somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরিবর্তন ঘটেছে গ্রাম কাঠামোতে, যৌথ পরিবারে বাড়ছে হা-হুতাশা!!

১২ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সত্যের ছায়া: ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এগুলো যদিও রাষ্ট্র বিজ্ঞানের পরিভাষা তবে সমাজ বিজ্ঞানের পরিধি এর বাইরে নয়। আমাদের নিজেদের মধ্যে, গ্রামে, সমাজে এবং রাষ্ট্রে প্রতি নিয়ত পরিবর্তন ঘটেছে। এই পরিবর্তনের হার আশংঙ্কাজনক এবং সমাজ ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলেছে। পরিবর্তনের বিচ্যুতি যদি এখনই সঠিক লাইনে আনায়ন করা না যায় তাহলে এক সময়সমাজে মহা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। তখন তা নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হবে।

দেশ বদলেছে, জীবন বদলেছে বদলেছে সমাজ ও পারিবারিক কাঠামো। সেই বদলের ছোঁয়া লেগেছে গ্রামীণ জীবনেও। 90 দশকে অজপাড়া গাঁ বলতে যা বোঝাত, তা এখন খুঁজে পাওয়া কঠিন বা কোথাও পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয় না। প্রত্যন্ত, দুর্গম এবং চরাঞ্চলের অনেক গ্রামও এখন পাকা সড়ক দিয়ে সংযুক্ত হয়েছে শহরের সঙ্গে। যে গ্রামে কুপি বাতি, হারিকেনও জ্বলত না যেসব ঘরে প্রয়োজনীয় তেলের অভাবে এখন সেখানে হয় পল্লী বিদ্যুত্ নয়তো সৌর বিদ্যুতের আলো ঝলমল করে জ্বলছে ছেলে মেয়েদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, কেউ হয়ত ডাক্তার হবে নতুবা ইঞ্জিনিয়ার। যে গ্রামে ডাকে চিঠি, টেলিগ্রাম, মানিঅর্ডার পৌঁছাতে অনেক দিন লেগে যেতো সেই গ্রামেও আছে এখন মোবাইল ফোনের কাভারেজ, বিকাশের মাধ্যমে মুহূর্তেই প্রিয়জনের কাছ থেকে টাকা পাওয়ার সুযোগ, মডেমসহ ইন্টারনেট কানেকশন।। শুধু হাডুডু, নৌকাবাইচ নয় গ্রামের ছেলেটি এখন ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটের সব খবরাখবর রাখে, সে জানে লা লিগার বার্সোলোনা বনাম রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচেরও খবরাখবর, কোলকাতা নাইডার্স বনাম ব্যাঙ্গালুর মারাত্মক ক্রিকেটের মহুর্ত। গ্রামের অনেক বাড়িতেই এখন রয়েছে ডিশ লাইনের সংযোগ। যার সুবাদে তারা ভারতীয় হিন্দি বাংলা জনপ্রিয় টিভি সিরিয়ালের নিয়মিত দর্শক। স্টার জলসা আর জি বাংলা না দেখলে বউ পোলা, ছেলে মেয়েদের নাওয়া খাওয়া ঘুম ঠিক মতো হয় না।


ইত্যাদিতে দেখানো একটি যৌথ পরিবার।

পালাবদল ঘটেছে গ্রামীণ অবকাঠামোতে, খাদ্যের প্রাপ্যতায়, জীবনযাত্রার মানে, যোগাযোগ ব্যবস্থায়, শিক্ষায় ও স্বাস্থ্যে। কুড়েঘরের জায়গায় এসেছে টিনের ঘর। প্রায় প্রতি বাড়িতেই রয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা। কলেরা বসন্তের মত মহামারি বিদায় নিয়েছে। আগে যেখানে হাঁটা কিংবা নৌকা ছাড়া কোথাও যাওয়ার বিকল্প ব্যবস্থা ছিল না এখন গ্রামের মানুষ হরদম যন্ত্রচালিত বাহনে চড়ে। অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে জীবনটাকে নষ্ট করে দিতে রাজি নন বেশিরভাগ বাবা মা। বাল্য বিয়ের হার কমে গেছে উল্লেখযোগ্যহারে।
আগে যেখানে গ্রামের যুবক-যুবতীরা প্রেম ভালোবাসা করত চিঠি চালাচালির মাধ্যমে এখন সেখানে ফেসবুকে চ্যাট করে। অনেকে 3জি মোবাইলের মাধ্যমে ছবি দেখে সরাসরি কথা বলে।আর মোবাইল ফোনের কথা নাই বললাম।

উৎসবেও এসেছে পরিবর্তন, আগে বিয়ে পার্বনে গ্রাম অঞ্চলে বিয়ে বাড়িতে মাইক বাজানো হতে সেখানে এখন তার জায়গা সাউন্ড বক্স দখল করে নিছে। দশ বছর আগেও গ্রামে একজন নাচ জানা ছেলে/মেয়ে খুজে পাওয়া যেত সেখানে এখন ডি.জে পার্টি গড়ে উঠেছে। এটা একদিনে হয়নি! পাশ্চাত্য আর ইন্ডিয়া এ পরিবর্তন ধীরে ধীরে আমাদের রগের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে।


১৯৭২ সালের একটি যৌথ পরিবার।

শুধু কৃষিকাজ নয়, গ্রামের মানুষ এখন বহু ধরনের পেশায় নিজেদের যুক্ত করে জীবন বদলে দিচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রামেও চলে গেছে ব্যাংকের সেবা। উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছে গ্রামের শিক্ষিত তরুণ তরুণীরাও। গ্রাম মানেই খন আর কৃষি কাজ নয়। এক দশক আগেও বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির অবস্থা এখনকার মতো ততোটা চাঙ্গা ছিল না। তখন শহরের অর্থনীতি এবং গ্রামীণ অর্থনীতির মধ্যে বিরাট পার্থক্য ছিল। অভাব, দুঃখ, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, কুসংস্কার, অজ্ঞতা, পশ্চাত্মুখী সংস্কৃতির প্রভাব আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক ধরনের অচলায়তন সৃষ্টি করে রেখেছিল। বর্তমানে গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক ধরনের গা ঝাড়া মনোভাব লক্ষ্য করা যায় খুব সহজেই। বলা যায়, গ্রামীণ অর্থনীতিতে নবজাগরণ এসেছে। যার ফলশ্রুতিতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। এতে করে উত্পাদনের পরিমাণ বেড়ে গেছে আগের তুলনায়। বিশেষ করে কৃষিজাত পণ্য উত্পাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামের সাধারণ কৃষক শ্রেণির ভাগ্য বদলে যাচ্ছে খুব দ্রুত। কৃষি খাতে তো অবস্থা ভালোই, এমনকি কৃষির বাইরেও গ্রামীণ অর্থনীতি বর্তমানে চমত্কার ভালো অবস্থায় রয়েছে। গ্রামীণ জনগণের মধ্যে এখন কৃষির পাশাপাশি ছোট ছোট শিল্প স্থাপনের প্রতি আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গ্রামে-গঞ্জে ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্প্রসারিত হচ্ছে।

স্রেফ কৃষিজাত পণ্য উত্পাদন নয়, এর পাশাপাশি হাঁস-মুরগী পালন, মত্স্য চাষের মাধ্যমে গ্রামের মানুষ তাদের ভাগ্য উন্নয়নে পুরোপুরি সচেষ্ট বলা যায়। আজকাল প্রায় প্রতিটি গ্রামেই হাঁস-মুরগীর খামার, দুগ্ধ উত্পাদনকারী ডেইরি ফার্ম, মত্স্য চাষ প্রকল্পের ছড়াছড়ি লক্ষ্য করা যায়। এসবের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন গ্রামের অনেক নারী-পুরুষ। আগে স্রেফ ধান পাট শাক-সবজি শস্য উত্পাদনের মধ্যেই গ্রামের মানুষ তার কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ রাখতেন।



যেখানে বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে শুরু করে শহুরে জীবনের মতো উন্নত নানা সুযোগ-সুবিধা থাকছে। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে গ্রামীণ জীবন-যাপনে আধুনিকতার ছাপ ক্রমেই সুস্পষ্ট হচ্ছে। এর মাধ্যমে গ্রামীণ জীবনের চেহারাটাই বদলে যাচ্ছে খুব দ্রুত। এখন গ্রামের ছেলে-মেয়েরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে মেধা ও যোগ্যতার বলে জীবনে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। তারা শহরের বড় বড় পদে চাকরি করছে। বড় বড় ব্যবসায় নিয়োজিত হচ্ছে। তারাও গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করছে।

গ্রামের অর্থনীতির পরিবর্তনটি চোখে পড়ে বাজারের কোনো মুদি দোকানে গেলেই। সেখানে এখন শুধু চাল, ডাল আর কেরোসিন তেলই নয়, বিক্রি হয় শ্যাম্পু, সুগন্ধি সাবানসহ প্রসাধন সামগ্রীও। গ্রামের মানুষ এখন আর কাঠ কয়লা দিয়ে দাঁত মাজে না, মাঝে টুথপেষ্ট ব্রাশ দিয়ে কিংবা নিদেনপক্ষে টুথ পাউডার দিয়ে। চিপস্, কোল্ড ড্রিংকস, এনার্জি ড্রিংকস ফ্রুট ড্রিংকস-এমনকি মিনারেল ওয়াটারও পাওয়া যায় গ্রামের বাজারের দোকানে। বিভিন্ন বাড়িতে রয়েছে মোটরসাইকেল। মেয়েরাও অনেক গ্রামে সাইকেল চালিয়ে স্কুল কলেজে যায়। দেশের ১৩ কোটি মোবাইল ফোন গ্রাহকের বড় অংশ গ্রামের মানুষ। তাদের কেউ কেউ স্কাইপ ব্যবহার করতেও শিখে গেছে। বিদেশে থাকা স্বজনরা এখন আর টেপ রেকর্ডারে রেকর্ড করে নিজের গলার আওয়াজ পাঠায় না। গ্রামে কম শিক্ষিত অনেক তরুণ-তরুণী আজকাল নিয়মিত ফেসবুক চালায় তাদের ফেসবুক এ্যাকাউন্টে নিজের মতামত পোষ্ট করে চমকে দেয়। গ্রামের মানুষ এখন ইন্টারনেট ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বড় গ্রাহক। প্রায় এক কোটি গ্রামবাসী কৃষকের আছে নিজস্ব ব্যাংক এ্যাকাউন্ট।

সবচেয়ে মারাত্মক পরিবর্তন ঘটেছে একান্নবর্তী পরিবার কাঠামোতে। আগে যেখানে দশ-বারো বা তার চেয়ে একান্নবর্তী পরিবার বিদ্যামান ছিল সেখানে এখন ছোট পরিবারের জয় জয়কার।ছোট পরিবার গঠনে ভারতীয় হিন্দি সিরিয়াল মারাত্মক ভূমিকা পালন করেছে। সিরিয়ালে দেখানো কূটকৌশলগুলো পরিবারের নতুন বউয়েরা বিভিন্ন আঙ্গিকে প্রয়োগ করেছে।নতুন বউদের সাজ সজ্জাতেও এসেছে বিবর্তন। তারা এখন ভারতীয় ও পশ্চিমা স্টাইল পোশাকে নিজেকে স্বচ্ছন্দবোধ করে। বারো হাত শাড়ি যেন ঘরের কোণে লুটিপুটি খেয়ে কেঁদে মরছে। এটা দেখার কেউ নেই।


ভারতের প্রভাবশালী নেহারু পরিবার।

আগে যেখানে থানায় মামলা মোকাদ্দমা বলতে ছিল গরু চুরি কিংবা সাধারণ জগড়া ঝাটি সেখানে এখন নিত্য নতুন মামলা চালু হচ্ছে। মানুষ রাজনৈতিক সচেতন হয়ে বিভন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে দলাদলি করে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে ধ্বংস করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র মূলক মামলাতে ফাসাচ্ছে। এটা উদ্বেগের বিষয়।

সমাজে সবচেয়ে বিজনক অবক্ষয় ঘটেছে পিতা-মাতার প্রতি দায় বদ্ধতা। আগে পিতা-মাতাকে ভরণ-পোষণ করা ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ববোধ বলে মনে করত, তার বদলে এখন পিতা-মাতাহীন পরিবারে নিজেকে স্বাচ্ছন্দবোধ করে থাকে।


আধুনিককালের একটি ছোট পরিবার

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৩৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×