প্রচন্ড শীত।সমিতির চাদা দিতে মতিঝিল যাওয়া লাগবে।সরকারি অফিস বিকাল ৫টা পর্যন্ত।এরপর রওনা দেওয়া লাগবে।সমিতির ক্যাশিয়ার ইরফান সাহেব ব্যাংক কর্মমর্তা।৬টা পর্যন্ত অফিসে থাকবেন।ঐ সময়ের মধ্যেই কাজ কম্প্লিট করতে হবে।সমস্যা হলো ট্রাফিক জ্যাম।ঐ ভয়ানক জিনিসটা তাকে মানিক চিপায়(?) ফেলতে পারে।ডিরেক্টর স্যার কড়া লোক।এক মিনিট আগেও কোন ছুটি নাই।এর মধ্যেই ইরফান সাহেবের ফোন আসে।অর্ক সাহেব আজকেই কিন্তু টাকা দেয়ার শেষ সময়।সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে টাকা দিবেন।শীতকাল অফিস ফাকা।কমবেশি সবাই সরেজমিন অনুসন্ধান কর্মসূচীতে ব্যস্ত ঢাকার বাইরে।এমন কি অনেক পিয়নও নাই।এই অফিসের কে পিওন কে কর্মকর্তা বুঝার উপায় নাই।অনেক পিয়নই মাসের পর মাস ছুটিতে।বিকাল ৩টার পর তাদের টিকিটিও পাওয়া যায় না।চাকরির তদ্বীরের সময় এরা অফিসেই পরে থাকেন।চাকরি হয়ে গেলেই লাপাত্তা।তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের দাপটে কর্মকর্তারা পশ্চাদপায়ে
এই অফিসে পিয়ন বিড়ম্বণা চরমে।এর জন্য চাকরির দূস্প্রাপ্যতাও দায়ী।এম এ/ডিগ্রী পাশ করা লোকজন পিয়নের চাকরি নেন ।চাকরি পাওয়ার পর তারা লাপাত্তা।কালেভাদ্রে তাদের দেখা মেলে।কয়দিন আগে অর্ক সাহেব পড়েছিলেন মহাবিরম্বনায়।পাত্রীপক্ষের লোক তাকে দেখতে আসে।এমনিতেই সরকারি অফিসের ভাঙাচুরা পুরাতন ডেকুরেশন।পাত্রীর বায়োডাটা অর্কের খুব পছন্দ হয়েছে ।ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন এওয়ার্ড পাওয়া।মাইক্রো্বায়োলজিতে এমএস করা।ভাসানী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার।পাত্রী পক্ষের উপযুক্ত খাতির করতে না পারলে?অফিসে চলছে চরম এমএলএসএস ক্রাইসিস।অর্কসাহেবের পিয়ন দীর্ঘছুটিতে।তার সবচেয়ে ঘনিষ্ট কলিগের পিয়নও তাই।এমনকি ডিরেক্টর সাহেবের পিয়নও ছুটিতে।ডিভিশনাল চিফেরও।এমনকি রহমান মিয়া যিনি চা -সিগারেট বিক্রি করেন তিনিও অফিসে আসছেন না দিনকয়েক।যথাসময়ে পাত্রীপক্ষের আগমন।পাত্রীর বড় ভাই স্যুটেড বুটেড হয়ে হাজির।তার মুখে খোচাখোচা দাড়ি।অবশ্য এটা হালের নতুন স্টাইল।এইদিকে অর্ক সাহেব সেদিন অফিসে লেট।তাড়াহুড়ো করে রওনা দিতে গিয়ে বেল্ট পর্যন্ত পরতে মনে নাই।
আজকে কি হয় কে জানে?ভাগ্য সুপ্রসন্ন অর্ক সাহেব সময়ের মধ্যেই মতিঝিল পৌছান।কিস্তির টাকা দিয়েই দ্রুত গাড়ি খোঁজা শুরু করেন।এক মিনিট দীর্ঘ সময় লসের কারণ ঘটাতে পারে।কম সময়ে বাসায় যাওয়া নিয়ে অর্ক সাহেব অনেক গবেষণা করেছেন ।লাভ হয় নাই।আইনস্টাইন সাহেবও বোধ হয় এই বিষয়ে ফেল মারতেন।অর্ক যখন বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্র প্রচন্ড চটপটে একবার মালিবাগ মোড়ের ঘন্টা তিনেকের ট্রাফিক জ্যামে আটকা পরে প্রেমিকা হারিয়েছেন্এটা তার জীবনের স্মরনীয় ট্রাফিকজ্যাম। সে দিন তার গায়ে ছিল প্রচন্ড জ্বর।ভ্যাপসা গরমের দিন।প্রচন্ড মানসিক যন্ত্রনায় আত্নহত্যার সাধ জাগছিল।নাবিলা তাকে সময়জ্ঞান হীন অপবাদ দিয়ে ভালোবাসার ছিন্নপত্র ধরিয়ে দেয়। যেখানে ৭টায় পৌঁছার কথা সেখানে রাত ১০টায় গিয়ে হাজির হন।প্রেমিকার ফোন কতটা ভয়ানক হতে পারে সেদিন সে তা উপলব্ধি করেছিল।যে নাবিলার ফোনের জন্য সে চাতক পাখির মতন অপেক্ষায় থাকতো।১০ কলের পর ১১ তম টি আর ধরতে পারছিল না্ ।ভয়ে।কি জবাব দিবে?প্রত্যেকটা কল তার হৃৎপিন্ড ভেদ করেছে সুতীক্ষ্ণ তীরের মতন।এই শহরে সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন যার উত্তর কোন মানুষের জানা নেই।সেটি হলো এখানে আসতে কয়টা বাজবে?বা কত সময় লাগবে।
উল্টোটাও ঘটেছে।অর্ক সময় মতো পৌছেছে।নাবিলা আসতে পারে নাই।সেটা কোন ব্যাপার না।নাবিলার অকরুন রূপে মুগ্ধ যুবকের অভাব নাই।তার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা থাকা যায়।আর অর্ক তার নামেই সমস্যা।আক্কেল আলী খান।সেই নামই সময়উপযোগী হয়ে হয়েছে অর্ক । তৎসম-অর্ধতৎসম-তদ্ভবের রূপান্তর যে ভাবে ঠিক সেই ভাবে। আক্কেল আলী -আক্কী-অর্ক।নামই সব।যতই বলা হোক নাম দিয়ে কি হবে কাম চাই।এই নামের কারনে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন প্রেমিকা জুটে নাই।বন্ধুরা চরম ঈর্ষাকাতর,বদের হাড্ডি।
যখনই কোন রূপসি তার গার্লফ্রেন্ড হবি হচ্ছি অবস্থা তখনই ব্যঙ্গ করে আক্কেল আলি আক্কেল আলি বলে রব তুলতো।আর গার্লফ্রেন্ডও বালির বাধের মতন উবে যায়।সেই কয়েকঘন্টা ট্রাফিকজ্যাম তার আর নাবিলার পথ আলাদা করে দিয়েছে।
এখন অর্ক সাহেব ট্রাফিক জ্যাম উপভোগ করেন।তার সামর্থ্যে যা আছে তিনি সেটাতে এক মুহূর্তও নষ্ট করেন না।দ্রুত গাড়ীতে উঠেন।ভালো বাস সিলেকশন করেন তারপর গাড়ীতে ওঠে আল্লাহর উপর ভরসা করে বসে থাকেন।সে তো আর গাড়ী চালিয়ে আগে যেতে পারবেনা।আর যাদু দিয়ে ট্রাফিকজ্যাম দূর ও করতে পারবেনা।ছাত্রাবস্থায় বাসে ওঠে মুখে প্রধানমন্ত্রী,যোগাযোগ মন্ত্রীর গুষ্ঠি উদ্ধার করতেন।করে খুব মজা পেতেন।চাকরি জীবনে একবার চরম বেকায়দায় পরে এখন আর সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করেন না।অন্তত বাসে না।এখন নাকি যত্র তত্র র এর এজেন্টদের ছড়াছড়ি
অর্ক সাহেব মতিঝিল থেকে উত্তরায় টিকেট কিনে দ্রুত গাড়ীতে ওঠলেন।গাড়ীতে লেখা আব্দুল্লাপুর টু মতিঝিল।সোজা ২য় তলায় জানালার পাশের সিটে বসে পড়লেন।এখন তিনি সঙ্গীত সুধা উপভোগ করবেন। গান শুনতে শনতে ঝিমিয়েও পড়ছেন।হঠাৎ বাস কনডাকটারের ডাকে ঘুম ভাঙলো।নামেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:২৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




