Click This Link
সোহাগী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলো। ভদ্র , সুশীল , শিল্পী , নাট্যকর্মী , নম্র , মার্জিত... এবং পর্দানশীল...
মানে এক কথায় বাঙ্গালী প্রগতিশীল নারীর যেই রুপটা আদর্শ ধরা যেতে পারে।
পারিবারিক আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারনে তাকে টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ চালাতে হতো।
তো ২০শে মার্চ বিকেল ৫ টায় সে টিউশনি পড়ানোর জন্য বাসা থেকে বের হয়। সে টিউশনি পড়াতো কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট এর অলিপুর এলাকায়।
সেদিন সন্ধ্যা নেমে আসলেও ঘরে ফিরে আসেনি সোহাগী। ফোন করে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায় প্রতিবার। রাত গড়াতে থাকলে পরিবারের লোকজন খবর নিয়ে জানতে পারে যে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সোহাগী টিউশনি শেষ করে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।
তবে তাকে খুজে পেতে খুব বেশি সময় লাগেনি লোকজনের। রাত সাড়ে দশটায় ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টের একটি কালভার্টের ঝোপের পাশে পাওয়া যায় সোহাগীর লাশ।তাকে ধর্ষণ করার পর হত্যা করা হয়েছিলো।
মাত্র দুটি ঘন্টা , রাত আটটা থেকে রাত দশটা... শুধু এতটুকু সময় সোহাগী আপন লোকজনের নাগালের বাইরে ছিলো।
মাত্র দুটি ঘন্টা একজন নারীকে নিরাপত্তা দিতে পারে না আমাদের সমাজ।
এখন প্রস্ন করি , সোহাগী কি শালীন ছিলো না?ছিলো।সোহাগী কি ভালো চরিত্রের অধিকারী ছিলো না?ছিলো।সে কি সদাচারী ছিলো না?
হ্যা , ছিলো তো।
যদি তাই হয়ে থাকে তবে ধিক সে সমাজকে , যে সমাজ বলে যে নারীর পোশাকের সাথে ধর্ষণের সম্পর্ক আছে।
ধর্ষণের একমাত্র কারন সমাজে কিছু বিকৃত মানুষ সাধারন মানুষের কুসংস্কার এবং সংস্কারকে পুজি করে টিকে থাকছে , তারা বিলুপ্ত হচ্ছে না।
একজন ধর্ষিতাকে যখন হত্যা করা হয় , তখন আমরা দুই বার হেরে যাই।
আর যখন একজন ধর্ষিতা আত্মহত্যা করে , তখন আমরা হারি তিনবার।
আমরা হেরে যাই এই জন্য না যে কিছু বিকৃত মানুষ ধর্ষণ করে , আমরা তখন হেরে যাই যখন একটা ধর্ষণের পর সমাজ বলে "এমন পোশাক পড়লে ধর্ষণ তো হবেই "
আমরা তখন হেরে যাই , যখন একজন ধর্ষিতাকে মেডিকেল টেস্ট নামক আরও কয়েকবার ধর্ষণ করা হয়।
আমরা তখন হেরে যাই যখন একজন ধর্ষক আইনের আওতায় না থেকে মুক্ত ঘুরে বেড়ায় এবং আমরা এটি ভুলে গিয়ে রাতে ঘুমাতে পারি।
আমরা তখন হেরে যাই , যখন একজন ধর্ষিতাকে সমাজে জবাবদিহিতা করতে হয় যে কেন সে ধর্ষিত হলো!
এবং হ্যা , রাষ্ট্রও আসলে হেরে যায় , যখন ক্যান্টনমেন্টের মতো জায়গায় একজন নারীকে মাত্র দুই ঘন্টার জন্য নিরাপত্তা দিতে পারে না।
যারা ধর্ষিত হয়ে মরে যায় , তারা তো একবার মরে। কিন্তু যারা বেচে যায় এবং বিচার প্রত্যাশা করে তাদের মরতে হয় অসংখ্যবার...
আল্লাহ সোহাগীকে জান্নাত নসিব করুক।
এই নির্লজ্জ নির্লিপ্ত সমাজের অংশ হিসাবে আমিও সোহাগীর অপরাধী। এবং আজ হয়তো খারাপ লাগছে , কিন্তু আর দশজন মানুষের মতই আমি কাল থেকেই সব
ভুলে গিয়ে আবার নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবো।
আমরা আসলে ক্ষমার যোগ্য নই।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৫০