কুয়ালালামপুর শহরে সাধারণ কোন মানুষকে হাঁটতে দেখা যায় না। ব্যতিক্রম কেবল কয়েকটি জায়গা। শহরের বুকিত বিনতাং ( Bukit Bintang)[মালয় ভাষা বুকিত মানে- পাহাড়; বিনতাং মানে- তারকা, তারা; তাই জায়গাটির নাম তারার পাহাড় হতে পারে] এলাকা যেটি শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত সেখানে প্রচুর মানুষ সারা রাত ধরেই হাঁটাহাটি করে। এখানে বিদেশী পর্যটকরা আসেন। খানা পিনা, নাচ গান করেন। সব ধরনের ব্যবস্থা এই এলাকায় রয়েছে। এখানে প্রচুর মানুষকে হাঁটুতে দেখা যায়।
আমি লক্ষ্য করে দেখেছি, যারা বাংলাদেশ থেকে বেড়াতে আসেন এবং অনলাইনে হোটেল বুকিং করেন তারা সাধারণতঃ বুকিত বিনতাং এলাকায়ই হোটেল বুকিং করেন কিংবা সার্ভিস এপার্টমেন্ট ভাড়া করেন।
আরেকটি জায়গায় মানুষ হাঁটে সেটা হচ্ছে- KLCC ( Kuala Lumpur City Center). এখানে বিখ্যাত Petronas Twin Towers অবস্থিত। এই ভবনটি এক সময় পৃথিবীর সব চেয়ে উচুঁ ভবনের খেতাব লাভ করেছিল। প্রতি দিন এখানে প্রচুর মানুষ এখানে আসে। টুইন টাওয়ারের ছবি তুলে। পানির ফোয়ারার খেলা দেখে।
জায়গাটি সুন্দর। টাওয়ারের পাশে পানির ফোয়ারা। তার পাশে KLCC Park. এই পার্কটি খুব সুন্দর। ঝকঝকে। পার্কের সাথে শিশুদের গোসল আর লাফাঝাঁপের ব্যবস্থা আছে। টুইন টাওয়ার দেখার চেয়ে পানিতে শিশুদের লাফঝাফ দেখতে আমার খুব্ ভালো লাগে।
অনেক দিন জায়গা দুটিতে যাই না। যেতে মন চায়। কাজের জন্য যেতে পারি না। এর মধ্যে আবার রোগ বালাইয়ের উৎপাত। ডাক্তার বলেছেন- খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রচুর হাঁটতে হবে। তাই আমি যে জায়গায় থাকি সেখানেই হাঁটছিলাম।
রাস্তা ধরে হাঁটছিলাম । হঠাৎ এক জন মানুষের কথায় চমকে উঠলাম।
- দেশী ভাই কি বাংলা?
তাকিয়ে দেখি এক যুবক। লাল গেঞ্জি পরনে। তাতে রাস্তা পরিস্কারের যন্ত্রপাতি।
বললাম- হ্যাঁ, ভাই , আমি বাংলা। আপনি কই থাকেন?
বাংলাদেশের মানুষদেরকে মালয়েশিয়ানরা বাংলা নামে ডাকে। মালয় ভাষায় মানুষকে বলে ওরাং। আর বাংলাদেশের মানুষ হচ্ছে- ওরাং বাংলা। সংক্ষেপে কেবল বাংলা।
বুকিত বিনতাং এলাকার একটি দৃশ্য।
যুবকটি জানালো তার দেশের বাড়ি যশোর জেলার ঝিকরগাছা। প্রায় ৯ বছর ধরে মালয়েশিয়াতে আছেন। ক্লিনারের কাজ করেন। ( সঙ্গত কারণেই যুবকটির নাম বলছি না। এই রকম যুবক হাজার হাজার আছে)
বললাম- ভাই জান, আপনার কি ভিসা আছে?
- না নাই। চপ লাগানোর জন্য লেভির টাকা সব দিছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত চপ লাগেনি।
মালয়েশিয়াতে ভিসাকে দেশী বাংলা ভাইয়েরা চপ বলে। চপ লাগাতে বছরে প্রায় ৩/৪ হাজার রিঙ্গিত খরচ হয়ে যায়। দালাল ফালাল ধরতে হয়। অনেক সময় দালাল টাকাপয়সা এমনকি পাসপোর্ট শুদ্ধ নিয়ে পালিয়ে যায়।
ভাই জান, চপ না লাগলে কিন্তু বিরাট অসুবিধা। আপনি কি, জানেন যারা ১০ বছরের বেশী সময় ধরে মালয়েশিয়াতে আছে তাদের চপ লাগলেও থাকতে পারবে না। যদি লুকিয়ে ছাপিয়ে থেকে কাজ করে ধরা পড়লে দেশে পাঠিয়ে দিবে। আর কেউ যদি ১০ বা ১১ তম চপ লাগিয়ে তারপর দেশে বেড়াতে যায় ফিরে আসার সময় কুয়ালালামপুর বিমান বন্দরে তাদেরকে ধরে আবার দেশে পাঠিয়ে দেবে।
হ্যাঁ, দেশী ভাই। আমিও শুনেছি। কিন্তু কি করব বলেন। উপায় নাই। দেশে গিয়ে করবো কি? দেশে কি কোন কাজ আছে? জমি জমা বিক্রি করে মালয়েশিয়া এসেছি। কষ্ট করে দুটো টাকা কামাই করি। এবার কি তাহলে সেটাও থাকবে না।
এবার আমি দেশী ভাইয়ের মুখের দিকে আবার তাকালাম। পড়ন্ত বিকেলের রোদে দেখলাম তার চোখে মুখে হতাশার ছাপ।বিদেশের মাটিতে ঝাড়ুদারে কাজটিও বুঝি আর বেশী দিন করা যাবে না।
দায় স্বীকারঃ ছবিতে ব্যবহৃত ছবি গুগল সার্চ করে বের করা। যিনি তুলেছেন তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:১২