somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কম খরচে আবার ভারত পর্ব-১০ ( আধিক্য সিমলা-২)

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





আগের পর্ব
অন্য পর্বগুলো
পরের পর্ব
ঘন্টা দেড়েক পর অনেক খুঁজে খুঁজে সেতুদের খুঁজে বের করলাম। দেখি পঙ্কজদা চলে এসেছেন।তিনি আমাদের প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর ছোট ভাই রোহিতকেও নিয়ে এসেছেন। আর তারা সবাই মিলে এ ব্যাংক সে ব্যাংক ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখনো সেতুরা ডলার ভাঙ্গাতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত আরো প্রায় ঘন্টা খানেক পর লাঞ্চের টাইমে ডলার ভাঙ্গানো গেল। প্রথম যে ব্যাংককে যাওয়া হয়েছিল সেখান থেকেই ডলার ভাঙ্গানো হলো, মাঝখান থেকে কয়েকঘন্টা সময় নষ্ট। তারমানে এই নয় যে সিমলাতে ডলার ভাঙানোর জায়গার খুব অভাব, সমস্যা হচ্ছে কোন ব্যাংকের ডলারের রেটই সেতুদের পছন্দ হয়না।

এইসব কাজ করতে করতে দুপুর প্রায় দুটো বেজে গেছে।















এবার আমরা দুপুরের খাবার খেতে চললাম। আপার বাজারের দিকে জাঁকজমক একটা রেষ্টোরেন্ট।



ভেজ খাবারের অর্ডার দেয়া হলো। অনেকে ভেজ খাবার খেতে চায়না। কিন্তু সিমলার ভেজ খাবার আমার খুবই পছন্দ হয়েছে।
সেতু তার স্বভাব মতো এটা-ওটার অর্ডার দিয়েই চলেছে, আর আমরা সেগুলোর স্বদগতি করেই চলেছি। খাওয়া দাওয়ার ফাকে টুকটাক কথাবার্তা হচ্ছে।





সিমলার সবথেকে ভয়ঙ্কর বানরগুলো থাকে নাকি জাখু টেম্পলে যাবার জঙ্গলে। জাখু টেম্পল হচ্ছে বিরাট হনুমানের মূর্তিওয়ালা মন্দিরটি। এই মন্দিরটি সিমলা শহরের সবথেকে উঁচু পাহাড়ে অবস্থিত। আশেপাশের কয়েক মাইল দুর থেকে হনুমানের মূর্তিটি দেখা যায়। রাতে আবার আলো দিয়ে উজ্জ্বল করা হয়। তখন আরো দূর থেকে মূর্তিটি দেখা যায়।

তো মন্দিরে যাবার পথে জঙ্গলের বানরগুলিই নাকি উৎপাত করে। এরা নাকি দর্শনার্থীদের উপর হামলা করে পকেট আর ব্যাগ হাতড়ে জিনিসপত্র নিয়ে দৌড় দেয়। আকারেও এরা বিশাল সাইজ। আর এদের নখের সামান্য ছোয়া লাগলেই আধাঘন্টার ভিতরে নাকি ইঞ্জেকশন দিতে হয়। এক কোর্সে ৭টা ইঞ্জেকশন। পঙ্কজদার নাকি একবার এই কোর্স কমপ্লিট করতে হয়েছে। মন্দিরের পথে যাবার আগে নাকি ১০ রুপি দিয়ে লাঠি ভাড়া করতে হয় বানর খেদানোর জন্য।

ভরপেট খাওয়া শেষে ৫ জনের বিল এলো ৮৬০রুপি। যেহেতু আমরা পঙ্কজদা আর রোহিতকে খাওয়াচ্ছি এজন্য আমার ভাগে বিল এলো ২৯০রুপি। বেয়ারাকে বকশিষ দেবার এতো চেষ্টা করা হলো সে কিছুতেই সেটা নিলো না। রেষ্ট্ররেন্ট থেকে বের হয়ে আমরা এবার ম্যালের দিকে গেলাম।







সিমলা ম্যালের এই রাস্তাটির নিচেই রয়েছে বড় বড় পানির ট্যাঙ্ক। এখান থেকেই পুরো সিমলার পানি সরবরাহ করা হয়। এখানে পঙ্কজদার কিছু বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেল।



কিছুক্ষণ তাদের সাথে আড্ডা চললো। তারপর পঙ্কজদা কি একটা জরুরি কাজে ঘন্টা দুয়েকের জন্য চলে গেলেন।



রোহিত থাকলো আমাদের সাথে। সে আমাদের নিয়ে চললো লক্কার বাজার। লক্কার বাজার হচ্ছে কাঠের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রির বাজার। সেতু সেখানে কিছু দোকানদারদেরকে বিরক্ত করলো।



তারপর আমরা একটা ভবনের দোতালায় উঠলাম স্কেটিং দেখার জন্য। একটা বিশাল ঘরের মধ্যে ছেলেমেয়েরা স্কেটিং করছে। এটি রোহিতের খুব প্রিয় একটা জায়গা।



কিছুক্ষণ স্কেটিং দেখার পর সেতুর আবার পিপাসা পেয়ে গেল। নিচে নেমে নিয়ন একটা ঠান্ডা কিনলো। সুন্দর একটা ভিউ পয়ন্টে দাঁড়িয়ে বোতল খালি করার পর আমরা আবার ম্যালে ফেরত এলাম।



এবার আমরা টাউন হল ভবনের সামনে বসলাম। সবাই মিলে মেয়ে দেখা শুরু হলো। ততোক্ষণে বিকাল হয়ে গেছে। হাজার হাজার ছেলেমেয়ে আসছে ম্যালে বেড়াতে। সবাই খুব সুন্দর, স্মার্ট আর পরিপাটি পোশাকের। জোড়ায় জোড়ায় অথবা কতগুলি বন্ধু-বান্ধব একজোট হয়ে আসছে।



কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে এই মিলনক্ষেত্রটি কেমন যেন প্রাণহীন। এরা খুব আস্তে আস্তে নিজেদের মধ্যে টুকতাক কথাবার্তা বলছে। কোথাও কোন হইচই নেই। ব্যাপারটা জানি কেমন যেন! যদিও আমি ধূমপান পছন্দ করি না তবুও আমার মনে হয়েছে এই বয়সী ছেলেমেয়েরা সিগারেট খাবে, সবাই মিলে চিৎকার করবে, হাসাহাসি করবে, গল্প করবে, গিটার বাজিয়ে গান করবে, হল্লা করবে তবেই না তারুণ্য! কিন্তু এখানে এসে আমার মনে হচ্ছে আমরা বুঝি কোন চিত্রকলা প্রদর্শনীতে এসেছি যেখানে কোন রকম শব্দ করা নিষিদ্ধ।











এতো লোকের মাঝে আমি, নিয়ন আর সেতু এই তিনজনই উচ্চস্বরে গল্প করে যাচ্ছি। আমাদের মাঝে রোহিত খুব আস্তে আস্তে কথা বলছে। ভারতের লোকেরা নাকি সাধারণত অপরিচিত লোকের সাথে আলাপ করে না। কিন্তু রোহিত অথবা পঙ্কজদার সাথে আমাদের কতো ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে। তবে রোহিতকে আমি হাজার চেষ্টা করেও বোঝাতে পারিনি যে সেতু আর নিয়নের সাথে আমার মাত্র দুদিন ধরে পরিচয়। সে ভেবেছে আমরা বুঝি সম্পর্কে কাজিন হই। আমাদের দেশের লোকেরা যে খুব দ্রুত বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলতে পারে তা রোহিতের কাছে বিস্ময়কর। তবে এখানকার মেয়েরা অনেক স্মার্ট আর স্বাধীনচেতা। কোন ছেলে অপরিচিত মেয়ের সাথে সহজেই কথা বলতে পারে। কিন্তু সেটি হতে হবে খুব মাপা ভদ্রতায়।

সবচেয়ে মজা পেয়েছি কলকাতার ট্যুরিস্টদের দেখে। খুবই সস্তা ধরণের ফ্যাশান। কে কে কলকাতার ট্যুরিস্ট আমাকে তা বলতে দেখে রোহিত খুবই অবাক হয়েছিল। তাকে বুঝিয়েছিলাম যে কলকাতার লোকেরা মাঙ্কি টুপি পড়ে বলে খুব সহজেই এদের আলাদা করে চেনা যায়। আর কাছে গেলেই দেখা যায় এরা একজন আরেকজনকে অদ্ভুত বাংলা উচ্চারণে জ্ঞান দান করছে।








ঘন্টা খানেক পর পঙ্কজদা এলেন। তার সাথে আবার টুকটাক হাঁটাহাঁটি শুরু করলাম। এসময় পঙ্কজদার কাছে ফোন এলো। আলাপে যা বুঝলাম ফোন করেছে তার বোন, মানে আমাদের প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। সে বাস থেকে নেমেছে এবং এখন এদিকেই আসছে। আমি পুরোপুরি নিশ্চিত তার এ আসাটা সম্পূর্ণ সেতুর জন্যই। পঙ্কজদাও মনে হয় ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন। কারণ তিনি দেখি প্রিয়াঙ্কাকে এদিকে আসতে নিষেধ করছেন। আমি একটা জিনিস বুঝিনা, সেতুর চাইতে নিয়ন দেখতে অনেক সুন্দর, অনেক স্মার্ট আর ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন। তবু সেতু বলতে সবাই একেবারে পাগল।

যাই হোক, ফোনের ব্যাপারটি সেতু বা নিয়ন কেউই খেয়াল করেনি। তারা তখন চা-ওয়ালা অথবা ফটোগ্রাফারওয়ালাদের নিয়ে ব্যাস্ত। ফটোগ্রাফারওয়ালা হচ্ছে ক্যামেরা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো কিছু লোকজন যারা ম্যালে বেড়াতে আসা ট্যুরিস্টদের খুব সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে ওয়াশ করে দিচ্ছে কিছু রুপির বিনিময়ে।

কিছুক্ষণ পর আমি পুরোপুরি অস্থির হয়ে গেলাম। সেতু আর নিয়নের পাল্লায় পড়ে সেই সকাল থেকে এই সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরোটা সময় এই ম্যালের আশেপাশেই রয়েছি। আর কোথো ঘোরা হয়নি। আমার ঘোরাঘুরির একটা বিশেষত্ব আছে। কোথাও বেড়াতে গেলে সবাই যেমন গাড়ি ভাড়া করে সাইট সিয়িং করে আমি তেমন করি না। কারণ আমি দেখেছি জ্ঞাড়িতে করে সাইট সিয়িং করার চেয়ে পায়ে হেঁটে অথবা লোকাল ট্রান্সপোর্টে ঘুরে বেড়ানো অনেক মজার।

কিন্তু সেতু আর নিয়নের পাল্লায় পড়ে আমার কিছুই দেখা হয়নি। এরা এমন ধ্যাতলা যে শীতের কাপড় ছাড়া সিমলায় এসেছে, সকাল থেকে শুনছি শীতের পোশাক কিনবে। এখন সন্ধ্যা, ঠান্ডায় কাঁপছে অথচ এখনো শীতপোশাক কেনার সময় করে উঠতে পারেনি। সেতু তো আমার কাছ থেকে একটা জ্যাকেট ধার নিয়েছে কিন্তু নিয়ন ঠান্ডায় মাঝে মাঝে হি হি করছে।

ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চললাম লোকাল বাস স্ট্যান্ডের দিকে। যাবার সময় কতগুলি স্কুল আর চার্চের ছবি তুললাম।






লোয়ার বাজারের কাছেই হচ্ছে সিমলা ওল্ড বাস স্ট্যান্ড। এখান থেকে বিভিন্ন দিকের বাস ছেড়ে যাচ্ছে। এই বাস স্ট্যান্ডটি রেল স্টেশনের সাথে লাগোয়া। এখান থেকে নিউ বাস স্ট্যান্ড গামী বাসে উঠলাম।



সবাই ওঠার পর কন্টাকটার বাসের দরজা আটকিয়ে বাঁশি বাজালো আর তারপর ড্রাইভার বাস চালানো শুরু করলো। মাঝপথে যখন কোন যাত্রীর ওঠা বা নামার প্রয়োজন হচ্ছে তখন কন্ট্রাকটার বাঁশি বাজিয়ে বাস থামাচ্ছে। যাত্রীরা নেমে বা উঠে নিজ দায়িত্বে দরজা বন্ধ করছে। কোথাও কোন হৈ হল্লা বা গালাগাল বা বাস থাবড়ানো নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৪১
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×