সমুদ্র কত রহস্যময় একটা জায়গা।বিজ্ঞানের সাথে পাল্লা দিয়ে মনুষ্য সমাজও আজ পৌঁছে যাচ্ছে চরম গভীরত্বে । ঠিক এই ভাবে অজানা সমুদ্রের রহস্য উদ্ঘাতন করতে গিয়ে তারা খুজে পায় অদ্ভুদ আর বিদঘুটে কিছু মাছ।এই রকম কিছু মাছের সাথে আমরা আজ পরিচিত হব।
The Blobfish
আপনার নানিমা মাঝে মাঝে আপনার জন্য ঘরে যে পুডিং তৈরি করে, এটি দেখতে অনেকটা তেমন। এর অদ্ভুদ মজার গঠন এর কারনে এটি বিশ্বের সবার নজর কাড়তে সক্ষম হয়। পাখনা দিয়ে ভর করে চলা এই মাছ বিশ্বের কুতসিত প্রাণীগুলোর একটি। এই blobfish’s সমুদ্রের একদম তলদেশে থাকে, যেখানে পানির প্রেসার থাকে অত্যান্ত উচ্চ, এই কারনে এর স্কিন এর ঘনত্ব এমন হয় যাতে সেটা পানির প্রেসার সহ্য করতে পারে।
এরা বেঁচে থাকার জন্য পানির সাথে যুদ্ধ করতে হয় না। শুধুমাত্র খাওয়ার সময় হলে মুখটা হাঁ করে ভেসে থাকলেই হয়। ভাসমান জলজ খাদ্য তার মুখেই চলে আসে। খাদ্য জোগাড় বা খাওয়ার জন্য এর কোনও কষ্ট বা শক্তির প্রয়োজন হয় না বলে একে সবাই সমুদ্রের অলস মাছ হিসেবেও জানে।
The Hatchetfish
বিজ্ঞানীরা এই ভয়ঙ্কর এবং ক্ষুদ্র মাছটি খুজে পায় সমুদ্রের চরম গভীরতাই , যা hatchetfis নামে পরিচিত। দেখতে বিষণ্ণ এই মাছটির নামকরন করা হয়েছে তাদের ক্ষুর পাতলা গঠনের জন্য। এদের বুকের গঠন দেখতে অনেকটা কুঠার এর মত এবং ঠাণ্ডা ও জ্বলজ্বলে রুপালি রঙের কিছুটা প্রভাব আছে। আকৃতিতে ৫ ইঞ্চির মতো লম্বা হওয়াই কুঠারের সাথে এর গঠন সম্পূর্ণ মিলে যায়। দেখতে আতঙ্কজনক হলেও এরা খুব কম-ই মারাত্মক হয়।
The Fangtooth
কি, দেখতে ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছে? এই মাছ টিকে আপনি সমুদ্রের তলদেশের রাগান্বিত ষাঁড়ের সাথে তুলনা করতে পারেন। দেখলে মনে হবে যে আপনার দিকে এখনি তেড়ে আসছে। আসলে এটির চেহেরা যত ভয়ঙ্করই হোক না কেন, এর বড় দুর্বলতা হচ্ছে এর দুর্বল দৃষ্টিশক্তি। এরা যখন শিকারে যায় তখন দুর্বল দৃষ্টিশক্তির কারনে হটাত করেই শিকারিকে আক্রমন করে বসে। এজন্য তাদেরকে খোঁচা-দাঁতের মাছও বলা হয়। সমুদ্রের মাছের মধ্যে সবচেয়ে বড় দাঁতের রেকর্ড তাদের দখলে। এটি সমুদ্রের প্রায় ১৬৪০০ ফুট নিচে বসবাস।
The Goblin Shark
বিজ্ঞানিদের কাছে "জীবন্ত জীবাশ্ম" হিসাবে খ্যাত shark নামের এই অপদেবতা বিশাল ও গভীর সমুদ্রের একটা রহস্য।125 মিলিয়ন বছর বয়সী পরিবারের একমাত্র অদ্যাপি জীবিত এই অপদেবতা সত্যিই বীরত্বের সাথে এখনও সমুদ্র শাসন করে বেড়াচ্ছে। এর বিশ্রী গঠন (যেমন: দীর্ঘ, চেপটা ধরণ, মুখের সামনে বের হয়ে থাকা লম্বা গঠন), ইত্যাদি একে অপদেবতা নামে পরিচয় করিয়ে দেয়।
স্বভাবে এরা নিস্ক্রিয় ও মোটামুটি অলস ধরনের। তবে খুব হিংস্র।
এরা সাধারনত ততটা সহজলভ্য নয়, যতটা আপনি মনে করছেন। সারাজীবনে এটাকে শুধু একবার-ই দেখার চান্স পেতেন, যদি না আপনি এই মুহূর্তে জাপান থাকতেন। একটি মাত্র মাছ নাগালে আসার পর জাপানে একটা একুরিয়াম
এ রাখা হয়েছিল যদিও এর কিছু সময় পর মাছটি মারা গিয়েছিল।
The Flamingo Tongue Snail
নামেই বুঝতে পারছেন, এটা একটা শামুক প্রজাতি। তবে যারা শামুকের খোলস সংগ্রহ করেন তারা একটু নড়েচড়ে বসবেন। কারন এর আকর্ষণীয় খোলস। এই খোলসের নিচে তাদের নরম টিস্যু দ্বারা সংকোচন-প্রসারন এর মাধম্যে তারা চলাফেরা করে। এদের পাওয়া যাবে শুধুমাত্র আটলান্টিক এবং ক্যারিবিয়ান গভীর জলের মধ্যে। তারা যেকোনো ধরনের বিষ নিজেদের শরীরে হজম করতে পারে এবং সমুদ্রের তলদেশের ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে।
The Angler Fish
সমুদ্রের একমাত্র চিত্তাকর্ষক এবং উদ্ভট প্রাণীগুলোর মধ্যে এই angler fish একটি। এটি এর কূটবুদ্ধির জন্যও বিখ্যাত। শিকারিরে নানা ধরনের ফাঁদে ফেলতে এর কোনও জুড়ি নাই।
বিজ্ঞানিরা যখন প্রথম এই মাছটি আবিস্কার করেন তখন তারা দেখতে পায় যে, মোটামুটি সব মাছ-ই মেয়ে প্রজাতির। এটা তাদেরকে কিছুটা আশ্চর্য করেছিলো।
পরে গবেষণা করে দেখা যায়, প্রতিটা মেয়ে প্রজাতির মাছের সাথে পরাশ্রয়ী কিছু একটা আছে। এই পরাশ্রয়ী টাই পুরুষ মাছ কম হওয়ার জন্য দায়ি। প্রতিটা পুরুষ মাছের লক্ষ্য থাকে যে প্রজননের জন্য একটা মেয়ে মাছ খুজে বের করা। মেয়ে মাছ খুজে পাওয়ার পর পুরুষ মাছটি তাদের শরীরে কামড় দিয়ে তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস , সংবহনতন্ত্র ভাগ করে নেয়। এ যেন দুই দেহ আর এক প্রান। এভাবে এরপর তারা জননক্রিয়ায়ও অংশ নেয়।
ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানাবেন। ভালো থাকবেন সবাই।