somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টাঙ্গুয়ার টানে,সৌন্দর্যের খোঁজে।। পর্ব ৩

২৫ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুনামগঞ্জ, সিলেট এইসব জায়গাতে
সাধারণত অনেক বৃষ্টি হয় আর বর্ষা
কালে তো কথায় নেই।। সেই বছরেও
প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে ফলে
টাঙ্গুয়া জলে থৈথৈ করছে।। কিন্তু
এই অথৈ জলের মধ্যেও লক্ষ্য করলাম
বেশ কিছু গাছপালা এবং বাড়িঘর
মাথা উঁচু করে নিজেদের অস্তিত্ব
এর জানান দিচ্ছে।। কিছুক্ষনের
মধ্যেই নৌকার মাঝি কামরুল
নৌকা ছেড়ে দিল।। নৌকাতে
তার একজন সহযোগীও আসে।।সারা
বছর তারা এই অপরূপ টাঙ্গুয়ার বুকে
ভেসে বেরায় নিজেদের
জীবিকা নির্বাহের জন্য।। এই
টাঙ্গুয়া তাদের মত আরও অনেক
মাঝির জীবিকার ব্যবস্থা করে।।

তাহিরপুর বাজারকে পিছনে
ফেলে আমাদের যাত্রা এখন
টাঙ্গুয়ার গভীরে।। বাজার পিছনে
থাকলেও বাম দিকে তাহিরপুরের
অখন্ডায়িত গ্রাম তখনও আমাদের
সাথে এগিয়ে চলেছে।। আর ডান
দিকে সুধু পানি আর পানি।


আর পানির পরেই রয়েছে এক সুবিশাল
পর্বতমালা।। মেঘের রাজ্য মেঘালয়
পর্বতমালা,অর্থাৎ আমাদের
প্রতিবেশী দেশ ভারত।। পাহাড়টা
তখন খুব বেশি দুরে না।। এর গায়ে
জন্মানো গাছগুলোকেও প্রায় স্পষ্ট
দেখা যাচ্ছে।।কিন্তু যতই আমরা
সামনে এগিয়ে যাচ্ছি ততই পাহাড়
আমাদের থেকে দুরে সরে যাচ্ছে।।
পাহাড় দেখতে দেখতে এবার
আমাদের দৃষ্টি অপরূপ টাঙ্গুয়ার
দিকে।। তাহিরপুরের অখন্ডায়িত
অংশ তখন শেষ হয়ে গেছে।। চার
পাশে সুধু পানি আর পানি।। কিছু
দুরে দুরেই ছোট ছোট গ্রাম দেখা
যাচ্ছে।। অনেক ক্ষেত্রে এগুলো
একটি বাড়ি।।


পানি দিয়ে ঘেরা
অল্প একটু জমিতে একটি ঘর নিয়েই
যেন গঠিত হয়েছে একটি গ্রাম।।আর
সব বাড়িতেই প্রায় একটি করে
নৌকা আসেই।। এধরনের বাড়ি
ছাড়াও মাঝে মাঝেই একটি অথবা
এক সারি গাছ মাথা উঁচু করে
দারিয়ে আছে।।


এগুলো দেখে
বুঝতে পারলাম শীত বা গ্রীষ্মের
মৌসুমে হয়তো এখানেই মাটি
জেগে ওঠে।। তখন হয়ত টাঙ্গুয়ার এত
জল কথাও হারিয়ে যায়।। তখন হয়ত
যোগাযোগের জন্য নৌকা
ব্যবহারের আধিক্যটা কমে যায়।। তখন
হয়ত টাঙ্গুয়া নতুন এক রূপ ধারন করে।।

সেই রূপের কল্পনা করতে করতে
বাস্তবে ফিরে আসলাম।। টাঙ্গুয়ার
বুকে তখন আমাদের মতই ভেসে
চলেছে অনেক ছোট বড় নৌকা।।
সবকিছু মিলিয়ে অপরূপ টাঙ্গুয়া আরও
অপরূপ হয়ে উঠেছে।। সকলেই তখন নিজ
নিজ মোবাইল অথবা ক্যামেরা
দিয়ে টাঙ্গুয়ার রূপকে ফ্রেম বন্দি
করে চলেছে।। ধিরে ধিরে
আবহাওয়াতেও পরিবর্তন চলে
এসেছে।। সকালের বৃষ্টিস্নিগ্ধ
আবহাওয়া এখন আর নেই।। সূর্য তার
শক্তির প্রদর্শন করতে প্রচেষ্টার খুব
বেশি কমতি করছে না।। অনেকের
ব্যাগ থেকেই ছাতা বের হতে শুরু
করল।। মেহেদী ভাই মুড়ি মাখাতে
শুরু করেছে।। কিছুক্ষনের মধ্যেই তা
তৈরি হয়ে গেল।। কিছুক্ষন চলল এই
মুড়ি ভোজ।। এরপর আবার টাঙ্গুয়ার
সৌন্দর্যের ভান্ডারে ডুব দেয়া।।
কিছুক্ষন পরেই আমরা এমন একটা
জায়গাতে আসলাম যার দুই দিকেই
ঘন গাছপালা তথা গ্রাম আর
মাঝখানে প্রায় ২০-৩০ মিটার
বিস্তৃত পানি।।দৃশ্যটি সুন্দরবনের কথা
মনে করিয়ে দেয়।। সুন্দরবনের এই
রূপটি মনে হয় বাংলাদেশের
সকলেই দেখেছে।।সামনাসামনি
না দেখলেও দেখেছে
টেলিভিশনে।। পার্থক্য এই যে
সুন্দরবনে থাকে লবনাক্ত পানি আর
এখানে স্বাদু পানি।।

ঘড়িতে তখন হয়ত ১২টা বা তার একটু
বেশি।। নৌকার ছাদ থেকে নেমে
চলে আসলাম নৌকার সামনের
দিকে।। দুই পা বাইরে পানিতে
ডুবিয়ে বসে পরলাম নৌকার
ধারে।। আবহাওয়া উষ্ণ হলেও
টাঙ্গুয়ার পানি অনেকটাই শীতল।।
নৌকার গতির সাথে সামঞ্জস্য
রেখেই পানি আমার পায়ে
ধাক্কা খেয়ে তরঙ্গ সৃষ্টি করে
চলেছে।। মাঝে মাঝে জলের
নিচে জন্মানো জলজ উদ্ভিদের
লতা পা কে আঁকড়ে ধরছে।। এখানে
পানি অনেক পরিস্কার।। কিছু কিছু
জায়গায় পানির নিচে মাটি
দেখা যায়।। অপরূপ এক দৃশ্য।। বুঝতে
পারলাম পানি এখানে খুবই
অগভীর।। নৌকাটা যে চলছে
কিভাবে তা ভেবেই আশ্চর্য হলাম।।
এভাবেই চলতে থাকল নৌকা এবং
সময়।।

দুপুর ১টার একটু বেশি বাজে হয়ত
তখন।।একটা লোকালয়ের দেখা
পাওয়া গেল।।বুঝতে পারলাম
দুপুরের খাবারের জন্য এখানেই
নৌকা নঙ্গর করানো হবে।।
কিছুক্ষনের মধ্যেই আমাদের মাঝি
সেই গ্রামের ঘাটে নৌকা নঙ্গর
করল।। আমরা একে একে নৌকা
থেকে নেমে পরলাম।। এরপর একটা
ছোট স্কুল ঘরের সামনে দারালাম।।
আমাদের মধ্য থেকে দুইজন
হোটেলের খোজ করতে গেল যেটা
আমাদের তের জন ও দুইজন মাঝি
মোট পনের জনের খাবারের ব্যবস্থা
করতে পারবে।।কিছুক্ষন পর তারা
হোটেল খোজ করে ফিরে আসলেন
এবং আমাদের সেই হোটেলের পথ
প্রদর্শন করলেন।। খাবারের
তালিকা হল ভাত,ডাল,ভর্তা এবং
মাছ।।সমস্যা হল আমি তো মাছ খাই
না।। তাই আমার জন্য ডিম ভাজির
ব্যবস্থা করা হল।। ডিম,ভর্তা এবং
ডাল দিয়ে দুপুরের খাবার বেশ
ভাল ভাবেই সম্পন্ন হল।। এখন এখানেই
একটু অপেক্ষা করন এবং তার পরেই
আবার ভেসে যাব অপরূপ টাঙ্গুয়ার
বুকে।।।।।

to be continued........
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৩৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×