somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সেলিম আনোয়ার
পেশায় ভূতত্ত্ববিদ ।ভালো লাগে কবিতা পড়তে। একসময় ক্রিকেট খেলতে খুব ভালবাসতাম। এখন সময় পেলে কবিতা লিখি। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হল ভালো লাগে খুব। ভালোলাগে রবীন্দ্র সংগীত আর কবিতা । সবচেয়ে ভালো লাগে স্বদেশ আর স্বাধীন ভাবে ভাবতে। মাছ ধরতে

আমার বাটু কেভ ভ্রমন ও এক বেলজিয়ান তরুণীর বানর বিড়ম্বনা

১৩ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম সময় সুযোগ হলে বাটু কেভ ভ্রমনে বেড় হবো। সেদিন শুক্রবার সুযোগ এসে গেল । ওখানে আমার আবাসস্থল কাজাং থেকে যাওয়ার দুটি উপায় আছে। বাস পথে অথবা ট্রেন যোগে। ট্রেনে যাবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। কারন মালয়েশিয়ার ট্রেন যোগাযোগ তথা ট্রেন ভ্রমন দারুন উপভোগ্য। এমন উপভোগ্যের ভ্রমন সুযোগ হাত ছাড়া করিনি আমরা নয়জন।দুই ট্রেনে সোজা পৌছে গেলাম বাটু কেভ। যাওয়ার পথে চমৎকার সব স্থাপনা দেখে প্রকৃতির অপরূপ রূপসুধা লেহন করতে করতে আর বন্ধুরা মজার কথা বলতে বলতে চলছিল আমাদের এই আনন্দ ভ্রমন। আমরা বাদে অন্য সবাই চুপচাপ বসে। আর আমাদের মুখে কথার ফোয়ারা। কথার মধ্যে ঘুরে ফিরে আসছিল আর কোথায় কোথায় যাওয়া যায়।বিশ্বকাপ ফুটবল।সবাই তাদের পরিবারকে খুব মিস করছিল। তাদের ছোট মেয়ে ভ্রমনে থাকতে পারলে কত খুশি হত আরও অনেক কথা । আমার মনে প্রধান উৎসাহটা অন্য একটা কারনে।তবে এখন সেটা না বলাই শ্রেয়্ ।চলতে থাকলাম দূরন্ত গতির ট্রেনে ভিন্ন ভিন্ন দেশের ভিন্ন রঙের মানুষের সঙ্গে।

চলার পথেই বুঝতে পারলাম বাটু কেভের ধর্মীয় গুরুত্ব আছে হিন্দু ধর্মালম্বী মানুষের কাছে। পুত্রা নেমে ট্রেন বদল করলাম। তারপর আধঘন্টার মধ্যে পৌছে গেলাম বাটু ।বাটুকেভ।


বাটু কেভ নাম করন করা হয়েছে বাটু নদীর নামানুসারে।ট্রেনে বসেই বাটু কেভ তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছিল খাড়া ঢাল বিশিষ্ট চুনাপাথরের পাহাড়ের একাট বিশাল আকৃতির হনুমানের মূর্তির মাধ্যমে ।ওটা অন্য কেউ নয় রামায়নের সেই হনুমান যিনি লংকা জ্বালিয়ে নিজের চেহারাখানি পুড়িয়ে ফেলেছিলেন।ওটা উচ্চতা প্রায় পনের মিটার ।


















সামনে এগুতেই মূর্তিটির সামনে দেখা গেল একটি মন্দির।চমৎকার সব স্থাপত্যের উপস্থিতিতে সেটি দারুন সমৃদ্ধ ময়।

আর একটু এগিয়ে গিয়ে ছোট্ট একটা লেক মতন দেখা গেল ।সেখানে রঙিন সব মাছ ভেসে বেড়াচ্ছে ।ওটার চারদিকে সুন্দর সোনালী মূর্তি খচিত।পাহাড়ঘেরা পাশটায় কৃত্রিম ঝর্ণামতন সৃষ্টি করা হয়েছে। সেগুলো বিভিন্ন কারুকার্জ খচিত পথ হয়ে লেকের পানিতে পরছে।

ঠিক লেকটার পার্শ্বে দাড়ানো সময়টায় মুশলধারে বৃষ্টি শুরু হলো। আমরা একটা ফুলের দোকানে দাড়ালাম। বৃষ্টির নৃত্য উপভোগ করতে থাকলাম। সেই নৃত্যের ছবি ওঠাতে থাকলাম ।পানি জমে পায়ের জুতো ভিজিয়ে দিতে থাকলো।

বৃষ্টি শেষ হলো ।কয়েকশত কবুতর বৃষ্টি শেষে আনন্দে উড়া শুরু করলো। আমরাও প্রভু মরোগান এর স্বর্ণ মন্দিরে সামনে চলে এলাম। এটাই বাটু কেভের প্রধান আকর্ষণ।সোনা ঢেলে রং করা হয়েছে।রোদ পরে সোনালী ঝিলিক দিতে থাকলো মূর্তিটি।বৃষ্টির পানিতে স্নান করে এটির ঔজ্জল্য কয়েকগুন বেড়ে গিয়েছিল। এটির উচ্চতা ৪২.৭ মিটার বা ১৪০ ফুট । এটি নির্মানে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৪(চব্বিশ) মিলিয়ন রূপী। এটি পৃথিবীর উচ্চতম মরোগান মূর্তি ।


মূর্তিটির পাশ দিয়েই বিখ্যাত সেই ২৭২ ধাপের সিড়ি।






সিড়ি বেয়ে ওপরে ওঠতে থাকলাম। কিছুদূর ওঠার পর হাতের বায়ে দেখা গেল অন্ধকার গহবর সাইন বোর্ড ঝুলছে। সেদিকটায় এগিয়ে গেলাম।কিছুদূর যাওয়ার পর দেখি ফিতা দিয়ে রাস্তা ব্লক করা। পাশে বসে আছে ওখানকার কর্মকর্তা। সেখানে ঢুকতে হলে আলাদা টিকেট কাটতে হবে।সেই গুহার ভিতরে প্রচীনতম প্রানীর বসবাস কিন্তু ফ্লাশ ব্যবহার করে ছবি ওঠানো যাবেনা। সেখান থেকে ফিরে আবার উপরে ওঠতে থাকলাম অন্য গহবরের ভিতর। সেখানে পাহাড়ের দেয়ালে খোদাই করে মূর্তি বসানো হয়েছে। পুরো গুহা ঘিরে মহাভারত রচনার প্রয়াস শতভাগ সফল হয়েছে।






একেবারে শেষ গুহাতে একটি মন্দির। সেখানে বেশ কয়েকটি মূর্তি।তবে একটি ময়ূরমূর্তি বেশ চমৎকার লেগেছে।পাহাড়ের ফুটো দিয়ে আলো প্রবেশ করছিল।দেখতে দারুন লাগছিল। আর গুহার গা বেয়ে ঝুলে আছে সব শিলাখন্ড।









কেভটির প্রাণি বৈচিত্র বলতে কবুতর আর বানরের ব্যাপক উপস্থিতি।বানর গুলো পথচারীদের হাত থেকে খাবার কেড়ে নিয়ে বেশ বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে।আর লেকের আছে চমৎকার সুন্দর রঙিন মাছ।






স্যাম এর স্মরনীয় ভ্রমন

২৭২ ধাপের ঠিক মাঝামাঝি যেখানটায় ডার্ক কেভের অবস্থান।সেখানে দুই বেলজিয়ান তরুনী বানর বিড়ম্বনায় পরে যায়।বানর স্যামের হাত থেকে খাবারে ব্যাগ নিয়ে গেলে সে দারুন ঘাবড়িয়ে যায়।সে কান্নাকাটি শুরু করে দেয় রুবীও ভয় পেয়ে যায়।কেউ তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসছেনা দেখে আমি চলে যাই স্যামের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে।সে ভয়ে নীল হয়ে গেছে।টপটপ করে চোখে পানি পরছে।প্রচন্ড মায়া হলো ওর জন্য।সিড়িতে দুটো উচু ডিভাইডার দিয়ে তিনটি সারি করা।ডিভাইডার টপকে ওর কাছে যাওয়া চেয়ে ওকেইে আমার কাছে নিয়ে আসা শ্রেয়তর মনে হলো।ওকে ডিভাইডারের উপর দিয়ে উচু আমার কাছে নিয়ে আসলাম।তারপর রুবীও চলে আসল্।স্যাম স্বাভাভিক হতে সময় নিল পনের মিনিট।আমাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে ততক্ষন।পরে জিজ্ঞাসা করলাম। এত ভয় পেলে কেন ?বানর হিংস্র কোন প্রাণি নয়।তার সহজ সরল উত্তর সে জীবনে বানর দেখেনি।বানরের চোখ ও খুব ভয় পায়।আমিও তাকে বুঝালাম বানর দেখে ভয় পাওয়াতে বানর মাথায় চেপে বসেছে্। বানর মুক্ত এলাকায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমাকে সে ছাড়েনি।বিদায় বেলায় আমার ছবি ওঠিয়ে নিয়ে বলল এটা তার জীবনের স্মরনীয় ভ্রমন। জীবনেও এটি সে ভুলবেনা। আমি আর কি বলব? আমি বললাম আমি বাঘ দেখে ভয় পেতে রাজি আছি সিংহ দেখেও কিন্তু বানর দেখে ভয় পেতে নয় ।

পাহাড়টির ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

আমার ভ্রমনটির অন্যতম কারণ পাহাড়টির ভূতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণ।চুনাপাথর মনেই তো সাগরতলদেশের একটা ব্যাপার চুনাপাথরের পাহাড়ে অবস্থান করা মানেই প্রাগৈতিহাসিক কালের কোন সমুদ্রের উপর দাড়িয়ে থাকা।প্রায় সমতল জায়গায় হঠাৎ করে পাহাড় মানে একটা চ্যুতির উপস্থিতি।নরম চুনাপাথর হওয়াতে সেটি আরো যৌক্তিক মনে হয়। কারণ ক্ষয় হয়ে অন্য অংশগুলো দেবে গেলে সেটিও দেবে যাওয়া স্বাভাবিক।তা হয়নি। হয়তো অতীতের কোন চ্যুতি এর উত্থান ঘটিয়েছে।আর গুহা বা গহবর চুনা পাথরের পাহাড়ের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য।এখানে গভীর বৃষ্টিপাত হয়।বৃষ্টির পানি পাহাড় বেয়ে নিচে নেমে আসে।চুনাপাথর পানিতে দ্রবীভূত হয়ে নিচে নেমে আসে। এভাবে লাইম ধূয়ে ধূয়ে পাহাড়ের ভিতরে ক্যাভিটি বা ফাকা যায়গার সৃষ্টি করে। ফলে বাটু কেভের গুহা গুলো ডিসলিউশন পদ্ধতিতে হয়েছে ধরে নেয়া যায়।এখানকার চুনাপাথরে কোন প্রকার ফসিল দৃষ্টিগোচর হয়নি।হতে পারে ফসিল গুলো খুব ছোট আকৃতির।মানুষের খালি্ চোখে দেখার মত নয়।চুনাপাথরে ফসিল থাকতেই হবে তেমনটি আবশ্যক নয়। ননফসিলিফেরাস বা জীবাশ্ম বিহীন চুনাপাথরও আছে। আমি এটাকে সে গোত্রেই ফেললাম।ফসিলের উপস্থিতি বয়স নির্ধারণে দারুন সহায়ক। তবে নিশ্চিৎ করে বলা সম্ভব নয়।এটা অনুমেয় যে পাহাড়টি কয়েক মিলিয়ন বছর আগে সৃষ্টি হয়েছে।


পাহাড়ে ফাটলের উপস্থিতি ভূধ্বস ঘটাতে পারে।


এটিতে প্রচুর জনসমাগম হয়।এটি সম্পর্কে যে লিজেন্ডারী আছে তা হলো এটিতে নাকি গড অবস্থান করছেন।মানুষ এখানে পুজা আর্চনা করে গডকে খুশি করে তাকে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করেন।গড গোস্বা করেই এখানে লুকিয়ে আছেন।তার গোস্বা ভাঙানোর জন্য মানুষজন পুজা দিতে আসে। একজন বেলজিয়ান তরুনী রুবীর কাছ থেকে তথ্যটি পাওয়া।

তবে এখানে বছরের নির্দিষ্ট দিনে পূজা আর্চনা হয়।তখন ব্যাপক লোক সমাগম হয়।

গড খুশি হোক বা না হোক কেউ এখানে বেড়াতে আসলে তার মন খুশি হওয়ার মত সৌন্দর্য এখানে আছে।চমৎকার সে স্থাপত্যের উপস্থিতিতে ভাললাগাটা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।

বাটুকেভ ভ্রমন শেষ হলেও ভ্রমনের কিছুটা বাকি ছিল আর সেটি হলো কেএলসিসির লেকে শব্দের তালে তালে পানির ফুয়ারার রঙিন নৃত্য উপভোগ করা। সে উদ্দেশ্যেই দ্রুত বাটুকেভ ত্যাগ।অবশ্যই মনোরেলে

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:১৫
৩৯টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×