somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙালি মুসলিম সমাজের কুরবানী। ধর্ম যার যার উৎসব সবার।।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঈদুল আজহার দিন গণনা শুরু হয়ে গেছে। গ্রাম পাড়া মহল্লায় এবং কি রাজধানীতে বসেছে এক বিরাট গরু ছাগলের হাট! আমাদের দেশে কুরবানী ধর্মীয় উৎসবের সাথে সামাজিক ও সাংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। এমন অনেক পরিবার আছে যারা নেসাব পরিমান সম্পদ না থাকা সত্ত্বেও কুরবানী দেন শুধুমাত্র সামাজিক স্টাটাস বজায় রাখার জন্য।

কুরবানী মুসলমানদের একটি ধর্মীয় বিধান(ওয়াজিব), যা সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। কোন মুসলমানদের কাছে শর্তাধীন পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার জন্য কুরবানি দেয়া ওয়াজিব। আমাদের দেশে অনেক ইসলামী স্কলারগণ বলে থাকেন, "হালাল রুজীর টাকা ছাড়া কুরবানি আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না"। তাই নাকি!

এবার আসুন জেনে নিই বাংলাদেশে কুরবাণীর কারা দেয় এবং কিভাবে দেয়।

আমাদের দেশে সাধারণত তিন শ্রেণির মানুষ কুরবানি দেয়:-
এক: নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার।
দুই: মধ্যবিত্ত পরিবার।
তিন: উচ্চবিত্ত পরিবার।

এক: নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার: এই ধরণের পরিবার সাধারণত গ্রাম ও শহর উভয় যায়গায় দেখা যায়। তবে গ্রামে এদের আধিক্য বেশি। তারা কোন রকম খেয়ে পুড়ে বেঁচে আছেন। পরিবারের ছেলেপেলেরা টাকায় গার্মেন্টসে, উৎপাদনশীল ফ্যাক্টরিতে, বিভিন্ন কল কারখানায় কাজ করেন।পরিবার কর্তা (বাবা) গ্রামে গাই গেরস্তি করেন। ঈদ আসলে তিনি তিন থেকে সাত শরিক মিলে একটি গরু কুরবানী দেন। কুরবানীর টাকা যোগান দেয়ার জন্য পরিবারের সদস্যদের ঈদের আনুষঙ্গিক বাজেট কমিয়ে দিতে হয়। এই পরিবারের সন্তানেরা কুরবানী ঈদে নতুন জামা কিনলেও রোজার ঈদের প্যান্ট দিয়ে চালিয়ে দেন। আমার আইকিউ মতে, বাংলাদেশে তাদের উপার্জণ তুলণামূলক সবচেয়ে হালাল।তাদের কুরবানী আল্লাহর কাছে তাড়াতাড়ি পৌঁছায়।

দুই মধ্যবিত্ত পরিবার: এই ধরণের পরিবার সাধারণত পূর্ব পুরুষ থেকে কিছু সম্পত্তি পেয়ে থাকে এবং পরিবারের প্রধান কর্তা হয়ত সরকারী বা বেসরকারী অফিসে চাকুরী করেন, এবং কারো কারো কারবারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। এই পরিবারের সদস্যরদের জীবনের নানা পরতে পরতে হাসি কান্না জড়িয়ে আছে। অনেকের চাওয়া পাওয়া হিসাবে গড়মিল থাকে। কুরবানী আসলে তারা চেষ্টা করেন একাই একটি গরু কুরবানী দিতে। কুরবানীর হাটে যাওয়ার আগে পকেটের টাকা তিনবার গুনে দেখেন, চেষ্টা করেন বাজেট একটু বাড়ানোর জন্য। কিন্তু ছেলের স্কুল খরচ, স্ত্রীর চিকিৎসার কথা চিন্তা করে আর বাড়ানো হয়না। গরুর হাটে গিয়ে এদিক সেদিক হেঁটে বিভিন্ন সাইজের গরু দেখেন, মাঝেমধ্যে বড় গরু পছন্দ করে দর-দাম জিঙ্গেস করেন, কিন্তু দাম শুনে বাজেটের সাথে হিসাব মিলাতে পারেন না। অবশেষে মাঝারি সাইজের একটি গরু কিনে তৃপ্তি সহকারে বাসায় ফিরে আসেন। বাসায় এসে গরুকে নিজ হাতে খৈল, ভূষি, কূটা এবং ভাতের ফেন খাওয়ান, গরুর গলায় হাত দিয়ে চুলকায়ে শৈশবের স্মৃতি রোমান্থ করেন। ঈদের দিন ইমাম সাহেব গরুর গলায় ছুরি চালানোর আগে নাম জিঙ্গেস করলে তিনি বাবা মায়ের নাম বলে নিজেকে হাল্কা করেন। গোস্ত কাটাকুটি শেষ হলে নিজের হাতে গরীব ও আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে গোস্ত বিতরণ করেন। এদের কুরবানী আল্লাহর কাছে তারাতাড়ি পৌছানো দরকার।

তিন, উচ্চবিত্ত পরিবার: বাংলাদেশের অধিকাংশ উচ্চবিত্ত পরিবার কিভাবে এই কাতারে গিয়েছে তার সংজ্ঞা না দেয়াই ভালো। দিলে চাকুরী থাকবেনা। পরিবারের প্রধান কর্তা হয়ত প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, আর এই সমস্ত ব্যবসায়ীদের চরিত্র না বলাই ভালো, তবুও একটু গুনর্কীর্তণ গাই, এরা ওজনে কম দেয়, পন্যের ভেঁজাল মিশান, কৃত্রিম সংকট তৈরী করে দাম বাড়ান, শ্রমিকদের রক্ত চুষে পঁয়সা কামান, সবচেয়ে বড় কথা হলো, এরা রমজান মাসে পণ্যের অহেতুক দাম বাড়িয়ে গরীব ও মধ্যবিত্ত রোজাদার ফ্যামিলিকে কষ্ট দেন, আর এই কষ্ট দেয়া লোকগুলোই ধর্মকামীর কাতারে নাম লিখার জন্য ঈদুল আজহায় ঢাক ডোল পিটিয়ে কুরবাণী দেন। তারা গরুর ছাগলের হাটে গিয়ে বড় সাইজের কয়েকটি গরু কিনেন, অত:পর বাসার কাজের লোককে গরু বাধার রশ্মি বুঝিয়ে দিয়ে এসি গাড়িতে করে বাড়ি ফিরেন। রাস্তায় উৎসুক জনতা যখন জিঙ্গেস করে “এই গরু কোন স্যারের এবং দাম কত”? তখন কাজের লোকটি জোড়ে জোড়ে গলা ছেড়ে বলেন “এগুলো মকবুল স্যার কিনছেন, চারটির দাম পড়েছে সোয়া ছয় লাখ টাকা!” লোকে দাম শুনে টাস্কি খায়, ভাবে মকবুল সাহেব একজন ধর্ম ভীরু এবং অনেক বড় মনের মানুষ।

ইহা ছাড়াও আরেক শ্রেণি আছে; সরকারী আমলা বা অফিসের বড় কর্মকর্তা। তারা সারা জীবন ঘুষ, দুর্ণীতি এবং অবৈধভাবে দু’হাতে টাকা কামিয়ে ঢাকাতে গাড়ি ও ফ্ল্যাট কিনেন, শেষ বয়সে এসে পবিত্র হজ্জ করতে দয়াল রসূলের দেশে যান। হজ্জ থেকে যখন ফিরে আসেন তখন তাদের মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি দেখা যায়, কিছু দিন পর তাতে মেহেদি দিয়ে রঙ লাগান। অফিসে বসে সৌদির পেট্র ডলারের বড় বড় উন্নয়ন প্রজেক্ট, বড় জোব্বা আর খুরমা খাজুরের গল্প করেন। একদিন বোতলে করে ইব্রাহিমি কূয়ার পানি এনে সবাইকে পান করতে দেন। সবাই রোগ, শোক, খাহি, গজবী, হাওয়াই, আসমানী বালা মুছিবতের মুক্তির নিয়তে কয়েক ঢোক পানি গিলেন। মাঝেমধ্যে তারা সহকর্মীদের তসবিহ গিফট করেন, কখনো কখনো তাদের বয়ান ছাড়তে দেখা যায়, অধ:স্তনদের নামাজ পড়তে আদেশ করেন, অফিসের মধ্যে প্রায় ধ্যানস্থ হন। এই ধ্যান হয়ত তাদের কে অতীতে কাড়িকাড়ি টাকা ইনকামের সুখ স্মৃতি দেয়। আপনি যদি কখনো বড় কোন সরকারী অফিসে যান, আর সামনে যদি তাদের কে দেখেন, তখন আপনার মনে হবে ‘মাশাল্লা দরবেশ বাবাজি’র চেহারা নূরে তাজাল্লিতে আলোকিত হয়েছে’, ইতিমধ্যে তারা নামাজ পড়তে পড়তে কপালে দাগ লাগিয়েছেন। আপনার হয়ত তখন তাকে কদমবুসি করতে ইচ্ছে করবে। কিন্তু ঘোর ভাঙ্গতে বেশিক্ষণ সময় লাগবেনা, যখন কোন দরকারী কাজের জন্য তার হাতে টাকার বান্ডিল তুলে দিতে হবে! তখন শান্তনা কাটবেন এই বলে যে, কি আর করা, পুরানো অভ্যাস তাই ছাড়তে পারছেন না। এই সমস্ত লোকদের বাবা মা যদি বেঁচে থাকেন; তাহলে তাদের হর হামেশা অযন্ত আর অবহেলার শিকার হতে হয়। বিল্ডিংয়ের এক কোণে বুড়া আর বুড়ি অ্যাকুরিয়ামের প্রাণীর মতো কোন রকম খেয়ে বেঁচে থাকেন মরণের আশায়। এই আমলারা ঈদুল আজহায় কুরবানীর গরু ছাগলের হাটে গিয়ে বড় সাইজের একটি গরু কিনে বাড়ি ফিরেন। বাড়িতে এসে ছেলে মেয়েদের কাছে ছোট বয়সের গরু পালনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, আমাদের একটা লাল গাভী ছিলো, একটা তেজা---- বাছুর।আমি ঘাস কেটে খাওয়াতাম…….। ছেলেপুলেরা এই কাহিনী শুনে নিজেদের জাত নিয়ে দ্বিধায় পড়েন। কিছুক্ষণ পড় তারা 5জি মোবাইলে ডুবে গিয়ে জাত পাত ভুলে যান। মাঝেমধ্যে তারা পরিচিতদের ফোন দিয়ে বলে.. হ্যালো, আমি প্রিন্স রোহান বলছি, আজিমদ্দিন চৌধুরী বড় ছেলে----- হ্যালো--- আমি প্রিন্স রোহান উদ্দিন চৌধুরী।

ঈদের দিন রোহান সাহেবরা গরু কুরবানী দিয়ে মাংসের বিভিন্ন প্যাকেট করেন গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য। প্যাকেটের গায়ে কালো মার্কারী দিয়ে লিখে দেন আজিমুদ্দিন চৌধুরী-----। তারপর গ্রামে মা-বাবা কিংবা ভাই ব্রাদাররা এই মাংস পেয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও পুলকিত হন। রান্না করে যখন এই মাংস তারা মুখে দেন তখন পুরানো দিনের কথা মনে করে ভাবাবেগ হারিয়ে ফেলেন। এই তো, এইতো সেদিন কামলা খেটে, হালচাষ করে আজিমদ্দিনের জন্য পড়ার খরচ পাঠিয়েছি। আজিমদ্দিন অনেক দিন পর আমাদের জন্য কুরবানির মাংস পাঠিয়েছে----। বাবা আজিমদ্দিন----।

ইহা আজিমদ্দিনের কুরবানী।

ছবিঃ অনলাইন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩১
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×