১। আমার কোন গল্পই নেই
আমার কোন গল্পই নেই। আবার বলি আছে। গল্পের কথা বলতে গেলে পুরনো হারমোনিকা বাজে। আমার কোন গল্পই নেই। শোনাবো কি। ভেবেই পাইনে। সাত সকালে উঠি। দাঁত মাজি। আয়নায় কাত হয়ে ফিটফাট বাবু সাজি। আফিসে দৌঁড়াই। ফিরে আসি ঘামের জলে স্নান করে। ছুটির দিনে দাঁতের তলে মুড়ি চিবাই। রিমোট ঘুরাই। টিভি দেখি। অথবা সময় পার করি। ভূড়ির ভাঁজে চর্বির পরত গুনি। রাত ভারী হয়। আয়নায় চোখ বুলাই। চোখের কোলে বয়সের ছাপ মাপি। আটপৌরে জীবনের খাটে বন্দী হয়ে ঘুমিয়ে পরি।
২। অকাজে
দৃশ্যের পর দৃশ্য রাস্তার পর রাস্তা
মাথার পর মাথা বাড়ির পর বাড়ি
নর-নারী মিলে জগতের কান্ডারী
চলছে ভালই কেউ দমে নেই।
কাজ করো খাও ঘুমাও বিনোদন করো
বংশ বৃদ্ধি করো উঠো দৌঁড়াও
এত কিছুর মাঝে একলা একলা ভাবো
নশ্বর অনশ্বর নিয়ে তোলপাড় করো।
আমার ভাবতে ভাল লাগে না
খেতে ভাল লাগে না ঘুমাতেও না
তবে কি আমি মানুষ নই
মানুষ নামের অমানুষ কেউ।
বিধি মানুষ করেই যদি সৃষ্টি করলে
অকাজে ফেলে রাখলে কেন!
৩। তীর
লক্ষ্যভেদী তীর উল্কার গতিতে ছুটছে
পৃথিবী অন্তরীক্ষ ভেদ করে দূর্নিরীক্ষে
উল্কা পতনে ছন্নছাড়া দৃশ্যান্তর
দৃশ্য আবার খাট পালঙ্কে কার্নিশ দেয়াল
ঘড়ির কাটায় তছনছ সময়
হাতের মুঠোয় বাহুতে
আয়ুর রন্ধ্রে রন্ধ্রে জঙ্ঘায় জানুতে
ছাদের তলায় কেদারায় কাপ পিরিচে
চায়ের বাস্পের প্রতিটি কণায়।
এ তীর এমন এক ছিলায় ভর করে আছে
ছুটে চলে প্রতি পলে পলে
জলের ঢেউ যেমন সাগর তলে
ঘুমিয়ে গেলে এক পলকে নীল হ্রদ।
৪। নেমেছি অসীমে
ছেড়ে যাচ্ছি পথ, নেমেছি অসীমে
কাল ছিলাম পথে আজ একা অন্ধকারে হাঁটছি
নির্জন প্রান্তরে আনমনে বিষণ্ণ গগনে
হিসেবের পাতায় নেই কোন লাভ-লোকসান
জমা খরচ মিটিয়ে চলে যাচ্ছি।
ভাল লাগে একা চলা সবুজ নির্বিঘ্ন মাঠ
তাই চলছি। তোমরা থাকো আদর আপ্যায়নে
সজনে দশজনে মিলেমিশে রীতিতে নীতিতে
হেসে খেলে হেলে দুলে
আমি নির্ঝঞ্ঝাট পথে চললাম।
৫। নেই ব্যাকুলতা
এ ব্যাকুলতা হারালো কোথায়
অপেক্ষায় রাত জাগা
ঘুমঘোরে স্বপ্নের লেবুপাতা
সুগন্ধী মাতোয়ারা দরদী দীঘল
ব্যাকুল করেনা অপেক্ষা
নেই আজ ঘড়ির কাটা
নেই নেই ব্যাকুলতা।
৬। সান্তনার ছল
অতনু বাহক বসে আছে
কোন টেলিগ্রাম নেই
ভালমন্দ কোন খোঁজ খবর নেই
আমি প্রেরকের অপারগতার চেয়ে
বাহকের মুখভঙ্গীতেই তুষ্ট হই
অন্তত সান্তনার একটা
ভাষা খুঁজে পাওয়া যায়
মুখপাঙ্গের অচল সমীকরণে
তৃপ্ত ছলনার ঢেউ খেলে যায়
তা থেকেই অনুমান কার্যসিদ্ধ হয়।
আর তো কোন ব্যতিক্রম অবশিষ্ট নেই
তাই সেটাই বা কম কিসে!
৭। সুখ পাখিটা
একটা কালসাপ
ফণা তুলে উদ্ধত
জমিন থেকে আসমানের দিকে
তেঁড়ে আসছে
আমার আকাশ নীড়ের
সুখ পাখিটার সুখ রইলো না বুঝি।
যে আশায় নীড় বেঁধেছিল পাখি
সেখানে আজ কাল নাগিনীর হাঁকাহাঁকি।
৮। দুর্ভাগা সন্তান
কেউ জন্মে পাপের বোঝা কাঁধে নিয়ে
জন্মে পাপ জনমভর পাপ
জন্মান্তরেও পাপ।
ইচ্ছে ছিল ললাটের মলাট খুলে
পিতা ও পিতামহের
পাপের চিহ্ন মুছে ফেলবো
বিধি হলেন বাম
তাই শূন্য মনস্কাম
সবাই মিলে হলাম দুর্গত
পুড়লো ভাগ্য পুড়লো জাহান
আমার দুর্ভাগা সন্তান।
৯। ভাসাও তরী
আসতে চাও আসো
কিছু বলবো না
টেনে নিবো গহীনে
সাইক্লোন যেমন টানে বন্দর
ভাসতে চাও ভাসো
এই নাও দিলাম পাল তুলে
সাত সাগর ছাড়িয়ে
আমি দু'হাত উজার করে
অপেক্ষায় থাকবো কূলে
তুমি ভাসাও ময়ূরপঙ্খী।
এক তোমাকেই ভালবেসেছি
আমার লক্ষ্য ও গন্তব্য একটাই
সে তুমি!
তোমার গন্তব্য কি
নই আমি
যদি বলো হ্যা
ভাসাও তরী খানি।
পাদটীকা: এই কোবতেগুলোর মিনিমাম বয়স ২ বছর। ড্রাফটে অযত্নে পরে আছে। ড্রাফট খালি করার প্রচেষ্ঠায় তুলে দিলাম আরকি। :/
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:৫৪