somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি অবাক ! আমি বিস্মিত ! আমি আনন্দিত ! আমি গর্বিত :)

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হ্যাঁ উপরের শিরোনাম এর সবগুলোই আমার অভিব্যাক্তির প্রয়াস । শুধু আমার ই নয় আমার সাথে আরও কয়েকজন আছেন এবং আমি নিশ্চিত এমন অভিব্যক্তি হবে আপনাদেরও । ;)

যাই হোক এবার মূল কথায় আসি । আমাদের সহ ব্লগার ও আমার জীবনের একমাত্র বন্ধু " ব্লগার একজন আরমান " গত ১৭-০১-২০১৪ দিবাগত রাত ১১:৪৫ মিনিটে শুভ কাজটা সেরে ফেলেছেন । জী হ্যাঁ তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন । :)






আরও ছবি আসছে ...........

ঘটনার বিস্তারিত আলোকপাতঃ ;)

দুপুর ২ টা বাজে । বাসা থেকে বের হয়েছি ; ভার্সিটিতে যাবো । বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে হাঁটছি । এমন সময় ফোন টা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বের করার আগেই কেটে গেল। বের করে দেখি আরমান মিস কল দিয়েছে । একটু অবাক হলাম কারন আরমান কখনো মিস কল দেয় না ; তো আমি কল ব্যাক করার জন্য কল বাটন চাপতেই আরমানের কল আসলো । খুব তাড়াহুড়ো করে জিজ্ঞেস করতেছে ' কই তুই ? " আমি ভাবলাম ও হয়তো আমাকে দেখেছে তাই আমি ওকে পালটা জিজ্ঞেস করলাম " তুই কই " ? বললো ও বাসায় । এরপর ইনিয়ে বিনিয়ে কই যাই , কখন ফিরবো জিজ্ঞেস করার পরে বললো " তোর সাথে জরুরি কথা আছে , কাজ শেষ করে আমার বাসায় আসবি " । আমি তাড়াহুড়োর মাঝে ছিলাম তাই আচ্ছা বলে কল কেটে দিয়ে বাসে উঠলাম ।

কিন্তু বাসে উঠার পর থেকেই মনটা যেন কেমন খুত খুত করছিল । কারন আরমান আমাকে কখনো এমন করে কিছু কখনো বলে নি । আমার আর আরমানের বন্ধুত্ব প্রায় ১৬/১৭ বছরের ; আমরা দুইজন একজন আরেকজনের এমন কোন কথা নেই যা জানিনা । আমি আরমানকে কল দিলাম ; জিজ্ঞেস করলাম " কি হইছে ? এমন গুজগুজ না কইরা কি কইবি ফোনেই আগে বল !" তখন সে যে কথা বললো তা আমার অজানা না হলেও ; পুরোপুরি জানাও ছিল না। অন্তত সেদিন , সেই সময় এমনকি এই বছর তো ভালো ২/৪ বছরের জন্য আমি শুনতে অথবা ফেইস করতে প্রস্তুত ছিলাম না ।

আরমান যা বলেছিল তার সারমর্ম করলে দাড়ায় যে , বর্তমান ভাবী-কে তার বাবা-মা বিয়ে দিয়ে দেবার জন্য গত দু-তিন দিন ধরে তিন খানা পাত্রের সম্মুখে পেশ করেছেন এবং সে কারনে তিনি আরমানের উদ্দেশ্যে ঘটনার দিন সকাল বেলা পরিবার- পরিজন ছেড়ে সারাজীবনের জন্য রওনা হয়েছেন । অতঃপর আর কি করার ! " আমি আসছি " শুধু এই কথাটুকু বলেই আমি কল কেটে দিলাম । যেতে যেতেই আমাকে ব্লগার কাল্পনিক ভালোবাসা কল দিলেন এবং ঘটনার সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন । তিনিও ততক্ষণে আরমানের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেছেন ।


কোন ভাবে তড়িঘড়ি করে ভার্সিটির কাজ চুকিয়ে ছুটে এলাম আমার বন্ধুর বাড়ি । এসে যাদের কেই কল দেই তাদের ফোনই ব্যাস্ত পেয়ে কিছুটা ঘাবড়ে যাবার উপক্রম হতে হতেও বেঁচে গেলাম কাল্পনিক ভালোবাসা - ভাইয়ের কল রিসিভ করার জন্যে । উনার সাথে ব্লগার স্বপ্নবাজ অভি ও ছিলেন। কাল্পনিক ভাই জানালেন যে উনি পাশেই আছেন এবং মিনিট দুই পরেই ভাইয়ের দেখা পেলাম । ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলতেই দেখলাম একটি ব্যাটারি রিক্সা যোগে নতুন তোষক , জাজিম , বালিশ , বেড কাভার নিয়ে ব্লগার আমিনুর , ব্লগার খাটাস এবং আমার বন্ধু বাসার সামনে এসে নামলেন । বন্ধুর আমার মুখ খানা লাল সাথে হাঁসি লেগেই আছে ! তখন ধীরে ধীরে বিশ্বাস করতে শুরু করলাম না আসলেই ঘটনা সত্য ( মনে হয় ) । এরপর সবাই ধরা ধরি করে ওগুলো নিয়ে বাসায় উঠালাম । এর মাঝেই উপস্থিত হলেন ব্লগার কান্ডারি অথর্ব ভাই। তিনি এসে জানালেন যে কাজী সাহেবের সাথে কথা পাকা করে এসেছেন । সাথে করে নিয়ে এসেছেন আরমান ও ভাবীর ফুলসজ্জার জন্য রুম ডেকোরেশনের সরঞ্জাম । আমার আর খাটাস ভাই এর উপর দায়িত্ব পড়লো রুম ডেকোরেশনের । ব্লগার কুনো ব্যাঙ এর মাঝেই নিয়ে আসলেন কাঁচা বাজার । তিনি আর কাণ্ডারি ভাই চলে গেলেন । বিয়ের রান্নার দায়িত্ব পড়লো নামি দামি বাবুর্চি থুক্কু ব্লগার কাল্পনিক ভালোবাসার উপরে । তিনি চটজলদি জামা কাপড় ছেড়ে লুঙ্গি আর টিশার্ট পড়ে বসে গেলেন তার কাজে । আর অভি আগের দিন রাতে না ঘুমানোর কারনে ঘুমাতে চলে গেলেন । কিন্তু ঘুমাতে পারলেন না । আরমান বিয়ে করছে ! এই চিন্তা টা তাকে ঘুমাতে দেয় নি ।

এর মাঝে কাণ্ডারি ভাই আর ভাবী মিলে বের হলেন বউ এর জন্য শাড়ি ও অন্যান্য সামগ্রি কিনতে । সন্ধার দিকে ওগুলো নিয়ে তিনি চলে আসলেন । এদিকে আমরা বাসর ঘর সাজাতে ব্যস্ত । বন্ধু দোকা হয়ে যাচ্ছে আর আমি একাই রয়ে যাচ্ছি এই দুঃখ বুকে নিয়েই সাজাচ্ছিলাম । ৭ টার কিছু পরে আমি , খাটাস ভাই আর বাবুর্চি থুক্কু কাল্পনিক ভাই ছাড়া সবাই চলে গেলেন অন্যান্য কাজ করতে ।


১০ টার দিকে আমরা ফোন পেয়ে বাসা থেকে রওনা হয়ে গেলাম । সবাই গিয়ে কাজী অফিসের সামনে চায়ের দোকানে বসে আছি । আমাদের সাথে মাগুর রুবায়েত, সজিব ভাই ও জেরিফ এসে যোগ দিলেন।


ভাবী আসলেন যখন তখন রাত ১১ টার মতো । ব্লগার আমীন ভাইয়ের বোনের বাসায় তাকে আমাদের আরমান সাহেব নিয়ে গিয়েছেন । তড়িঘড়ি করে কোন মতে বেচারি ভাবিকে বিয়ের জন্য কেনা শাড়ি পরিয়ে নিয়ে আসা হলো কাজী অফিসে । ততক্ষণে রাত ১১.৩০ বেজে গেছে । ভাবীর চেহারায় ৩৫০ কিঃমি পথ পাড়ি দেবার ক্লান্তি স্পষ্ট ! তবু যে কিছুই করার নেই , বিয়ে বলে কথা ! আমরা সবাই কাজী সাহেবের অফিসে ঢুকলাম । প্রাপ্ত বয়স্ক কিনা উহার সত্যতা যাচাই বাছাইয়ের পড়ে শুরু হলো বিয়ের কার্যক্রম ।

ভাবীর তিন বার কবুল বলা এবং আরমানের হাঁসি হাঁসি মুখে তিন বার কবুল বলার পড়ে দুইজনের দস্তখতের দারা বিয়ের কাজ এগিয়ে চললো । এরপর আসলো ভাবীর উকিল বাপ যিনি তার দস্তখতের পালা । সবার সম্মতি ক্রমে ভাবীর উকিল বাপ হিসেবে ব্লগার খাটাস নিয়োগ পাইলেন এবং তার মুল্যবান দস্তখত প্রদান করিলেন । পাত্রের সাক্ষি হিসেবে আমি ও ব্লগার মাগুর দস্তখত দিলাম । কাজী সাহেবের বিয়ের দোয়া ও মোনাজাত এর পর মিষ্টি মুখের মাধ্যমে একজন আরমান বিবাহিত হিসেবে নিবন্ধন লাভ করিলেন ( অবশেষে ) ।

কাজী সাহেবের উপুযুক্ত পাওনা পরিশোধ শেষে রাত ১২ টার দিকে আমরা সবাই বাসার উদ্দেশ্যে রউনা হইলাম । একটি সিএনজি যোগে আরমান, ভাবী ও ব্লগার সপ্নবাজ অভি এবং আমি রওনা হলাম । বাসায় এসে সবার পৌছাতে পৌছাতে রাত ১ টা । আমাদের বিয়ের বাবুর্চি ইয়ে মানে কাল্পনিক ভাই পোলাউ রান্না করতে ছুটে গেলেন । গোশত ও অন্যান্য খাবার আগেই রান্না হয়ে গিয়ে ছিল । সময়ের অভাবে পোলাউ টা রান্না করা সম্ভব হয় নি ।

যাই হোক রাত ২ টার কিছু পরে আমরা খেতে বসলাম । সবাই মিলে হাঁসি ঠাট্টা করতে করতে খাওয়া শেষ করলাম । যে কথাটা না বললেই নয় , তা হলো ; সেইদিনের রান্না টা দারুন হয়েছিল । কাল্পনিক ভালোবাসা সত্যিই অসাধারন রান্না করেন ।




অতঃপর সেই সময় আসিল । আরমান আর নব বধু কে উহাদের ফুল সজ্জার জন্য নির্ধারিত রুমে প্রেরন করা হলো ।



এবং তারপর ............................. না পাঠকগণ তারপরের কাহিনী আমাদের আর জানা নেই । অনুমেয় কিছু না লেখাই ভাল ;) পাঠকগণের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই না হয় বুঝে নিবেন ক্ষন ;)


এভাবেই আমাদের একজন আরমান জীবিত থেকে বিবাহিত জীবনে প্রবেশ ঘটলো ... ।




বিঃদ্রঃ কিছু কথা না বলে থাকতে পারছি না । ভার্চুয়াল কোন প্লাটফরম থেকে এমন কিছু মানুষের সাথে পরিচিত হয়েছি যাদের কে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করার মতো সাহস আমার নেই । তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ হয়ে থাকবো আমি । এরা না থাকলে হয়তো আমার বন্ধুর এভাবে বিয়ে করা কখনো সম্ভব হতো না । আপন ভাই অথবা আত্মীয় স্বজনরাও অনেক ক্ষেত্রে এমন ভাবে পাশে থাকেনা । আমি আপনাদের সবার নাম উল্লেখ করতে চাই কিন্তু হয়তো এভাবে উল্লেখ করাটা ঠিক হবে না । আপনাদের কিছু দেবার সামর্থ্য আমার নেই । তাই শুধু এটুকুই বলবো আপনাদের অনেক ভালবাসি এবং একজন আরমান আই লাভ ইউ দোস্ত !






উৎসর্গঃ ব্লগার একজন আরমান ও নিশী (ভাবী) কে । সুখে থাকো তোমরা সবসময় :)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৩:১৯
৮১টি মন্তব্য ৮১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×