সকালে ৯:৫০ এ মেকানিক্যাল ক্লাস।।
বাসা থেকে
কমপক্ষে ২:৩০ ঘন্টার পথ।।অর্থ্যাৎ ক্লাস
ধরতে
হলে সাড়ে সাতটার মধ্যে বেরুতে হবে।।
ঘড়িতে
যখন সাড়ে সাতটা বাজে তখনও আমি
গভীর ঘুমে।।
সকালে যতই গুরত্বপূর্ণ ক্লাস থাকুক না
কেনো ঘুম
ভাঙতে চায় না।অথচ ভোরে যদি খেলা
থাকে
তবে এলার্ম ঘড়ির প্রয়োজন ও পড়ে না।।
ঘুম
আপনাতেই ভাঙে।।আজ যখন ঘুম ভাঙলো
তখন
সাড়ে আটটার উপরে বাজে।।অর্থ্যাৎ
ক্লাস করার
আর ইচ্ছা নাই।।ক্যাম্পাস যাবো ল্যাব
করতে।।আজ
ল্যাব রিপোর্ট জমা দেয়ার শেষ দিন অথচ
দুইটা ল্যাব
রিপোর্ট এখনও শেষ হয়নি।।হলে থাকলে
হয়তো শেষ হয়ে যেতো।।কিন্তু
বৃহঃপতিবার
শুক্র আর শনিবার বাসায় থাকি।।আর
রবিবার হলের পথে
রওনা দিই।ভার্সিটির প্রথম দিকে সকাল
সাড়ে ছয় এর
দিকে রওনা দিতাম।কিন্তু এখন আগ্রহ
কমে গেছে।
আজ রওনা দিলাম সাড়ে দশটার দিকে।।
ব্যাগ পত্র
গুছিয়ে সে এক বিশাল বোঝা।।বাসায়
খোজা খুজি
করে কোনো ভাঙতি টাকা পাওয়া
যায়নি।।বাবা সব ভাঙতি
টাকা নিয়ে অফিস যায়।।আর মায়ের
কাছে টাকা চাইলে
তার এক ই কথা "রাতে বাবাকে বলে
নিলি না কেন?
আমার কাছে নাই"।তাই রিকশায় উঠার
আগে টাকা
ভাঙানোর ব্যাপারটা রিকশাওয়ালাকে
বলা লাগবে।।কিন্তু
একটাও রিকশা পাওয়া গেলো না।।
রিকশার বদলি দেখা পাওয়া গেলো
পাশের
কলোনীর এক ভাইকে।।সেও টাকশাল
ছেড়ে
ঢাকায় যাচ্ছে।এই রবিবার আসলেই আমার
মতো
অনেকেই এই টাকশাল ছেড়ে তাদের
ভার্সিটির হল
আর মেসের পথে রওনা দেয়।।আজ বোধহয়
কোনো রিকশা খালি পাওয়া যাবে না।
তাই শিমূলতলি
পর্যন্ত হেটেই যেতে হবে।।অগ্রহায়নের
মাঝের দিকে মাস অথচ এই বেলাতেএ
ভালো
ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে।রোদ আজ ভালোই
প্রখর।।
কিন্তু এই ঠান্ডা আবহাওয়ায় বেশ মিষ্টি
লাগছে
রোদটা।।তাই হাটতেও বেশ মজা
লাগছে।।
টাকশালের গেট পেড়িয়ে শিমুলতলীর
রাস্তায় খানিক
হাটার পরই আমার চোখ কপালে।।হঠাৎ
যেনো
পুরো পরিবেশ বদলে গেলো।।কোনো
পুরনো একটি দিনের এক ঝলক চোখের
সামনে
যেনো অল্প সময়ের জন্যে ভেসে উঠলো।।
সমস্ত হৃদস্পন্দন যেনো ভিন্ন স্পন্দনে
স্পন্দিত
হতে থাকলো।।একটি হুড তোলা রিকশায়
কোনো
এক পরিচিত মানুষ।।সুন্দর মিষ্টি একখানা
মুখ,যাতে সুষ্পষ্ট
কয়েকটা তিল।।মুখের সাথে তিলগুলো
খুবই
সামঞ্জস্যপূর্ণ।যেই সামঞ্জস্যতা আমাকে
পুরো
কলেজ জীবনে বখাটেদের মতো
ভবঘুরে বানিয়ে দিয়েছিলো।।যে তিল
গুলো
দেখার জন্যে প্রতিটি দিন ঘন্টার পর
ঘন্টা আমি
দাড়িয়ে থাকতাম একটি দোকানের
সামনে।।পুরো
চারটি বছর এই তিল আমাকে অনেক
ভাবিয়েছে।।
কিন্তু মজার ব্যাপার এই মেয়েটি তার
কিছুই জানেনা।
তার চাইতে মজার ব্যাপার মেয়েটির
নাম পর্যন্ত আমি
আজও জানি না।মেয়েটাকে আজ
দেখলাম প্রায়
ছ'মাস পর।।এ কয়েক মাস ভালোই ছিলাম।
আজ মেয়েটি আমাকে আবার সাহিত্যিক
বানিয়ে
দিলো।।আমি জানতাম মেয়েটির হাত
বাধা।।কিন্তু তবুও
আমি তার কোমল মুখের দিকে তাকিয়ে
থাকতাম,তার
ঘন লালচে কালো কাকড়া দিয়ে বাধা চুল
দেখতাম।।ছাতা হাতে
রোদের মধ্য তার হাটা আর চলন দেখতাম।।
তার চোখ গুলির
দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যেতে
চাইতাম।।আমাদের
মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের
প্রেম
হয়তো শুধু কল্পনাতেই আসে।।তাদের
বাস্তবে
পছন্দের মানুষের সামনা সামনি হওয়া
নিষেধ।।দূর
থেকে মানুষটিকে দেখতে হয় আর
কল্পনাতে
ঘুরে বেড়াতে হয়।তাকে নিয়ে অনেক
ঘুরেছিলাম।।কিন্তু ক্লান্ত হয়ে হাতটা
ছেড়ে
দিয়েছিলাম তার।কিন্তু আজ আবার সে
হাত বাড়িয়ে
ডাকছে,কল্পনাতে।।সাড়া দেয়া উচিৎ
কিনা জানি না।।
কিন্তু ভাবি,বাস্তবে সে কি কিছু
জানে??চারটা বছরে
কি সে কিছুই বুঝতে পারে নি??পারলে
হয়তো
একটু আগ্রহ নিয়ে তাকাতো,যতই তার হাত
বাধা থাক।।
কিন্তু সে এমন ভাবে রিকশায়
ছিলো,যেনো সে
রানী আর বাকীরা সব প্রজা।আমাকেও
সে অতি
সাধারনের মধ্য ফেলেছে তা বুঝতে কষ্ট
না
হলেও মেনে নিতে একটু কষ্ট লাগলো।
পরের শিমুলতলি থেকে ভার্সিটির
যাত্রাটা প্রতি
রবিবারের মতো সুন্দর হলো না।।
ভার্সিটির কাজ
তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো।।
সোমবারের
ক্লাসের রুটিন দেখে বাসায় যাবো ঠিক
করলাম।।
আজ ল্যাব রিপোর্ট লিখতে গিয়ে আমার
আর
আদিবের দুপুরের খাওয়াটা হয়নি।।তাই
দুজনে
ক্যাম্পাসের বাইরে একটা ভাতের
হোটেলে
খেতে গেলাম।।সাড়ে চারটার মতো তখন
সময়।।
আমরা যে হোটেলে খাই তার নামটা বেশ
সুন্দর
এবং নামটা শুনলেই বেশ বোঝা যায় যে
এটা একটা
খাবার জায়গা।দোকানের নাম রাধুনী।।
সপ্তাহের ৫
দিন হলে থাকি।।তার প্রতি দুপুরেই
আমি,আদিব আর
দিপ্ত ভাত খাই সেখানে।ভাতের সাথে
আমাদের
জাতীয় খাবার হিসেবে মুরগি থাকে।।
কিন্তু আজ
আমরা গরুর গোশত নিলাম।দিপ্ত দুপুরেই
খেয়ে
নিয়েছে,তাই এখন সে মোবাইলে গান
শুনছে
আবার মুখ নেড়ে নেড়ে গান গাচ্ছে।
আবার মাঝে মাঝে আমার খাবার
খাওয়ার কৌশল দেখছে।।সে এটা দেখে
খুব মজা
পায় বোধহয়।।খাওয়া শেষে ওরা হলের
দিকে রওনা
দিলো আর আমি বাসে উঠলাম।সেখান
থেকে
নবীনগর আর নবীনগর থেকে শিমুলতলির
বাসে
করে বাসার দিকে আবার রওনা দিলাম।।
আমার অতি
পছন্দের একটা
কাজ একা একা বাসে দীর্ঘ ভ্রমন করা।।
বাসের
পিছনের দিকের সীটে বসে কানে ইয়ার
ফোন
দিয়ে গান শোনা আর প্রকৃতি দেখা।।
জানালার একটু
ফাক করে দিই।।তাতে ফুরফুরা বাতাস
মুখে লাগে।।মন
হারিয়ে যায় তাতে।আজ গান শুনতে
শুনতে শুধু ওই
মেয়েটির কথা মনে পড়ছিলো।।সারাপথ
কেমন
জানি মন খারাপ করেই কাটলো।।
বাসায় পৌছেই মাকে বললাম গরম পানি
করে দিতে।।
গোসল করে বেশ সতেজ আর চাঙ্গা
লাগতে
লাগলো শরীর।।ক্ষুধা লেগেছিলো খুব।।
রান্না
ঘরে ঢুক দেখি বোন মুখে হলুদ,নিম মেখে
ভুতের মতো সেজে নুডুলস বানাচ্ছে।।নুডুল
স
এর বাটি হাতেই লিখতে শুরু করলাম একটা
রবিবারের
জীবন।।কি সাধারণই না জীবনটা!কিন্তু
এই সাধারণের মাঝে কি বিচিত্র গোলক
ধাঁধাই না থাকে।