পদের নামঃ স্বাস্থ্য কর্মী, সুপারভাইজার, থানা সমন্বয়কারী
বেতনঃ ৯০০০ টাকা, ১২০০০ টাকা, ১৫০০০ টাকা
--------------------------------------------------------------------------
(১)
আমিঃ আপনার নাম ?
প্রার্থী ঃ লায়লা আক্তার
আমিঃ পড়াশুনা কতদুর করেছেন ?
প্রার্থী ঃ স্যার আমি ডিগ্রী থার্ড ইয়ার
আমিঃ আগের কোন অভিজ্ঞতা আছে ?
আছে স্যার, ওয়ার্ল্ড ভিশনের একটা প্রজক্টে মাঠ কর্মী হিসাবে কাজ করেছি ৯ মাস।
আমিঃ চাকরীটা কি দরকার না শখ ? চাকরি হলে ত পড়াশুনা করতে পারবেন না? সেক্ষেত্রে চাকরী হলে কি করবেন ?
প্রার্থী ঃ স্যার চাকরী হলে পড়াশুনা ছেড়ে দেব। আর চাকরিটা খুব দরকার স্যার।
আমিঃ আপনি কি বিবাহিত ? আপনার বাসায় কে কে আছেন ?
প্রার্থী ঃ না স্যার অবিবাহিত। আমরা ৬ ভাইবোন, আমি সবার বড়। বাবা ভ্যান চালক। আমার পরের বোনটা ইন্টার পাশ করেছে এই বছর। তার পরের ভাইটা ইন্টারমেডিয়েট ফার্স্ট ইয়ার। তারপরের তিনজন স্কুলে পড়ে।
আমিঃ বলেন কি ! আপনার বাবা ভ্যান চালিয়ে আপনাদের সবাইকে কিভাবে পড়াশুনা করাচ্ছে !!?
প্রার্থী ঃ স্যার বাবা তো আর খরচ দিতে পারেনা, আমরা ভাইবোনেরা পড়াশুনার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজ করি। সেলাই এর কাজ, অন্যের বাচ্চা দের পড়াই, বাজারে শাক সব্জী বিক্রি করি গ্রামে, আরও বিভিন্ন প্রকার কাজ। কষ্ট হয় অনেক, তারপরেও আমরা সবাই পড়াশুনা করে মানুষ হতে চাই। সবাই ভালো ভালো চাকরি বাকরি করব। বাবা আর আগের মত নাই, অসুস্থ থাকে অনেক। এজন্যই চাকরি দরকার। আমার যদি এই চাকরিটা হয় তাহলে ছোট ভাই বোনগুলোর পড়াশুনা করাতে পারব। (মাথা নীচু করে এভাবেই বলে গেল লায়লা, মাথা ওঠাতেই ছল ছল একজোড়া দূঃখী চোখ অনেক কষ্ট করে পানি আটকে রাখছে)
আমিঃ ঠিক আছে যান, সোমবার এসে অফিসের বাইরে নোটিশ বোর্ড থেকে রেজাল্ট জেনে যাবেন।
(২)
আমিঃ কি নাম ? আপনার তো অনেক বয়স , এই পদে কেন আবেদন করেছেন ? আর আপনার বাড়িতো অনেক দূর, এখানে চাকরী হলে করতে পারবেন ?
প্রার্থী ঃ স্যার যত কষ্টের কাজ হোক আমি পারব। এখন যেখানে কাজ করি সেখানে তো অনেক পরিশ্রম, কিন্তু আমার সমস্যা হচ্ছে না। আর দূর হলেও সমস্যা নাই, আমি পারব।
আমিঃ আপনার পরিবারে কে কে আছেন ? আপনার স্বামী কি করেন ?
প্রার্থী ঃ আমার এক ছেলে আর এক মেয়ে। আমার স্বামী মারা গেছে ৭ বছর হল। আমি একাই দু সন্তান কে নিয়ে থাকি।
আমিঃ আপনার সন্তান দের বয়স কত ? কি করে ? এখন যেখানে কাজ করেন সেখানে বেতন কত ?
প্রার্থী ঃ ছেলেটা ক্লাস সেভেন এ পড়ে খুলনা জিলা স্কুলে আর মেয়েটা করোনেশন স্কুলে ক্লাস ফোর এ পড়ে। যেখানে কাজ করি বেতন ৭ হাজার টাকা। এখানে ৯০০০ দেখে আবেদন করেছি।
ঠিক আছে আপনি আসুন। সোমবার এসে অফিসের বাইরে নোটিশ বোর্ড থেকে রেজাল্ট জেনে যাবেন।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
উপরের ঘটনা দুটি কোন বানোয়াট গল্প নয়। গত দুই দিন ধরে একটি এনজিওর ইন্টারভিঊ বোর্ডে থেক ৭৮ জনের নিয়োগ দিতে হল। ৩০০ আবেদনকারীর ভেতর থেকে ৭৮ জন কে বেছে দিলাম। কিছু কিছু আবেদন কারীর বিস্তারিত শুনলে চোখের পানি ধরে রাখা কঠিন, কেউ আছে দক্ষিঞ্ছলের আইলা আক্রান্ত এলাকা থেকে এসেছে-যাদের পরিবার এখনও ওয়াপদা'র বেড়ি বাধের উপরে পলিথিন টাঙ্গিয়ে থাকে। উপরের দুজন সহ অন্য যাদের কে সিলেক্ট করলাম তারা প্রায় সবাই দরিদ্র পরবিবার থেকে আসা সংগ্রামী মানুষ যারা শত প্রতিবন্ধকাতা স্বত্তেয় ছেড়ে দেয়নি পড়াশুনা, যারা কঠিন বাস্তবতা কে চ্যালেঞ্জ করেছে দৃঢ় ভাবে, অভাবের সাথে পাঞ্জা লড়ে এগিয়ে যাচ্ছে সামনে বীরের বেশে। এই মানুষগুলো কে চাকরী নিশ্চিত করে যে আনন্দ পেলাম তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। মনে হল যেন এক মহতী কর্ম সাধন করলাম। কদিন ধরে মনটা খারাপ ছিল, কিন্তু এখন বেশ ভাল বোধ করছি। গতকাল কনকনে ঠান্ডায়ও সারারাত জেগে অফিসের অন্ধকার ছাদের অজস্র তারা ভরা আকশের নীচে বসে ভাবতে থাকলাম দুদিনের ইণ্টারভিউ এর কথা, এক পবিত্রতায় ভরে গেল মন এই সব দরিদ্র খেটে খাওয়া হাল না ছাড়া মানুষগুলোকে সাহায্য করতে পেরে। মনের গভীর থেকে সৃস্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানালাম আমাকে এই সূযোগ দেবার জন্য আর বহু মানুষের থেকে আমাকে ভাল অবস্থানে এবং সুস্থ ভাবে রাখার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





