিনি বললেন, আমাদের জন্য এটাই বিশ্বকাপ জেতা মা! দেশপ্রেমের প্রথম অনুভূতিটা ক্রিকেটই আমাকে দিয়েছিল। না বলব না যে ক্রিকেট আমাকে দেশকে ভালোবাসাতে শিখিয়েছে, শুধু বলব দেশের প্রতি লুকিয়ে থাকা টানটা সেদিন অনুভব করেছি!

সাল ২০১০: তখনকার বাচ্চা মেয়েটা কিশোরি হওয়ার পথে। ক্রিকেট পুরোদমে বুঝি আমি। সে বোঝা থেকেই জানতাম বাংলাদেশ আর নিউজিল্যান্ডের খেলায় একটা ম্যাচ জিতলেও কি ভীষণ প্রাপ্তি হবে!! আল্লাহ প্লিজ একটা ম্যাচ জিতিয়ে দাও, প্লিজ। সাকিব আল হাসান তখন বাংলাদেশের ক্যাপ্টেন। তাকে নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। সে যে বাংলাদেশের, জান বাংলাদেশের প্রাণ, সাকিব আল হাসান! সাকিব আল হাসান! আসলে বাংলাদেশ তখন ১১ জনের না দুই জনের টিম ছিল। একজন বোলার সাকিব আল হাসান! আরেকজন ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান! তারই দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ প্রথম তিনটা ম্যাচ জিতল। আমার মনে হল বাস্তব হলে ভাল, স্বপ্ন হলে যেন কখনো না ভাংগে। লাস্ট ম্যাচ। প্রথম বড় কোন টিমকে হোয়াইটওয়াশ করার স্বপ্ন। বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করে তুলল ১৭৪। নিশ্চিত হার মেনে নিয়ে খেলা দেখছি। ভাবছি বেশি লোভ করার দরকার কি? বাংলাদেশ সিরিজ জিতেছে এটাইতো বেশি। নিউজিল্যান্ড কতো বড় টিম! কোন টেনশন না নিয়ে খেলা দেখতে শুরু করলাম, কিন্তু ২০ রানে ৫ উইকেট পরে যাওয়ার পরে আবার টেনশন করতে শুরু করলাম। লোভী মন জেগে উঠল। আজকে কি হবে?
শেষ পর্যন্ত হল। বুকটা ভরে গেল যখন বিদেশী কমেন্টেটররাও আতাহার আলী খানের দেখাদেখি বারবার "বাংলাওয়াশ" শব্দটা বলছিল। আর রুবেল তো বস, ৪ বলে ৪ রান লাগা খেলা জিতিয়ে দিল। ও অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশকে "হ্যাপি" করে চলেছে। ;)





সাল ২০১২: আমি পুরোদমে কিশোরিত্বতে পা দিয়েছি এবং আমার জীবনের কানাডা পর্ব শুরু হয়ে গেছে। দেশে তো তাও ক্রিকেট শুধু তখন দেখতান যখন বাংলাদেশ জেতা জেতা অবস্থা। কিন্তু ওখানে গিয়ে মাথার তার ছিড়ে গেল পুরোপুরিভাবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট হারুক জিতুক খেলা আমি দেখবই। রাত তিনটায় খেলা হলেও এলার্মের শব্দ শুনে জেগে উঠি। দিন রাত যেন কোন ব্যাপারই না! সেবার দেশের মাটিতে এশিয়া কাপ হচ্ছে। বাংলাদেশ তো বড় বড় এশিয়ান শক্তিগুলোর সাথে পারবেনা, কিন্তু আল্লাহ কম ব্যবধানে যেন হারে। আর তুমি দয়াময়, একটা ম্যাচ জিতিয়ে দেয়া তো কোন ব্যাপার না। অন্যদের দেশকে তো কতই জেতাও, আমার দেশকে অন্তত একটা ম্যাচ জিতিয়ে দেও। আল্লাহ শুধু একটা না দুটো ম্যাচ জিতিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে ফাইনালে তুলে বিশাল দয়াময়তার পরিচয় দিলেন।





বাংলাদেশ ফাইনাল খেলবে পাকিস্তানের সাথে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের বহুদিনের অনুরাগী আমি জানি যে আমাদের ভালো দিন বেশি টেকে না। কেন যেন মনে হচ্ছিল পাকিস্তানই জিতবে। আমার দেশটা প্রথম কোন ফাইনাল খেলছে, প্রথম চান্সে কেউ জেতে নাকি? আমাদের এই বেশি। খেলার লাস্ট পাচ ওভার চলাকালে স্কুলে চলে যেতে হল। প্রথম দুইটা ক্লাস করার পরে ১৫ মিনিটের ব্রেকে লাইব্রেরিতে ছুটে গেলাম। ধুকপুক করা বুকে অনলাইনে প্রথম আলো খুললাম। বাংলাদেশ হেরেছে। কষ্ট হল, কিন্তু ভাবলাম ঠিক আছে, ভালো দিন আসবে।

কিন্তু যখন দেখলাম হারটা মাত্র দুই রানের, কষ্ট হল। ভেতরটা ভেংগে গুড়িয়ে, দুমরে মুচরে দেয়া কষ্ট। হে আল্লাহ এ তুমি কি করলে? এতো কাছে থেকেও এত দূরে!! আমি আরো দেখলাম বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার কঠোর মনের, অহংকারী, (তখন ওকে তাই ভাবা হত) প্রফেশনাল সাকিব ঠোট কামড়ে কাদছে, তাকে জরিয়ে ধরে মুশফিকও বাচ্চার মতো কাদছে, সবসময় হাসিখুশি থাকা নাসিরও জার্সি তুলে কান্না মুছছে। আর মাহমুদুল্লাহর মধ্যে দিয়ে কি যাচ্ছিল তা মনে করেও মন কাপে!! আমার মনে হল আমাদের দেশের ছেলেরা শুধু মাত্র দেশের জন্যে খেলে। টাকা, ফেম তো ওদের কাছে বোনাস। ওদের মতো সোনার ছেলে যে দেশে আছে সে দেশ বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপ দিয়ে কি করবে? আমাদের তার চেয়েও মূল্যবান কিছু আছে। সেদিন বুঝেছিলাম বাংলাদেশ ক্রিকেট দল খারাপভাবে হারলেও কেন ছ্যাবলার মতো বার বার হতাশ হতে ফিরে যাই, কেন সারা বিশ্বের টিপ্পনি আমাদের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা কমায় না বরং বাড়ায়। আমরাতো আমাদের ক্রিকেটারদের ক্রিকেট না, তাদের মন দেখে ভালোবেসেছি। তাদের জ্বলন্ত চোখের লাল সবুজ বাংলাদেশ দেখে ভালোবেসেছি। সেদিন আমি একটুও কাদিনি, কেদেছিলাম পরে, অন্য কারনে, পরে কখনো লিখব।

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:২৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×