মানুষ বেঁচে আছে। হয়ত বেঁচে থাকবে সভ্যতা ধ্বংস হওয়ার আগ পর্যন্ত। তবে সমান্তরাল নয় অসমান্তরালভাবে। আগে মানুষের বড় শত্রু ছিল প্রাকৃতিক বন্যা, ঝড়, অতি বৃষ্টি, খড়া, প্লেগ, দাবানল দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি। একেক এলাকায় একেক ধরণের সমস্যা ও মহামারী দেখা দিত। যে এলাকায় যে সমস্যার প্রার্দুভাব বেশী থাকত সে এলাকার লোকজন সে সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অতি প্রাকৃতিক-কাল্পনিক শক্তির কাছে অসহায়ভাবে আত্মসর্মপণ করে তার কাছে নাজাত চাইত। ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় ভিন্ন সৃর্ষ্টিকর্তার ধারণা উদ্ভুত হয়। ফলে এ সমস্যা সমাধানের জন্য পবিত্র আত্মাদের আগমন ঘটে। তারা দুনিয়াতে একেশ্বরবাদী ধারণার প্রচলন ঘটান। তারা হয়ত সমসাময়িক আমলে তাদের একেশ্বরবাদী মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন। কিন্তু তাদের মৃত্যুর পরে কয়েক শতাব্দি গেলে মানুষ একেশ্বরবাদী খোদাকে ভুলে পুনঃরায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক খোদায় আসক্ত হয়ে পড়তেন। এর বিভিন্ন কারণ ছিল, তার মধ্যে সৃষ্টিকর্তার শৃঙ্খলা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন জীবন যাপন করা, একেশ্বরবাদীর ধারণার মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে মানুষের পর্যাপ্ত ধারণা না থাকা, নতুন করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আক্রান্ত হওয়া, খারাপ কাজে প্রলুদ্ধ হওয়া, একেশ্বরবাদী মতবাদ তুলনামূলক কঠিন ও অপরিবর্তনীয় হওয়া ইত্যাদি।
তাই মানুষ কে নতুন করে একেশ্বরবাদী ধারণায় পরিচয় করতে দুনিয়াতে পবিত্র আত্মাদের পুনঃরায় আগমন ঘটত।
তারা প্রকৃতির কাছে অসহায়ভাবে আত্মসর্ম্পণ করা এই মানুষগুলো কে মুক্তিদানের জন্য একেশ্বরবাদী ধারণা নতুন করে উত্থাপন করতেন। ফলে সমাজের একটা অংশ সে সময় পুনরায় একেশ্বরবাদী খোদার বিশ্বাসে ফিরে আসত। এভাবে চলতে চলতে আরবে পবিত্র আত্মা মুহাম্মদ (সা: ) পর্যন্ত এসে ঠেকেছে। তারপরে যারাই নিজেদের কে প্রোফেট বা পবিত্র আত্মা হিসেবে দাবী করেছে তারা ভালো সফলতা দেখাতে পারেননি। অনেকে অঙ্কুরোধগমন করার আগেই ঝড়ে পড়েছে। কেউ সামান্য অনুসারী রেখে গেছে। আবার কেউ কেউ মোহাম্মদ (সা: ) এর নামের উপর পুনঃরায় নবুয়াতী দাবী করেছে। উনিশ শতকে এসে এ হার আশংকাজনকভাবে কমে গেছে। বর্তমানে প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। এখন যদি কেউ নবুয়াতী দাবী করে একমাত্র অশিক্ষিত মানুষ ছাড়া তাতে কর্ণপাত করার সময় সভ্য মানুষের নেই। এর অন্যতম কারণ প্রযুক্তি। এখন মানুষ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। প্রযুক্তি এই ব্যস্ততায় নিন্মজিত করেছে। ফলে মানুষের নতুন ধর্মমত গ্রহন করতে অনীহা চলে এসেছে। পুরাতন যেটা আছে সেটাইতে থাকতে চায়। এই থেকে চাওয়ার হার আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাবে।
অপর দিকে প্রযুক্তির আর্বিভাবে আরেকদল মানুষের মতবাদ প্রবলভাবে প্রচারণা পাচ্ছে। সেটা হলো নাস্তিকবাদ। এই নাস্তিকবাদের নির্দিষ্ট কোন প্রবক্তা নেই। বিভিন্ন কারণে মানুষ নাস্তিক হচ্ছে।
আগে পবিত্র আত্মাদের সাথে প্রাকৃতিক পূজারীদের বিরোধ চলত। অর্থাৎ একেশ্বরবাদী বনাম বহুত্ববাদী। বর্তমানে একেশ্বরবাদী বনাম নাস্তিকবাদী। অর্থাৎ সময়ের প্রয়োজনে বিরোধের ধরণ পাল্টিয়েছে।
এ নিয়ে মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, এই পবিত্র আত্মাদের (নবী বা রাসূল)পাশাপাশি সে সময় আরেকদল মানুষ সভ্যতায় উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। তাদের আমরা বিজ্ঞানী, দার্শনিক নামে অভিহিত করতে পারি। সম-সাময়িক আমলে এ ব্যক্তিদের সাথে নবী বা রাসূলেদের দ্বন্দের কোন খবর আমার জানা নেই। অর্থাৎ ততকালীন সময়ে রাজা বাদশাদের সাথে দ্বন্দ ছিল নবী রাসূলদের। আবার বিজ্ঞানী বা দার্শনিকদের সাথে দ্বন্দ ছিল রাজা বাদশাদের। অর্থাৎ তাদের মতবাদের/আবিস্কারের মূল শত্রু ছিল রাজ ক্ষমতা।
তবে, বর্তমানে যে দ্বন্দ (আস্তিক বনাম নাস্তিক) চলছে সেটা প্রচারের দ্বন্দ। যে যার মতামতাতের প্রচারণা তুঙ্গে রাখতে চায়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের বদলে মানুষ এখন নিজেরাই নিদের বড় শত্রু। একে অপর কে নমিস্য করতে বা বাধ্য বাধকতায় আনতে ব্যস্ত। এর পিছনে বিজ্ঞানের কুফল দায়ী। সব চেয়ে ভাল হয়, নাস্কিক এবং আস্তিকরা মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা বলুক। সু-শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসার কথা বলুক। বিজ্ঞানের কু-ফল সম্পর্কে সোচ্চার হউক। মানব সভ্যতা এগিয়ে নেয়ার জন্য মানব কল্যাণে নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিস্কার করুক। মানুষ সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হলে নিজ থেকে বুঝে নিবে কোনটা তার ধর্ম কোনটা তার অধর্ম। সে আস্তিক হবে নাকি নাস্তিকবাদে বিশ্বাস করবে। কাউকে কোন কিছু অন্যের উপর চাপিয়ে না দেয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ রইল।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৪১