somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পর্যটন শিল্পের বিকাশ জরুরি

২৩ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্যটন শিল্পের বিকাশ করুন।

বাংলাদেশেও দেখার মতো অনেক জায়গা আছে। আছে অনেক ঐতিহ্য। তাই বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পকে আর অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই। একথা এখন দিবালোকের মতো সত্য যে, বর্তমান বিশ্বে পর্যটন একটি অতি বড় মাপের শিল্প। আমাদের দেশে শিল্প বলতে এক সময় পাট শিল্পকে এবং বর্তমানে গার্মেন্টস শিল্পকে বোঝানো হচ্ছে। পর্যটনও যে একটি বড় মাপের শিল্প হতে পারে তা আমাদের দেশের জনসাধারণ এখনো হয়তো জানেই না। বাংলাদেশে পর্যটনও হতে পারে জাতীয় আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। আমাদের রয়েছে অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ। যার যথাযথ ব্যবহার আমাদেরকে পৌছে দিতে পারে সাফল্যের দ্বারে। এজন্য দরকার সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টা । বাংলাদেশ যে একটি সুন্দর দেশ তা সবাইকে জানাতে হবে। পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে বাংলাদেশের দ্বার।

বাংলাদেশের অনেক মানুষ হয়তো জানেন না যে আমাদের কক্সবাজারের মতো বড় আর সুন্দর সি বিচ পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এটি বেশ ঢালু আর প্রশস্ত। প্রাকৃতিক এ বিচ বিধাতার অপার দান। বেশীর ভাগ দেশের সি বিচ হয় খাড়া আর সংকীর্ণ। কিন্তু তারা তাই সাজিয়ে গুছিয়ে এমন সুন্দর করে রেখেছে যে পর্যটকরা দলে দলে ছুটে যায় সেই সব সমুদ্র উপকূলে। দুহাতে তারা খরচ করে টাকা। আয় হয় সে সব দেশের। মানুষের কর্মসংস্থান হয়। অর্থনীতি হয় শক্তিশালী।

অথচ আমাদের দেশে কখনো এদিকে নজর দেয়া হয়নি। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত যে বিশাল প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত (সি বিচ) আছে তাকে সাজাতে পারলে ঝঁকে ঝাঁকে বিদেশী পর্যটক আমাদের দেশে আসবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। পৃথিবীতে লাখ লাখ ভ্রমন বিলাসী লোক রয়েছেন যারা সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়াতে ভালবাসেন। তাদেরকে বাংলাদেশে টেনে আনতে হবে। এটা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে করা যাবে না। নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা আর বৈচিত্র দিয়ে তাদেরকে আকর্ষণ করতে হবে। উন্নত বিশ্বের ভ্রমন বিলাসী মানুষ টাকা খরচ করার জন্য এক পায়ে খাড়া। তাদেরকে টাকা খরচ করার সুযোগ করে দিতে হবে। আমাদের সি বিচের মূল সমস্যা হচ্ছে এখানে পানি ছাড়া আর দেখার মতো কিছু নেই। হ্যা, সমুদ্রের পানি অবশ্যই দেখবে। তবে তার সাথে আরো বহুবিধ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। কক্সবাজারে সব ধরনের হোটেল বানাতে হবে। যাতে ধনী, গরীব সবার থাকার মতো জায়গা থাকে। ফাইভ স্টার হোটেল থাকতে হবে। ভাল বিমান চলাচলের সুযোগ থাকতে হবে। ঢাকা থেকে ট্রেনে যাবার সুযোগ থাকতে হবে। সব পর্যটক যে বিমানে যাবে তা তো আর নয । নাইট ক্লাব, ক্যাসিনো, বার , পাব সহ বিনোদনের সবধরনের সুযোগ থাকতে হবে। যদি দেশের কারো আপত্তি থাকে এই সব এলাকায় কেবল মাত্র বিদেশী ছাড়া আর কেউ যেতে পারবে না এমন বিধান করা যেতে পারে। পর্যটকদেরকে টাকা খরচের সুযোগ করে দিতে হবে। কক্স বাজারে সমুদ্রে বোট চড়ার সুযোগ নেই। নৌবিহারের সুযোগ থাকতে হবে। সমুদ্রের সব ধরনের সামুদ্রিক খেলার ব্যবস্থা থাকতে হবে। সাগরে যেখানে সম্ভব মাছ দেখানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে। মোট কথা সুযোগ সুবিধার কোন প্রকার ঘাটতি রাখা যাবে না। মানুষকে টাকা খরচ করার জায়গা করে দিতে হবে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত এক ফুট জায়গাও ফাঁকা না রেখে আধুনিক সুবিধাদি দিয়ে সাজিয়ে তুলতে হবে যাতে ঝাঁকে ঝাঁকে পর্যটক আসে।

বাংলাদেশে পর্যটক এলে কত ধরনের লাভ যে হবে তা বলে শেষ করা যাবেনা। প্রথমত, আমাদের জাতীয় বিমান সংস্থার সুনাম বৃদ্ধি করতে পারলে বিদেশীরা বাংলাদেশ বিমানেই আসবে । ফলে বিমানের লাভ হবে লাখ লাখ টাকা। এর জন্য বিমানের সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। অবশ্য বিমানের বর্তমান যা অবস্থা তাতে প্রবাসী বাংলাদেশীরাই তাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে আসার সময় বাংলাদেশ বিমানে চড়েনা। কিন্তু বিমান ভাল হলে তা যে কেবল পরিবহন হিসাবে কাজ করবে তাই নয় তা হবে একটি বিজ্ঞাপন। বাংলাদেশ বিমান প্রচার করবে পর্যটন স্পটগুলো। নানাধরনের ভ্রমন প্যাকেজ দিয়ে বিমান পর্যটক ধরে নিয়ে আসবে বাংলাদেশে।

অবশ্য চেষ্টা করলে বিমানের অবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব। একটি বাজেটে বিমানের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রেখে বিমানের সংস্কার করা প্রয়োজন। নতুন নতুন উন্নত মানের এয়ার বাস সংযোগ করতে হবে। দূর্নীতি দূর করতে হবে। সময়-নিষ্ঠ হতে হবে। বাংলাদেশ বিমানের সব চেয়ে বড় দোষ তার সময় জ্ঞান খুবই টনটনে। নয়টার ট্রেন কয়টায় ছাড়বে এটি এখন কেবল বাংলাদেশের ট্রেনের ক্ষেত্রে নয় বিমানের ক্ষেত্রে আরো বেশী করে সত্য ও প্রযোজ্য। যান্ত্রিক ত্রুটিও বাংলাদেশ বিমানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাই বিমানের উন্নয়নে মনোনিবেশ করা জরুরী। এর কোন বিকল্প নেই।

পর্যটনের দ্বিতীয় লাভ, বিদেশীরা বাংলাদেশে এসে দু’হাতে খরচ করবে। তাতে দেশের অর্থনীতি হবে মজবুত। তারা আসার সময় যে ভিসা নিয়ে আসবে তাতেও বাংলাদেশের লাভ হতে পারে। এদেশে এসে তারা যে সব তিন তারকা, চার তারকা, পাঁচ তারকা হোটেলে থাকবে তাতে লাভবান হবে দেশ। হোটেলে কর্মসংস্থান হবে অনেক মানুষের। তারা এদেশে এসে কেনাকাটা করবে । তাতে বিকশিত হবে এদেশের শিল্প। তারা এখানে এসে এদেশের রিক্সায় চড়বে। ক্যাব ব্যবহার করবে। এতে এদেশের মানুষের লাভ ছাড়া ক্ষতি হবার কোন সম্ভাবনা নেই। তাদেরকে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে টাকা খরচ করার পথ বাতলে দিতে হবে আমাদেরকে।

বাংলাদেশে বিদেশী পর্যটক আকর্ষণের জন্য সর্বপ্রথম যা করা প্রয়োজন তা হলো সুনাম। সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের কমপক্ষে একটি আকর্ষণীয় জিনিসের সুনাম ছড়িয়ে দিতে হবে। যেমন ভারতের রয়েছে তাজমহল। আমাদেরও তেমনি রয়েছে বিশাল সাগর উপকুল। এতো বড় বেড়ানোর মতো উপকুল পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এই তথ্যটি আমার মনে হয় বিদেশী পর্যটকদের কাছে আজও পৌছেনি। এর জন্য দরকার সুনাম ও প্রচার। কথায় বলে, প্রচারেই প্রসার। বাংলাদেশের পর্যটন খাতের বিকাশে আমার প্রস্তাবগুলো হচ্ছেঃ

১। সাগর উপকূলকে পর্যটকদের বেড়ানোর উপযোগী করে সাজানো হোক। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে লুইআই কানের মতো ডিজাইনারদের দ্বারা উপকূল সাজানো হোক। এখানে নিরাপত্তার বিষয়টিকেও প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশে ছিনতাইকারী আর মাস্তানে ভরপুর। মানুষের নিরাপত্তা এদেশে প্রধান একটি সমস্যা। দেশে থেকে ছিনতাইকারী আর মাস্তান উৎখাত করা হোক। যেন সারা মানুষ নির্ভয়ে যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াতে পারে। অন্ততপক্ষে পর্যটন এলাকা গুলোতে ভাল নিরাপত্তা দেয়া হোক। বিদেশী মেহমানরা যেন খারাপ ব্যবহার না পায়। তারা যেন বাংলাদেশ সম্পর্কে ভাল ধারনা নিয়ে যেতে পারে।

২। রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থার (বাংলাদেশ ) সংস্কার করা হোক। যেন মানুষের এক বাক্যে বলতে বাধ্য হয়, বাংলাদেশ বিমান খুব ভাল বিমান। বাংলাদেশ বিমানের মতো বিমান আর হয়না। আসুন, আমরা বাংলাদেশ বিমানে চড়ি।
৩। ভিসা পদ্ধতি আরো উন্নত করা হোক। বিদেশী পর্যটকরা যাতে সহজে বাংলাদেশে আসার ভিসা পেতে পারে তার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।
৪। পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য প্রচারের ব্যবস্থা করা হোক। এর জন্য বাংলাদেশের স্যাটেলাইট টিভিগুলোকে কাজে লাগোনো যেতে পারে। বিজ্ঞাপনগুলো যেন ইংরেজিতে হয়।
৫। পর্যটস স্পটগুলোর বিপনীবিতানগুলোতে বিক্রেতা যাতে ইংরেজিতে কথা বলতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। তাদের ব্যবহার ভাল হতে হবে। এমনিতে বিদেশী মানুষ দেখলে দোকানীরা বেশী মাত্রায় লাভের চেষ্টা করে যা করা মোটেই উচিত নয়। বিপনী বিতানে সুন্দর পরিবশে থাকলে তারা কিনতে বেশী উতসাহ বোধ করবে।


বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশে পর্যটন জাতীয় আয়ের প্রধান উৎস। আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায় মালদ্বীপ, শ্রীলংকা প্রভৃতি দেশ পর্যটন খাতে অনেক আয় করছে। পর্যাপ্ত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ কেন এখাতে পিছিয়ে থাকবে? বর্তমানে দেশে সকল ক্ষেত্রে চলছে সংস্কারের জোয়ার । বর্তমান সরকারের কাছে তাই আমার প্রত্যাশ্যা তারা পর্যটন খাতের দিকে নজর দেবেন।




মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন
গ্রাম-বটিয়া, পোঃ জয়পাড়া
উপজেলা - দোহার
জেলা - ঢাকা-১৩৩০
Email:[email protected]

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:০১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×