ছবি-নেট
বিহঙ্গ নাটকের শুটিং হবে।ওটাতে ফরীদি আর অপি করিম অভিনয় করবেন।বন্ধু খান মোহাম্মদ বদরুদ্দিন সেটির সহকারী পরিচালক্।উল্লেখ্য তার মেধাবী অনুষ্ঠানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অংশের কিছু অংশ আমার সংগ্রহ ও প্রস্তুত করা।কিন্তু ফরীদির সঙ্গে আমার তখনো দেখা হয় নাই।
প্রথম দেখা তাই নাটকের শুটিং এ। নাটকের প্রথম শ্যুট শহীদ মিনারে।আমরা অপেক্ষায় কখন ফরীদি আসেন।আর আমার অপেক্ষা সরাসরি তাকে দেখা। বণ্ধুটি বলল দেখলা ফরীদি ভাই ইউনিটকে ভোগাচ্ছে।অনেক বিলম্বে আসলেন।
এসেই অপির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন রুমান্টিক ভঙ্গিমায় তারপর অপিও তার হাতে নিজের হাত সমর্পন করলেন দুজন একসঙ্গে এগিয়ে গেলেন শহীদমিনারের দিকে কিছু ডায়লগ বিনিমিয় বাস এই অংশের শ্যুটিং শেষ।
এরপর মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর সেগুন বাগিচায় শ্যুটিং।ফরীদি অপিকে জাদুরঘর দেখাবেন এমন সিক্যুয়েন্স।একপর্যায়ে ফরীদির অট্টহাসি পৃথিবীর ২য় কোন অভিনেতা যা দিতে অক্ষম। শুনলে গা শিরশির করে। ঠা ঠা হাসি।
এরপর ফরীদি স্ক্রিপ্টে একবার চোখ বোলালেন পরিচালককে বললেন ওভাবে হবে না অপি আমি ডায়লগ দিব তুমি উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে পাল্টা ডায়লগ দিবে। পরিচালকের মাথায় হাত।
অপি শ্যুটিং শেষে পরিচালককে তেল মারছেন আরিফ ভাই স্ক্রিপটা আপনি রেখে
দিবেন পরে আমি ওটা দিয়ে নাটক করবো । তখন পরিচালক বললেন তাহলে ফরীদি ভাইয়ের চরিত্রে আমার অভিনয় করা লাগবে বুঝলা।
আসলে ফরীদি রবীন্দ্রনাথের ডায়লগও চেঞ্জ করতেন! প্রয়াত অভিনেতা গোলাম মোস্তফা তাতে একটু আপত্তিও জানিয়েছিলেন। অন্তত কবি গুরুর ডায়লগ চেঞ্জ করা অনুচিৎ।রবি ঠাকুর ছিলো তার গর্বের বিষয়। ছায়ানটে তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি জুতো পরে হাটতেন।ওটা তার ভালোবাসার অধিকার! রবি ঠাকুরের অনেক লেখাই তার মুখস্ত ছিল।তিনি ছিলেন দারুণ মেধাবী। একটু এলোমেলো।আমি তার মধ্যে সাগরের বিশালতা পেয়েছি ।পেয়েছি এক মহান পিতৃ সত্ত্বা।সবাইকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতেন কিন্তু ভালোবাসতেন।এই দূষ টা আমার মতই।আমিও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করি অনেক ব্যক্তিত্বকেও।কিন্তু আমিও ভালবাসি ।যারা আমার কাছের তারা বুঝেন।এই ব্লগের অনেকেই হয়তো শীঘ্রই তা বুঝবেন। ওই দোষ টুকু না থাকলে তিনি আরও অনেক এগুতেন।
তবে তখন জানতে পারি মিডিয়া অনেক খারাপ জায়গা । মিডিয়া ষড়যন্ত্র ভয়ানক ষড়যন্ত্র। সুবর্ণ-ফরীদি বিচ্ছেদ এইরকম একটা ষড়য্ন্ত্রের ফসল। মেধাবী অনুষ্ঠনে
সুবর্না গোলাম মোস্তফাকে বাড়িয়ে উপন্থাপন করতে গেলে ফরীদি থামিয়ে দেন।
এতেই তার ন্যায় পরায়ণতা প্রমানিত হয়।
এত নীতিবান মানুষ এই পচা সমাজে ভালো থাকার কথা নয় । তিনি ছিলেন
সত্যিকার প্রচার বিমুখ। তার অসুস্থতা প্রচার পায়নি এমন কি মৃত্যু?সামনে ফেব্রুয়ারী
মাস বইমেলা। ফেব্রয়ারীতেই তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা ।তার মৃত্যুও এই মাসে।এই মাসজুড়েই আমি থাকবো ঢাকার বাইরে বাংলাদেশের কোন এক সীমান্তে। যাই হোক।
এর পর শ্যুটিং উত্তরা। ফরীদি আর অপির বিয়ের অংশ। কাজি চরিত্রে অভিনেতা নাই আমাকে জিজ্ঞাসা করা হলো আমি তাতে অভিনয় করবো কি না?আমি অপারগতা প্রকাশ করি।
ফরীদির একটা চেয়ার ছিল। সেটাতে কেউ বসে না। শহীদুল ইসলাম খোকন বসা ছিলেন আমি বসতে গেলে বললেন ওটা ফরীদি ভাইয়ের চেয়ার ওখানে কেউ বসে না। আমিও বসি নাই । তিনি আমার চেহারার দিকে দেখলেন অদ্ভুত ভাবে।আমার খুব হাসি পাচ্ছিল।মনে মনে ভাবছিলাম অপনাদের হাতির মতন নায়িকাদের কোলে নেয়ার সাধ বা সাধ্য কোনটাই আমার না্ই।
চোরাবালি সিনেমায় শহীদোজ্জামান সেলিমের সেই অদ্ভুত হাসি কিন্তু ধার ওধার নাটকে ফরীদির কাছ থেকেই ধার করা। সেই হাসির নাটকে ফরীদির সহঅভিনেতা ছিলেন শহীদুজ্জামান সেলিম্।
এত অল্প সময়ে এত ভালো অভিনয় আর কোন অভিনেতার পক্ষে করা সম্ভব নয়।
এইভাবে অনেকের অভিনয়ের মধ্যেই ফরীদি সবার অগোচরে উপস্থিত হবেন দর্শকরা তাদের আকুন্ঠ প্রশংসাও করবেন।তাই তো ফরীদি রবে নিরবে। মিডিয়ার লোকরা নিজের ঢোল বাজাতে ব্যস্ত।কৃতজ্ঞতা প্রকাশে নিজে ছোট হতে যাবেন কেন? বন্ধু আফজাল,মিলন আর আমার মত তার ভক্তরা হয়তো মনের গভীরে শ্রদ্ধা নিয়ে তাকে স্মরন করতে থাকবে যত দিন এদেহে প্রাণ আছে।
আমার শ্রবণ করা শেষ তার কন্ঠস্বর যা আমার কনে এখনো বাজে
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোয়াঁবো
আমি বিষপান করে মরে যাব!
বিষন্ন আলোয় এই বাংলাদেশ
নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ
প্রান্তরে দিগন্তে নির্মিশেষ--
এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভুমি
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোয়াঁবো
আমি বিষপান করে মরে যাব!
ছবি-নিজস্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৫৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




