somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিখ্যাতদের রঙ্গমঞ্চ

০৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১. পাবলো পিকাসো

পাবলো পিকাসো তখন দারুণ জনপ্রিয় চিত্রশিল্পী। একদিন চার্লি চ্যাপলিন গেলেন পিকাসোর সঙ্গে দেখা করতে। বললেন, আপনি কি করে ছবি আঁকেন, দেখতে এলাম।
পিকাসো সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়ে চার্লি চ্যাপলিনকে নিয়ে গেলেন তাঁর স্টুডিওর মধ্যে। সেখানে তিনি একটা ছবি আঁকতে ব্যস্ত ছিলেন। চ্যাপলিন দাঁড়িয়ে আছেন আর পিকাসো নিমগ্ন হয়ে ছবি আঁকছেন। হঠাৎ তুলি থেকে খানিকটা রং ছিটকে গিয়ে পড়ল চার্লি চ্যাপলিনের সাদা জামায়। পিকাসো আঁতকে উঠে বললেন, ওহ, আমি খুবই দুঃখিত চার্লি! দাঁড়াও, আমি এক্ষুনি স্পিরিট নিয়ে এসে রংটা মুছে দিচ্ছি।
চ্যাপলিন একবার তার জামার দিকে তাকান, তারপর হাসতে হাসতে বলেন, কোনো দরকার নেই, তার চেয়ে আপনি বরং আমার প্যান্টের ওপর একটা সই দিয়ে দিন।


২. উড্রো উইলসন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন বাছবিচারহীন সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদানকে নিরুৎসাহিত করতেন। তিনি এ প্রসঙ্গে একটি গল্প শোনাতেন প্রায়ই। গল্পটি এ রকম- একদিন এক নৈশভোজে অতিসাধারণ এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হলো আমার, যিনি তিন তিনটে সম্মানসূচক ডিগ্রির অধিকারী। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে আমার এক বন্ধু জানাল, তাকে তৃতীয় ডিগ্রিটি দেওয়া হয়েছিল কারণ তার দুটো ডিগ্রি আছে। দ্বিতীয়টি দেওয়া হয়েছিল, কারণ ইতিমধ্যেই তার একটা ডিগ্রি আছে। আর প্রথমটা দেওয়া হয়েছিল তার একটাও ডিগ্রি ছিল না বলে।



৩. এডওয়ার্ড মার্শ

একদিন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের স্ত্রী ও চার্চিলের ব্যক্তিগত সচিব এডওয়ার্ড মার্শ একটি রেলস্টেশনে চার্চিলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। চার্চিলের সঙ্গে তাদের এক জায়গায় যাওয়ার কথা। ট্রেন ছাড়ে ছাড়ে অবস্থা, তবু চার্চিলের দেখা নেই। চার্চিলের স্ত্রী তখন স্বামীর প্রতি উষ্মা প্রকাশ করতে লাগলেন। তার উদ্বেগ দেখে অস্থির হয়ে পড়েন মার্শ। একপর্যায়ে তিনি বলে বসেন, উইনস্টন আসলে খেলোয়াড়সুলভ মনোভাবের অধিকারী। এ জন্য তিনি ট্রেনকে সব সময় আগেভাগে চলে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে থাকেন।



৪. দার্শনিক ডায়োজেনিস

কাউকে পরোয়া না করা এবং তোষামোদ না করার ব্যাপারে গ্রীক রাজনীতিবিদ ও দার্শনিক ডায়োজেনিসের খুব সুনাম ছিল। ডায়োজেনিসের সময় ছিল দিগ্বিজয়ী বীর আলেকজান্ডারের শাসনামল। এক সকালে দার্শনিক ডায়োজেনিস তার বাসার সামনে রোদ পোহাচ্ছিলেন। হঠাৎ আলেকজান্ডার এসে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার জন্য আমি কী করতে পারি? ডায়োজেনিস বললেন, আমি রোদ পোহাচ্ছি; আপনি সূর্যটা আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছেন। আপাতত একটু সরে দাঁড়ালেই হয়। আরেকবার..., সেটি অত্যাচারী রাজা ডেনিসের আমলের ঘটনা। তাকে একদিন শাক দিয়ে রুটি খেতে দেখে সে-সময়কার আরেক দার্শনিক বললেন, যদি রাজাকে একটু তোষামোদ করে চলতেন, তাহলে আর শাক দিয়ে রুটি খেতে হতো না। ডায়োজেনিস সঙ্গে সঙ্গে বললেন, আপনি যদি শাক দিয়ে রুটি খেতে শিখতেন, তাহলে এমন এক অত্যাচারী রাজাকে তোষামোদ করতে হতো না।


৫. ফ্রান্সের রাজা একাদশ লুই

খাওয়া, ঘুম, নারীসঙ্গ আর ভাগ্য বিষয়ে জ্যোতিষীদের ওপর অগাধ বিশ্বাস-রাজা-বাদশাদের কারবার তো ছিল এমনই। প্রথা ভেঙে এর একটু বাইরে বেরোনোর চেষ্টা করেছিলেন ফ্রান্সের রাজা একাদশ লুই। উঁহু, ভুল ভাববেন না। প্রথম তিনটি জিনিসে একদমই তিনি প্রথা ভাঙার চেষ্টা করেননি। বিপ্লবী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কেবল জ্যোতিষশাস্ত্রের বেলায়। কিন্তু সেই বিপ্লবী মনোভাব হুমকির মুখে পড়ে, যখন রাজ্যের এক জ্যোতিষী রাজপরিবারের একজনের মৃত্যুর ব্যাপারে আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করে সফল হয়।
ধর তক্তা মার পেরেক। রাজার সামনে হাজির করা হলো জ্যোতিষীকে। প্রজাদের মনে বিভ্রান্তি আর কুসংস্কার ছড়ানোর অপরাধে শাস্তি হবে তার। রাজা মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা, তুমি তাহলে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পার। তা বল তো দেখি, তোমার কবে মৃত্যু হবে? জ্যোতিষীও কম সেয়ানা নয়, জাঁহাপনা, আপনার মৃত্যুর ঠিক তিন দিন আগে আমার মৃত্যু হবে।
তারপর আর কী! রাজা জনাবিশেক বৈদ্য-কবিরাজ নিয়োগ দিলেন জ্যোতিষীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য। আর জ্যোতিষীও ঘি-টি খেয়ে সুখে-শান্তিতে দিন কাটাতে লাগলেন।


৬. বিজয়নগরের সম্রাট কৃষ্ণদেব

চীনা সম্রাট একবার বিজয়নগরের সম্রাটের জন্য এক ঝুড়ি পিচ ফল পাঠালেন। সঙ্গে একটি চিঠি। চিঠিতে লেখা, এ ফল খেলে আয়ু বাড়ে। ফলের ঝুড়িটি যখন সম্রাট কৃষ্ণদেবের সামনে তুলে ধরে চিঠি পড়ে শোনানো হলো, রমণ আর লোভ সামলাতে পারলেন না। একটি পিচ তুলে নিয়ে টুপ করে মুখে পুরলেন। আর যায় কোথা! ভীষণ খেপে গেলেন সম্রাট। বোমার মতো ফেটে পড়ে তিনি বললেন, আমার জন্য পাঠানো ফল কিনা তুমি মুখে দিলে! তাও আবার আমি স্বাদ নেওয়ার আগেই! এক্ষুনি তোমার গর্দান যাবে।
সম্রাটের হুকুমে সেপাইরা চেপে ধরল রমণকে। সম্রাটের হুকুম বলে কথা; এক্ষুনি তাকে কতল করা হবে। কিন্তু রমণ একটুও ভয় পেলেন না। বরং বাঁকা হেসে বললেন, চীনা সম্রাট যে কেমন বাটপাড়, এখনই প্রমাণিত হলো। তিনি লিখেছেন, এ ফল খেলে আয়ু বাড়ে, আর আমি মুখে দিতে না দিতে মারা যেতে বসেছি। নিজের প্রাণ যায় যাক, এ নিয়ে আমার চিন্তা নেই। সম্রাট বাহাদুর এ ফল খেলে কী যে হবে, সে কথাই ভাবছি।
রমণের কথায় টনক নড়ল সম্রাটের। সঙ্গে সঙ্গে তিনি হুকুম রদ করলেন। প্রাণে রক্ষা পেলেন রমণ।



৭. জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিরো মোরি

জি-৮ সামিটের মাস খানেক আগে জাপানের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিরো মোরি গিয়েছিলেন জি এইটের লিডারদের ফর্মাল দাওয়াত দিতে এবং যে সব বিষয়ে আলোচনা হবে তার আইডিয়া দিতে। তখন তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কিনটনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এটাই ছিল তার কিন্টনের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ। সাক্ষাৎকারের আগে মোরিকে তার সহযোগীরা পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রথম সাক্ষাতে মোরি যেন দুএকটি কথা ইংরেজিতে বলেন। উল্লেখ্য, জাপানের প্রধানমন্ত্রী অন্য কোন দেশের নেতাদের সাথে কথা বলার সময় সর্বদা দোভাষীর সাহায্য নেন। যাই হোক , মোরিকে কয়েকটি ইংরেজি বাক্য শেখানো হয়। আমেরিকায় গিয়ে কিনটনের সাথে দেখা করার সময় মোরি প্রথম ইংরেজি বাক্যটিই শুদ্ধ করে বলতে পারেন। তাকে শেখানো হয়েছিল হ্যান্ডশেক করার সময় How are you বলতে। উত্তরে কিনটন বলবেন , I am fine and you? মোরি সংক্ষেপে বলবেন Me too, এ পর্যন্তই। তারপর দোভাষীর মাধ্যমে কথা বলবেন। তিনি যখন কিনটনের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করছিলেন তখন মোরি বলেন, Who are you ? ( তিনি How ভুলে গিয়ে Who বলে ফেলেন ) বিচক্ষণ ক্লিনটন হেসে উত্তর দেন, I am husband of Hillary (আমি হিলারীর হাসব্যান্ড) । মোরিও না বুঝে তোতাপাখির মতো তার শিখানো Me too! বলেন। (আমিও হিলারীর হাসব্যান্ড ) বলাই বাহুল্য , উল্লেখিত দুই নেতার এ আলোচনার কথা হাসতে হাসতে জাপান রেডিও -র একটি ন্যারেটর কৌতুক করে ২২ জুলাই ২০০০ তারিখ সকালে প্রচার করে।


৮. পোপ দ্বাদশ লিও
পোপ লিও দ্বাদশ একবার জেলখানা পরিদর্শনে গিয়ে কয়েদিদের সঙ্গে কথা বলার সময় জানতে চাইলেন, ওরা কেন কয়েদখানায়। জবাবে সব কয়েদি বলল, ওরা সবাই নির্দোষ, শুধু একজন বাদে। ওই একজনই বলল যে তার ঠিক কারণেই জেল হয়েছে। পোপ জেল সুপারিনটেনডেন্টের দিকে ফিরে তাকিয়ে বললেন, ‘একে এখান থেকে বের করে দাও। আমি চাই না ও এখানে থেকে অন্যদের অসৎ করে ফেলুক!’
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×