আমার জীবনের একটি সত্যি ঘটনা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। ঘটনা টা আমার বাবাকে নিয়ে। আমার বাবা ছিলেন আমাদের এলাকার একজন সম্মানিত মানুষ। তিনি বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং মানুষকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতেন। সেই হিসেবে তাকে বিভিন্ন জায়গায় সালিস, বিচারে বিচারক হিসেবে ডাকা হতো। ঠিক সেই কারনে আব্বাকে তার এক বন্ধু দীর্ঘদিন ধরে অনুরোধ করছিলো যে, তাদের একটি বিচার মিমাংসা করে দেয়ার জন্য। আব্বা রাজি হলেই তারা বিচারের আয়োজন করবে। যা হোক, আব্বা তাদের কে সময় দিলেন। আব্বার বন্ধুটি বলল যে পরদিন এসে উনি আব্বু কে নিয়ে যাবে। লোকটি পরদিন ৩ টা বাজে এসে আব্বুকে নিয়ে গেলো। আমরা কেউ ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি যে, আব্বু কে তারা অন্য উদ্দেশে নিয়ে গেছে।
যা হোক, ঘটনায় আসি। আব্বারা একটা ট্যাক্সি করে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছালেন। সারি সারি করে বাঁধা কিছু টিনের ঘর, কিন্তু লোকজন তেমন চোখে পরে না। ট্যাক্সি থেকে নেমে আব্বার কেমন যেন একটু খটকা লাগলো। কারন তারা যে বিচার করার নামে নিয়ে এসেছে তার কোন আয়োজন চোখে পরছে না। আর কিছু না হোক , অন্তত একটা টেবিল আর কিছু চেয়ার তো থাকার কথা।আব্বা উনার বন্ধুটাকে জিজ্ঞেস করতেই উনি কিছুটা থতমত করতে লাগলেন আর বললেন যে বিচার বাসার ভিতরেই হবে। এর মধ্যে ঐ ঘর থেকে এক মধ্যবয়স্ক লোক ও ২ টা ছেলে সহ বের হয়ে আব্বাকে সালাম দিয়ে খুব সম্মান করে কথা বলতে লাগলো। আব্বুর মনে একটু শঙ্কা জেগে উঠতে লাগলো। তারা আব্বা কে বলল , আসেন বাসাই এসে কিছু চা পানি খেয়ে কাজ শুরু করা যাক। আব্বা দরজার কাছাকাছি যেতেই তারা আব্বাকে পিছন থেকে জোরে ধাক্কা দিয়ে বাসার ভিতর ঢুকিয়ে দিলো। আব্বা মেঝেতে হুমড়ি খেয়ে পড়ার থেকে বাঁচল। সাথে সাথেই তারা দরজা বন্ধ করে দিলো আর সাথে সাথে তাদের ভাষা পুরোপুরি চেঞ্জ হয়ে গেছে। তারা দরজা বন্ধ করে বিশ্রী ভাসায় গালাগালি করতে লাগলো। আর বলতে লাগলো আমার বাবার টাকায় তাদের অনেক কাজ আছে। আমার বাবা দু-নম্বরি করে টাকা আয় করেছে , ইত্যাদি, ইত্যাদি।আব্বার ঐ বন্ধু ততোক্ষণে শিকার কে শিকারির হাতে তুলে দিয়ে সটকে পড়েছে।
এদিকে আমাদের পরিবারের অবস্থা তো পুরো খারাপ।আব্বা রাতে বাড়ি ফেরেনি। কোথাও থেকে কোন খবর-ই আসেনি। তকন মোবাইল ততো চালু ছিল না।আমাদের দোতলাই একটা টি অ্যান্ড টি ফোন চিল,দরকারের সময় ওটাই বেবহার করতাম। আমরা বারবার দোতলায় জিজ্ঞেস করছি কেউ ফোন করেছে নাকি?? আব্বার বন্ধুটার বাসার ঠিকানাও জানি না।সবাই একটা চাপা টেনশনে অস্থির হয়ে যেতে লাগ্লাম।পরদিন দুপুর নাগাদ আমরা সবাই কে জানিয়ে দিলাম যে, আব্বার গতকাল থেকে কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
ওদিকে তারা আব্বাকে বন্ধি করার পর একটা চেয়ারের সাথে বেধে ফেলল। তখন সন্ধার কাছাকাছি। একজন ছেলে ছাড়া বাকি সবাই চলে গিয়েছিল। আব্বু তাকে অনুরোধ করেছিল যেন তাকে চেয়ারের সাথে বেধে রাখা না হয়। আব্বার হার্টের রোগী ছিলেন।উনারা আব্বাকে জিজ্ঞেস করছিলেন রাতে কি খাবেন।আব্বা জবাবে বলেছিল রাতে কিছু খায় আর না খায় উনার অবশ্যই ওষুধ খেতে হবে।উনি খুব সিরিয়াস হার্ট এর রোগী। অসুদ না খেলে কিছু একটা হয়ে যেতে পারে। তারা অসুধের নাম লিখে দিতে বলল। আব্বা নরমালি যে ওষুধ খান তার দ্বিগুণ অসুধের নাম লিখে দিলো।আব্বা চেয়েছিলেন অসুধের খরচ বাড়িয়ে তাদের উপর একটু মানসিক প্রেসার দিতে। লোকটা এর কিছু পরেই একটা বিরিয়ানির প্যাকেট আর ওষুধ গুলো আব্বা কে দিয়ে দরজায় তালা লাগিয়ে চলে গেল। এই প্রথম আব্বা ঘরটা ভালো করে দেখার সুযোগ পেলো। এক কামরার ঘরের উপর টিন দেয়া। ঘরটিতে একটি মাত্র জানালা। আব্বা জানালা খুলতেই দেখতে পেলো একটা বড় পুকুরের পাড়। ওর ওপাশে ঘন জঙ্গল ছাড়া কিছু-ই দেখা যাই না।আব্বা এবার বুঝল , তারা যাওয়ার সময় আব্বার মুখে কেন কিছু বাধল না।কারন তারা জানে চিৎকার করেও কোন লাভ হবে না। …………………(চলবে)