somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কি ঘটবে পার্বত্য ভূমি কমিশন আইন সংশোধন প্রস্তাব কার্যকর হলে?

০২ রা জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রবল বিরোধীতা সত্বেও গত ২৭ মে, ২০১৩ কেবিনেটে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক মিটিংয়ে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১’-এর ৬টি ধারা সংশোধনের খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। ফলে ভূমির মালিকানা হারিয়ে উদ্বাস্তু হতে যাচ্ছে পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত লাখ লাখ বাঙালি পরিবার। কেননা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালিদের উচ্ছেদ করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ভূমি কমিশন আইনের এ সংশোধনী আদায় করেছে জেএসএস। এই সংশোধনী কার্যকর হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালিদের জীবনে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তা কল্পনারও অতীত। এর ফলে পার্বত্য ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন হয়ে পড়বে সন্তু লারমার ইচ্ছা বাস্তবায়নের হাতিয়ার। সরকারের দেয়া ভূমি বন্দোবস্ত ও মালিকানা অবৈধ বলে তা বাতিল করার ক্ষমতাও রয়েছে এ কমিশনের। তাছাড়া যেহেতু এ কমিশন কোন ভুল সিদ্ধান্ত দিলেও তার বিরুদ্ধে অন্য কোন আদালতে আপিল করা যাবে না, তাই এর মাধ্যমে বাংলাদেশের এক দশমাংশ আয়তনের পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমির উপর সন্তু লারমার একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। আর পার্বত্যাঞ্চলে বাঙালিদের অস্তিত্বে বিশ্বাসহীন সন্তু লারমার রাজত্বে বাঙালিরা তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ হবে। ধারণা করা হচ্ছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালিদের উচ্ছেদের ব্যাপারে এতদিন যে ‘অলিখিত চুক্তি’র কথা বলা হচ্ছিল ভূমি কমিশন আইনের এ সংশোধনীর মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব এখন সন্তু লারমার হাতেই তুলে দিতে যাচ্ছে সরকার।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)’র সাথে এক চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে জেএসএস নেতা সন্তু লারমাকে বারবার জোর দিয়ে বলতে শোনা গেছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালিদের সরিয়ে নিয়ে সমতলে পুনর্বাসন করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে তাদের এক ‘অলিখিত চুক্তি’ আছে। সে চুক্তি অনুযায়ী বাঙালিদের উচ্ছেদের ব্যাপারে জেএসএস-এর পক্ষ থেকে নানা সময় সরকারকে চাপ দেওয়া হয়েছে। এমনকি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল যে, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাঙালি মুক্ত করতে আর্থিক বা অন্য যত প্রকার সহায়তা লাগে তা তারা দিতে প্রস্তুত। শুধু তাই নয় ফেনী, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন উপকূলীয় জেলার চরাঞ্চলে (ঘূর্ণিঝর ও জলোচ্ছ্বাসে যেসব এলাকা ১০ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত পানির নিচে তলিয়ে যায়) পার্বত্য বাঙালিদের পুনর্বাসনের জন্যও তাদের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। যদিও জনরোষের ভয়ে আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার এ বিষয়টি কখনো স্বীকার করেনি। তাই তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালিদের উচ্ছেদের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপও এতোদিন গ্রহণ করেনি। আওয়ামী লীগ সরকার এটা স্বীকার না করলেও জেএসএস তার অবস্থানে শুরু থেকেই অনড় রয়েছে এবং ক্রমাগত তারা এ ব্যাপারে সরকারকে চাপ দিয়ে এসেছে। শুধু তাই নয়, সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে যাতে বাঙালিদের উচ্ছেদ করা যায় তার যাবতীয় আয়োজনও কৌশলে সরকারের কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছে। ভূমি কমিশনের আইন সংশোধন তারই একটি অংশ।
আইনের সংশোধন : গত ২৭ মে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভায় পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের সংশোধনী অনুমোদন সম্পর্কে বৈঠক শেষে মন্ত্রী পরিষদ সচিব এম মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া’র বক্তব্যেও বরাত দিয়ে পরের দিন বিভিন্ন পত্রিকায় যে সংবাদ ছাপা হয়েছে তার উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, “পার্বত্য চট্টগ্রামে অবৈধ দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি শান্তিচুক্তির আলোকে শরণার্থীদের পুনর্বাসনে ব্যবহৃত হবে। এ ব্যাপারে মন্ত্রিসভায় নীতিগতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিরসন কমিশন (সংশোধনী) আইন-২০১৩-এর খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। কমিশনকে আরো সক্রিয় এবং কার্যকর করার লক্ষ্যে এ আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।
মন্ত্রিসভা মনে করে, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিরসন কমিশন আইন সংশোধনের পর এটি সক্রিয় ও কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্ষম হবে। এ খসড়া আইনে বলা আছে, কমিশনের সদস্যসচিব পদে একজন উপজাতীয় অথবা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোককে নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের একজন সার্কেল প্রধান কমিশনের সদস্য হিসেবে বৈঠকে উপস্থিত হতে না পারলে তিনি একজন প্রতিনিধি পাঠাতে পারবেন। তবে যেকোনো বিষয়ের আলোচনায় সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্য ওই প্রতিনিধিকে পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্ব দেয়া হবে।
বর্তমান আইনে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে কমিশনের সর্বসম্মতির প্রয়োজন হয় বা চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে ধরা হয়। আইন সংশোধন হলে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিতে কমিশনের সর্বসম্মতি বা চেয়ারম্যানসহ সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন প্রয়োজন হবে। কমিশনের পাঁচ সদস্যর মধ্যে চেয়ারম্যানসহ তিনজনের সিদ্ধান্ত এক হলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। সংশোধিত আইনের খসড়ায় কমিশনে কর্মচারী নিয়োগের েেত্র পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী ুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রচলিত আইনে কোনো বৈধ মালিকের ভূমি বলতে শুধু জমি বোঝানো হলেও সংশোধিত আইনে ভূমি বলতে জমি ও জলাভূমিও বোঝানো হবে।”
ভূমি কমিশন : ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি ল্যান্ড কমিশন গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়। সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ‘ঘ’ খণ্ডের ৪, ৫ ও ৬ ধারা মতে একজন অবসর প্রাপ্ত বিচারপতিকে চেয়ারম্যান করে ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠন করে। চেয়ারম্যান সহ পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিশনের সদস্য সচিব চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার অথবা অতিরিক্ত কমিশনার (সংশোধনীর ফলে তিন পার্বত্য জেলায় বসবাসরত উপজাতীয়দের মধ্য থেকে এ পদে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে)। এছাড়া কমিশনের অপর তিনজন সদস্য হিসেবে আছেন যথাক্রমে সংশ্লিষ্ট সার্কেল চিফ (অবশ্যই উপজাতীয়), আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান অথবা প্রতিনিধি (অবশ্যই উপজাতীয়) এবং সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান (অবশ্যই উপজাতীয়)। অর্থাৎ পাঁচ জনের কমিশনে ৪ জনই হবেন উপজাতীয়দের মধ্য থেকে। আর যেকোন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে এ কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। উপজাতীয় ৪ জনের মধ্যে অন্তত ৩ জন একমত হওয়াটা কোন ব্যাপার নয়। কারণ তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য একই। তাই অধিকাংশের মতামতকে উপেক্ষা করা চেয়ারম্যানের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়বে। সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় প্রেসিডেন্ট যেমন রাবার স্ট্যাম্পের মত ভূমিকা পালন করেন, আইন সংশোধনের ফলে এই অসম কমিশনে চেয়ারম্যানের ভূমিকাও হবে অনেকটাই তদ্রুপ। সংসদে আইন প্রণেতারা যে বিষয়ে একমত হন, প্রেসিডেন্ট তা সত্যায়ন করেন মাত্র। ভূমি কমিশনের ক্ষেত্রেও তাই হতে যাচ্ছে। তারপরেও সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় আস্থা রাখা যায়, কারণ আইন প্রণেতাগণ জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি। তাই জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহিতার বিষয়টি তাদের মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত দিতে হয়। কিন্তু পার্বত্য ভূমি কমিশনের যারা সদস্য তারা কেউ জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন। তাছাড়া তাদের অনেকেই বাঙালি বিদ্বেষী। তাই তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ভূমিহীন করে বাঙালিদের উচ্ছেদ করতে এই কমিশনকে ব্যবহার করবে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।

ঘোর আপত্তি জানিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় বলেছিল, এই সংশোধনী আনা হলে পুনর্বাসিত শরণার্থী ছাড়াও এ অঞ্চলে বসবাসরত অন্যান্য জনসাধারণ এবং এ অঞ্চলের সকল বন্দোবস্ত ও অন্যান্য ভূমি বিরোধের বিষয় এ কমিশনের আওতায় চলে আসবে। এতে একদিকে চুক্তির ধারাবাহিকতায় কমিশন গঠনের মূল স্পিরিট ব্যাহত হবে এবং অপরদিকে পার্বত্য জেলাসমূহে স্থাপিত দায়রা আদালতের কার্যপরিধি খর্ব হতে পারে।
কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। বিষয়টি এখানেই শেষ নয়, এ প্রস্তাবে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন ও রীতি অনুযায়ী’ বিরোধ মীমাংসার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন ও রীতি’ বলতে আসলে কি বোঝায় তার ব্যাখ্যা কি সরকারের কাছে আছে? আমরা আসলে জানি না, তাছাড়া সরকারের কাছে এর ব্যাখ্যা থাকার কথাও না। কারণ এখানে অবৈধ বন্দোবস্ত জমির প্রসঙ্গ এসেছে। এর অর্থ হলো সরকার অবৈধভাবে কাউকে না কাউকে জমি বন্দোবস্ত দিয়েছে! অথচ রাষ্ট্রসীমার মধ্যকার সমস্ত ভূমির মালিকানা রাষ্ট্রের। তাছাড়া রাষ্ট্রীয় আইনেই বৈধ কিংবা অবৈধতা নির্ধারিত হয়। কিন্তু এখানে দেখছি সরকারের কর্মকাণ্ডকে অবৈধ বলে ঘোষণা করারও বিধান আছে! কিন্তু সেই বিধানটি আসলে কি, এর প্রয়োগকারীই-বা কারা? যতদূর জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন ও রীতি বলতে অনেক উপজাতীয় নেতৃবৃন্দ ভূমির মৌখিক মালিকানাকেই বুঝিয়ে থাকেন। কিন্তু একুশ শতকের এই আধুনিক যুগে এসে সরকারি বন্দোবস্তকে অবৈধ বলা এবং মৌখিক মালিকানাকে বৈধ বলাটা মূর্খতার পরিচয় নয় কি? যাই হোক এ সংশোধনী কার্যকর হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের যে কোন জমির মালিকানা দলিল অবৈধ হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ভূমির মালিকানা কেড়ে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালিদের উচ্ছেদ করার জন্যই যে এ সংশোধনীটি আনা হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এমনকি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তথা অফিস-আদালত, কর্ণফুলী পেপার মিল, কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা সহ অন্যান্য শিল্প কারখানা ও বিভিন্ন স্থানের অবস্থিত সেনা, বিজিবি, পুলিশ ক্যাম্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমিও যদি হাত ছাড়া হয়ে যায় তাহলেও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কিছুই করার থাকবে না।
তবে সরকার ইতিপূর্বে নিজের দেয়া বন্দোবস্তকে অবৈধ বলে স্বীকার করে নেয়ায় সব চেয়ে মারাত্মক যে পরিণতিটা হলো তা হচ্ছে, ইতিপূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে সরকারের সকল কর্মকাণ্ডকেই ক্রমান্বয়ে অবৈধ বলার পথ তৈরি হলো। যা পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে সরকারের নৈতিক অবস্থানকেই দুর্বল করে দিয়েছে। তাই এভাবে আইন সংশোধন হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকারের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে এবং সরকারের সাংবিধানিক এখতিয়ারও ক্ষুণ্ন হতে পারে।
বাঙালিদের ভূমি এবং ভোটাধিকার হরণ : পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের ৪নং ধারার ২নং উপ-ধারায় বলা হয়েছে, ‘চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যগণ জনসাধারণ কর্তৃক প্রত্যক্ষভাবে এই আইন ও বিধি অনুযায়ী নির্বাচিত হইবেন।’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ভোটার তালিকা প্রয়োজন। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে সুষ্ঠু ভোটার তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে যাতে জটিলতা সৃষ্টি করা যায়, সম্ভবত সেই উদ্দেশ্যই পার্বত্য চুক্তির ‘খ’ খণ্ডের ৯নং ধারার ৪নং উপ-ধারায় কোন ব্যক্তির ভোটার হওয়ার ব্যাপারে একটি বিতর্কিত এবং সংবিধান পরিপন্থী শর্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ওই উপ-ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি তিনি পার্বত্য জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হন।’ যা পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে জেলা পরিষদ আইনসমূহ সংশোধন করে ১৭নং ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আবার অ-উপজাতীয়দের ক্ষেত্রে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার শর্ত জুড়ে দিয়ে পার্বত্য চুক্তির ‘খ’ খণ্ডের ৩নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘অ-উপজাতীয় স্থায়ী বাসিন্দা বলিতে- যিনি উপজাতীয় নহেন এবং যাহার পার্বত্য জেলায় বৈধ জায়গা জমি আছে এবং যিনি পার্বত্য জেলায় সুনির্দিষ্ট ঠিকানায় সাধারণত বসবাস করেন তাহাকে বুঝাইবে।’
অর্থাৎ পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত বাঙালিদের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে ভোটার হতে হলে বৈধ জমির মালিক হতে হবে। কিন্তু বাঙালিরা যাতে বৈধ জায়গা সম্পত্তির মালিক হতে না পারে সে জন্যও সকল পদক্ষেপ নিয়ে রাখা হয়েছে। যেমন- খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিক্রয় বা অন্যান্যভাবে হস্তান্তরের ক্ষেত্রে জেলা পরিষদকে অবহিত করে বা জেলা পরিষদের অনুমতি নেয়াকে শর্ত করে দেয়ায় বাঙালিদের ভূমির মালিক হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তিকল্পে গঠিত ল্যান্ড কমিশন আইন সংশোধনের নামে কমিশনকে বাঙালিদের ভূমিহীন করার হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে।
আসলে ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের উদ্দেশ্য সরকারে নিকট যাই থাকুক উপজাতীয় নেতৃবৃন্দের কাছে এর উদ্দেশ্য পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত বাঙালিদের ভূমিহীন করা। কেননা পার্বত্য বাঙালিদের ভূমিহীন করতে পারলে সংবিধান পরিপন্থীভাবে (পার্বত্য জেলা পষিদ আইন বলে) তাদের ভোটাধিকার হরণ করা যাবে। আর সেটা সম্ভব হলে বাঙালিরা পার্বত্যাঞ্চলে ভূমির অধিকার, ভোটাধিকার হারিয়ে এক সময় হতাশ হতে বাধ্য হবে। আর মৌলিক অধিকার বঞ্চিত এসব মানুষ হয়তো পার্বত্যাঞ্চল ছেড়ে যেতে শুরু করবে। ক্রমান্বয়ে বাঙালির সংখ্যা কমতে থাকলে তারা পার্বত্যাঞ্চলে জাতিসংঘের উপস্থিতিতে পূর্বতিমূরের মত স্বাধীনতার দাবিতে গণভোটের আয়োজন করবে। সে ভোটের ফলাফল কোন দিকে যাবে তা-তো আগে থেকেই নির্ধারণ করা থাকছে। অতএব পরিণতিটা সহজেই অনুমেয়।
সরকারি কর্তাব্যক্তিরা যত গালভরা যুক্তিই দেখাক না কেন, ভূমি কমিশন আইন সংশোধন, আদিবাসী স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা, জেলা পরিষদের মাধ্যমে পুলিশের উপর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের প্রচেষ্টাসহ পার্বত্যাঞ্চলের উপজাতীয় নেতৃবৃন্দ প্রতিটি পদক্ষেপই নিচ্ছে সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই। ভূমি কমিশন আইন ২০০১-এর সংশোধনীর প্রতিটি প্রস্তাবই তাদের সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্যই আনা হয়েছে। এখন সরকার যদি এসব বুঝতে অপারগ হয় তাহলে এর দায় শুধু তাদের ওপরই বর্তাবে তা নয়, বরং দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিককেই ভবিষ্যতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। অতএব সময় থাকতেই পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে যেকোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভাবতে হবে সরকারকে, ভাবতে হবে সচেতন দেশবাসীকেও।
কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে যে শেষ সময়ে এসে সরকার কেন এসব বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিতে গেল? এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, শেষ সময়ে এসে দেশের ভেতরে এবং বাইরে সরকারের অবস্থান নাজুক হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় তারা সন্তু লারমার চাহিদা মিটিয়ে দাতাদের মন জয় এবং সামনের নির্বাচনে পাহাড়িদের সমর্থন আদায়ের কৌশল নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো দাতাদের মন জয় করতে দেশের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতার প্রশ্নে কোনভাবেই আপস করা চলবে না। অন্যদিকে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সারা বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে ভোট দিলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িরা ভোট দেয়নি। এমনকি গত চারটি নির্বাচনের ভোটের ফলাফল বিবেচনা করলেও আওয়ামী লীগ ধারণা করতে পারবে যে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের ভোট তারা পাবে কিনা। তাছাড়া ভূমি কমিশনের আইন সংশোধনের ফলে ইতোমধ্যে বাঙালিরা ফুঁসে ওঠেছে। সরকার এটা নিয়ে অগ্রসর হলে বাঙালিদের প্রতিরোধ আন্দোলন আরও বেগবান হবে। শেষ মুহুর্তে বাঙালিদের ক্ষেপিয়ে দেওয়াটা সরকারের জন্য কতটা ইতিবাচক হবে তাও ভেবে দেখতে হবে।

উৎস
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×