somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সেলিম আনোয়ার
পেশায় ভূতত্ত্ববিদ ।ভালো লাগে কবিতা পড়তে। একসময় ক্রিকেট খেলতে খুব ভালবাসতাম। এখন সময় পেলে কবিতা লিখি। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হল ভালো লাগে খুব। ভালোলাগে রবীন্দ্র সংগীত আর কবিতা । সবচেয়ে ভালো লাগে স্বদেশ আর স্বাধীন ভাবে ভাবতে। মাছ ধরতে

আমার জেলে বেলা আর শিং মাছ যন্ত্রণা (ছোট্ট গল্প);)

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার ছোট বেলা..বলতে গেলে কিছু মনে নাই।একটা ব্যপার মনে আছে।আমি মাছ ধরার নেশায আসক্ত ছিলাম।সহজ বাংলায় আমার জীবনের লক্ষ্য ছিলো জেলে হওয়া।জেলেদের আমি অবাক হয়ে দেখতাম।আর তাদের তেলেসমাতি উপভোগ করতাম । পানির নিচ থেকে তারা কিভাবে এত বড় বড় মাছ তুলে আনেন ! আমার দৃষ্টিতে তারাই ছিলো হিরু । আমাদের গ্রামের পুকুর বিল সেচা হলেই আমার ডাক পড়তো। মাছ ধরা হতো বন্ধের দিনে মানে আমার স্কুল যখন বণ্ধ থাকবে সেই রকম সময়ে।তারপর মাছ ধরার সময় আমাকে সুযোগ দেযা হতো বড় মাছটা ধরার। দেখা গেলো পুকুরে ৫টি বড় শোল মাছ ধরা পড়লো তার সবগুলো আমার হাত দিযেই ধরা হতো আর আমাকে পায় কে?গর্ব নিয়ে সবার কাছে গল্প দিতাম সবচেয়ে বড় ৫টা মাছের সবগুলোই আমার হাতে ধরা!আমাদের পুকুরের বিশেষত্ব হলো এই যে পুকুরটাতে সবচেয়ে বেশি শিং মাগুর আর কই মাছ পাওয়া যেত। বিশাল আকৃতির শিং আর মাগুর। মাগুর ধরতে গিয়ে হাত ফেরে গেছে,,শিং মাছ কাটা দিয়েছে ,কই মাছ চাপা দিয়ে চামড়া তুলে ফেলেছে আরও কত ঘটনা।মাছের উপর আমার পি এচ ডি করা হয়ে গেছে ছোট বেলাতেই। কেন যেন আমি ইলিশ মাছ খেতাম না। ওটার গন্ধ আমি পছন্দ করতাম না। আর এখন ইলিশ মাছ পাই না।/:)


চ্যাক ম্যাকা মাছ
শিং মাছের সঙ্গে শত্রুতা

শিং মাছের কাটা খাওয়ার পর কেঁদেছি অনেকবার।তারপরও মাছ ধরার নেশা আমায় ছাড়ে না । বড়শিতে কই শিং পুটি মাগুর মাছ ধরেছি । গ্রমের বাড়ী গেলেই বড়শি বানিয়ে ছিপ ফেলতাম পুকুরে । আর আমার বাল্যবন্ধুরা যারা গ্রামে থাকতো
তারা জানতো আমার গ্রামে যাওয়া মানেই নতুন বড়শি নতুন ছিপ আর মৎস স্বীকার।একবার পুকুরে প্রচুর শিং মাছ পাওয়া যেতে থাকলো । পুকুরের গর্তে নাকি মেগা
সাইজ সব শিংমাছ পাওয়া যায় । একেক গর্তে ১৫ / ২০ টা পর্যন্ত শিং মাছ।সেগুলো ধরা হয় হাতে গামছা পেঁচিয়ে।বাসায় বসে হাতে গামছা পেঁচানো প্র্যাক্টিস করতে থাকি।গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল আরকি? আমার জেলে মন চলে যায় পুকুরে খালে বিলে।পড়া লেখায় মন বসেনা।বাবা আমাকে গ্রামের বাড়ী নিয়ে গেলেন।হাতে গামছা পেঁচিয়ে গর্তে ঢুকিয়ে দিলাম কিন্তু কোন ভাবেই মাছ ধরতে পারলাম না।অন্যরা গামছা দিয়ে বড় বড় শিং মাছ ধরে ফেলেছে । X(

পরে অনেকটা গোস্বা নিয়ে খালি হাত গর্তে ঢুকিয়ে দিলাম । শিং মাছের খনি পেয়ে গেলাম ।খালি হতে একফুট লম্বা শিং মাছ তুলতে থাকলাম । এমন কি হাতে কাটা বিধানো অবস্থায় মাছ ডাঙায় তুললাম। ব্যথায় হাত টনটন করতে থাকলো । দাদীমা আমাকে তার সাধ্যমত ব্যথা তাড়ানোর দাওয়া দিতে থাকলেন । কিন্তু ব্যথা কমছিল না । দাদীমার ব্যথার তাড়ানোর অপারগতায় আমি খুব বিরক্ত হচ্ছিলাম আর কাঁদছিলাম।ভাব খানা এমন এই সামান্য কাটা ব্যথা সারাতে পার না তুমি কেমন দাদীমা হয়েছো।কিছু পার না।আমার চেয়ে দাদী বেশি কান্না করছিলেন।তারপরও আমার শিংমাছ ধরা থামে নি।B-)

সবচেয়ে তীব্র কাঁটার আঘাত পাই পিচ্ছি একটা শিং মাছ থেকে। সেটির সাইজ হবে সর্বোচ্চ ৩ ইঞ্ছি গর্তে হাত দিলাম গর্তের তুলনায় সেটি ছিল অনেক ছোট।সহজেই বডি মুভ করতে পারছিল।সুন্দর করে ঘুরে কাঁটার আলতো ছোঁয়া দিয়ে গেল।সঙ্গে সঙ্গে ব্যথায় ভরে গেল হাত,মাথার মধ্যে পিন মারার মতন হিট করতে থাকলো আর আমার গাঁয়ে জ্বর এসে গেলো।ক্যাচিরা জিওলের(ছোট্ট শিং মাছ) কত বিষ সেদিন হাড়ে হাড়ে টের পেলাম।এই রকম ভয়নক কাটা আর জীবনে ও খাইনি । প্রতিটা শিং মাছের কাটায় আমার বিরত্ব গাঁথা ছিলো।

কই মাছ আমার প্রিয় । শুধু কই ভাজা খেতে মজা এই জন্য নয় । কইমাছ শিং মাছ একসঙ্গে রাখলে একরাতে শিং মাছ মরে শেষ।কইয়ের চাপার দাপটে শিংমাছ অসহায়। কইমাছের ক্ষমতায় আমি মুগ্ধ বিমোহিত ।আর কই মাছের প্রাণ অনুপ্রাণিত করার মত। :)

সবশেষ শিংমাছের কাটা খেলাম আজ।এখানে বীরত্বের লেশ মাত্র নেই।শিংমাছ কিনে রিকশায় বাজার থেকে ফিরছি।রিকশা ঢাল দিয়ে নামার সময় শিংমাছের ব্যাগ থেকে সবগুলো শিং মাছ বেড়িয়ে গেল।পরলো রাস্তায় ধূলায়।সেগুলো তুলে ব্যাগে রাখবো।মাছগুলোর প্রতি অনেক দয়া হলো ।রিকশা সেগুলোর উপরদিয়ে গেলে নির্ঘাত মারা যাবে । সেইরকম তাজা মাছ! সহজে ধরা যাচ্ছিল না। একটা বড় শিং পুরো সন্ত্রাসি কায়দায় ডান হাতের অনামিকায় কাটা চালন দিলো ।আঙ্গুল থেকে রক্ত পড়তে থাকলো ।কমছে কম ২০ ফোটা রক্ত পরেছে। ওভাবেই গন্তব্যে পৌছে প্যারাসিটামল খেলাম, গরমপানি, ঠান্ডা পানির চ্যাকা দিলাম.. সবশেষে মরিচ আর লবন মিশিয়ে হাতের আঙ্গুলে দিলাম।তারপরও আঙুর ফুলে নীল হয়ে আছে।/:)


শিংমাছ গুলোর উপর ব্যাপক ক্ষুব্ধ হলাম । সেগুলো জিইয়ে রাখার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম । তাদের সবগুলোকে লাল একটা বালতিতে নিয়ে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের অনুকরণে ১০০ গ্রাম লবন ছেড়ে দিলাম...ছটফট করতে করতে সেগুলোর মৃত্যু হলো । বাজার থেকে বাত্তি তিতা করলা এনে সেগুলো রান্নার আয়োজন রেডি । তিতা লবণ দিয়ে মেরেছি এখন মরার পরেও সেগুলোকে তিক্ত সিদ্ধকরণ করে ইচ্ছে মতন চিবিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেছি । এটা হলো দৃষ্টান্ত মূলক রান্না যাতে শিংমাছগুলো এমন অনৈতিক কান্ড ভবিষ্যতে ঘটাতে সাহস না করে।;)
______________________
বিঃদ্র: আমার সেজু মামা শিং মাছের কাটা খেয়েছিলেন।যে মাছটি তাকে কাটা দেয় সেটি ধরে তিনি দা দিয়ে কুচি কুচি করে কেটেছিলেন আর সারদিন কাঁদছিলেন।এই ঘটনা আম্মুর মুখে অনেকবার শনেছি।;)

আমার জীবনে প্রথম মাছ ধরা হলো একটা কই মাছ।তখন আমি সাতারও জানতামনা ।বয়স ৫ এর বেশি হবে না।পায়ের তলে পড়ল একটা কই মাছ সেটা হাত দিয়ে ধরে ওঠালাম।:Pমাছটি নানাকে দেখাতে গিয়ে কইয়ের খামছি খেয়ে পানিতেই ছেড়ে দিই।মনের আনন্দ নিমিষেই বেদনায় পরিণত হয়।/:)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:১১
৩৪টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×