চলছে....
মাস খানেক কেটে গেলো রানা আবার আসলো বললো এভাবে থাকার কোনো মানে নেই, হয় তুমি আমার সাথে যাবে তা না হলে ডিভোর্স করবে, এভাবে থাকাটা সম্ভব নয়।
শীতল আমি বললাম, আমি যাবো না।
সাথে সাথে রানা বললো শুনেছি তুমি নাকি ডিভোর্সের কাগজ রেডি করেছো ! নিয়ে আসো আমি সিগনেচার করে দিচ্ছি,
রাগ হলো, কেনো তুমি কাগজ রেডি করে সিগনেচার করে নিয়ে আসতে পারলে না? যাক কথা বাড়ালাম না, রাগ হলো প্রচন্ড আম্মাকে কিছু না বলেই কাগজটা নিয়ে আসলাম, রানা সিগনেচার করে দিলো, আমিও করলাম।
চলে গেলো রানা।
ব্যাপারটা জানার পর আম্মা অনেক কান্নাকাটি করলো।
পরদিন কাগজ নিয়ে উকিলের কাছে গেলাম। উনি বললেন আরো একটা সিগনেচার করতে হবে দু’জনকেই কোর্টে যেয়ে।
যে উকিলের কাছে আমি যেতাম উনি মহিলা ছিলেন। আমাকে আবার বললেন ভালো করে ভেবেছো তো এই কিন্তু শেষ চান্স। বললাম আর ভাবতে চাই না।
বললাম আর ভাবতে চাই না ভাবলে কিনারা পাবো না.....
আমি কোর্টে যেতে চাই না আপনি কাগজটা বাসায় এনে রাখলে আমি সিগনেচার করে দিয়ে যাবো। তাই হলো এবং উনিই রানাকে ফোন করে বললেন সিগনেচার দিয়ে যাওয়ার জন্য রানাও সিগনেচার করে গেলো।
তারপর পর তিন মাস তিনটা কোর্টের চিঠি পেলাম, যাকে বলে উকিল নোটিশ।
এই উকিল নোটিশ পাঠানোর লক্ষ্য হলো যদি দু’জনের মধ্যে কারো যদি দ্বিমত থাকে তবে সে কেস করতে পারে আর যদি কিছু না করে তবে তিন মাস পর ডিভোর্স হয়ে যাবে।
হয়ে গেলো ডিভোর্স।
শুরু হলো নিঃসঙ্গ জীবনযাত্রা। একাকী পথচলা। নিজেকে সাবলম্বী করার আপ্রাণ চেষ্টা। আমাকে একটা পর্যায়ে যেতে হবে এমন একটা বাসনা মনের মধ্যে লালন করতে থাকলাম, আর সাথে চেষ্টা।
টুকটাক কাজ করি বিভিন্ন জায়গায় ডিজাইন বিষয়ক।
ইউনিসেফের একটা কাজ নিয়ে ঢাকা কালার স্ক্যান গিয়েছিলাম। ফেরার সময় জিজ্ঞেস করলাম লোক নেওয়া হবে কিনা আমি কাজ করতে ইচ্ছুক। বললাম ঠিকই কিন্তু তখনও ভালো করে পারি না, তাছাড়া ওখানে ম্যাক কম্পিউটার।
বললো টাকা কম ২হাজার টাকা দেবে।
আমি রাজি হলাম টাকাটা বড় কথা নয় প্র্যাক্টিসটা খুব দরকার, আর শেখারও অনেক কিছু আছে।
টুকটাক কিছু করতাম আর সবার পাশে দাড়িয়ে কাজ শেখার চেষ্টা করতাম।
সারাদিন কাজ করতাম ভালো থাকতাম, রাতটা বড় কঠিন মনে হতো।
অঅর ভাবতাম হয়তো......এই পৃথিবীতে এমন পুরুষের জন্মই হয় নাই যে আমাকে সুখ দিতে পারো। সে শুধু আমার স্বপ্নপুরুষ, আমার ভাবনা.........
একদিন রানা হঠাৎ আম্মার বাসায় এলো, এসে বললো দিবসকে একটু নিয়ে যেতে চাই বিকালে দিয়ে যাবো।
নিষেধ করার কিছু নাই, সেতো বাবা.... বললাম ঠিক আছে, সময়মত দিয়ে যেও।
নিয়ে গেলো দিবসকে রানা, আবার দিয়ে গেলো বিকাল বেলা।
সেদিন ভুল করেছিলাম দিবসকে দেয়া ঠিক হয়নি,
কিছুদিন পর আবার একদিন এলো দিবসকে নিয়ে যাবে বলে,
যেহেতু একদিন যেতে দিয়েছি তাই আর না করতে পারলাম না।
বিকালে দিয়ে যাবে বলে নিয়ে গেলো, কিন্তু বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো দিবসকে দিয়ে গেলো না।
কি করবো বুঝতে পারছি না।
ফ্যামিলিতে এমন কেউ নেই যে হেল্প করতে পারে।
অস্থির হয়ে ফোন করলাম রানাকে, দিবসকে কখন দিয়ে যাবে?
রানা সরাসরি না করলো দিবস যাবে না, ও এখানেই থাকবে।
বুকের ভিতর ধক্ করে উঠলো, এই কি বিশ্বাসের শাস্তি?
আমার ফুপার বাসায় ফোন করে ফুপাকে ডাকলাম কি করা যায়, কি করে দিবসকে আনবো!
ফুপা রানাকে ফোন করলো দিবসকে নিয়ে আসার জন্য আরো বললো কথা বলবে তারপর যা হয় করবে।
রানা দিবসকে নিয়ে আসলো, আমিও গেলাম, সাথে ডিভোর্স লেটারটাও নিলাম সেখানে লেখা ছিলো দিবস আমার কাছে থাকবে, আর সেজান ওর বাবার কাছে তারপর বড় হলে যার যেখানে ইচ্ছা থাকবে।
রানা কোনোভাবেই রাজি হচ্ছে না, ফুপা আমার ফুপাতোভাই, আব্বা সবাই মিলে প্রায় তিন ঘণ্টা আলোচনার পর রানা হার মানলো, রেখে গেলো দিবসকে।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম, দিবসকে নিয়ে মনে প্রশান্তি নিয়ে বাসায় ফিরলাম। তখনও বুঝিনি রানার মনে দূরাভিসন্ধি ছিলো।
তিন চারদিন কেটে গেলো আমি সেদিন আমি বাসায় ছিলাম না, কম্পিউটার শেখার জন্য ভর্তি হয়েছি ক্লাসে গিয়েছিলাম।
তখন রানা এসে দিবসকে নিয়ে যেতে চাইলো, আব্বা নিষেধ করলো। কিন্তু রানা শুনলো না জোর করে নিয়ে যেতে চাইলো।
আব্বা আবার বললো ওর মা আসলে তারপর নিয়ে যেও, তুমি অপেক্ষা করো, রানা সব কথা উপেক্ষা করে দিবসকে নিয়ে বের হয়ে গেলো, আব্বা জোর করে ধরে রাখতে চেষ্টা করাতে আব্বাকে রানা লাথি দিয়ে ফেলে দিয়ে দিবসকে নিয়ে চলে গেলো। পাড়ার মানুষ সে দৃশ্য দেখলো। আমার সাথে যাই করুক রানা আব্বার সাথে কি করে এমন করলো, অবাক হয়েছিলাম আমি।
রাগ হয়েছিলো অনেক, তারপরও ফোন করলাম আবার দিবসকে দিয়ে যাওয়ার জন্য। বললো না দিবসকে তুমি পাবে না।
তারপরও বার বার ফোন করেছি আমি পরের দিকে আর ফোন করলে কথা বলতো না। পারলাম না দিবসকে ফিরিয়ে আনতে। যে ভয়ে আমি এত কষ্ট করে এত বছর সংসার কররাম তাই হলো, বাচ্চাদের দিলো না রানা। দিবসকেও আস্তে আস্তে আয়ত্ব করে ফেললো। আমার সম্পর্কে নানা ভয় দেখিয়ে খেলনা দিয়ে বাইরে বেড়াতে নিয়ে যেয়ে। একসময় সে আর আমার কাছে আসতে চাইতো না ফোন করলেও। সেজানও উল্টা পাল্টা বুঝালো ওকেও আসতে দিলো না। এমনই হয় কিছুই জানলো সন্তানরা কি কষ্ট নিয়ে তাদের মা সংসার ছেড়েছিলো। আমিতো থাকতেই চেয়েছিলাম পারলাম না যে! চেষ্টাতো কম করিনি।
জীবনের পথ চলায় আবার একা হলাম, সন্তান ছাড়া আরো কঠিন কষ্টে আমি নিমজ্জিত হলাম। নির্বিকার একাকী পথচলা....বড় কঠিন তবু...ভেঙে পড়া আমি আবার উঠে দাড়ালাম......সন্তানদের ফিরে আসার অপেক্ষায় এ এক নতুন অধ্যায় শুরু হলো আমার.............
**
তখনকার রাত গুলো ছিলো দুঃস্বপ্নের
এখনকার রাতগুলো স্বপ্নহীন
আর আমি চেয়েছিলাম স্বপ্নজড়ানো
তবে পেলাম না কেনো?
নিজেকে নিজের প্রশ্ন আমার?
আর বলা কিছু নেই আমার একটি অধ্যায় শেষ হলো......বাবুরা ভালো আছে তবে আমার কাছে নেই............।
সবাই ভালো থেকো, আমার জন্য দোয়া করো............................
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:০২