somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সেলিম আনোয়ার
পেশায় ভূতত্ত্ববিদ ।ভালো লাগে কবিতা পড়তে। একসময় ক্রিকেট খেলতে খুব ভালবাসতাম। এখন সময় পেলে কবিতা লিখি। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হল ভালো লাগে খুব। ভালোলাগে রবীন্দ্র সংগীত আর কবিতা । সবচেয়ে ভালো লাগে স্বদেশ আর স্বাধীন ভাবে ভাবতে। মাছ ধরতে

লাব্বাইক চট্ট মেট্র ব ১১ ০৩ ৫৯ আর পাহাড়ধ্বসের দিন

১৩ ই জুন, ২০১৭ রাত ১১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মনটা ভাল নেই। মোরা আঘাত হেনেছে বাংলাদেশ উপকূলে। ফলে পার্বত্য এলাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ভারি বৃষ্টিপাত হবার সম্ভাবনা । পাহাড়ি এলাকায় বেশি বৃষ্টি হওয়া মানেই পাহাড় ধ্বস। আর লোকালয়ের পাহাড় ধ্বস মানে মৃত্যৃ। সরেজমিনে বান্দারবান এলাকা পরিদর্শন শেষে ব্যাপক টেনশন কাজ করছে। গভীর বৃষ্টি হলেই এবার ভূমিধ্বস হবে । এক সহকর্মীর সঙ্গে ব্যাপারটি তুললে সহকর্মী সিরিয়াসলি নেয়না । বলে পার্বত্য এলাকায় বেশি বৃষ্টি হয় নাই। সো ডোন্ট বি অরিড। মোরা অতিক্রান্ত হলো । এদিকে খবর এল বড় কাজিন অসুস্থ । তার অন্ননালীতে পাথর ধরা পড়েছে। সেটি এন্ডোস্কোপি করা হয়েছে । কাজিনের করুন ফোনালাপ তিনি বাঁচবেন না বলে তাকে দেখে যাবার কথা বললে তাতে সায় দিতে বাধ্য হই। যদিও রমজান মাস অফিস শেষে তার সঙ্গে দেখা করতে গেলেও ইফতারের সময় হয়ে যাবে। তারপরও যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি মাথায় অফিসে কিছুটা বিলম্ব। অফিসে কাজ করছি আর ভাবছি কাজিনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে । যথারীতি অফিস টাইম শেষ হলো । বৃষ্টি থামলো না । মগবাজার বাসের অপেক্ষা করতে থাকলাম । লাব্বাইক বাসে সাভার যাবো । আকাশ কেদেই চলছে। বৃষ্টি বাড়ছে কমছে তবে থামছে না । একটি বাস এলো । মানুষে ঠাসা । গেট লক করা। শত অনুনয় বিনয় করেও গাড়ীতে ওঠা গেলনা । বাসের হেল্পার অনেক দয়া করে জানালেন পিছনে আরেকটি লাব্বাইক গাড়ী আছে । এই বলে হয়তো গাড়ী নিয়ে ভাগার পরিকল্পনা । গাড়ী ছেড়ে দিল । কয়েকজন গাড়ীর পিছনে দৌড়োতে থাকলো। গাড়ীতে ওঠতে পারেনি। খুব অনুরোধ করেছিলাম রোযাদার মানুষ এই গাড়ীতে ওঠতে না পারলে ইফতারের আগে সাভার পৌছানো যাবে না। লাভ হয়নি। বৃষ্টি পড়ছেই। কুলক্ষণে বৃষ্টি। সর্বনাশি বৃষ্টি। শুধু ঢাকায় নয় সারাদেশে । দিনটা বেশ খারাপ মনে হচ্ছে। পাহাড়ী এলাকায় দীর্ঘ সময় গভীর বৃষ্টি পাত হলে পাহাড়ধ্বস হবে। বেশ কিছুক্ষন পর আরেকটা বাস এল। বহু কাঙ্খিত লাব্বাইক। যে করেই হোক এটিতে চড়তেই হবে। প্রচন্ড মারামারি করে গাড়ীতে ওঠা হলো। একজন যাত্রীর পায়ের উপর পারা দিয়েছি। লোকটা কেকিয়ে ওঠেছে। বিরক্তি নিয়ে তাকালে বললাম ভাই কিছু করার নেই এই বাস মিস হলে আমার রোগী দেখতে যাওয়া হবে না। ইফতারও রাস্তায় করতে হবে । গাড়ীতে ওঠেই সীট পেয়ে গেলাম জানালার পাশে। জানালা দিয়ে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছি। বৃস্টিতে রাস্তা তলিয়ে গেছে। রাস্তাটিকে একটি নদী ভাবা দোষের নয়। সেই নদীতে গাড়ী আর মানুষের চলাচল ঢেউয়ের সৃষ্টি করছে। আরও ইন্টারস্টিং ব্যাপার হলো এটি একটি নদীর মতই আচরন করছে। নিউ ইস্কাটন রোডের এক পারে বালুর স্তুপ।পানির ঢেউ সেই বালির উপর পড়ছে। আর নদী ভাঙনের মত বালিরস্তূপের গা থেকে বেশ কিছু বালি রাস্তার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। বলতে গেলে নদী ভাঙনের ব্যবহারিক ক্লাস চলছে। টবে রক্ষিত গাছগুলির পানির ঢেউ নিয়ে খেলছে। একটি জীপের চাকায় পানি ছিটে একজন মহীলার গা পুরোটা ভিজিয়ে দিল। ছাতা মাথায় তিনি সারাশরীর ভেজা নিয়ে গালি গালাজ করতে থাকলেন। রাস্তায় সিএনজি আটকে গেছে। পানি বেশি হলে এটি খুব স্বাভাবিক ঘটনা। ছাতা মাথায় অজস্র মানুষের ঢল। কয়েকজন তরুনী আপনমনে বৃষ্টিতে ভিজছে। আমাদের গাড়ী চলছে। মাঝে মাঝে কেমন যেন হুসফাস শব্দ হচ্ছে। বোধ হয় গাড়ীর চাকায় কোন ঝামেলা হয়েছে। মনে মনে আশংকা ভর করেছে। গাড়ী থেমে গেলে কিংবা কোন দুর্ঘটনা ঘটলে ! এমন সময় জানালায় উঁকি দিয়ে দেখি একটি বক্স রাস্তায় পড়ে গেছে। সেটিতে অনেকগুলি বোতল। দুএকটি ভেঙ্গে গেছে। মালিক বোতলগুলি তোলার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। কিসের বোতল কে জানে? এর মধ্যে আবার গাড়ী ঝামেলা পাকিয়ে ফেলেছে। যাত্রী পুরোপুরি নামতে ব্যর্থ হয়েছে। গাড়ী থেকে যাত্রী নামার সময় গাড়ীর ধাক্কায় মহীলা যাত্রী পরে গেছেন বৃষ্টির পানিতে । তার পুরুষ সঙ্গী গাড়ীকে ধাওয়া করেছে। গাড়ীও ক্ষুব্ধ যাত্রীর হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রাণপণ ছুটছে। চারিদিকে প্রচুর জ্যাম। তারপরও গাড়ী ছুটছে ভালই। লোকটি ধরতে পারছে না । গাড়ীর ভিতরের যাত্রী গালিগালাজ করছে। ড্রাইভারের গুষ্টি উদ্ধার করছে। মনে মনে দোয়া করছি গাড়ীটি যেন না ধরতে পারে । গাড়ীর কাঁচ ভাঙার শব্দ আসছে। কাঁচ ভাঙছে তো ভাঙছেই। পড়ে জানলাম হেল্পার সাব গাড়ীর ঝুলে থাকা গাড়ীর কাঁচ ভাঙছেন। এ ধাওয়ার মধ্যে ফার্মগেইটে কয়েকজন ট্রাফিক গাড়ী থামিয়ে দিল। মনে মনে ভাবছি সময় মত সাভার আর যাওয়া হবে না। পরক্ষনেই বুঝতে পারলাম ট্রাফিক জোরপূর্বক কয়েকজন যাত্রী চাপিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ী থামিয়েছেন। গাড়ীতে এমনিতেও খুব বেশি জায়গা নেই। তারপরও লোক ওঠছে। গাড়ী অদ্ভুত রকম শব্দ করছে। তারপর গাড়ী চলছে। কাজিন ফুন করেছেন কোথায় আমি? তখন ইফতারের চল্লিশ মিনিট বাকী। কল্যানপুর পৌছেছি মাত্র। লাব্বাইক চলছে। সীমাহীন ট্রাফিকজ্যামও ঘিরে আছে। আর চলছে সর্বনাশা বৃষ্টি। গাড়ীর কেমন যেন আওয়াজ করছে। এমন সময় কেউ একজন বলেলো গাড়ী ব্রেক ফেল করেছে। চলন্ত অবস্থায় লোকজন নামছে। গাড়ীতে সাভার যাওয়ার চিন্তা বাদ দিলাম। গাবতলী পর্যন্ত যেতে পারলৈও জীবন ধন্য। গাড়ী চালক গাড়ী থামানোরে চেষ্টা করতে ব্যর্থ হচ্ছে এমনকি গাড়ীর গতিও কমছেনা । মনে আশংকা হচ্ছে কুফা দিন। কুফা গাড়ী। কুফা বৃষ্টি। আমরা গাড়ী থেকে নামতে পারবো তো? গাড়ী থেকে কেমন যেন শব্দ হচ্ছে। টায়ারে আগুন ধরে যায় কি না ? অবশেষে গাড়ী থেমেছে। তখন সন্ধ্যা আসন্ন । গাবতলী বাসস্টান্ডের আগেই থেমে গেছে । গাড়ী থেকে নেমে আল্লাহার শুকরিয়া আদায় করলাম। গাড়ীর নাম্বার দেখে টুকে রাখলাম । চট্ট মেট্র ব ১১ ০৩ ৫৯। এমন গাড়ী ভ্রমন সচরাচর হয়ে ওঠেনা । সে যাই হোক অপেক্ষা করতে থাকলাম সাভারের কোন গাড়ী পাওয়া যায় কিনা? তখন সন্ধ্যা আসন্ন।. . . . . . সেদিন ঢাকা ও চট্টগ্রামে ২২২ মিমি বৃস্টিপাত হয়েছে। আর রাঙামাটিতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৪ ঘন্টায় ৩৪৩ মিমি। ফলে ভয়াবহ ল্যান্ড স্লাইড ও পাহাড়ী ঢলের সৃস্টি হয় । তাতে মরে গেছে প্রায় ৮০ জনের জীবন । এক নাগারে গভীর বা ভারি বৃষ্টিপাত হলে ভুমিধ্বস প্রবণ এলকায় পাহাড়ধ্বস হয়। টিপাম অথবা ডুপিটিলা স্যান্ডস্টোন ওয়েদারিং ও ইরোশনের ফলে আলগা হয়ে যায়। পাহাড়ের বেস বা ভিত্তি কেটে, বৃক্ষনিধন করে, জুম চাষ করে মানুষ কেবল ভূমিধ্বস সংঘটন ত্বরান্বিত করে। প্রবল বৃষ্টিপাত যখন শিলার থ্রিশোল্ড ভেলু অতিক্রম করে তখনই পাহাড় ধ্বস ঘটে থাকে। তাই গভীর বৃষ্টিপাতের সময় নিরাপদ আশ্রয়ে লোকদের সরিয়ে ফেলাই তাদের জীবন রক্ষার একমাত্র উপায়। বান্দরবানে নেই কোন রেইন গজ। কত পরিমান বৃষ্টি হয়ে ভূমি ধ্বস হল সেখানে তা নির্নয় করা অসম্ভব । অথচ সারাদেশে ৩৪টি রেইনগজ আছে। আর ভূমি ধ্বসে নিয়মিত জীবন ও জীবিকার ব্যাপক ধ্বংস সাধন হচ্ছে । দিনটি আসলেই ছিল সর্বনেশে। ঠিক লাব্বাইক চট্ট মেট্র ব ১১ ০৩ ৫৯ এর মত ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৭ রাত ১২:১৯
১২টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×