কম খরচে কলকাতা দিল্লী আগ্রা-২
কম খরচে কলকাতা দিল্লী আগ্রা- ৩ (শেষ)
কলকাতা দিল্লী আগ্রা নামে ব্লগে অনেক লেখা। আছে আমার এই লেখাটি আপনাদের জন্য আরেকটু বেশি সহায়ক। এর কারণটা হচ্ছে এটি বেশ কম খরচের একটা ট্যুর। ৮ দিনের এই ট্যুরে আমার খরচ হয়েছে সর্বমোট ১৩,০০০ টাকা। এরমধ্যে ৭,০০০ টাকা ট্রেন ভাড়া বাকি অন্যান্য খরচ। তাহলে বুঝতেই পারছেন আমার মতো ছাত্ররা বিশেষ করে যাদের নির্দিষ্ট কোন আয়ের উৎস নেই তাদের জন্য এই লেখাটি বেশ প্রয়জনীয়। তবে খরচের হিসাব যশোর থেকে, কারণ সেখান থেকেই আমার ট্যুর শুরু। ঢাকা থেকে গেলে খরচ আরও ১,০০০ বেশি পড়বে।
কলকাতার ট্রাম
২০১৪’র ডিসেম্বরের ২৬ তারিখ সকাল সাড়ে সাতটায় আমার বাবার সাথে তার মটরবাইকে বেনাপোলের উদ্দ্যেশে রওনা দিলাম। বছরের সবচেয়ে বেশি শীত এবং কুয়াশা পড়া শুরু করেছ সেদিন থেকেই। প্রচন্ড ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে ন’টার দিকে পৌছে গেলাম বেনাপোল ইমিগ্রেশনে। পরিচিত লোকের মাধ্যমে বর্ডার ক্রস করলাম কোনরকম চেকিং ছাড়াই। ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন ৫ মিনিটে শেষ হলো। টাকাকে রুপিতে বদলে নিয়ে ২৫ রুপির অটো ভাড়ায় বনগাঁ রেল স্টেশনে আসলাম।
নোট*(বর্ডার পার হবার সময় বাংলাদেশ সরকারকে ভ্রমণ কর বাবদ ৫০০ টাকা জমা দিতে হয়। বাংলাদেশী দালালকে ১০০ ও ইন্ডিয়ান দালালকে ১০০। তবে দালাল না ধরে আপনি নিজেই ইমিগ্রেশনের কাজগুলি করতে পারেন।)
কলকাতার সবচেয়ে বড় মসজিদ (নাখোদা মসজিদ)
বনগাঁ স্টেশন থেকে ৯.৫০র ট্রেনে উঠলাম কলকাতার দমদমের উদ্দ্যেশে। এখানকার ট্রেনগুলি সব ইলেক্ট্রিকের সাহায্যে চলে। ১৫ রুপির ভাড়া মাঝে প্রায় ২০টি স্টেশন পার হয়ে ঘন্টা দেড়েক পরে পৌঁছলাম দমদম স্টেশন। সেখানে প্ল্যাটফর্ম বদলে মেট্রো স্টেশন এসে উঠলাম। এম জি রোডের টিকিট কাটলাম ১০ রুপি দিয়ে। ৫ থেকে ৬মিনিটে পৌছে গেলাম এম জি রোড।
হাওড়া ব্রীজ
মেট্রো থেকে বের হয়ে ৭ রুপির ভাড়ায় বাসে উঠলাম। বিখ্যাত হাওড়া ব্রীজ পার হয়ে এসে নামলাম হাওড়া স্টেশনে। আমার দেখা সবচেয়ে বড় স্টেশন এটি। ২৩টি প্ল্যাটফর্মে দৈনিক ৬৫০’র বেশি ট্রেন আর ১০লক্ষের বেশি মানুষ চলাচল করে এই স্টেশন দিয়ে। আমার ট্রেন ছিল বিকাল ৪.৫৫ মিনিটে। নাম ‘রাজধানী এক্সপ্রেস’। এই ট্রেনের থ্রী টায়ারের টিকিট আমি ঢাকা থেকেই দু’মাস আগে এক ট্রাভেল এজেন্সি থেকে কেটে এসেছিলাম। ২০৭০ রুপির টিকিট আমার কাছ থেকে নিয়েছিল ৩৪০০ টাকা।
ফেরত আসার সময় রাতে তোলা হাওড়া ষ্টেশন
নোট*(কলকাতায় ফেয়ারলি প্যালেস নামে একটি জায়গা আছে। যেখান থেকে ‘ফরেন কোটায়’ টিকিট কাটা যায়। এখানে ভিসাসহ পাসপোর্ট দেখাতে হয়। সাধারনত দু’একদিন আগেও ‘ফরেন কোটায়’ টিকিট পাওয়া যায়। ভারতে রেলের উপর এতো চাপ যে দেড় মাস আগে থেকে ‘জেনারেল কোটায়’ টিকিট পাওয়া যায় না।)
ট্রেন ছাড়তে যেহেতু দেরি আছে তাই ওয়েটিং রুমে গেলাম। দ্বোতলায় এসি রুম। যেখানে টয়লেট এবং গোসলের সুব্যাবস্থা আছে। লাগোয়া বারান্দা থেকে হুগলী নদী, হাওড়া ব্রীজ আর নদীর ওপারের কলকাতার অসাধারণ ভিউ আসে। সেখানে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে স্টেশনের মাটির নীচের পথ বেয়ে ফেরিঘাট এলাম। ৫ রুপির টিকিট কেটে বিবাদী বাগের ফেরিতে উঠলাম। যেখানে ফেরি থামলো সেটিই ‘ফেয়ারলি প্যালেস’ ভবন। এছাড়া এখানে ‘মিলেনিয়াম পার্ক’ নামে নদীর ধার দিয়ে খুব সুন্দর উদ্যান গড়ে তোলা হয়েছে। সেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে বিখ্যাত ‘ইডেন গার্ডেন’ স্টেডিয়ামে গেলাম। এতো বড়ো স্টেডিয়াম যে তার পাশে কতগুলি লোকাল রেল স্টেশন আছে। এরপর গেলাম নিউ মার্কেট। সেখানে কিছুক্ষণ ঘোরাফিরা করে ‘আরাফাত হোটেলে’ দুপুরের খাবার খেয়ে দেয়ে আবার রওনা দিলাম হাওড়া স্টেশনের উদেশ্যে।
ডিসপ্লে বোর্ড
ডিজিটাল বোর্ডে দেখলাম আমার ট্রেনটি ছাড়বে ৯নাম্বার প্ল্যাটফর্ম থেকে। অনেক লম্বা একটা ট্রেন। খুঁজে খুঁজে আমার নির্ধারিত বগিটি বের করলাম। দরজার পাশে সকল যাত্রীর নাম আর সিট নাম্বার সাঁটানো রয়েছে। আমার ৩১নং সিটটি খুঁজে পেলাম। থ্রী টায়ার মানে হচ্ছে পুরো এসি একটি বগি যেখানে মোট ৯টি ইউনিট রয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে একপাশে তিনটি তার মুখোমুখি তিনটি ও অন্যপাশে দু’টি শোবার ব্যবস্থা রয়েছে। অস্ত্রসহ গার্ড কুকুর দিয়ে পুরো ট্রেন চেক করালো। ট্রেন ঠিক ৪.৫৫তেই ছাড়লো, আর তারপর রেলের লোক এসে প্রতিটি যাত্রীর জন্য একটা বালিশ, দুটো চাদর আর একটা কম্বলের প্যাকেট এবং এক বোতল পানি দিয়ে গেল। ভেজ অথবা নন-ভেজ কোন যাত্রী কি খাবে তার অর্ডার নিয়ে গেল। প্রায় ১৫০০ কি.মি. দূরের দিল্লী যেতে ‘রাজধানী এক্সপ্রেসের’ ১৭ঘন্টা লাগার কথা। আমি মোট ৭বার খাবার পেয়েছিলাম, কারণ ঘন কুয়াশার কারণে ট্রেনটির প্রায় ২৩ঘন্টা সময় লেগেছিলো।রাতের খাওয়া শেষে শুয়ে পড়লাম। বড় জানালা দিয়ে মাঝে মাঝে বাইরের আলো দেখা যাচ্ছিলো। ট্রেনটির গতি ছিলো ঘন্টায় ১২০ কি.মি.।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। কিছুক্ষণ পর খাবার আসলো। ট্রেন তখন ঘন কুয়াশার কারণে ‘কানপুর স্টেশনে’ দাঁড়িয়ে আছে। এতো কুয়াশা আমি আমার জীবনে দেখিনি। ট্রেন থেকে নেমে কিছুক্ষণ স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকলাম। ইন্ডিয়ার স্টেশগুলি সত্যিই খুব বড়ো আর সুযোগ-সুবিধাসম্বলিত।
ঘন্টাখানেক পর ট্রেন ধীরে ধীরে চলা শুরু করলো। বড়ো জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকলাম। প্রকৃতি তখন রুক্ষ হওয়া শুরু করেছে।
ট্রেন থেকে দুপুরের খাবার দিলো। এবং তারপর পানমসলা, অর্থাৎ বকশিস দিতে হবে। সামানের ভদ্রলোকের দেখাদেখি আমিও ১০রুপির একটা নোট দিলাম। অবশেষে প্রায় ২৩ঘন্টা পর ‘রাজধানি এক্সপ্রেস’ ‘নিউ দিল্লী’ স্টেশনে পৌছাল। ট্রেন থেকে নামলাম। অচেনা ভাষার অপরিচিত দেশে সম্পূর্ণ একা আমি। এবার থাকার জন্য একটা হোটেল খুঁজে বের করতে হবে।
নিউ দিল্লী রেলস্টেশন
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:২৪