আদর খেতে কে না চাই, বিশেষভাবে যদি সে হয় পরিবারের সবার ছোটো। স্কুলে উঠলে কিংবা মাদ্রাসায় গেলে পড়ালেখা করবে এটা স্বাভাবিক, আর মাদ্রাসার বা স্কুলের স্যার’রা পড়াশোনার ফাকেঁ ফাকেঁ কোনো কোনো ছাত্র-ছাত্রীদের একটু আধটু আদর করে থাকেন, ভাবখানা এমন যে আদর দিয়ে সে তার স্টুডেন্টদের পড়া দেখিয়ে দিচ্ছে। এটা দোষের কিছু নয়। একান্নবর্তী পরিবার হলে চাচাতো ভাই কিংবা মামাতো ভাইরা তাদের নিজ বোন কিংবা চাচাতো বা মামাতো ছোট ভাই-বোনদের আদর করে থাকেন। আবার চেনাশুনা নেই এমন ব্যাক্তিরাও সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চা দেখলে আদর করতে চাই। আজ মূলতঃ এই আদর নিয়েই কিছু কথা লিখবো বলে ঠিক করেছি।
যেদিন থেকে আমার পেটে অসম্ভব ব্যাথা আদর করছিলো, সেইদিনই ঠিক করলাম ব্যাথাময় কোনো আদরের কথা আমি লিখবো যা সবাই লিখতে পারলেও বলতে পারে খুব কম ব্যাক্তি। আমার লিভারের ব্যাথা আমাকে যে পরিমাণ আদর দিচ্ছে তাতে নেই কোন লালসা বা নেই কোনো যৌন সুড়সুড়ানি, তবে আমি যে আদরের কথা লিখবো তাতে সেইসব যতটা সম্ভব বাদ দিয়ে লিখবার চেষ্টা করবো।
কলি, রোজ মাদ্রাসায় আরবী পড়তে সাত-সকালে উঠেই রওনা হয়, মাদ্রাসার হুজুর কলিকে একটু বেশী মাত্রায় আদর করেন। কলি সবে পঞ্চম শ্রেনী থেকে ষষ্ঠ শ্রেনীতে উন্নীত হয়েছে, তার বয়সের তুলনায় তার শরীর একটু বড় দেখায় বলেই সে যথা সম্ভব নিজেকে ঢেকে ঢুকে মাথায় হিজাব পড়ে বইগুলো একটা ব্যাগে ভরে মাদ্রাসায় চলে যাই না খেয়েই। অতঃপর মাদ্রাসা থেকে এসেই কোনো রকমে দুটো খেয়ে সে চলে যায় স্কুলে, টানা ৩ টা পূর্যন্ত স্কুল ও প্রাইভেট শেষ করে সে বাসায় ফিরে ভাত খেয়ে আবারও প্রাইভেট পড়তে যাই, টানা ছয়টা বাজে সে একটু বিশ্রাম পায়, তখন অঞ্জু, জুলেখা, পারুলদের সাথে তার একটু কথা-বার্তা হয়। কথায় কথায় তিন বন্ধুর কথার মধ্যে উঠে আসে আদর প্রসঙ্গ।
কলি বলেঃ জানিষ, হুজুর স্যার আজ কি করেছে? হুজুর আমাকে পড়াদেখিয়ে দেওয়ার কথা বলে সবার শেষে বাসায় যাবার আগে দেখা করতে বলল, আমিও অপেক্ষা করছিলাম, হুজুর সবাই চলে যাওয়ার পর আমাকে বই খুলে তার কোলে নিয়ে বসলো, আমি যত্ত না করি, ততই হুজুর বলে, দেখো কলি, আমি তোমার স্যার, আমি সবাইকে আদর করি ঠিক আছে, আর তোমাকে একটু বেশী করি, আমি চাই আগামী পরীক্ষায় তুমি ফাষ্ট হবা, এবার পড়া শুরু করা যাক...
জুলেখা প্রশ্ন করলো, তারপর?
কলি বলে, ‘তারপর হুজুর একবার এই পায়ের উপরে বসায় তারপর আবার আরেক পায়ের উপরে বসায়’ আর হুজুরের কি যেন একটা শক্ত আমার পাছায় বার বার লাগছে, আমার কি যে অস্বস্হি, কি বলবো, হুজুর একবার বুকে হাত দিয়ে আমাকে ধরে রাখে যেনো আমি পড়ে না যাই, আসার সময় হুজুর বললো, আমাকে সে নাকি বেশী আদর করে, জানিষ।
অঞ্জু বললো, আরে হুজুরের এইসব হলো ঢং, আসলে তোর বুকে হাত দিতে চাইছিলো, এইসব আমি সব বুঝি, এগুলো হলো পুরুষ মানুষ নামের কিছু মানুষ আছে যারা মেয়েদের গায়ে হাত রাখতে চাই, ঐ যে আমাদের স্কুলের আর্ট টিচার, সেও এমন, সে কি করে জানিস, সে আর্ট শিখাতে গিয়ে মেয়েদের হাত ধরবে, কিভাবে হাত ঘুরাতে হবে এইসব করতে গিয়ে সব ধরাধরি করতে থাকে। খুব বাজে এইসব স্যারগুলো, ইচ্ছা করে..অঞ্জুর মুখে একটা গালি এসে গিয়েছিলো কিন্তু সে হাত চাপা দেয় মুখে।
পারুল যোগ করে, ঠিক বলেছিস, আমার প্রাইভেট স্যারটাও এমন, কেমন হ্যাবলার মতো আমার বুকের দিকে তাকিয়ে থাকে জানিস, ইচ্ছা করে কলম দিয়ে চোখে একটা গুতা দি, কিন্তু কি আর করা, বল, চোখতো আর দোষ করেনি।
তাই বলে বুকের দিকে তাকাবে? অঞ্জু অনুযোগ করে, তার কাজ বই পড়ানো, সে বইয়ের দিকে তাকাবেঁ, এইভাবে তাদের কথা বেশ জমে উঠেছিলো স্যারদের আদরের নামে মন্দতা নিয়ে এবং এক সময় তারা যে যার বাড়ী চলে যাই।
পরের দিন, কলি মাদ্রাসায় গিয়ে কিছুটা অবাক হয়, ‘আরে, কোনো ছাত্র-ছাত্রী নেই কেনো? সে মনে করার চেষ্টা করে আজ কি বার? না, সব ঠিকই আছে, হঠাৎ সে বুঝতে পারে তার স্যার পিছনে এসে দাড়িঁয়েছে, কলি ইতস্তত করছিলো দেখে স্যার তার হাত ধরে তাকে নিয়ে তার রুমে চলে আসে, কলি হঠাৎ প্রশ্ন করে, ‘স্যার, এখানে কেনো? আর বাকীরাই বা কোথায়, মওলানা স্যার একটা ফিচেল হাসি দিয়ে বলে ‘আজ তোমাকে মনোযোগ দিয়ে আগা গোড়া পড়াবো তাই ওদের আসার দরকার নেই, কলির ভেতর ভেতর ভয় ভয় করতে থাকে, স্যার তাকে হাত ধরে তার চকির উপর বসতে বলে, কলি, শোনো, তোমার কোনো ভয় নেই, আজ তোমার একটা পরীক্ষা নেবো, যদি তুমি পাস করো তবে তোমাকে ফাষ্ট করে দেবো, কলি মাথা দুলিয়ে বলে, নিন পরীক্ষা। স্যার বলে, ‘তুমি তৈরী’ কলি বলে স্যার বলুন কি লিখতে হবে?
স্যার কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আচমকা দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে কলিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, কলির চিৎকারে আশে পাশের মানুষজন কলিকে রক্তাক্ত অবস্হায় উদ্ধার করে ঠিকই কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কলি মারা যায়।
শেষ কথাঃ আমাদের বর্তমান সমাজে কলি, অঞ্জু, জুলেখা পলি এরা কেউ নিরাপদে নেয়, স্কুল, মাদ্রাসা, প্রাইভেট কোথাও মেয়েদের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য কেউ বসে নেই। আমরা বলে থাকি, মেয়েদের দোষ, তারা ঠিক মতো চলাফেরা করলে এমনটা ঘটতো না, কিন্তু কথাটার সাথে আমি একমত নই, কেননা প্রত্যেক ব্যাক্তির নিজস্ব স্বাধীনতা আছে, আছে তার নিজের মতো জীবন যাপন করার এবং নিরাপদভাবে বেচেঁ থাকার, আমরা কিছু পুরুষমানুষ প্রতিদিনই পশু হচ্ছি, প্রতিদিনই আমাদের কারণে কতো মা-বোনের সম্ভ্রমহানি হচ্ছে, অনেকে বলে না লজ্জায়, আর বেশীরভাগ থেকে যাই আইনের মারপ্যাচের ভেতরে, তাই দেরী না করে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নারীর সম্মান যারা নষ্ট করবে, যারা সম্ভ্রমহানি করবে, সে যত বড়ো নেতা হউক বা হউক কোটিপতি, তাকে অবশ্য বিচারের সম্মুখীন করতে হবে, গ্রাম্য সালিশীর নামে একতরফা বিচারের অবসান ঘটাতে হবে। এইভাবেই হয়তো একদিন লালসবুজের ঐ পতাকা সত্যিকারভাবে স্বাধীন বাতাসে উড়বে স্বাধীনচেতা নারীর অধিকার লাভের আনন্দে। সেইদিনই আমার সকল ব্যাথা দূর হয়ে যাবে, ইনশাল্লাহ।