somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সেলিম আনোয়ার
পেশায় ভূতত্ত্ববিদ ।ভালো লাগে কবিতা পড়তে। একসময় ক্রিকেট খেলতে খুব ভালবাসতাম। এখন সময় পেলে কবিতা লিখি। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হল ভালো লাগে খুব। ভালোলাগে রবীন্দ্র সংগীত আর কবিতা । সবচেয়ে ভালো লাগে স্বদেশ আর স্বাধীন ভাবে ভাবতে। মাছ ধরতে

রাসেল কার্সনের সাইলেন্ট স্প্রিং-পরিবেশ আন্দোলনের যুগপ্রবর্তন কারী বই

৩১ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাসেল কার্সনের লিখা সাইলেন্ট স্প্রিং।এটি প্রকাশিত হয় ৪ জুন,১৯৬৩ সালে।মাত্র ৬৫ পৃষ্ঠার বই।সেই সময়টাতে লেখিকা ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যপথ যাত্রী।মাথার টাক ঢাকার জন্য তিনি গাঢ় বাদামী পরচুলা পরে পেস্টিসিড সিনেট উপকমিটির কাছে বইটি উত্থাপন করেছেন ।


বইটির সঙ্গে বেশ কিছু লিজেন্ডারী ওতপ্রতভাবে মিশে আছে


“The book that birthed modern environmentalism”
এমন একটি বই যেটি আধুনিক পরিবেশবাদের জন্ম দিয়েছিল

“This book was a shaft of light that for the first time illuminated what is arguably the most important issue of our era.” - Al Gore (45th American vice President)

"বইটি ছিল যুগের প্রথম আলোকবর্তিকা যা যুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর অবতারণা করেছে।" আল-গোর। (যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫ তম ভাইস প্রেসিডেন্ট)

Rachel Carson’s Silent Spring, A book that changed the world - Mark Stoll (is associate professor of history at Texas Tech University in Lubbock, Texas)

"রাসেল কার্সনের সাইলেন্ট স্প্রিং,এমন একটি বই যেটি পৃথিবীতে পরিবর্তন সাধন করেছিল ।" মার্ক স্টল

বইটির দুই মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছিল। যেটিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে কিভাবে মানুষ ডিডিটি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকৃতিকে গলাটিপে হত্যা করছিল ।



বইটি ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি করে ।এমন একটা সময়ে বইটি পাবলিশ হয় যখন ডিডিটি নামের কীটনাশকটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছিল কৃষি কাজে ,ম্যালেরিয়ার বাহিত মশা নিরুধণে মোদ্দাকথা মানব জীবনের সর্বাধিক প্রয়োজনিয় একটা দ্রব্য হিসেবে ডিডিটির অবস্থান অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠেছে ।

বইটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিডিটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বইটি বাজেয়াপ্ত করার প্রচেষ্টা চালান ।তার ব্যাপক অর্থ ঢেলে বইটির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে শুরু করেন ।তারা জোরালো যুক্তি পেশ করেন ডিডিটি দিয়ে কীটপতঙ্গ মারার ফলে কৃষিক্ষেত্রে তথা খাদ্য উৎপাদনে বিপ্লব সাধিত হয়েছে ।সেটি ব্যবহার বন্ধ হলে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হবে আর ফলে অপুষ্টিতে অনাহারে প্রচুর লোক মারা যাবে ।তারা যুক্তি দেযার চেষ্টা করেন যে বৃহত্তর স্বার্থে সামান্য ক্ষতি মেনে নেয়া উচিৎ।মানে ডিডিটি ব্যবহার করে পরিবেশের কিছুটা ক্ষতি হলেও লাভ হবে ঢের বেশি।

তারা বিল কার্সনের সাইলেন্ট স্প্রিং বইটির খুত বের করতে ওঠে পরে লাগলেন । এও অভিযোগ করলেন বিলকার্সন শুধুমাত্র ডিডিটির ক্ষতিকর দিকগুলি তুলে ধরেছেন। কীটনাশক হিসেবে সেটির বিকল্প হিসেবে কি ব্যবহার করা হবে তা উল্লেখ করেন নি ।

তাছাড়া সেই সময়টাতে ম্যালেরিয়া রোগের প্রকোপে মৃত্যুর সংখ্যাও ছিল যখেস্ট । প্রচুর লোক মারা পরতেন এই ম্যালেরিয়া রোগে আর সেটি প্রতিরোধের প্রধার হাতিয়ার ছিল এই ডিডিটি।মানুষের মৃত্যুর চেয়ে ক্ষতিকর কিছুই হতে পারে না । তাদের দাবী ডিডিটি উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা মানে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ টেনে আনা ।

ডিডিটি সবচেয়ে শক্তিশালী কীটনাশক।যার ব্যবহারে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ, মশা সুনিশ্চিৎ ভাবে বিতাড়িত হয় ।তারা ডিডিটি উৎপাদন বন্ধকে সরাসরি মানবতা বিরুধী বলার প্রচেষ্টা চালায় ।

এত এত অপপ্রচারের পর হিতে বিপরীত হয় বইটির কাটতি বেড়ে যায় কয়েকগুন । এটি বেস্ট সেলার হয়ে যায় নতুন রেকর্ড গড়ে।


কীটনাশকের ভায়লো থাবায় সমস্ত মাছ মরে শেষ


কি আছে এই বইতে? যা এত বেশি সংখ্যক মানুষকে আকৃষ্ট করতে পেরেছিল ।বিল কার্সন ডিডিটির ক্ষতিকর ভূমিকার কথার বিশদ আলোচনা করেছে বইতে ।মিসিগানের একটি শহরে ডিডিটি ব্যবহারে ফলে মাছগুলি মরে ভেসে ওঠেছিল ।ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের সঙ্গে উপকারী সব কীটপতঙ্গ মরে সাফ হয়ে গেছে ।বিশেষ করে যেগুলি মাছ খাবার হিসেবে গ্রহণ করতো ।কীটনাশক যক্ত খাবার খেয়ে স্যামন ফিস মরে যাচ্ছিল আর তাদের ডিমউৎপাদন ব্যহত হয়েছিল ।আর মাছদের খেতে নারে মাছরাঙা গুলি,দোয়েল পাখিগুলি মরে সাফ হয়ে গিয়েছিল ।যে দুএকটি পাখি বেচে ছিল সেগুলো ঠিকমত দাড়াতে পারছিল না। রীতিমত কাপছিল। মোটকথা ডিডিটির সবুজ বিপ্লব অদ্ভুত নিরবতা ডেকে এনেছিল। নিরব বসন্তের মত ।পাখির কলতান ছিলনা । ছিলনা কোকিলের কুহু ধ্বনি ।নৈঃশব্দের শশ্মান রচিত হয়েছিল মানুষের জীবন ঘিরে । সেটাকেই বিল কার্সন বলেছিলেন সাইলেন্ট স্প্রিং।বলা যায় মরার বসন্ত।

কীটনাশক যেভাবে জীবন ধ্বংস করে


কীটনাশক শুধু ফসলের ক্ষতিকর কীটগুলি মেরে ফেলে না।এগুলি সব উপকারী কীটগুলি মেরে ফেলে।যেগুলি খাদ্য শৃঙ্খলের প্রথমিক সদস্য । তাছাড়া মাটিতে মিশে গিয়ে সেগুলো সুরক্ষিত থেকে যায় বছরের পর বছর ।সহজ করে বলতে গেলে চিরস্থায়ী পরিবর্তন নিয়ে আসে মাটিতে ।বৃষ্টির পানির সঙ্গে সেগুলো ছড়িয়ে পরে জলাশয়ে ।তারপর জলাশয়কেও দূষিত করে । মাছ পাখি কীটপতঙ্গ সব মরে যায়।


জলজ প্রাণঘাতি ডিডিটি

শুধু তাই নয় সেগুলোর বিষক্রিয়া প্রতিহত করার মতন অভিযোজন ক্ষমতা নিয়ে নতুন কীটের জন্ম হওয়ার পথ সুগম করে ।


ছবি ডিডিটি

বিল কার্সন বইটিতে ডিডিটির বিকল্প হিসেবে পোকামাকড় দূরীকরণের ভেষজ পদার্থের কার্যকারিতা নিয়েও আলোকপাত করেছেন বইটিতে ।


Rachel Carson-Silent Spring: A Brief History of Ecology as a Subversive Subject----Gary Kroll (Assistant Professor of History, Plattsburgh State University at NY)

রাচেল কার্সনের সাইলেন্ট স্প্রিং বাস্তুসংস্থানের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস একটি সাবভারসিভ বিষয় হিসেবে।

“A single book changes history only rarely. There was Harriet Beecher Stowe‘s Uncle Tom’s Cabin, Upton Sinclair‘s The Jungle and Ralph Nader‘s Unsafe at Any Speed. And then there was Rachel Carson‘s Silent Spring.” Carson‘s Silent Spring defines “turning point” in regards to the American environmental movement.

একটি মাত্র বই ইতিহাস বদলে দিতে পারা ক্ষমতা খুব কমই রাখে ।এইচ বি স্ট এর "আংকেল টমস কেবিন" ,উপটন সিনক্লেয়ারের "দা জাঙ্গল" এবং রালফ নাদেরের "আনসেফ এট এনি স্পীড " ।আর রাসেল কার্সন এর নিরব বসন্ত তেমনি একটি বই যা আমেরিকার পরিবেশ আন্দোলনে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে ভূমিকা রেখেছে ।

University of Colorado School of Law Professor David Getches points out, Miss Carson's book recently was named the most influential book of our time by a panel of leading Americans (MacDonnell 1993).

ডেভিড গেচেছ বলেছেন মিস কার্সনের বইটি সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী বইয়ের খেতাব অর্জন করেছে নেতৃ স্থানীয় আমেরিকার প্যানেলের মাধ্যমে ।

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যাপারটি ভাববার প্রয়োজন আছে । কীটনাশকের মাত্রতিরিক্ত ব্যবহার, শাক সব্জি ফলমূল মাছ সংরক্ষণে ফরমালিন সহ ক্ষতিকর প্রিজারভেটিব ব্যবহার আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? তরমুজের বিষক্রিয়ার মৃত্যু ,লিচু খেয়ে অসুস্থ,সেমাইয়ে ভেজাল ইত্যাদি নিয়ে আমরা বোধ হয় মৃত্যুপুরী বানিয়ে ফেলছি দেশটাকে ।এটির একটা বিহিত হওয়া প্রয়োজন।আমেরিকা ১৯৬৩ সালে যেটি করেছে সেটি আমরা ২০১৪ তে কেন করতে পারবো না?
দেশের মানুষের মৃত্যু পরিবেশ বিপর্যয় পশুপাখি মরে শেষ মাছের বিলুপ্তি পুরু বাস্তু সংস্থান ধ্বংস করে আর যাই হোক দেশের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় ।




রাসেল কার্সনের সাইলেন্ট স্প্রিং বইটির উপর ভিত্তি করে আমার লিখা সনেট।

নিরব বসন্ত

আমেরিকার সে প্রাণচঞ্চল ব্যস্ত শহরে
নিত্য দিনের সজীবতা ঘিরে জীবন ছিল
পাখিদের গানে প্রাণের মাঝে উচ্ছ্বাস ছিল
অবাক করা মুখরতা ছিল তাদের ঘিরে।

কীটনাশকের করাল থাবায় কি যে হল!
গুলাভরা শস্য আর ছিল অজস্র সম্পদ
এ সব ঘিরে দাড়িয়ে কেবল স্তব্ধ জনপদ
চিরসবুজ ধরনীটা যেন মলিন হল।

পাখিদের উপর মৃত্যুরা করেছিল ভর
মাছেরা সব মরে পানিতে ভেসে ওঠেছিল
ক্ষুধার্ত পাখিরা যেন থরোথরো কাপছিল
এভাবে সবুজ বসন্তরা হয়েছে ধূসর ।
এভাবেই কলতান মুখর একটি শহর
সৃজেছিল নিরব বসন্ত মরণ প্রহর।



আমাদের কাম্য মাছ ফুল আর পাখির কলতান মুখর জীবন্ত পরিবেশ ।





ছবি নেট ও নিজস্ব এলবাম
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৪৬
২১টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইরান ইসরাইলের আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ আর আমাদের সুন্নী-শিয়া মুমিন, অ-মুমিন কড়চা।

লিখেছেন আফলাতুন হায়দার চৌধুরী, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩০

(ছবি: © আল জাযীরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক)

শ্রদ্ধেয় ব্লগার সামিউল ইসলাম বাবু'র স্বাগতম ইরান পোষ্টটিতে কয়েকটি কমেন্ট দেখে এই পোষ্ট টি লিখতে বাধ্য হলাম।
আমি গরীব মানুষ, লেখতে পারিনা। তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৯




আমরা পৃথিবীর একমাত্র জাতী যারা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য, নিজস্ব ভাষায় কথা বলার জন্য প্রাণ দিয়েছি। এখানে মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান চাকমা মারমা তথা উপজাতীরা সুখে শান্তিতে বসবাস করে। উপমহাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্যা লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ পলিগ্যামি

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০


পুরুষদের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি স্বাভাবিক এবং পুরুষরা একাধিক যৌনসঙ্গী ডিজার্ভ করে, এই মতবাদের পক্ষে ইদানিং বেশ শোর উঠেছে। খুবই ভালো একটা প্রস্তাব। পুরুষের না কি ৫০ এও ভরা যৌবন থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×