somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সেলিম আনোয়ার
পেশায় ভূতত্ত্ববিদ ।ভালো লাগে কবিতা পড়তে। একসময় ক্রিকেট খেলতে খুব ভালবাসতাম। এখন সময় পেলে কবিতা লিখি। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হল ভালো লাগে খুব। ভালোলাগে রবীন্দ্র সংগীত আর কবিতা । সবচেয়ে ভালো লাগে স্বদেশ আর স্বাধীন ভাবে ভাবতে। মাছ ধরতে

অর্ক সাহেবের ট্রাফিক জ্যাম বিড়ম্বনা ও ভাগ্য বিড়ম্বনা;)

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রচন্ড শীত।সমিতির চাদা দিতে মতিঝিল যাওয়া লাগবে।সরকারি অফিস বিকাল ৫টা পর্যন্ত।এরপর রওনা দেওয়া লাগবে।সমিতির ক্যাশিয়ার ইরফান সাহেব ব্যাংক কর্মমর্তা।৬টা পর্যন্ত অফিসে থাকবেন।ঐ সময়ের মধ্যেই কাজ কম্প্লিট করতে হবে।সমস্যা হলো ট্রাফিক জ্যাম।ঐ ভয়ানক জিনিসটা তাকে মানিক চিপায়(?) ফেলতে পারে।ডিরেক্টর স্যার কড়া লোক।এক মিনিট আগেও কোন ছুটি নাই।এর মধ্যেই ইরফান সাহেবের ফোন আসে।অর্ক সাহেব আজকেই কিন্তু টাকা দেয়ার শেষ সময়।সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে টাকা দিবেন।শীতকাল অফিস ফাকা।কমবেশি সবাই সরেজমিন অনুসন্ধান কর্মসূচীতে ব্যস্ত ঢাকার বাইরে।এমন কি অনেক পিয়নও নাই।এই অফিসের কে পিওন কে কর্মকর্তা বুঝার উপায় নাই।অনেক পিয়নই মাসের পর মাস ছুটিতে।বিকাল ৩টার পর তাদের টিকিটিও পাওয়া যায় না।চাকরির তদ্বীরের সময় এরা অফিসেই পরে থাকেন।চাকরি হয়ে গেলেই লাপাত্তা।তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের দাপটে কর্মকর্তারা পশ্চাদপায়ে;)।যার চাকরির বয়স ২৫-৩০ বছর।তদের তো কথাই নেই।নতুন কর্মকর্তাদের তারা থোরাই কেয়ার করেন।X(

এই অফিসে পিয়ন বিড়ম্বণা চরমে।এর জন্য চাকরির দূস্প্রাপ্যতাও দায়ী।এম এ/ডিগ্রী পাশ করা লোকজন পিয়নের চাকরি নেন ।চাকরি পাওয়ার পর তারা লাপাত্তা।কালেভাদ্রে তাদের দেখা মেলে।কয়দিন আগে অর্ক সাহেব পড়েছিলেন মহাবিরম্বনায়।পাত্রীপক্ষের লোক তাকে দেখতে আসে।এমনিতেই সরকারি অফিসের ভাঙাচুরা পুরাতন ডেকুরেশন।পাত্রীর বায়োডাটা অর্কের খুব পছন্দ হয়েছে ।ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন এওয়ার্ড পাওয়া।মাইক্রো্বায়োলজিতে এমএস করা।ভাসানী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার।পাত্রী পক্ষের উপযুক্ত খাতির করতে না পারলে?অফিসে চলছে চরম এমএলএসএস ক্রাইসিস।অর্কসাহেবের পিয়ন দীর্ঘছুটিতে।তার সবচেয়ে ঘনিষ্ট কলিগের পিয়নও তাই।এমনকি ডিরেক্টর সাহেবের পিয়নও ছুটিতে।ডিভিশনাল চিফেরও।এমনকি রহমান মিয়া যিনি চা -সিগারেট বিক্রি করেন তিনিও অফিসে আসছেন না দিনকয়েক।যথাসময়ে পাত্রীপক্ষের আগমন।পাত্রীর বড় ভাই স্যুটেড বুটেড হয়ে হাজির।তার মুখে খোচাখোচা দাড়ি।অবশ্য এটা হালের নতুন স্টাইল।এইদিকে অর্ক সাহেব সেদিন অফিসে লেট।তাড়াহুড়ো করে রওনা দিতে গিয়ে বেল্ট পর্যন্ত পরতে মনে নাই।;)ব্লেজার না পরে পরেছেন হাফহাতা সয়েটার।এমন কুক্ষনে পাত্রীপক্ষের আগমন।পাত্রীপক্ষের লোক অফিসে এসে আপ্যায়নের অভাবে বাসায় গিয়েই ভেটো দিয়ে বসে।ব্যাস বিয়ে ভঙ্গ।/:)
আজকে কি হয় কে জানে?ভাগ্য সুপ্রসন্ন অর্ক সাহেব সময়ের মধ্যেই মতিঝিল পৌছান।কিস্তির টাকা দিয়েই দ্রুত গাড়ি খোঁজা শুরু করেন।এক মিনিট দীর্ঘ সময় লসের কারণ ঘটাতে পারে।কম সময়ে বাসায় যাওয়া নিয়ে অর্ক সাহেব অনেক গবেষণা করেছেন ।লাভ হয় নাই।আইনস্টাইন সাহেবও বোধ হয় এই বিষয়ে ফেল মারতেন।অর্ক যখন বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্র প্রচন্ড চটপটে একবার মালিবাগ মোড়ের ঘন্টা তিনেকের ট্রাফিক জ্যামে আটকা পরে প্রেমিকা হারিয়েছেন্এটা তার জীবনের স্মরনীয় ট্রাফিকজ্যাম। সে দিন তার গায়ে ছিল প্রচন্ড জ্বর।ভ্যাপসা গরমের দিন।প্রচন্ড মানসিক যন্ত্রনায় আত্নহত্যার সাধ জাগছিল।নাবিলা তাকে সময়জ্ঞান হীন অপবাদ দিয়ে ভালোবাসার ছিন্নপত্র ধরিয়ে দেয়। যেখানে ৭টায় পৌঁছার কথা সেখানে রাত ১০টায় গিয়ে হাজির হন।প্রেমিকার ফোন কতটা ভয়ানক হতে পারে সেদিন সে তা উপলব্ধি করেছিল।যে নাবিলার ফোনের জন্য সে চাতক পাখির মতন অপেক্ষায় থাকতো।১০ কলের পর ১১ তম টি আর ধরতে পারছিল না্ ।ভয়ে।কি জবাব দিবে?প্রত্যেকটা কল তার হৃৎপিন্ড ভেদ করেছে সুতীক্ষ্ণ তীরের মতন।এই শহরে সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন যার উত্তর কোন মানুষের জানা নেই।সেটি হলো এখানে আসতে কয়টা বাজবে?বা কত সময় লাগবে।


উল্টোটাও ঘটেছে।অর্ক সময় মতো পৌছেছে।নাবিলা আসতে পারে নাই।সেটা কোন ব্যাপার না।নাবিলার অকরুন রূপে মুগ্ধ যুবকের অভাব নাই।তার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা থাকা যায়।আর অর্ক তার নামেই সমস্যা।আক্কেল আলী খান।সেই নামই সময়উপযোগী হয়ে হয়েছে অর্ক । তৎসম-অর্ধতৎসম-তদ্ভবের রূপান্তর যে ভাবে ঠিক সেই ভাবে। আক্কেল আলী -আক্কী-অর্ক।নামই সব।যতই বলা হোক নাম দিয়ে কি হবে কাম চাই।এই নামের কারনে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন প্রেমিকা জুটে নাই।বন্ধুরা চরম ঈর্ষাকাতর,বদের হাড্ডি।
যখনই কোন রূপসি তার গার্লফ্রেন্ড হবি হচ্ছি অবস্থা তখনই ব্যঙ্গ করে আক্কেল আলি আক্কেল আলি বলে রব তুলতো।আর গার্লফ্রেন্ডও বালির বাধের মতন উবে যায়।সেই কয়েকঘন্টা ট্রাফিকজ্যাম তার আর নাবিলার পথ আলাদা করে দিয়েছে।

এখন অর্ক সাহেব ট্রাফিক জ্যাম উপভোগ করেন।তার সামর্থ্যে যা আছে তিনি সেটাতে এক মুহূর্তও নষ্ট করেন না।দ্রুত গাড়ীতে উঠেন।ভালো বাস সিলেকশন করেন তারপর গাড়ীতে ওঠে আল্লাহর উপর ভরসা করে বসে থাকেন।সে তো আর গাড়ী চালিয়ে আগে যেতে পারবেনা।আর যাদু দিয়ে ট্রাফিকজ্যাম দূর ও করতে পারবেনা।ছাত্রাবস্থায় বাসে ওঠে মুখে প্রধানমন্ত্রী,যোগাযোগ মন্ত্রীর গুষ্ঠি উদ্ধার করতেন।করে খুব মজা পেতেন।চাকরি জীবনে একবার চরম বেকায়দায় পরে এখন আর সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করেন না।অন্তত বাসে না।এখন নাকি যত্র তত্র র এর এজেন্টদের ছড়াছড়ি /:)যেখানেই যাবেন সেখানেই র।পত্রিকায়,অফিসে,আদালতে,বাসে।আওয়ামীলীগ বিএনপিতে তো আছেই জামাতেও নাকি এখন র ঢুকে গেছে।তাই অর্ক সাহেব খুব সাবধান।যেমন সাবধনতার সাথে নিজের নাম আক্কেল আলী থেকে অর্ক করেছেন তেমনি।গাড়ীতে ওঠেই মোবাইলে গান প্লে করে কানে এরোফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে বাড়ী চলে যান্।এখন ট্রাফিকজ্যাম তার ভালোই লাগে ওটা থাকাতেইতো এত সুন্দর গান উপভোগ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
অর্ক সাহেব মতিঝিল থেকে উত্তরায় টিকেট কিনে দ্রুত গাড়ীতে ওঠলেন।গাড়ীতে লেখা আব্দুল্লাপুর টু মতিঝিল।সোজা ২য় তলায় জানালার পাশের সিটে বসে পড়লেন।এখন তিনি সঙ্গীত সুধা উপভোগ করবেন। গান শুনতে শনতে ঝিমিয়েও পড়ছেন।হঠাৎ বাস কনডাকটারের ডাকে ঘুম ভাঙলো।নামেন।X( গাড়ী থেকে নেমে কোন কিছুই পরিচিত লাগছে না।এটা কোন জায়গা ?পরে বুঝতে পারেন এটা পল্লবী।টিকেট চেকার খেয়াল করে নাই?গাড়ীতে স্পষ্ট করে লেখা টঙ্গি টু মতিঝিল ।:-*তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে শেষমেষ ভুল গাড়ীতে!!শীত বেড়েছে।পা ঠকঠক করে কাপছে।রাত প্রায় দশটা বাজে।শীতের রাত গাড়ী কমে গেছে ।এলাকা ভালো না।ছিনতাই কারী ধরলে খবর আছে।টাকা পয়সা সব যাবে..অর্ক বিশ্বজিত হয়ে যাওয়ার চান্সও উড়িয়ে দিতে পারে না ।:-/পরের দিন হরতাল।বাসে আগুন ধরিয়ে দিলে!আগে চৌদ্দ নম্বর যাওয়া লাগবে।তারপর বাসে কাকলি তার পর উত্তরা।অনেক সময় লাগবে ।মাথা ঘুরছে।বনানী ফ্লাই পাস কত সুন্দর উপর দিযে গাড়ী চললে তার খুব ভালোলাগে।এই সরকার দেশকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়েছেন।বিরুধীদলের চক্রান্তে যত অমঙ্গল সাধন।আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি?.:-/ লা ইলাহা ইল্লা আন্তা ইন্নি কুন্তু মিনাজ জোয়ায়েলেমিন..এই দোয়াটা খুব উপকারী পড়লে মুশকিল আহসান।রাতের আধারে অপরিচিত সব মানুষগুলোই কেমন ভয়ংকর মনে হচ্ছে।আজকে প্রচুর কুয়াশা পড়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:২৮
৪১টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×